ঝরা ফুলের বাসর । পর্ব - ০৫
এই কলকলে শীতে, এতো রাতে হৃদ যাবে কোথায়? এতোটা পাষাণ মনের মানুষ আমি নই।
খালাম্মাকে বোঝালাম, খালুকে বোঝালাম।
আজকের রাতটা অন্তত্য হৃদকে থাকতে দিও।আমি বোঝানোর পরে খালাম্মা, খালু রাজি হয়ে যায় আর দরজাটা খুলে দেয়।
হৃদকে বলে, আজকের রাতটুকু থেকে যেতে।আর হৃদ থেকে যায়।
ও নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। আমরাও আমাদের যার যার রুমে এসে শুয়ে পরি।
যদি পারতো সারাটা রাত জাগিয়ে রাখতো।
আর সকাল হতেই সকলে ঘুম থেকে উঠার আগে আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যেত।
কিন্তু আজ যেন বিছানাটা শূন্য শূন্য লাগছে।
তবে ভালো হয়েছে ও চলে গিয়েছে।
শরীর ছাড়া তো ও আর কিছুর টানে আমার কাছে আসতো না।
যদি তাই না হতো তাহলে সেদিন ওভাবে আমার সম্মান নস্ট করতে পারতো না।
হৃদের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শুনতে পায় দরজায় কড়াঘাত।
আমি বুঝতে পারি এটা হৃদই হবে।হোক হৃদ! আজ কিছুতে দরজা খোলা যাবে না।
কিন্তু নাহ! দরজার কড়াঘাত ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
খালু, খালাম্মা শুনতে পেলে আবার এসে ওকে মারবে।আমি চাই না ও আর মাইর খাক।
তাই না চাইতেও গিয়ে দরজাটা খুলে দিই।
আমি দরজা খোলা মাত্র হৃদ আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি এক ধাক্কা দিয়ে ওকে দূরে সরিয়ে দিই।
লজ্জা করে না আপনার? এতোকিছুর পরেও সেই আমার কাছে এসেছেন? কেন? এই শরীরটার জন্য?
আমার কথাটা শেষ হওয়ার সাথেই হৃদ আমার গালে একটা কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
তারপর আমাকে টেনে রুমের মধ্যে নিয়ে এসে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে আমাকে বলে,
আজ তুই আমায় অনেক অপমান করেছিস।অনেক কস্ট দিয়েছিস ফুল।
আর ভেতরটায় যে ব্যাথা অনুভব করছি সেটি কি তুই বুঝতে পারছিস না?
খুব যন্ত্রণা হচ্ছে আমার।
নাটক বন্ধ করুন।একদম মন ভোলানো কথা বলার চেস্টা করবেন না।
আপনার মতোন মানুষের আবার কস্ট, যন্ত্রণা।
কিভাবে পারেন এসব নিখুঁত অভিনয় করতে আপনি?
ফুল...বলে হৃদ নিজের হাতটা উঠায়।আমাকে মারতে গিয়েও থেমে যায়।
তারপর বলে, তোকে আমি অনেকবার বলেছি সত্যিটা বাবা-মাকে বলে দিতে।
কিন্তু তুই চাস নি।কেন? আমাকে ঘৃণা করিস তাই।আর আজ আমার সব দোষ?
হ্যাঁ, আপনার সব দোষ।আপনার জন্য আমার মা আত্নহত্যা করেছে।
আমি চাইলেও আপনাকে কখনো মেনে নেবো না।
দরকার পরলে এবাড়িতে কাজের মেয়ে হয়ে সারাটা জীবন পরে থাকবো।
যতো অপমানিত হওয়ার হবো তবুও আপনাকে কখনো আমি মেনে নিতে পারবো না।
ঠিক এই জেদটাই ধরেছিলি তুই।আমি তোকে বলেছিলাম বাচ্চাটার একটা পরিচয় লাগবে।
তুই একা ওকে নিয়ে পারবি না সমাজের চোখে মাথা উঁচু করে বাঁচতে।
কিন্তু তুই শুনিস নি।তাই আমি ভয় দেখিয়ে তোকে বিয়ে করেছি।
আর তুই কি করলি? বিয়ের কথাটাও না নিজে কাউকে বললি আর না আমাকে বলতে দিলি।
এখন সব দোষ আমার?
বন্ধ করুন তো আপনার নাটক। আজ রাতটাই তো আছেন।এই একটাদিন একটু শান্তিতে থাকুন।
আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আপনার এসব নাটক দেখতে আমার আর ইচ্ছে করছে না।
যান নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।
আর আমাকেও এবার একটু ঘুমোতে দিন।
কথাটা বলে দরজাটা খুলে বাইরের দিকে ইশারা করলাম।
হৃদ এসে আমাকে টেনে হাত ঘুরিয়ে পিছনে নিয়ে শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, কোথাও যাবো না আমি।আর যদিও যাই তোকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।
দরজাটা দিয়ে আমাকে নিয়ে বিছানায় ফেলে বলে, ঘুম আসছে না তোর?
যা ঘুমিয়ে পর।তারপর বিছানার অন্য পাশটায় উল্টো ঘুরে শুয়ে থাকে হৃদ।
সকালে,,, রাতে আর আমার ঘুম হয় নি।আমার উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে এখনো শুয়ে আছে হৃদ।
সারাটা রাত কক কন্ঠস্বরে হালকা কান্নার আচ পেয়েছি হৃদের দিক থেকে।
হৃদ কি সত্যি কেঁদেছে? কাঁদলে কাঁদুক, তাতে আমার কি? ওকে শুধুই ঘৃণা করি আমি।
খালাম্মা এসে বাইরে থেকে ডাকছে।ফুল হৃদ কি আবার তোর রুমে এসেছে?
ওতো নিজের রুমে নেই। দরজাটাও বাইরে থেকে খোলা।কথা বল মা।তুই ঠিক আছিস তো?
খালাম্মার কথা শুনে আমি উঠে বসি।কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না।
হাত দিয়ে হৃদের পিঠে খোঁচা দিয়ে বলি উঠতে।
আর পিঠের কাটা জায়গায় খোঁচা খেয়ে হৃদ ব্যাথা পেয়ে চিৎকার দিতে যায় আমি
ওর মুখটা চেপে ধরি।আর ফিসফিসিয়ে বলি, উসসসস! একটুও শব্দ করবেন না।
আপনি এখানে আছেন জানতে পেলে আপনাকে আবার মারবে।
হৃদ আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি হৃদের মাথার বালিশটার দিকে তাকিয়ে দেখি
ভিজে চুপচুপ করছে।হয়তো কাল রাতে খুব কেঁদেছে।
আমি হৃদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে খালাম্মাকে বলি,
নাহ খালাম্মা হৃদতো এখানে আসে নি।হয়তো সকাল হয়েছে তাই চলে যেছে।
সত্যি কি হৃদ চলে গেছে ফুল?
হ্যাঁ।কালতো সেই কথায় হয়েছিলো।সকাল হলেই ও চলে যাবে।
আচ্ছা, তুই ঘুমো তাহলে।এতো সকালে উঠার দরকার নেই। আরেকটু বেলা হোক তাই উঠিস।কথাটা বলে খালাম্মা চলে যায়।
খালাম্মা যেতেই হৃদের বুকে ধাক্কা দিয়ে আমি উঠে আসি।হৃদ অনেকটা অবাক হয় আমার এমন আচারণে।
কি হলো ফুল এইভাবে উঠে গেলি কেন?
আমি খালাম্মাকে বলে দিয়েছি আপনি চলে গেছেন।তাই এখন চুপিচুপি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। নইতো আপনি আছেন দেখলে আবার মারবে আপনাকে।
ওহহ এইজন্য? তাই ভাবি তুইতো আমার কাছে আসার মানুষ না।
যাই হোক, আমি এবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছি না।
মানে?
মানেটা তোকে আমি আগেও বলেছি ফুল।গেলে তোকে নিয়েই যাবো।
অসম্ভব আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।
তাহলে এখানে থাকতে দে।তোর কাছে লুকিয়ে রাখ আমায়।
যতোদিন না মা-বাবা আমাকে ক্ষমা করছে।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com