বেস্টফ্রেন্ডের অবহেলা । পর্ব - ০৪
পার্কের এক পাশে লিমা আর সাব্বির বসে আছে।লিমাকে দেখে ওর সাথে কথা বলার লোভ টা সামলাতে পার লাম না।ওদের দিকে যেতে চাইলে সিমি আপু বাধা দিয়ে বলল..
সিমিঃতুই ওদের কাছে যাবি না।
আমি কোনো বাধা না মেনে ওদের কাছে চলে আসলাম।ওদের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম...
আমিঃকেমন আছিস তোরা?
সাব্বির তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে বলল..
সাব্বিরঃআমরা ভালো আছি।তুই কেমন আছিস? এ কি হাল হয়েছে তোর? মাফ করে দিস ভাই
লিমাঃসাব্বির তুই ওই চরিত্রহীনের কাছে মাফ চাচ্ছিস কেন?আর ওর মতো রাস্তার কুকুরের সাথে কথা বলছিস কেন?তোকে না বাধা করছি।
আমিঃলিমা এসব কি বলছিস?
লিমাঃঠিক এ বলছি।আর তোর ওই নোংরা মুখে আমার নাম নিবি না।আর সাব্বির তুই থাকলে থাক আমি গেলাম।
এই বলে লিমা কাদতে কাদতে চলে যেতে লাগলো।কেন কাদছে বুঝলাম না।সাব্বিরও পিছে পিছে চলে গেল।
সিমি আপু আমাকে বলল..
সিমিঃবললাম না ওদের কাছে যাস না। কথা শুনিস না কেন?
আমিঃআরে ধুর আপু লিমা শয়তানি করলো।ওর সাথে অনেকদিন কথা বলি নাই তো তাই রাগ করছে হয়তো।চল বাসায় যাই।
তিনজনে বাসায় চলে আসলাম।সাকিব আমাদের নেমে দিয়ে চলে গেল।রাতে খাওয়ার কথা বলতে মা আসলো।
মাঃচল বাবা খেতে আয়।তোর সব প্রিয় খাবার রান্না করছি আজকে।
আমিঃআমার খুদা নাই মা।তোমরা খেয়ে নাও।
মাঃসে কি কথা।না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বি।
আমিঃএতোদিন না খেয়ে যখন মরি নাই তাহলে আর মরবোও না ইনসা আল্লাহ। তোমরা খেয়ে নাও।
আমার কথা শুনে মা কাদতে কাদতে চলে গেল। রাতে আর কিছু খেলাম না
পরের দিন সকালে ঘুমের মধ্যে কে যেন ডাকতেছে।চোখ খুলে দেখি সাকিব ডাকতেছে।উঠে বললাম..
আমিঃএই শালা এতো সকালে ডাকছিস কেন হুমম?
সাকিবঃএখনো সকালেই আছে শালা?ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ কয়টা বাজে?
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯ঃ২৫ বাজে।
সাকিবঃতাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।কলেজে যাব।
কলেজের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। সাকিব বুঝতে পেরে বলল...
সাকিবঃচিন্তা করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমিঃআব্বা মানবে না রে।
সাকিবঃতুই চিন্তা করিস না।আমি সব মেনেজ করে নিব।
এরপর রেডি হয়ে রুমের বাহিরে আসলাম।বাসা থেকে বাহির হওয়ার সময় মা বলল....
মাঃকই যাচ্ছিস বাবা? আয় খেয়ে যা।
আমিঃকলেজে যাচ্ছি।আর আমার খাওয়ার ইচ্ছে নেই।
মাথা নিচু করে বললাম।দেখলাম খাওয়ার টেবিলে আব্বা বসে আছে।
সিমি আপু বলল...
সিমিঃএকদম এই কথা বলবি না।তুই কি অন্যের খাচ্ছিস নাকি?তুই তোর খাচ্ছিস।।তাই বেশি কথা না বলে খেতে আয়।
কিছু না বলে সাকিব সহ কিছু খেয়ে নিলাম।তারপর বেরিয়ে পড়লাম কলেজের উদ্দেশ্যে।
অনেকদিন পর আজ কলেজে গেলাম।সবাই কেমন চোখে যেন দেখছে।
দূরে দেখলাম লিমা আর সাব্বির দাড়িয়ে আছে।সাকিব কে জোর করে ওদের কাছে নিয়ে গেলাম।
ওদের সামনে গিয়ে বললাম..
আমিঃকি রে কেমন আছিস?কখন আসছিস কলেজে?আর দেখেও কথা বলছিস না কেন?
লিমাঃআচ্ছা সাব্বির চল।
আমিঃচলে যাচ্ছিস কেন?কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস না?
লিমাঃকোনো রাস্তার কুকুরের সাথেকথা বলার ইচ্ছে আমার নাই।সাব্বির চল।
মনটা খারাপ হয়ে গেল।দেখলাম লিমার চেহারা আর আগের মতো নাই।অনেকটা শুকিয়ে গেছে।
আমার নীরবতা দেখে সাকিব বলল..
সাকিবঃচল ক্লাসে যাই।
এরপর ক্লাসে গেলাম।ক্লাস শেষ করে বাহিরে এলাম।এসে দেখি লিমা আর সাব্বির কোথায় যেন যাচ্ছে। আমি ওদের সামনে গিয়ে বললাম...
আমিঃকোথায় যাচ্ছিস তোরা?
লিমাঃসেই কৈফিয়ত কি তোকে দিব?তুই কে আমার যে তোকে বলতে হবে?
আমিঃহুমম দিতে হবে কারন আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড।
লিমাঃহাসালি তুই।তোর মতো চরিত্রহীন আমার বেস্টফ্রেন্ড?আর কোথায় যাচ্ছি জানতে চাইলি না?আমি সাব্বির কে ভালোবাসি।ওর সাথে পার্কে যাচ্ছি।
আমি লিমার হাত ধরে বললাম...
আমিঃলিমা এরকম করিস না প্লিজ মরে যাব।
লিমাঃঠাস্... কুত্তার বাচ্চা কথা তোর কানে যায় না?এরপর যদি কোনোদিন আমাকে টাচ করার সাহস করিস তো মেরে ফেলবো।
এই বলে ওরা চলে গেল।আর আমি শুধু একটা কথাই ভাবছি।এই কি সেই লিমা।এতো মানুষের মাঝে ও আমাকে থাপ্পড় মারতে পারলো?
ওই খানেই দাড়িয়ে ওই সব ভাবছি।
সাকিব কোথায় থেকে যেন এসে বলল..
সাকিবঃচল বাসায় যাই।
ওকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললাম..
আমিঃচল।
এভাবে দিন চলতে লাগলো।প্রতিদিন বেহায়ার মতো লিমার সামনে যাই একটু কথা বলার জন্য।কিন্তু অপমান ছাড়া কিছু পাই না।
একদিন কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিলাম।কয়েকজন পুলিশ আমাকে তুলে নিয়ে যায়।তুলে নিয়ে অনেক টর্চার করে।সাকিব জানতে পেরে দ্রুত উকিল নিয়ে আমার জাবিন করায়।পরে জানতে পারি লিমা নাকি আমার বিরুদ্ধে ইভটিজিং এর মামলা করছে।
পুলিশ এমন টর্চার করে যে দাড়াতে পারছিলাম না।সাকিব ধরে ওর বাসায় নিয়ে যায়।আর সিমি আপুকে ফোন করে সব জানিয়ে দেয়।
সাকিবঃএভাবে জীবন চলতে পারে না সালাফি।তুই বুঝছিস না কেন?
আমিঃখুব ভালোবাসি যে
সাকিবঃতুই নিজেকে সংযত রাখ দোস্ত।দেখ তোকে ঘুরে দাড়াতে হবে।তোকে দেখিয়ে দিতে হবে।পারবি না?
আমিঃপারবো দোস্ত। সব পারবো।আজকে থেকে আগের সালাফি মরে গেল।
এভাবে দুজনে অনেক কথা বললাম।
তিনদিন পর আজ আমি সুস্থ। সাকিব সহ কলেজে গেলাম।
লিমা আমাকে দেখে বলল..
লিমাঃএখনো বেচে আছিস?তোর তো দেখি কৈ মাছের প্রাণ।
সাকিবঃলিমা আমি তোমাকে ভালো ভাবতাম।কিন্তু তুমি যে এতো নিচু মানসিকতার তা জানতাম না।
লিমাঃও যে কষ্ট আমাকে দিয়েছে তার হাজার গুণ কষ্ট ওকে দিবো।
সাকিবঃও তোকে কোনো কষ্ট দেয় নি।আর একদিন এই কাজের জন্য অনেক পস্তাবি।
আমিঃসাকিব চল তো ভালো লাগছে না।
এভাবেই নানা ভাবে প্রতিদিন লিমা আমাকে অপমান করে।কিন্তু আমি আর কিছু মনে করি না।
আর আমি এখন বাসায় থাকি।
বলতে বলতে এইচএসসি পরীক্ষা চলে আসলো।পরীক্ষা দিলাম।ইনসা আল্লাহ পরীক্ষা ভালো হইলো।সে অনুযায়ী ফলাফলও আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হইলো।
সবাই চয়েজ দিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।কিন্তু আমি আর সাকিব লন্ডনের এক মেডিকেল এ চয়েজ দিলাম।
সেখানে আমার সিলেকশন হলো আর সাকিবের হলো না।ও আমাকে অভিনন্দন জানালো।আমি এই ব্যাপারটা কাউকে জানাতে বাধা করলাম।আমার এতোদিন লেখাপড়ার খরচ সাকিব দিয়েছে।
অন্যদিকে সাব্বির কেন জানি দুজনকে আাসতে বলল..
গিয়ে দেখি লিমাও ওর সাথে আছে।ওদের ৩ জনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সিলেকশন হয়েছে।আমার হয়নি শুনে লিমা বলল...
লিমাঃঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি যেমন তেমন রাস্তার কুকুরের জন্য নাকি যে সবার চান্স হবে?
আমি শুনে হাসলাম।সাথে সাকিবও হাসলো।তারপর আমি বললাম..
আমিঃআচ্ছা আমার পক্ষ থেকে আজ তোদের জন্য ট্রিট।
আমার কথায় লিমা যেন কেমন করে তাকালো।মনে হয় ভাবলো আমি দুঃখে পাগল হয়ে গেছি।
একটু পর ওদের কাছে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com