Breaking News

জীবন্ত প্রতিচ্ছবি । পর্ব - ০২



অনুরাধাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপা-কাঁপি চলছে অভির, ওদিকে রুমের দরজায় হুবহু অনুরাধার মতো একজন মানে অনুরাধার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি অভির দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি হাসছে!

অভি ভাবছে কিছুতেই এই বিষয়ে অনুরাধাকে বলা যাবেনা। আর অনুরাধা ভাবছে হঠাৎ করে অভির কি হলো!
সত্যি করে বলোতো অভি কি হয়েছে তোমার? – অনুরাধা বললো।
কম্পিত কণ্ঠে অভি বললো,– কই না– কিছু হয়নি তো!
: তাহলে তোমার বুক এতটা ধড়ফড় করছে কেন? কি হইছে সত্যি বলো, মনে হচ্ছে বুকের ভেতর ইট ভাঙা মেশিন চলছে!

: আসলে তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে হচ্ছে তো অনুরাধা, সেই উত্তেজনায় হার্টবিট বেড়ে গেছে!
: কবি বলসে অতি উত্তেজনা সাস্থের জন্য খারাপ অভি, কন্ট্রোল ইয়োর উত্তেজনা প্লিজ।
: হা হা হা!
: হা হা নয়, তুমি জানোনা আমার পি*রি*য়ড চলছে! তারপর এরকম হবার মানে কি? আর তো মাত্র দু-একদিন।
কোন উত্তেজনায় যে অভির হার্টবিট বেড়ে গেছে সেটা তো আসলে অভিই জানে। একদিকে বউ, আর একদিকে বউয়ের ভৌতিক ফটোকপি! কিএক্টা অবস্থা! ঘরে বউ থাকতে ঘাড়ে এক্সট্রা একটা ভূত চাপার কি দরকার ছিল!
হঠাৎ করে অনুরাধা লাফিয়ে উঠে অভির বুকে চেপে বসে কীসব বিড়বিড় করে বলতে লাগলো! অভির কলিজাটা যেন ভয়ে উল্টে গেল।
অনুরাধা ঝুকে পড়লো একেবারে অভির মুখের ওপর, দুজনের ঠোঁট মিলিমিটার দূরত্বে। অভি বললো,– চুমু খেতে চাও বললেই হতো, এমন করার কি দরকার, চুমুর নামে মারার প্ল্যান নাকি ভয় দেখিয়ে?
সম্পুর্ণ অচেনা এবং বিশ্রী কণ্ঠে অনুরাধা বললো,– চুমুতে কি পেট ভরে রে, তোর ঘাড় মটকে রক্ত খাবো হতচ্ছাড়া।
“ও মা গো” বলে অনুরাধাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে খাট থেকে লাফিয়ে নেমে দৌড়ে দরজায় দাড়ানো অনুরাধাকে জড়িয়ে ধরলো অভি।
অভি এখন ভেবেই পাচ্ছে না কোনটা আসল অনুরাধা আর কোনটা নকল মানে ভূত! যেহেতু খাটের অনুরাধা ঘাড় মটকে রক্ত খেতে চেয়েছে, তাহলে ও ভূত অনুরাধা। আর দরজায় দাড়ানো আসল অনুরাধা।
দরজায় দাড়ানো অনুরাধাকে জড়িয়ে ধরে ঠকঠক করে কাঁপছে অভি, এবার এই অনুরাধা অভির দিকে তাকাতেই অভির প্রাণপাখী পারমানেন্টলি পরপারে যাবার জন্য বুকের ভেতর লাফালাফি শুরু করে দিলো। চোখ তো নয় যেন আগুনের জ্বলন্ত গোলা। এই অনুরাধা হা হা করে বিশ্রী সুরে হেসে বললো,– বাহ! মরার এত শখ তোর, নিজেই জমের কাছে ধরা দিলি এই বয়সেই নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবার জন্য?
এবার অভির অবস্থা– ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে!

একদিকে বউ, একদিকে ভূত,
কোনটা ভূত, কোনটা বউ!
বউ কোনটা, ভূত কোনটা!
এসব ভাবতে ভাবতে অভির ঘিলুতে প্যাঁচ লেগে মাথা ঝিমঝিম করছে।
খাটের ওপরের অনুরাধা নিথর হয়ে বসে আছে, চুলগুলো সামনের দিকে ঝুলে আছে বলে মুখ দেখা যায়না।
অভির অবস্থা এমন–
বিধি তুমি বলে দাও আমি কার-
একজন বউ আর একজন ভূত,
দুজনেই একটি মনের দাবিদার।
এবার এই অনুরাধাকে ছেড়ে অভি দৌড় মেরে লাফিয়ে খাটের ওপর উঠে, খাটের ওপরের অনুরাধাকে জড়িয়ে ধরতেই অনুরাধা বিছানায় ঢলে পড়লো।
অভি তাকিয়ে দেখলো দরজার পাশের অনুরাধা অদৃশ্য হয়ে গেল।
টেবিলের ওপরে রাখা পানিভর্তি জগটা থেকে অল্প পানি হাতে নিয়ে অনুর মুখমন্ডলে ছিটিয়ে দিতেই অনুরাধা চোখ খুলে উঠে বসলো। আধখোলা চোখে চারপাশে তাকিয়ে দেখে বললো,– কি হলো তোমার, সকাল তো এখনও হয়নি তুললে কেন তবে?

মাথা চুলকে আমতা আমতা করে অভি বললো,– না মানে ঘুম আসছিল না, তাই ভাবলাম তোমায় তুলে দুজন ভালোবাসার গল্প করি।
অনু চোখ বড়বড় করে বললো,– তা আজকে হঠাৎ তোমার এত প্রেম ভালোবাসা উতলে ওঠার কারণ কি অভি?!
ইয়ে মানে প্রেম হলো এলার্জির মতো, সবসময় মনে থাকেই কিন্তু মাঝেমধ্যে বেশি আকার ধারণ করে, এই যে যেমন যাদের বেগুনে এলার্জি তারা বেগুন খেলে এলার্জি বেড়ে যায়– অভি বললো।
হো হো করে হেসে অনু বললো,– আজ নিশ্চয়ই তোমার মাথায় কিছু একটা গন্ডগোল হইছে অভি, তুমি ঘুমাও।
অভিকে টেনে কোলের ওপর শুইয়ে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অনু বললো,– আমার পাগল বর, আমার একটু পেটে ব্যথা বলে সারারাত না ঘুমিয়ে এখন আবোলতাবোল বকতে শুরু করেছে, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুমি ঘুমাও!

এদিকে ভয়ের চোটে অনুর আলতো করে টেনে কোলে শোয়ানোকে অভির মনে হচ্ছে চেপে ধরে শুইয়েছে, অনুর আলতো করে চুল টেনে দেয়াকে অভির মনে হচ্ছে অনু চুল ছিড়ে নিচ্ছে। আর ঘুম! সেটা একেবারে অসম্ভব, অভির মনে সন্দেহ হচ্ছে এই অনুরাধা বউটা, নাকি ভূতটা?
যা-ই হোক ঘুমানো যাবেনা, ভূতের হাতে প্রাণ গেলেও ঘুমন্ত অবস্থায় না, সজাগ অবস্থায় যাক। অন্তত কীভাবে মৃত্যু হইছে সেই স্মৃতিটা তো মনে থাকবে।
ধুর কীসব ভুলভাল ভাবছি– বলে অভি মনে মনে নিজের মনকে ধমক দিয়ে চুপ করে অনুর কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে কান খোলা রেখে চুপচাপ শুয়ে রইলো।
সকাল হয়ে গেছে সেই কখন, অভি এখনও নাক টেনে ঘুমাচ্ছে দিব্যি। অনুরাধাও আর ডাকলো না এই ভেবে যে সারারাত ঘুমাতে পারেনি অভি, থাক ঘুমাক।

অনুরাধা উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল, ফ্রেশ হয়ে ফিরে এসে দেখলো অভি উঠে বসে আছে খাটের ওপর। অনুরাধা বললো,– কি হলো উঠলে কেন, এমনিতেই সারারাত ঘুমাতে পারোনি!
অভি সাকালের নাস্তা খাবার আগে আবার টাশকি খেয়ে বললো,– নিজেই টেনেটুনে তুলে আবার বলছো উঠলাম কেন! পি*রি*য়ডের সমস্যা হলে পেটে ব্যথা হয় জানি, মাথায় গন্ডগোল হয় এবার প্রথম বুঝলাম তোমাকে দেখে।
সকাল সকাল একদম বাজে বকবে না বলে দিলাম, জলদি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি চা করে আনছি– বলে অনুরাধা কিচেনে চলে গেল।
অভি ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো, একটু পরেই অনুরাধা এসে হাসিমুখে এককাপ চা অভির হাতে দিয়ে চলে গেল।

কাপে চা ঢেলে কিচেনে রেখে নিচে গিয়েছিল অনুরাধা, ফিরে এসে কাপ না দেখে অভিকে খুজতে খুজতে ব্যালকনিতে এসে অভিকে চা খেতে দেখে অনুরাধা বললো,– একটু ওয়েট করতে পারলে না! কোথায় নিজের হাতে চা এনে তোমার হাতে তুলে দেবো তা না, নিজে নিজে গিয়ে নিয়ে এসে ফিলিংসটাই মাটি করে দিলে।
অভির মাথায় হাত, ভূত আর বউয়ের চাপে জীবন বরবাদ। একটু আগে যে এসেছিল সে অরিজিনাল অনুরাধা? নাকি এখন যে সামনে দাড়িয়ে আছে সে?!
হঠাত এরকম অদ্ভুত কর্মকাণ্ডে অভি চুপচাপ দাড়িয়ে ভাবছে– এরকম তো আগে হয়নি কখনও, কিন্তু অনুরাধার পিরিয়ড শুরু হবার পরদিন রাতেই এরকম অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের সূচনা।
হঠাৎ করেই অভির মনে পড়লো, সেই রাতে ছাদে বসে জোছনা উপভোগ করার সময় অভি এবং অনুরাধা দুজনেই খেয়াল করেছিল ঠিক যেন ওদের মাথার কয়েক হাত ওপর দিয়ে দুটো আগুনের গোলার মতো সাৎ করে বাগানের দিকে উড়ে গিয়ে নিভে গেল। যদি গন্ডগোল কিছু হয়ে থাকে সেখান থেকেই হবে।

অভি মনে মনে ঠিক করলো গ্রামে ফোন দিয়ে আলী চাচাকে আসতে বলবে, উনি একজন নাম করা ওঝা, উনিই পারবে এর সমাধান বের করতে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত এলো আবার, অভির বুকের ধুকপুক বেড়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
রাতের খাওয়া শেষে জলদি করে শুয়ে পড়লো আজ। গতরাতে অভীর ঘুম হয়নি বলে আজ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো অভি। রাত গভীরে হঠাৎ অনুরাধার ঘুম ভেঙে যেতেই অনুরাধা খেয়াল করলো রান্নাঘরে খুটুরখাটুর শব্দ, চুপচাপ উঠে রান্না ঘরে এসে অনুরাধা দেখলো অভি দাড়িয়ে আছে। অভি যে অনুরাধার পাশেই ঘুমে ছিল সেটা অনুরাধা খেয়ালই করেনি।

রান্নাঘরের এই অভির জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখে অভি ভেবে অনুরাধা বললো,– এতরাতে এখানে কি করছো!
অভির জীবন্ত প্রতিচ্ছবি অভির মতো করেই হেসে বললো,– চাঁদ দেখছিলাম, তুমি ঘুমে ছিলে তাই একা একা। চলো বাইরে যাই, খোলা আকাশের নিচে বসে চাঁদ দেখবো দুজন।
অনুরাধা বেমালুম ভুলেই গেছে যে তার পি*রি*য়ড চলছে, অনুরাধা মিষ্টি হেসে বললো,– যাবো, যদি কোলে করে নাও তবে।
অভির জীবন্ত প্রতিচ্ছবি এগিয়ে এসে অনুকে পাজাকোলা করে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে সোজা বাগানের দিকে যেতে লাগলো...

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com