Breaking News

জীবন্ত প্রতিচ্ছবি । পর্ব - ০৩



অভির রুপ ধারণ করে অশুভ শক্তি অনুরাধাকে নিয়ে রাত গভীরে বাগানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধীর পায়ে। অনুরাধা একটু চমকে গেল, অভি তাকে বাগানের দিকে কেন নিয়ে যাচ্ছে!

অনুরাধা জিজ্ঞেস করলো,– বাগানের দিকে কেন যাচ্ছ অভি?
অভি রূপি অশুভ শক্তি অনুরাধার চোখে চোখ রাখতেই অনুরাধা সম্মোহিত হয়ে গেল, এখন অনুরাধার মস্তিষ্ক এই অশুভ শক্তির ইশারায় চলতে বাধ্য।
অভিদের প্রতিবেশী মজনু ভাই, অল্প দূরত্বের ব্যবধান অভি ও মজুদের বাড়ি। মজুদের ছাদে দাড়িয়ে অভিদের বাড়ির সবকিছু যেমন দেখা যায়, ঠিক তেমনই অভিদের ছাদে দাড়িয়ে মজুদের বাড়ির সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়।
মজনুর বউ পূর্নতা ভাবী আবার একটু সাহিত্যে প্রেমী, বাইরে ফকফকা সিলভার কালারের চাঁদের আলোয় নিজেকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে না পেরে আজ মজনু ভাইকে টেনে তুলে বলেছিল,– এই চলোনা চাঁদ দেখি মজনু, কি দারুণ স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে পৃথিবী।

ঘুমঘুম চোখে দাত কটমট করে মজনু বললো,– তা যাকনা পৃথিবী ভেসে চাঁদের আলোয় তাতে আমার বাপের কি, এত সুন্দর ঘুমের লেজ ধরে টেনে দিলে তো বারোটা বাজিয়ে।
পূর্নতা ভাবী অভিমানী সুরে বললো,– চলোনা চাঁদ দেখি প্লিজ।
মজনু আবারও রেগেমেগে বললো,– চাঁদ কি আজ বিউটিপার্লার থেকে সাজুগুজু করে এসেছে নাকি যে আজই চাঁদ দেখতে হবে? নাকি আজকের পরে আর কোনদিন আকাশে চাঁদ উঠবে না বলো তো শুনি।
এবার পূর্নতা ভাবী রেগেমেগে বললো,– ভুঁড়ি বাড়ার কারনে ইয়েটা টেনে যেমন ছোট হয়ে গেছে, রোমান্টিকতাও তেমন মগজ থেকে গায়েব হয়ে গেছে তোমার মজনু!
: এ্যাই এ্যাই পূর্ণ, একদম ইয়ে নিয়ে খোঁটা দেবেনা বলছি, কোথায় চাঁদ আর কোথায় ইয়ে!
: তো কি করবো শুনি মজনু সাহেব! নাম তো একখানা দখল করে বসে আছেন বিশ্ব প্রেমিকের– মজনু। মনে তো প্রেমের "প" ও নেই।

: আহা! প্রেম না থাকলে এই যে এতদিন সংসার করছো সেটা কীভাবে শুনি!
: করছি তো আমি তোমার প্রতি দয়া দেখিয়ে, চলে গেলে জীবনে আর বউ জুটবে না কপালে বলে দিলাম। ফিলিংলেস ফুলকপি একটা জুটছে কপালে!
: পূর্ন একদম ইনসাল্ট করে কথা বলবে না বলে দিলাম।
: তো কি আউটসাল্ট করে বলবো?
: আউটসাল্ট আবার কি! জীবনে প্রথম শুনলাম।
: শুনতে হবেনা তোমার, কেয়ারলেস কুমড়া একটা!
এইভাবে মজনু ভাই আর পূর্নতা ভাবীর ঝগড়া চলে প্রায় দিন, এবং ঝগড়া চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলেই মজনু ভাই গৃহত্যাগ করে বাগানে এসে বসে থাকে রাত গভীরে। আজও ঝগড়ার শেষে মজনু ভাই গৃহত্যাগ করে বাইরের এসে অভি ও মজনু ভাইয়ের বাড়ির বর্ডারের আমগাছটায় উঠে বসেছিল। অভির রূপধারী অশুভ শক্তি যে অনুরাধাকে কোলে করে ঘর থেকে বেড়িয়ে বাগানের দিকে যাচ্ছে সেসব চুপচাপ দেখছিল এতক্ষণ। কিন্তু মজনু তো আর জানেনা ওটা অভি নয়।

অশুভ শক্তি অনুরাধাকে নিয়ে বাগানে ঢুকবে এমন সময় মজনু ছরছর করে আমগাছ থেকে নেমে দৌড়ে কাছাকাছি এসে পেছন থেকে অভির প্রতিচ্ছবিকে বললো,– এই যে রোমিও, বউ তো লাইসেন্স করা জিনিস, তাকে নিয়ে আবার বাগানে যাবার কি দরকার, ঘরে বসে দুষ্টুমি করতে কি সরকার নিষেধ করছে নাকি?
অনুরাধাকে নিয়ে ঘুড়ে দাড়িয়ে অভির জীবন্ত প্রতিচ্ছবি বললো,– আমার বউকে নিয়ে আমি বাগানে যাই না বনবাসে যাই তাতে আপনার কি!
মজনু বললো,– নতুন নতুন বিয়ে করেছো তো, মধু ভরপুর, কিছুদিন যাক তারপর বুঝবে কত মজার কত সাজা। বউকে এতটাও মাথায় তুলে নেচোনা বাছাধন।
মজনুর কথার শব্দে হুশ ফিরলো অনুরাধার, ভীষণ অবাক হয়ে অভির রূপধারী প্রতিচ্ছবিকে বললো,– এ্যাই অভি জলদি নামাও কোল থেকে, মজনু ভাইয়ের সামনে কিরকম কোলে নিয়ে আছে।
কোল থেকে নেমে অনুরাধা মজনুকে বললো,– কী ব্যাপার কি মজনু ভাই, আবারও ভাবীর সাথে ঝগড়া করে গৃহত্যাগী নাকি!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মজনু বললো,– আর বইলো না অনুরাধা, তোমার ভাবীর ইচ্ছা আর হিরো আলমের নতুন করে কবি হবার ভং, মানে কবিতার সর্বনাশ করার উদ্যোগ দুটোই ভয়ঙ্কর, হুটহাট উদ্ভট চিন্তাধারা।
এদিকে মজনু ভাইয়ের বউ একা একা ছাঁদে বসে চাঁদে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে মজনু ভাই এতটা আনরোমান্টিক হবার দুঃখে। হঠাৎ হুবহু মজনু ভাইয়ের মতো দেখতে একজন দৃশ্যমান হয়ে পেছন থেকে পূর্নতা ভাবীর কাঁধে হাত রাখতেই “ ও মা গো ” বলে পূর্নতা ভাবী লাফিয়ে উঠে ঘুরে দাড়িয়ে দেখলো মজনু ভাই হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে।
হাত ধরে টান দিয়ে পূর্নতা ভাবীকে বুকে এনে ঠোঁটে চুমু খেয়ে মজনু ভাই বললো,– ও মা গো নয় পূর্ণ, বলো ও স্বামী গো। তুমি যার বক্ষে অবস্থান করছো সে আমি, তোমার একমাত্র স্বামী।
হঠাৎ মজনু ভাইয়ের এমন পরিবর্তন দেখে ভাভীর ভিরমি খাবার অবস্থা! কেউ কি মজনুর পাচায় রোমান্টিক হবার ভ্যাক্সিন মেরে দিছে নাকি!

পূর্নতা ভাবীকে চুপ মেরে থাকতে দেখে মজনু বললো,– তুমি নীরব কেন পূর্ণ– তোমার নীরবতায় হৃদয় আমার হয়জে ভেঙে চূর্ণ।
মজনুর ভেতর আচানক এমন পরিবর্তন দেখে পূর্ণ ভাবী টাশকি খেয়ে গেল।
আমতা আমতা করে পূর্ণ ভাবী বললো,– হঠাৎ তোমার কী হলো মজনু সোনা।
পূর্ণ ভাবীকে পাজাকোলা করে কোলে তুলে মজনু বললো,– ছাদে বসে শুধু চাঁদ নয়, চলো রুমে গিয়ে আজ তোমাকে আমার পার্সোনাল রকেটে চড়িয়ে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা সবকিছু দেখিয়ে আনবো সুন্দরী।
পূর্ণ ভাবী লজ্জা পেয়ে বললো,– যাহ! দুষ্ট একটা।
পূর্ণ ভাবীকে কোলে করে রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে পূর্ণ ভাবীর চোখে চোখ রাখতেই পূর্ণ ভাবী ঘুমিয়ে পড়লো।
তারপর এই মজনু অদৃশ্য হয়ে গেল।

এদিকে আসল মজনু, অনুরাধা এবং অভির রূপধারী প্রতিচ্ছবি দাড়িয়ে কথা বলার কোন ফাঁকে অভির রূপধারী প্রতিচ্ছবি গায়েব হয়ে গেছে সেটা কেউ টের পায়নি।
অভি নেই খেয়াল করতেই অনুরাধা মজনুকে বললো,– দেখলেন অবস্থা, হুট করে না বলে চলে গেল, আপনিও যান মজনু ভাই, আমি যাচ্ছি।
কথা শেষে মজনু তার বাড়ির দিকে চলে গেল। অনুরাধা এসে রুমে ঢুকে দেখলো অভি নাক টেনে ঘুমাচ্ছে, অনুরাধার ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে অভীর কান ধরে টেনে তুলে জিজ্ঞেস করতে– একা ফেলে আসার মানে কি?
কিন্তু অভি ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আর অভিকে তুললো না অনুরাধা।
শুয়ে পড়ার আগে লাইট অফ করতে গিয়ে অনুরাধার চোখ পড়লো ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়, অনুরাধা ভীষণ চমকে গেল এবং থমকে গেল, শরীরের সমস্ত রক্ত যেন ভয়ে জমাট বেঁধে বরফে পরিনত হয়েছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা অনুরাধা, আয়নায় কেউ একজনকে দেখা যাচ্ছে এবং সে আর কেউ নয়...

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com