আইসিটি স্যার যখন বর । পর্ব - ১২
তানহাঃ এই আপু দেখ না তোকে কি সুন্দর লাগতেছে,,,,,, আপুউউউউউউ,,,,
তানহার চিৎকার শুনে আমার ভাবনার ছেদ পড়লো,,,,,,,,
ফারহাঃ কি হলো এই ভাবে ষাঁড়ের চিল্লাচিল্লি করতেছিস কেন? কানের পরদা ছিঁড়ে ফেলবি নাকি? আজব,,,,,
তানহাঃ আমি ষাঁড়ে চিল্লাই? তুই তো ধ্যানে ধরে আছিস চিল্লাবো নাতো কি করবো????
ফারহাঃ চুপ কর,,, কি জন্য ডেকেছিস সেটা বল,,,,
তানহাঃ হুম,,,আয়নায় দেখ না আপু তোকে পুরাই পরীর মত লাগতেছে,,,,,
তানহার কথা শুনে আয়নাতে তাকালাম,,, সত্যি তানহা আমায় অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে,,,, গোল্ডেন কালারের গাউন,,,গাউনের নিচের পার্ট গুলো রেড কালার,,, ম্যাচিং জুয়েলারির সাথে,, হালকা মেকআপ,, রেড লিপস্টিক,,, নিজেই নিজেকে দেখে চিনতে পারছি না,,,,
আয়না থেকে চোখ সরিয়ে, দরজা সামনে তাকিয়ে দেখি আম্মি হা করে তাকিয়ে আছে,,,,,,কিছুটা লজ্জাবোধ হলো,, তারপর আম্মি একটু এগিয়ে আমার সামনে এসে নিজের চোখ থেকে কাজল নিয়ে আমার কানের নিচে লাগিয়ে দিয়ে বলেন মাশাল্লা খুব সুন্দর লাগতেছে আমার মেয়েটাকে,,,, কারো নজর যেন না লাগে,,,আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি,,,
আম্মিঃ চলো,, সবাই নিচে ওয়েট করতেছে,,,,
ফারহাঃ আম্মি প্লীজ বুঝার চেষ্টা করো,,,,
আম্মিঃ পরে শুনবো,,, এখন আসো,,,
নিজেকে খুব অসহায় লাগতেছে,,,, জানি না কেন আম্মি আব্বু আমার সাথে এমন করতেছে,,,,, অনেক কষ্টে নিজের কান্না চেপে রেখেছি,,,, তারপরও আম্মিকে অনুসরণ করে নিচে এসে সালাম দিলাম,,,, আব্বু আর পাশে একটা লোক ,,,, তিনজন ভদ্র মহিলা আর একটা মেয়ে বসে আছে,,, আম্মি ইশারায় সবাইকে পায়ে ধরে সালাম করতে বলেন,,, আমি সবাইকে পায়ে ধরে সালাম করলাম ,,,, খুব আনইজি ফীল হচ্ছে আমার,,,
তিনটা ভদ্র মহিলার মধ্যে একটা মধ্যবয়সী মহিলা আমার হাত ধরে ওনার পাশে বসালেন,,,,
আন্টিঃ এত লজ্জা পাচ্ছো কেন? আমরা তো তোমার নিজের মানুষ তাই না? একদম লজ্জা পাবে না,,ঠিক আছে?
ফারহাঃ হুম,,,,,
আন্টিঃএইতো লক্ষি মেয়ে,,,আচ্ছা সবাইকে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই কেমন!,,,, আমি হচ্ছি জিহানের আম্মু,,,ইনি হচ্ছেন জিহানের আব্বু একটা লোককে ইশারা করিয়ে দিয়ে,,,, এইটা জিহানের ফুফি,,,, এইটা জিহানের খালামনি আর এইটা হচ্ছে আমার এক মাত্র মেয়ে জান্নাত,, ক্লাস নাইনে পড়ে,,,
উনি এক একজনের সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন আর আমি এক এক করে সবার সাথে কুশল বিনিময় করতেছি ,,,
আন্টিঃ আর জিহান হচ্ছে আমার এক মাত্র ছেলে যার জন্য তোমায় আমাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে আসছি,,,,,জিহান পড়াশোনা কমপ্লিট করে আমেরিকা একটা জব করে,,,
আসলে জিহানকে এই খানে নিয়ে আসতে পারি নাই,,,,তার কারণ কিছুদিন আগে আমেরিকা থেকে এসেছে একটা কাজে,,,, এখন সেই কাজেই এতই ব্যস্ত যে কিছুতেই নিয়ে আসতেই পারে নাই,,, আপনারা কিছু মনে করবেন না প্লীজ,,,
জিহানের আব্বুঃ আর তাছাড়া জসিম সাহেব (ফারহার আব্বু) তো দেখেছেন জিহানকে,,,,,
আব্বুঃ হুম আপনাদের ছেলে আমার খুব পছন্দ হয়েছে,,,,,
জান্নাতঃ ভাবি তুমি যদি ভাইয়্যাকে দেখতে চাও তো,,, আমার মোবাইলে পিক আছে বললে দেখাতে পারি,,,,,বলে চোখ টিপে মারলো,,,
ফারহাঃ আমায় ভাবি বলে ডাকায় বুকের ভিতর কেমন জানি ধুক করে উঠলো,,,কিছুটা লজ্জাও পেয়ে মাথাটা নিচু করে ফেললাম,,,, হুহ তোমার এই বিলাতী হনুমান ভাইয়ের পিক দেখে আমি কি করবো,,, আমি তো এই বিয়েটাই করবো না,,,, যে করে হোক এই বিয়ে আমায় ভাঙতে হবে,,,,,,
জান্নাতঃ আরেহ বাহ,,এইটুকুতে এত লজ্জা? না জানি দেখালে কি অবস্থা হবে তোমার
ফুফিঃ জান্নাত তুই তো দেখি বড্ড পেকে গেছিস,,,,
জান্নাতঃ সত্যি কথায় তো বললাম,,,
হঠাৎ আন্টি নিজের হাত থেকে খুলে এক জোড়া গোল্ড চুড়ি আমার হাতে পরিয়ে দিলেন,, ফুফি একটা গোল্ড চেইন পরালেন আর খালামনি একটা আংটি পরিয়ে দিলেন,,,,,আর আনকেলটা কত গুলো টাকা হাতে দিলেন,,,আমি নিরব দর্শকের মত সব বসে বসে দেখতেছি,,,,
খালামনিঃ বউমা তুমি তোমার রুমে চলে যাও,,,,,আমরা তোমার অবস্থা বুজতে পারছি,,,,এইরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক,,, তুমি উপরে চলে যাও,,,,
আমি যেন এইই কথাটার অপেক্ষা করছিলাম,,, উনি বলার সাথে সাথে আমি একটা সালাম দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম,,,, উফ এতক্ষণে মনে হয় নিজের প্রাণ ফিরে পেলাম,,,
জিহানের আম্মুঃ আপনাদের মেয়েকে আমাদের সবার খুব পছন্দ হয়েছে,,, আপনাদের যদি কোনো আপত্তি না থাকে তো সামনে শুক্রবার ওদের এনগেইজমেন্টটা করে ফেলি?
আব্বুঃ আলহামদুলিল্লাহ্,, এইটা তো খুব ভালো কথা,,,,
জিহানে আব্বুঃ আমরা তাহলে বিয়াই বেয়ান হয়ে গেলাম,,,এই খুশিতে মিষ্টি মুখ হয়ে যাক?
আব্বুঃ অবশ্যইইই,,,
তারপর সবাই মিলে মিষ্টি মুখ করলেন,,,
জিহানের ফুফিঃ ভাইয়া এইবার তাহলে আমরা উঠি,,,
আম্মিঃ ওমা সে কি? তা কি করে হয়? ডিনার করে তারপর যাবেন এর আগে ছাড়ছি না বলে দিলাম,,,,,
জিহানের আম্মুঃ অন্য একদিন প্লীজ,,, আত্নীয় যখন হচ্ছি তখন তো অবশ্যই আসতে পারবো তাই না,,, এখন বাসায় গিয়ে অনেক কাজ,, সবাইকে ইনভাইট করতে হবে,,সব কিছু রেডি করতে হবে,,আজকে বরং যাই,,,, আর তাছাড়া শুক্রবার তো আসতেছি,,,,
আব্বুঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,,
তারপর উনারা সবাই চলে গেলেন,,,,,
রুমে শুয়ে শুয়ে কান্না করছিলাম,, হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার মাথায় হাত দিয়েছে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আব্বু,,,, চোখ মুছে নিয়ে বসলাম,,,
আব্বুঃ খুব রাগ হচ্ছে না বাবার উপর?
ফারহাঃ নিশ্চুপ,,,,
আব্বুঃ কি হলো কথা বলবি না আব্বুর সাথে!
ফারহাঃ আব্বু আমি এখন বিয়ে করতে চাই না,,, মাথা নিচু করে কান্না করতেছি,,
আব্বুঃ আমার চোখ মুছে দিয়ে,,,আরে বোকা মেয়ে এই কথা? বিয়ে কি এখন হবে নাকি? তোর পড়ালিখার কোনো ক্ষতি হোক আমরা তা চাই না,,,, এখন শুধু মাত্র এনগেইজমেন্ট হবে,,, তোর যখন পড়াশুনো শেষ হবে তখন বিয়ে হবে,,,ততোদিনে তুই তোর পড়াশোনাও কমপ্লিট করে ফেলতে পারবি আর বিয়ে জন্য প্রস্তুতও হতে পারবি,, তাই তো আমি এই বিয়েতে রাজি হয়েছি,,,,,
ফারহাঃ কিন্তু আব্বু আমার সময় চাই,,,, আমি এখন এইসব কিছু হোক তা চাই না,,, যত যাই বলুক কোথাও একটা বাধা থেকেই যায়,, যখন এইসব হয়ে যাবে তখন ওনাদের আমার প্রতি একটা অধিকার জমে যাবে,,,, আমি চাই না আব্বু এত তাড়াতাড়ি আমার স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ হোক,,,,প্লীজ আব্বু,,
আব্বুঃ কিন্তু আমি যে ওনাদের কথা দিয়ে দিয়েছি,,,,,
ফারহাঃ আব্বু তুমি ওনাদের বুঝিয়ে বলো,,,, আমি যতটুকূ ওনাদের চিনেছি ওনারা খুব ভালো মানুষ,,, বুঝিয়ে বললেই বুজবে,,,,,,
আব্বুঃ এইটা হয় না মা,,,, আচ্ছ এনগেইজমেন্টটা হয়ে যাক অন্তত,,,, তখন যদি তোর সম্পর্কটা রাখতে ইচ্ছা না হয়,,, তারপর না হয় বলিস,,,,এখন না করলে আমি উনাদের কাছে অনেক ছোট হয়ে যাবো,,,,
ফারহাঃ মনে মনে আরে তাই তো,,, বিয়ে তো এখন হচ্ছে না,,,,, তাহলে আমার এত চিন্তা কিসের! এনগেইজমেন্ট হলে হবে তাতে কি? আমার ডেভিলটা একবার নিজের করে পেয়ে যাই তারপর এইসব জিয়ান পিয়ান দূরে গিয়া মরুক আমি আমার ডেভিল নিয়া ভাইগা যামু ইয়াহুউউউ,,,,
ফারহাঃ আচ্ছা আব্বু ঠিক আছে,,,,, তুমি যা বলবে তাই হবে,,,,
আব্বুঃ সত্যি?! এইতো আমার লক্ষি মেয়ে,,,,
আব্বু আমার কপালে একটা পাপ্পি দিয়ে চলে গেলেন
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com