আইসিটি স্যার যখন বর । পর্ব - ০৮
জাহিদ ভাইয়া ক্ষুধার্ত জানোয়ারের মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে,,,,, শয়তানটাকে অনেক ধাক্কা দিচ্ছি,,, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না,,,, নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি আর জোরে জোরে কান্না করছি,, কিন্তু চার দেওয়ালের মাঝে কেউ আমার আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছে না,,,তবে কি নিজের শেষ রক্ষা করতে পারবো না আমি!!! এই ভাবে একটা শয়তানের কাছে নিজেকে শোপে দিতে হবে ?
রাহাত স্যারঃ অফিসে বসে কাজ করছিলাম,,,
কিছু ফাইল টেবিলে খুজে পাচ্ছি না,,,,
ফাইল গুলো তেমন ইম্পরট্যান্ট না হওয়ায় ষ্টোররুমে রেখে দিয়েছে হয়তো,,
কিন্তু আমি এই কলেজে নতুন হওয়ায় ফাইল গুলো আমার দরকার ছিলো,,,,
তাই আমি ষ্টোর রুমে দিকে আসি,,,
দরজা খুলতে যাব এমন সময় দরজা দিকে তাকিয়ে দেখি দরজা ভিতর থেকে বন্ধ,,, এখানে তো কেউ নেই ভিতর থেকে বন্ধ হবে কি ভাবে?তারমানে ভিতরে কেউ আছে,,, কিন্তু এসময় এখানে কে আসবে? আর আসলেও বা ভিতর থেকেই লক কেন করবে? এসব ভাবছি হঠাৎ একটা মেয়েলী কন্ঠের চিৎকার আমার কানে ভেসে আসলো,,,,চিৎকারটা রুমের ভিতর থেকে আসলো না?
আমি দরজায় অনেকবার বারি দেওয়ার পরও দরজা না খুলায় সময় নষ্ট না করে ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই,,,,,,, কয়েকবার ধাক্কা দেওয়ার পর দরজাটা খুলে যায়,,,,দরজা খুলে আমার চোখ ফারহা আর জাহিদের উপর পড়ে,,,
ফারহাঃ নিজে ওই অমানুষের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যস্ত,,, হঠাৎ মনে হলো কেউ দরজাটা ধাক্কা দিচ্ছে,,,কিছুক্ষন পর দরজাটা খুলে যায়,,,, দরজাদরজার সামনে রাহাত স্যারের মুখটা দেখে একটা সস্তির নিশ্বাস ফেলি,,,,আমি আর তাকিয়ে থাকতে পারলাম না,,, চোখটা বন্ধ হয়ে গেলো,,,
রাহাত স্যারঃ ফারহা আর জাহিদকে এই অবস্থায় দেখে আমার মাথায় যেন রক্ত উঠে গেলো,,, দোড়ে গিয়ে জাহিদের শার্টের কলার ধরে দাড় করিয়ে নাক বরাবর একটা ঘুসি দিলাম,,,তোর সাহস কি করে হয় ওর সাথে এমন করার?
জাহিদঃ স্যার আপনি এখান থেকে চলে যান তা না হলে কিন্তু আপনার জন্য ভালো হবে না,,,,
রাহাত স্যারঃ আমায় ভালো খারাপ নিয়ে তোর ভাবতে হবে না,,, আমি আজ তোর কি অবস্থা করি সেটা নিয়ে ভাব,, এই বলে মারা শুরু করে দিলাম মারতে মারতে অবস্থা একদম খারাপ হয়ে গেছে,,, মার খেয়ে ও পরে আছে,,, আমি তাড়াতাড়ি ফারহার কাছে গেলাম,, ফারহার মাথাটা কোলের উপর নিলাম,,, ফারহা এই ফারহা চোখ খুলো ফারহা,,, আমি আর দেরি না করে কোলের করে হস্পিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বের হলাম,, সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে,,,, ওর ফ্রেন্ড জিহা দৌড়ে আসে আমাদের কাছে,,,,
জিহাঃ স্যার ফারহা কি হয়েছে? ওর ওই অবস্থা হলো কি ভাবে?
রাহাত স্যারঃ ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে মেভি,,, জিহাকে সবটা খুলে বললাম,,, হস্পিটাল নিয়ে যেতে হবে তাড়াতাড়ি ,,,,
জিহাঃ আমি এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম,,, ওকে একা যেতে নিষেধ করলাম কিন্তু ও আমার কথা না শুনেই একা চলে গেলো,,,ওই ব্যাটা জাহিদকে তো ইচ্ছা করতেছে লাথি মেরে উগান্ডা পাঠাই দিই,,,
রাহাত স্যারঃ থাক তোমায় আর কষ্ট করতে হবে না আমি ওকে উচিত শিক্ষা দিয়েছি,,,, আচ্ছা দেরি হয়ে যাচ্ছে,,, ওকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে হবে,,,,
জিহাঃহুম স্যার,,,, আমিও যাব আপনার সাথে,,,
রাহাত স্যারঃ আর কথা না বাড়িয়ে বললাম,, আচ্ছা চলো,,,,
জিহা ফারহাকে নিয়ে পিছনের সিটে বসে,, আর আমি ড্রাইভ করছি,,,, হস্পিটালে আনার পর কিছু নার্স ওকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যায়,,, কিছুক্ষণ পর ডক্টর বের হয়,,
জিহাঃ ফারহার কি অবস্থা? ও ঠিক আছে তো?
ডক্টরঃ ভয় পাওয়ার কিছু নেই,,, একটু ভয় পেয়েছে তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে,,,, আমি ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিছি,,, জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগবে,,,, আপনারা চাইলে এখন বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।
জিহাঃ আচ্ছা
তারপর জিহার সাহায্য নিয়ে ফারহাদের বাসায় ঠিকানায় আসি,,, কলিংবেল চাপতেই একটা মহিলা এসে দরজাটা খুলে দেয়,,,মনে হয় ফারহার আম্মু হবে,,,,, দরজা খুলে ফারহাকে এই অবস্থায় আমার কোলে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়,,, উনি কাছে এসে ফারহার মুখে হাত দিয়ে বলে,,,
ফারহার আম্মুঃ ফারহা,, এই ফারহা,,,,,, আমার ফারহা কথা বলতেছে না কেন? কি হয়েছে আমার মেয়েটা,,, উনি কান্না করতেছেন
জিহাঃ আরে আন্টি আপনি শান্ত হোন,,,,তেমন কিছু হয় নাই,, জাস্ট একটু ভয় পেয়েছে তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে,, চিন্তা করবেন না একটু রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে,,, কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান ফিরে আসবে,,,
আন্টিঃ কি করে হলো এই সব?
আমিঃ আগে ওকে রুমে রেখে আসি?
আন্টিঃ সত্যি তো,,,মেয়ের এই অবস্থা দেখে আমি তো ভুলেই গেছি,,, আসো ভিতরে আসো,,,
তারপর উনাকে অনুসরণ করে ফারহা রুমে আসলাম,,,,রুমে ঢুকে আমিমি পুরাই অবাক,,, এই মেয়ে তো দেখি পুরাই বাচ্চা,,, খাটের উপর চার পাঁচটা টেডিবিয়ার রাখা,,,পড়ার টেবিলেও অনেক গুলা ছোট্টছোট্ট পুতুল রাখা আছে,,, বেশি অবাক হলাম তখন যখন শোয়ানোর জন্য বালিশটা ঠিক করছিলেন ফারহার আম্মু,,, বালিশের নিচে অনেক গুলা চকলেট রাখা আছে,,,
ফারহাকে শুয়ে দিলাম,,, তারপর জিহা আমাকে ফারহার আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল,,,আমাদের তিনজনের মাঝে কুশল বিনিময়ের পর জিহা বললো,,,
জিহাঃ আন্টি আমরা এখন আসি তাহলে ,,আর হ্যা ওর জ্ঞান ফিরলে সাথে সাথে আমাকে কল করে জানাবেন কিন্তু,,,
আন্টিঃ সে কিরে এইটা কেমন কথা? মুখে কিছু না দিয়েই চলে যাবা,,,আমি কিছুতেই তোমাদের নাস্তা না করেই যেতে দিবো না,,,
আমিঃ আসলে আন্টি আজকে আমার হাতে একদম সময় নেই,,,আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে,,,, অন্য একদিন এসে খেয়ে যাব কেমন?
জিহাঃ আন্টি আমারও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস বাকি আছে,,,তাই এখন যেতে হবে পরে এসে ফারহাকে দেখে যাব,,,
আন্টিঃ আরে,,,,
আমিঃ আন্টি প্লীজ,,,,,
আন্টিঃ আচ্ছা ঠিক আছে এখন যেতে দিচ্ছি,, অন্য একদিন কিন্তু আসতেই হবে,,,,
আমিঃ আচ্ছা,,,
আমি আর জিহা ফারহাদের বাসা থেকে কলেজে চলে আসলাম,,
ফারহাঃ আস্তে আস্তে করে চোখ খুললাম,,, চারপাশটা দেখার জন্য উঠে বসে যাব কিন্তু পারতেছি না মাথাটা অনেক ভারী লাগতেছে আর কেমন জানি ঘুরতেছে,,,কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পড়তেই একটা চিৎকার দিলাম,,, চিৎকার শুনে আম্মি রান্নাঘর থেকে দৌড়ে চলে আসলেন,,,
আম্মিঃ তোর জ্ঞান ফিরলো কবে? আর এই ভাবে চিৎকার করছিস কেন? আবার কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখছিস? তোর এখন কেমন লাগতেছে?
ফারহাঃ উফ আম্মি সব গুলা একসাথে বললে,,,,কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিবো? আচ্ছা আম্মি আমি এখানে কি করে আসলাম! মানে আমি তো কলেজে ছিলাম তাই না?
আম্মিঃ তুই নাকি ভয় পেয়েছিস,,,, যার ফলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি,,,, জিহা আর রাহাত তোকে বাসায় দিয়ে গেছে,,,
ফারহাঃ জিহা আর মানে? রাহাত কে?
আম্মিঃ রাহাত কে মানে? তোদের আইসিটি টিচার আর কি,,,ছেলেটা কিন্তু অনেক ভালো,,, আজকালকার যুগে এমন ছেলে পাওয়ায় যায় না,,, যে মেয়েদের এত সম্মান করে,,, আচ্ছা যাই হোক,,, তুই রেস্ট নেয় আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি,,,,
আম্মি চলে গেলো আর আমি,,আজকে আমার সাথে ঘটে যাওয়া কথা গুলো ভাবতেছি,,,,
পৃথিবীতে যেমন জাহিদ ভাইয়ার মত নরপিশাচ আছে তেমনি রাহাত স্যারের মত ভালো মানুষ ও আছে,,,,
তা না হলে পৃথিবীটা অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেত,,,,
রাহাত স্যারের যে রাগের ভিতরও এমন একটা ভালো মানুষ আজকের ঘটনা না ঘটলে
তো বুজতেই পারতাম না,,, আব্বু ঠিকি বলে,,খারাপ না থাকলে নাকি মানুষ ভালোর কদর বুঝে না,,,
আল্লাহ্ যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন,,,,,,,
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com