বেস্টফ্রেন্ডের অবহেলা । পর্ব - ০৩
আব্বা আমাকে খাবার টেবিলে দেখে রেগে সব খাবার লন্ড ভন্ড করে দিল।আমি যেন বাক শক্তি হারিয়ে ফেলছি।এরপর আমার কাছে এসে...
আব্বাঃঠাস... জানোয়ার তোকে না কাল বলেছি এই বাড়িতে তোর খাবার বন্ধ।তাহলে তুই এখানে কেন? কথা কি কানে যায় না।আমি বলি নাই এই বাড়ির খাবার তোর জন্য নিষিদ্ধ। তাহলে এখানে এসেছিস কেন?
আমি মাথা নিচু করে বললাম...
আমিঃখুদা লাগছিল তাই আসছি
বড় আপুঃআচ্ছা তুই কি আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না? একটু শান্তিতে খেতেও দিবি না।আচ্ছা এখানে আসার কি দরকার ছিল তোর?১ দিন না খেলে কি মরে যাইতিস? এতো বেহায়া কেন তুই হুম?কাল এতো কিছু হওয়ার পরও তোর গলা দিয়ে খাবার নামবে?তুই এতো বেহায়া কোথায় থেকে হইলি বুঝলাম না।
আমি আপুর কথা যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যে আপু আমাকে চোখে হারায় সে এই কথা গুলো বলছে।আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে।
সিমিঃএসব তুই কি বলছিস আপু?ভাই নিজের বাসায় খাবে না তো কোথায় খাবে?
আব্বাঃনা ও এই বাসায় খাবে না।যে আমার মান সম্মানের দিকে না তাকিয়ে একটা মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় রঙ্গ করে বেড়ায় সে আমার ছেলে না।
আমিঃআব্বা আমি সত্যি খারাপ কিছু করিনি।
আব্বাঃআবার মুখে মুখে কথা। আজ তোর এমন হাল করবো।
এই বলে আব্বা মারতে থাকে।একসময় আমাকে টেনে হিঁচড়ে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।আর বলে..
আব্বাঃএই রুমে যেন কেউ খাবার না দেয় নাহলে ব্যাপার টা খুব খারাপ হয়ে যাবে।
আমি রুমের মেঝেতে বসে কান্না করছি।কতক্ষণ কাদছি মনে নাই।পেটের খুদায় মরে যাচ্ছি।
হঠাৎ দেখি সাকিব কল করছে। কল করেই বলল...
সাকিবঃআজ কলেজে আসিস নাই কেন রে হারামি?
আমিঃদোস্ত প্লিজ কিছু খাবার আমার রুমের জানালা দিয়ে দিবি প্লিজ।আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে মরে যাবো
সাকিবঃএভাবে বলছিস কেন? কি হইছে বল?
আমিঃপ্লিজ দোস্ত দিয়ে যা।
সাকিবঃএক্ষনি যাচ্ছি একটু ওয়েট কর।
কিছুক্ষণ পর সাকিব খাবার নিয়ে এসে জানালা দিয়ে দিল।আমি ঠিক মতো হাটতে পারছি না।আমার অবস্থা দেখে সাকিব কেদে দিল।আর বলল..
সাকিবঃতোর এই অবস্থা কেন দোস্ত? কি হইছে তোর?কে তোর এই অবস্থা করছে? প্লিজ বল দোস্ত।
আমিঃসব আমার ভালো মানুষীর ফল রে।আচ্ছা তুই যা। আব্বা দেখলে খুব রাগ করবে।যা প্লিজ।
সাকিব কে অনেক বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলাম।
এইভাবে প্রায় একমাস চলল।সাকিব প্রতিদিন খাবার দিয়ে যায়।একদিন হঠাৎ দেখি কে জানি দরজা খুলে দিল।দরজা খোলার সাথে সাথে সিমি আপু দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল।আমার চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে না।কেন হচ্ছে না জানি না।পিছনে দেখলাম সাকিব আর মা দাড়িয়ে আছে।
আমিঃমা কেমন আছো?বেচে আছি কি না দেখতে আসছো তাই না? দেখ মরি নাই বেচে আছি।
মা আমার কথা শুনে কাদতে কাদতে চলে গেল।
সাকিবঃএই দোস্ত তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।বাহিরে যাবো।
আমি সাকিবের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।ও কি সত্যি বলছে?
সাকিবঃকি ভাবছিস? সত্যি বলছি তারাতাড়ি নে।বাহিরে যাব।চেহারা কি করে রাখছিস।
সাকিবের কথায় বাহিরে যাওয়ার লোভ টা সামলাতে পারলাম না।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গেলাম।আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকেই চিনতে পারলাম না।মনটা খারাপ হয়ে গেল।
সাকিব পিছন থেকে ঘারে হাত দিয়ে বলল..
সাকিবঃমন খারাপ করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।চিন্তা করিস না।
আমিঃতুইও কি ওদের মতো মনে করিস আমি চরিত্রহীন?
সাকিবঃদুনিয়ার সবাই বললেও আমি বিশ্বাস করবো না।আমি আমার বন্ধুকে চিনি।
আমিঃতাহলে লিমা চিনলো না কেন?
সিমিঃওর কথা বাদ দে।ওর নামও আর বলবি না।আচ্ছা আমিও তোমাদের সাথে যাব।
সাকিবঃঠিক আছে আপু চলেন।
তিনজনে বাহির হলাম।রুমের বাহিরে দেখি আব্বা মাথা নিচু করে বসে আছে।আমাদের আাসার শব্দ শুনে আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো।আমি দেখার সাহস পেলাম না।বাহিরে চলে আসলাম।
বাহিরে বেরিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললাম।আজ কতো দিন পর খোলা আকাশ দেখলাম।বাহিরের মানুষজন কেমন করে যেন দেখছে।
সাকিবঃচল আগে সেলুনে যাব।
তিনজনে সি এন জি তে আগে সেলুনে গেলাম।সিমি আপু আর সাকিব অনেক কথা বলছে আমার মন ভালো করার জন্য।আমি শুধু শুনছি।সেলুন থেকে ৩ জনে একটা পার্কে গেলাম।সেখানে গিয়ে এক পাশে ৩ জনে বসলাম।সাকিব খাওয়ার জন্য কিছু আনতে গেল।আমি সিমি আপুকে বললাম...
আমিঃআমাকে বাহির করলে কেমনে আপু?
সিমিঃসে অনেক কথা।পরে শুনিস।
আমিঃনা এখন শুনবো।
সিমিঃআচ্ছা শোন তাহলে।আমি সাকিব কে অনেক অনুরোধ করি আব্বাকে রাজি করানোর জন্য।সাকিব প্রায় প্রতিদিন আব্বার কাছে আসে আর হাত পা ধরে অনুরোধ করে।আব্বা অনেক ভাবে অপমান করে।কিন্তু সাকিব হাল ছাড়েনি।অবশেষে আজ পা ধরে অনেক অনুরোধ করে কান্না করে।অবশেষে আব্বা রাজি হয়।
আমিঃএতো কিছু হয়ে গেল আর আমি জানতে পার লাম না।
সাকিবঃকি হয়ে গেল আর কি বুঝতে পারলি না হুম?
আমি সাকিব কে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম।সাকিব আমাকে শান্তনা দিতে লাগলো।
অনেকক্ষন তিনজনে গল্প করলাম।তারপর তিনজনে উঠে বাহিরে আসতে যা দেখলাম।নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
দেখলাম লিমা একজনের সাথে........
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com