Breaking News

আপু যখন বউ । পর্ব - ১০



আমিঃ আগে এটা বলেন আপনি আমাকে আপনি-আপনি করে বলতেছেন কেনো?

জান্নাতঃ মন চাইতেছে তাই! তোকে বলতে হবে নাকি? (জান্নাত রাগি মুখ করে)
আমিঃ নাহ! এমনি আরকি?
জান্নাতঃ হুম! যা সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়।সকালে বেচে থাকলে দেখা হবে!
জান্নাত শুয়ে গেলো আমিও বালিশ এনে সোফায় গুমিয়ে গেলাম!

এভাবে কয়েকদিন কেটে গেলো! যতই দিন যাচ্ছে জান্নাতের অত্যাচার ততই বাড়তেছে!
কেনো মেয়ের সাথে কথা বলতে পারি না! কেনো মেয়ের দিকে তাকাতে পারি না! কেউ প্রপোজ করলে জান্নাত তার তোলা ছবিগুলো মেয়েটাকে দেখায় ব্যাস জায়গায় সব শেষ!
এসবের কিছু একটা হাল করতে হবে ভাবতেছি! তখনই মাথায় একটা আইডিয়া আসলো! তাই মেহেদী ভাইকে ফোন দিলাম রাতে! দিয়ে সবকিছু বলে দিলাম!
সকালে ভার্সিটিতে গিয়ে মেহেদী ভাইদের নিয়ে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন জান্নাত আসবে! জান্নাত আসলেই গেট থেকে একজন ইশারা দিবে তারপর আমরা আমাদের কাজ শুরু করবো!
দশ মিনিট পর গেট থেকে ইশারা করলো জান্নাত আসতেছে! সবাই জান্নাতের যাওয়ার রাস্তার উল্টোদিকে মুখ করে বসলাম! জান্নাতে আমাদের কাছে আসতেই মেহেদী ভাই বলে উঠলো!
মেহেদী ভাইঃ আচ্ছা হুসাইন তুই জান্নাতের এত অত্যাচার সহ্য করতেছিস কেনো?
আমিঃ সত্য বলবো নাকি মিথ্যা!

মেহেদী ভাইঃ সত্যা করে বল!
আমিঃ কারণটা হলো আমি জান্নাত আপুকে ভালোবেসে ফেলেছি!
মেহেদী ভাইঃ কিহহহ! তোর মাথা ঠিক আছে তুই জান্নাত কে ভালোবেসে ফেলেছিস!
আমিঃ জান্নাত আপু একটু রাগি তবে মনটা একদম পবিত্র! ওনাকে পেলে আমার জীবনটা ধন্য হয়ে যাবে!
মেহেদী ভাইঃ তাই নাকি! তা বলেছিস কখনো জান্নাত?
আমিঃ তোমার মাথা ঠিক আছে! আপুকে বললে তো ওনি আমাকে জানে মেরে দিবে!
জান্নাত আমাদের পিছনে আছে কি না সেটা কনফার্ম হওয়ার জন্য গেটের কাছে থাকা ছেলেটাকে চোখ দিয়ে ইশারা করলাম! ছেলেটা হ্যা সূচক উত্তর দিলো! ব্যাস আবার একটিং এ চলে গেলাম)
মেহেদী ভাইঃ তাহলে এখন কি করবি!
আমিঃ কি আর করবো! এই কয়েকমাসে যদি ওনি আমাকে ভালোবাসে তাহলে বংশের বাতি জ্বলবে! নাহলে কোনোকিছু করার নেই!

মেহেদী ভাইঃ জান্নাত তো তোর বউ তুই ওর কাছে স্বামীর অধিকার চাইলেই পারিস!
আমিঃ ভাই এসব অধিকার তখনই আদায় করা যায় যখন স্ত্রীর অনুমতি থাকে! তাছাড়া জুড় করলে শরীর পাওয়া যাবে মন পাওয়া যাবে না! আর আমার দরকার তার মনটা!
মেহেদী ভাইঃ তাও তুই একবার বলে দেখ! কে জানে হয়তো জান্নাতও তোকে ভালোবাসে!
আমিঃ এটা হতেই পারে না কারণ ওনি শুধু প্রতিশোধ নিতে বিয়েটা করেছে! আর সেখানে আমি ওনাকে ভালোবেসে ফেসে গেছি মেহেদী ভাই! এখন কি করবো বুঝতেছি না! (মনটা খারাপ করে বললাম)
মেহেদি ভাইঃ কি আর করবি আল্লাহ-আল্লাহ কর! যেনো জান্নাতের মনে তোর জন্য ভালোবাসা জন্মায়!

আমিঃ হুম! (দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম)
তারপর সবাই মিনিট খানেক চুপ থাকার পর ছেলেটা ইশারায় বললো জান্নাত চলে গেছে! ব্যাস প্লেন সাকসেসফুল!
মেহেদী ভাইঃ তুই এগুলো করতেছিস কেনো?
আমিঃ ওনার জ্বালানোটা আর সহ্য হচ্ছে না! তাই ওনাকে এবার আমি জ্বালাবো! বলেছিলাম না ওনাকে আমার মায়ায় ফেলবো এখন সেই সময়টা এসে গেছে! তারপর দেখাবো আমাকে জ্বালানোর মজাটা!
তারপর ওনার হালকা হাসলেন! তারপর ঐদিনের মতো ক্লাস করে আমি আগে বাসায় চলে আসলাম!
এসে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসে ছিলাম! হঠ্যাৎ পিছন থেকে কারোর গলার আওয়াজ পেলাম তাকিয়ে দেখি জান্নাত! হাতে দুটো কফির কাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে!
আমিঃ আরে আপনি কখন?
জান্নাতঃ এ এ একটু আগে? (স্বর আটকে- আটকে কথাটা আসতেছে!)
ওনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন না! আড় চোখে তাকাচ্ছে! বুঝলাম নজর মিলাতে পারতেছে না! তার মানে প্লেন কাজ করেছে!

আমিঃ ওহ! তা হঠ্যাৎ কফি নিয়ে আসলেন আমার জন্য কি মনে করে!
জান্নাতঃ এমনি মন চাইলো তাই নিয়ে আসলাম! (বলেই কফির মগটা আমার হাতে দিয়ে ওনি চলে গেলো)
হালকা হেসে কফি হেতে শুরু করলাম! তারপর এভাবেই কাটতে লাগলো দিনগুলো!
কিছুদিন যাওয়ার পর থেকেই জান্নাত আপু ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ করে দেয় পরিক্ষা সামনে তাই!
আমিও এটার সুযোগ নেই! আপুকে রুটিন অনুযায়ী ডেকে দেওয়া ওনার জন্য কফি বানিয়ে দেওয়া! ওনার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে একটু মাথা ঘামানো! এসবে পুরো মনযোগ দিয়ে করতে লাগলাম!
আর তাই কিছুদিন ধরে ওনি আমার সাথে কোনো খারাপ আচার-আচরণ করেন না! কেমন যেনো বদলাতে লাগলেন ওনি! আমার চোখের দিকে চোখ মিলান না ওনি! কোনো জানি মনে হয় ওনি আমার জালে ফাসতে শুরু করেছে!

সকালে ভার্সিটিতে গিয়ে মেহেদী ভাইয়ের সাথে দেখা করলাম!
আমিঃ মেহেদী ভাই আমার একটা ফ্রেন্ডকে এই ভার্সিটিতে চান্স করে দিতে হবে?
মেহেদী ভাইঃ তুই তোর শশুড়কে বললেই তো পারিস?
আমিঃ তুমি পারবে কি না সেটা বলো?
মেহেদী ভাইঃ হুম! তা কে তোর সেই ফ্রেন্ডটা!
আমিঃ মারিয়া!
মেহেদী ভাইঃ কিহহহ! তোর মাথা ঠিক আছে! তুই কি করতে চাইতেছিস সেটা বল!
আমিঃ আগুনের জন্য ডিজেল আনতেছি!
মেহেদী ভাইঃ মানে তুই জান্নাত কে দেখিয়ে মারিয়ার সাথে প্রেম করবি!
আমিঃ হুম! এবার বুঝেছো কেনো শশুড়কে বলি নি!
মেহেদী ভাইঃ হুম! কিন্তু হুসাইন আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে তুই বড় একটা ভুল করতে যাচ্ছিস!
আমিঃ এখানে ভুলের কোনোকিছুই নেই! আর এমনিতেও আর ৮ মাস পরে তো আমাকে জান্নাত ছেড়েই দিবে তখন আমি কি করবো! আমার লাইফা ঘুছাতেও তো কাউকে লাগবে! তাই মারিয়াকে আমার দরকার!

মেহেদী ভাইঃ ওকে! তুই চিন্তা করিস না আমি দেখতেছি!
আমিঃ এডমিশান কবে থেকে!
মেহেদী ভাইঃ দুদিন পর থেকে?
আমিঃতুমি সব ব্যবস্থা করো এখন নিজে জ্বলবে আর বুঝবে ওনি অন্যকে জ্বালালে কেমন লাগে! সবকিছুর হিসেব নিবো আমি গুণে-গুণে!
মেহেদী ভাইঃ ওকে! তুই মাথা ঠান্ডা কর আর যা করবি ভেবে চিন্তে করিস!
আমিঃ হুম! আগে এটা বল তুমি কি এবারও ভার্সিটিতে থাকবে নাকি?
মেহেদী ভাইঃ হুম! আমিতো এখানে থেকে রাজনিতি করি! তাই আরো কয়েকবছর আছি এখানে!
আমিঃ তাহলে তো ভালোই!
এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বাসায় চলে আসলাম!

রাতে পড়াশোনা শেষ করে খাওয়া-দাওয়া করে ছাদে গেলাম! হালকা কিছুক্ষণ ঘুড়াফেরা করে রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম!
পরেরদিন ভার্সিটি থেকে মারিয়ার কাছে অফার পাঠালাম! মারিয়া নিজেও জানে না আমি এটা করতেছি! যার কারণে মারিয়া ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে রাজি হয়ে যায়!
দুদিন পর সকালে নাস্তার সময় মেহেদী ভাইয়ের কল আসলো! তাই রিসিভ করলাম!
মেহেদী ভাইঃ কিরে তুই কই?
আমিঃ নাস্তা করতেছি ভাই!
মেহেদী ভাইঃ মারিয়া ভার্সিটিতে ভর্তি হতে এসেছে! তুই এখনি আয়!
আমিঃ কিহহহ! ওকে আমি এখনই আসতেছি!
বলেই ফোনটা রেখে দিয়ে উঠে চলে যেতে লাগলাম তখনই জান্নাত ডাক দিলো!
জান্নাতঃ কোথায় যাচ্ছিস!

আমিঃভার্সিটিতে যাবো একটু কাজ আছে!
জান্নাত- নাস্তা শেষ করে তারপর যাবি! বসে নাস্তাটা শেষ কর! (জান্নাত চোখ রাঙ্গিয়ে বললো)
আমিঃ ওকে! (বলেই আবার ব্রেকফাস্ট করতে বসে গেলাম)
শেষ করে তাড়াতাড়ি চলে গেলাম ভার্সিটিতে! গিয়ে মেহেদী ভাইয়ের সাথে দেখা করি!
আমিঃ ভাই মারিয়া কই?
মেহেদী ভাইঃ ঐখানে আছে! ওও একলা একলা অনেক নার্ভাস ফিল করতেছিলো! তাই আমার বান্ধবীদের বললাম মারিয়াকে কোম্পানি দিতে! আর ওরা ঐখানে মারিয়াকে নিয়ে গল্প করতেছে! তুই যা!
আমিঃ হুম! (বলেই মেহেদী ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম তারপর বাগানে চলে গেলাম)

আমাকে দেখে বাকিগুলো উঠে চলে গেলো! মারিয়া পিছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো! জয়া দাড়িয়ে গেলো!
সাথে-সাথে গিয়ে মারিয়াকে জড়িয়ে ধরলাম! খেয়াল করলাম মারিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরতেছে না! বুঝে গেলাম মারিয়ার মাঝে কোনো একটা কাহিনী আছে! তাই সাথে-সাথে ছেড়ে দিলাম!
আমিঃ ছেলেটাকে কে? যার কারণে আমাকে ভুলে গেলে!
মারিয়া মাথা নিচু করে আছে!
আমিঃ আচ্ছা বসো এখানে! আর এত অবাক হওয়ার কিছুই নেই! তা এবার বলো ছেলেটা কে?
মারিয়াঃ তুমি চলে যাওয়ার ওর সিয়াম আমাকে মেন্টালি অনেক সাপোর্ট করে! তারপর বাসা থেকে ওর সাথে বিয়ে ঠিক করে আমার! পাচ মাসের জন্য সিয়াম দেশের বাহিরে গিয়ে! আসলেই আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে!
আমিঃ গুড! তা কেমন আছো তুমি মারিয়া!
মায়িয়াঃ হুম ভালো! (মারিয়ার চোখের কোনে হালকা পানি!)
আমিঃমারিয়া তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো!

মাথা নেড়ে না করলো!
আমিঃ শুনো আমাকে নিয়ে টেনশান করো না! আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না! তুমি ভালোভাবে পড়ালেখা করো! বন্ধু হওয়া যাবে তোমার!
কাদো-কাদো অবস্থায় মাথা নেড়ে হ্যা বললো!
আমিঃ ওকে তা বিয়ের সময় আমি কি যেতে পারবো মানে বিয়ে তো ঠিক হয়ে আছে বিয়ের সময় দাওয়াত পাবো তো নাকি! না খারাপ বলে দাওয়াত ও দিবে না!
এবার মারিয়া হেসে উঠলো!
আমিঃ দোয়া করি এই হাসিটা যেনো সারাজীবন থাকে!
মারিয়াঃ আচ্ছা আমার কথা বাদ দাও! তোমার সংসার লাইফ কেমন চলতেছে!
আমিঃ কার সংসার লাইফ?
মারিয়াঃ কেনো তোমার আর জান্নাত আপুর!

হালকা হাসলাম ওর কথায়! মারিয়া সব বুঝে গেলো!
মারিয়াঃ কি হয়েছে একটু ক্লিয়ার করে বলবে প্লিজ!
আমিঃ হয়নি এখনো তবে হবে আর ৮ মাস পড়ে!
মারিয়াঃ কি হবে!
আমিঃ ডিভোর্স!
মারিয়াঃ কিহহহ! (অবাক হয়ে গেলো)
আমিঃ হুম! যা শুনেছো তাই!
মারিয়াঃ ডিভোর্স কিসের জন্য দিবে! আর তাহলে তোমাকে বিয়ে করেছিলো কেনো! (অবাক হয়ে গেলো)
আমিঃ তোমার কি মনে হয় জান্নাত আমাকে সংসার করার জন্য বিয়ে করেছে! নাহহহ! জান্নাত আমার উপর প্রতিশোধ নিতে বিয়েটা করেছিলো! তারপর আমাদের মাঝে ১ বছরের একটা কনট্রাক হয়! আর সেটার সময় আছে আর মাত্র ৮ মাস!
মারিয়াঃ তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতেছি না!
আমিঃ তাহলে শুনো (তারপর প্রথম থেকে সব বললাম মারিয়াকে)! এই ছয়মাসে এগুলো হয়েছে আমার সাথে! জানি না বাকি ৮ মাস কিভাবে যায়!
খেয়াল করে দেখি…

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com