Breaking News

বেস্টফ্রেন্ডের অবহেলা । পর্ব - ০৫



মন খারাপ করে বাসায় আসলাম।এসে দেখি আব্বা দাড়ি আছে দরজার সামনে।আমাকে দেখে কাছে আসলেন।এসেই ঠাস ঠাস করে চর মেরে বলতে লাগলেন.....

আব্বাঃসারাদিন কই ছিলিস?
আমি কথা বলছি না।
বড় আপুঃনিশ্চই কোনো মেয়েকে ইভটিজিং করতে গেছিল।যার যে স্বভাব।
সিমিঃআপু তুই চুপ করবি?
বড় আপুঃচুপ করবো কেন?সত্যি বললে গায়ে লাগে তাই না?ওর কলেজের অনেক খারাপ ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন ভার্সিটিতে চান্স পাইছে।ও পায় নাই কেন?সারাদিন মেয়ের পিছনে ঘুরে বেড়ায় আর সে নাকি হবে ডাক্তার?
আব্বাঃওকে জন্ম দেওয়াই ভুল হয়েছে।আমি বুঝি না ওর মতো কুলাঙ্গার আমাদের পরিবারে কিভাবে জন্ম নিলো?
আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে।
আব্বাঃতোর মতো কুলাঙ্গারের চেয়ে আমি যদি নিঃসন্তান হতাম তবুও ভালো হতো।তোর মতো চরিত্রহীনকে এতো টাকা দিয়ে খাইয়ে পড়িয়ে আমি অনেক ভুল করছি।তার চেয়ে যদি একটা রাস্তার৷ কুকুরকে খাওয়াতাম তবুও ভালো হতো।আমার মান সম্মান নষ্ট করতো না।তোর পিছনে টাকা নষ্ট না করে সেই টাকা যদি ব্যাংকে টাকা রাখতাম তবে আমার মেয়েটার বিয়ে দিতে এতো কষ্ট হতো না।

আমিঃতুমি আমার কাছে সেই টাকা এখন চাচ্ছ?😥
আব্বা আমার কাছে তেড়ে এসে বললেন...
আব্বাঃহ্যা চাইছি।দিতে পারবি?দে টাকা ফেরত দে।
সিমিঃকি বলছো আব্বা? ও তোমার ছেলে।আর ওকে ভরণ পোষণ করানো তোমার কর্তব্য।
আমিঃআপু তুই কথা বলিস না।আচ্ছা বেচে থাকলে আপনার টাকা ফেরত দিব ইনসা আল্লাহ।
এই বলে রুমের দিকে যাচ্ছিলাম।তখনি আব্বা বলে উঠলেন...
আব্বাঃওই দিকে কই যাচ্ছিস?আমার বাড়িতে তোর কোনো জায়গা নেই।তুই এক্ষুনি বাসা থেকে বাহির হয়ে যাবি।
সিমিঃআব্বা কথা ভুলে যাওয়ার রোগ তোমার কবে হলো?
আব্বাঃকি বলতে চাচ্ছিস?
সিমিঃএই সব কথা কি সবার সামনে বলব?সইতে পারবে?
আব্বা আর কোনো কথাই বলল না।চুপসে গেল।
আমিঃকি বলতে চাচ্ছিস৷ আপু?
সিমিঃহ্যা আজ সব কথা বলবো।তোর এই বাড়িতে থাকা খাওয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা নিছে আব্বা।এর পরেও কিভাবে বাসা থেকে বাহির হতে বলো আব্বা?
মা কাদতে কাদতে চলে গেল। আমিও আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না।রুমে চলে এলাম।কিছু ভালো লাগছিল না।না খেয়ে শুয়ে পরলাম।

পরের দিন সাকিব এসে নিয়ে গেল।ওর সাথে কোনো কথাই বলি নাই।কিছু খাইও নাই।
সাকিব একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল।তবুও ওর সাথে কোনো কথা বললাম না।খাবার অর্ডার করলো।আমি কিচ্ছু খাচ্ছি না।শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি।আর ও এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।অনেক সময় ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎ খাবার ছেড়ে উঠে গিয়ে বিল দিয়ে আমার কাছে এসে হাত ধরে বাইকে করে একটা পার্কে নিয়ে গেল।আমার সামনে দাড়িয়ে বলল...
সাকিবঃকি হইছে তোর?
আমিঃএরকম কেন করলি?
সাকিবঃকি করছি?
আমিঃকিছু করিস নাই?
সাকিবঃসরি।তোর কষ্টের দিনে আমি কিভাবে চুপ থাকি বল?
আমিঃতাই বলে আমাকে জানাবি না?
সাকিবঃতোর বাবার কথা তোকে কিভাবে বলি বল?তোর বাবার এই সব কথা তোকে বললে তোর কি মন ভালো থাকতো?তোর খারাপ লাগতো না?আর বড় কথা হচ্ছে তোর বাবার প্রতি কি তোর সেই আগের সম্মানটা থাকতো?

আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।সত্যি তো ও সব ঠিক বলছে।আমি তো এই সব কথা মেনে নিতে পারতাম না।
হঠাৎ সাকিব আমাক জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল। আর বলতে লাগল...
সাকিবঃআমাকে মাফ করে দে দোস্ত। তোকে না বলে এইসব করা আমার ঠিক হয়নি।তোর কষ্ট আমার একদম সহ্য হয় না রে।তোকে যে আমার ভাই মনে করি।আমাকে মাফ করে দে।তোর এই ভাবে চুপ থাকা একদম সহ্য হচ্ছে না।পারলে মার তবুও এই রকম করিস না।😭
আমিঃআমাকে বাসায় নামিয়ে দে।ভালো লাগছে না।
সাকিবঃনা আগে কিছু খেতে হবে কাল থেকে কিছু খাস নাই।
আমিঃআচ্ছা চল।
এরপর দুজনেই একটু করে খেলাম।সাকিব বাসায় নামিয়ে দিতে আসছে।সাকিব কে দেখে আব্বা বললেন...
আব্বাঃসাকিব নাস্তা করে যাও।
সাকিবঃআমার খাবারের কথা আপনার ভাবতে হবে না।আমার বন্ধুকে খাওয়ালেই হবে।
এই বলে সাকিব চলে গেল। আমিও রুমে গেলাম।

রাতে খাওয়ার জন্য মা ডাকতে এসে বলল..
মাঃবাবু খেতে আয়।
আমিঃখাবো না মা।
মাঃকেন খাবি না?প্লিজ আয় বাবু।
আমিঃখাব না মা।আর আমাকে খাওয়ার জন্য কেন ডাকছো বুঝছি না।আমি তো রাস্তার কুকুরের চেয়েও খারাপ।ও এবার বুঝছি।টাকার কথা ভাবছো তো।সেটা সাকিবকে বলে দিয়েছি।ও সময় মতো টাকা দিয়ে দিবে।আর কয়েকটা দিন সহ্য করো।আর মরে গেলেও মুখ দেখাবো না।😥
মা ওড়না দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।মা চলে যাওয়ার পর অনেক্ক্ষণ কাদলাম।কিছু সময় পর সিমি আপু আসল।এসে দেখলো আমি কাদছি।আমার কাছে এসে বসে ঘাড়ে হাত রাখলো।
আপুকে দেখে ওর কোলে মাথা রেখে বললাম...
আমিঃআচ্ছা আপু আমাকে কি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনছিল?আমি মরলেই কি সবাই শান্তি পাবি?
সিমিঃএকটা চর লাগাবো কুত্তা।আর একটা বাজে কথা বললে আর কোনোদিন তোর সাথে কথা বলব না।এই সব হয়েছে লিমার জন্য ওকে তো আমি কোনোদিন মাফ করবো না।
আমিঃথাক না আপু ওর কথা।বাদ দে
আপুর চোখেও পানি।দুই ভাই বোন অনেক সময় ধরে কাদলাম।এরপর আপু বলল...
সিমিঃদেখ তোর জন্য কি আনছি? বিরিয়ানি তোর ফেভারিট খাবার।
আমিঃখাবো না আপু।
সিমিঃচিন্তা করিস না এটা বাড়ির না আমি কিনে আনছি।
এরপর জোর করে আপু খাওয়াতে লাগল।আমিও আপুকে খাইয়ে দিলাম।
দরজার কাছে দেখি আব্বা আমাদের দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে।
সিমিঃআসলেই কি তোর কোথায়ও চান্স হয়নি?
আমি কোনো কথা বলছি না।
সিমিঃআচ্ছা এখন হয়নি ইনসা একদিন হবে।তুই ট্রাই কর।
এই বলে আপু চলে গেল।
এভাবে দিন চলছে।কিছু দিন পর লিমা সবাই কে ডাকলো।ইচ্ছে না থাকা সত্বেও সাকিবের সাথে যেতে হলো।
সেখানে গিয়ে দেখি লিমা আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গেছে। ওর দিকে আর তেমন তাকালাম না। লিমা সবার উদ্দেশ্যে যা বলল তা নিজের বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হলো।আব্বা এতোটা কাজ করলো অথচ আমি কিছুই জানি না।খুব কান্না পাচ্ছিল।
লিমাঃশোন সবাই এখানে একজন বাদে সবার দাওয়াত।
সাকিবঃকিসের দাওয়াত?
লিমাঃব.......

চলবে.....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com