ঝরা ফুলের বাসর । পর্ব - ০৭
হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে রেস্টুরেন্টে খেয়ে, সিনেমা দেখে রাতে বাড়িতে ফিরে এলাম।
সারাদিনে অনেক মজা করলাম।তাই বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীরে হাতের ইঁদুর মারা ওষুধটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পরলাম।
আর নিজের কপাল চাপড়াতে থাকি। হায়! হায়! হৃদতো ওয়াশরুমের ভেতরে ছিলো।
তখন দরজাটা লক করলাম আর তো খোলা হলো না।
আমি ছুটে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে দিয়।
দেখি ওয়াশরুমের ভেতরে এক কোণায় দেয়ালের সাথে চিপকে গুটিশুটি খেয়ে পরে আছে হৃদ।
আর কাঁপছে।আমি হৃদের কাছে গিয়ে ওকে ছুঁয়ে দেখি ওর শরীরটা পুরো ভেজা।
হয়তো সকালে আমাকে গোসল করানোর সময় ও ভিজে গিয়েছিলো।
হৃদ! এই হৃদ! শুনতে পারছেন আমার কথা?
হৃদ কোনো কথা বলে না।শীতে কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়।
আমি ওর কপালে হাত রেখে দেখি জ্বরে গা'টা পুরে যাচ্ছে।
আমি ওর হাতটা আমার কাঁধে প্যাচিয়ে ওকে ধরে উঠিয়ে আমার রুমে নিয়ে আসি।
ওকে বিছানার উপরে শুইয়ে দিয়ে পড়নের ভেজা প্যান্টটা খুলে দিয়।
তারপর ওর ভেজা শরীর মুছিয়ে দিয়ে কম্বলটা টেনে দিয়ে নিচু হয়ে ওর কানের কাছে
নিজের মুখটা এগিয়ে এনে বলি, আপনি এখানে শুয়ে থাকুন।
আমি আপনার রুম থেকে আপনার কাপড় আর শীতে জ্যাকেট নিয়ে আসি।
কথাটা বলে আমি যেতে লাগলে হৃদ আমার হাতটা পেছনের থেকে টেনে ধরে।
আর শীতে কাঁপতে কাঁপতে আস্তে করে বলে, কোথাও যাস না ফুল।আমার কাছে থাক।
আমি কি করবো বুঝতে পারি না।পাশের টেবিলে গ্লাস ভর্তি পানি দেখে ওরনাটা গ্লাসে
ডুবিয়ে ওর কপালে ছুঁইয়ে দিয়।অনেকক্ষণ ধরে ভেজা ওরনা ছুঁইয়ে দিতে থাকি ওর কপালে।
কিন্তু ওর কাঁপুনি আরও বেড়েছে।
এখনো শীত করছে হৃদ?
আমি কি গিয়ে আপনার রুম থেকে আরেকটা কম্বল নিয়ে আসবো?
হৃদ এখনো কাঁপছে। আমি উঠতে গেলে আবার আমার হাতটা টেনে ধরে বলে,
কোথাও যাস না ফুল আমাকে ছেড়ে।
আচ্ছা ছাড়ুন আমি কোথাও যাচ্ছি না।আমাকে শুতে দিন।
ওর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ঘুরে পাশের বালিশে গিয়ে শুয়ে পরি।
তাকিয়ে দেখি হৃদের কাঁপুনি এখনো থামে নি।
আমি কম্বলটার ভেতরে ঢুকে যায়। আর হৃদকে বলি, কাছে আসুন।
ওকে আমার কাছে টেনে নিয়ে আসি।তারপর খুব জোড়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।
আর বলি, এখনো কি খুব শীত করছে?
হুমমমম বলে হৃদ আমাকে ঘুরিয়ে ওর শরীরের উপরে নিয়ে নেয়।
আমার শরীরের সবটুকু ভার ওর উপর।
ও আমার পিটটা খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
আর আমিও ওর বুকে শক্ত করে মুখ গুজে ওকে জড়িয়ে শুয়ে আছি যেন ওর শীত না করে।
আর এভাবেই রাতে ঘুমিয়ে পরি।
সকালে,,,
ঘুম ভাঙতেই আমি খেয়াল করি এখনো হৃদের বুকের উপরে শুয়ে আছি।
উঠতে গেলেও পারছি না। হৃদ আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
মুখটা তুলে সামনে চেয়ে দেখি হৃদের চোখদুটো খোলা।
একি আপনি জেগে আছেন? কপালে হাত দিয়ে দেখি হৃদের শরীরে জ্বরটা আর নেই।
এবার আমি নিজেকে হৃদের থেকে ছাড়ানোর চেস্টা করি।
ছাড়ুন! ছাড়ুন আমাকে।
আর হৃদ আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে।
উফফ! এতো নরাচরা করিস না তো।শান্তিতে ঘুমা।
আমি উঠবো ছাড়ুন! উঠতে দিন আমাকে।
এতো সকালে উঠে কোথায় যাবি? বাবা-মা কেউ বোধহয় এখনও উঠেনি।
তার চেয়ে বরং আরও কিছুক্ষণ শুয়ে থাক।
নাহ।আমাকে যেতে হবে ছাড়ুন।আপনার রুম থেকে কাপড় আনতে হবে।
হৃদকে জোড় করে ধাক্কা দিয়ে উঠে আসি আমি।তারপর হৃদের রুম থেকে কাপড় নিয়ে এসে হৃদকে শোয়া থেকে টেনে উঠিয়ে বসায়। হৃদের হাতে কাপড় দিয়ে বলি, এগুলো পরে নিন।
হৃদ হেসে উঠে আমার হাত থেকে কাপড়গুলো নিয়ে পরতে পরতে বলে, আজ তোকে একদম আমার বউ বউ লাগছে ফুল।
মা..মানে? আমি কারও বউ টোও নই।আপনার সাথে আমি ভালোভাবে কথা বলছি বলে ভাববেন না যে আপনাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।
কথাটা শুনে হৃদ আমার দিকে আড় চোখে তাকায়। কিছু না বলে চুপচাপ কাপড় পরতে থাকে।তারপর কাপড় পরা হয়ে গেলে আমার সামনে এসে দাড়ায়। আর আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে, তুই আসলেই একটা জিনিস।
জিনিস মানে কি? ছাড়ুন! কি বলতে চান আপনি?
কি বলছি বুঝতে পারছিস না? ভেজা শরীরে তোকে দেখলে আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।
আর কাল রাতে তোর কি হয়েছিলো হুমমম?
মানলাম আমার জ্বর হয়েছে তাই বলে ভেজা প্যান্ট খুলে দিয়েছিস
তারপর আমাকে কাছে টেনে নিয়ে আমার বুকে জড়িয়ে শোবার কি ছিলো?
আমি ভাবলাম আপনার শীত করছে তাই।
হৃদ একটা মুচকি হাসি দেয়, শীত করছে তাই?
আচ্ছা এমন একটা মানুষের বুকে নিজেকে জড়িয়ে ঘুমোলি কেন যাকে তুই ঘৃণা করিস?
হৃদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিই না আমি।কি বলবো সেটা ভাবতে থাকি
এরই মধ্যে খপ করে হৃদ আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া বসিয়ে দেয়।
আর চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে।আমি ওকে ধাক্কা দিতে যাবো ভেবেও পারি না।
ওর এই অনুভুতির শিক্ত প্রশান্তির কাছে আমি হেরে যায়।
নিজের চোখদুটো বন্ধ করে নিই।আর ওর ঠোঁটের আলতো পরসে ডুবে যায় আমিও।
কিছুক্ষণ পর খালাম্মার কন্ঠে ধ্যান ফেরে আমার।
দরজার কাছে এসে খালাম্মা আমাকে ডাকতে থাকে।
ফুল মা সকাল হয়ে গেছে, উঠেছিস?
খালাম্মার ডাকে শুনে আমি নিজের ঠোঁট দুটো শক্ত করে নিয়।
আর হৃদ থেমে যায়। আমার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকায়।
কি হলো ফুল? থেমে গেলি কেন? এখন ভালো লাগছে না তোর?
খালাম্মা হৃদের কন্ঠ শুনে ফেলে আর জোড়ে জোড়ে দরজা ঘা দিতে থাকে।
ফুল দরজা খোল দ্রুত।তোর সাথে কে আছে? হৃদ কি তোর রুমে?
খালাম্মার চিৎকার শুনে আমি খুব ভয় পেয়ে যায়। আর শক্ত করে হৃদকে জড়িয়ে ধরি।
তারপর কান্না জড়িত কন্ঠে বলি, কথা কেন বললেন আপনি?
এখন খালাম্মা এসে আপনাকে এখানে দেখলে আবার কালকের মতোন মারবে।
হৃদ খুব খুশি হয় আমাকে এভাবে ওর জন্য ভাবতে দেখে।হৃদ আমায় ছাড়িয়ে নিজের সামনে এনে মুখটা ধরে বলে, তুই আমায় ভালোবেসে ফেলেছিস ফুল?
জানি না।প্লিজ আপনি কোথাও লুকিয়ে যান।
হৃদ মুচকি হেসে বলে, নাহ! আজ আমি জিতে গেছি।বাবা-মা যদি আমাকে ক্ষমা নাও করে আমি তোকে নিয়ে এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবো তবুও আর লুকিয়ে থাকবো না।
কথাটা বলে হৃদ রুমের দরজাটা গিয়ে খুলে দেয় আমি ওকে বাঁধা দেওয়ার সময়টুকুও পাই না।
দরজা খুলতেই খালাম্মা চোখের সামনে হৃদকে দেখে অনেক রেগে যায়। হৃদকে কিছু না বলে ওকে ধাক্কা দিয়ে আমার কাছে আসে।আর আমার গালে ঠাসসস! করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
হৃদ মা বলে ছুটে এসে আমাকে খালাম্মা সামনে থেকে টেনে ওর পিছনে নেই।
ওকে কেন মারলে মা? তোমার সব রাগ তো আমার উপর মারতে হয় আমাকে মারো মা।
মেরে তোমার সব রাগ ঝেড়ে ফেলো।
কথাটা বলে হৃদ খালাম্মাকে ছুতে যাবে খালাম্মা হাত উঁচু করে হৃদকে থামিয়ে দেয়।
একদম ছুবি না আমাকে।আর কি বলছিলি ওকে কেন মেরেছি? ওকে মেরেছি কারণ ও আমার আপন।
তুই কে যে তোকে মারবো? হৃদকে কথাটা বলে খালাম্মা ঘুরে আমার কাছে আসে।
আর আমাকে টেনে ধরে ঝাকিয়ে বলে, ভুলে গেছিস ফুল ও তোর মায়ের খুনী?
কি কি অন্যায় করেছে তোর সাথে? মনে কর ওকে কি ক্ষমা করা যায়।
**পরের পর্বগুলো সবার আগে পড়তে চাইলে আইডিতে রিকোয়েস্ট দিয়ে পড়তে পারেন।
খালাম্মার কথা হৃদ ধরে না।ও নিশ্চিত হয়ে থাকে।
কারণ ও ভালো করে জানে আমি এখন খালাম্মার কোনো কথায় আর গলবো না।
কারণ আমার চোখে ও আজ নিজের প্রতি ভালোবাসা দেখতে পেয়েছে।
হৃদ শুকনো একটা হাসি দিয়ে বললো।
ফুল আমাকে ভালোবাসে মা।ওর মাথায় এখন এসব কথা ঢুকবে না।
তোমরা যদি আমার সাথে এমন করো তাহলে ফুলকে নিয়ে আমি এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
হৃদের কথাটা শুনে আমি চোখদুটো বড়বড় করে হৃদের দিকে তাকায় আর নিজের অতীতটা
মনে করতে থাকি।মনে মনে ভাবি, খালাম্মা তো ঠিকই বলছে হৃদকে ক্ষমা করা যায় না।
আবেগের বসে আমি কেন সব ভুলে যায়?
এমন সময়ে হৃদ এসে আমাকে ধরলে আমার চোখের সামনে নিজের মায়ের মৃত মুখটা ভেসে
ওঠে।আর রেগে গিয়ে আমি হৃদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলি, চলে যান এবাড়ি ছেড়ে।
ফুল এখন আবার কি হলো তোর?দেখ একদম মাকে খুশি করার দরকার নেই।
তোর মনে যেটা আছে সেটা বল।
কথাটা বলে হৃদ আমাকে ছুতে যাবে আর আমি একটা চিৎকার দিয়ে হৃদকে ধমকের স্বরে থামিয়ে দিয়।
শুনতে পান নি আপনি? আমি চলে যেতে বলেছি আপনাকে।
একটা দুশ্চরিত্র, নারী দেহ ভোগী আর খুনীকে কখনোই আমি ক্ষমা করবো না।
আপনার ভুলের জন্যই আমার মা আমাকে ভুল বুঝেছে, আত্নহত্যা করেছে।
যান! চলে যান আমার সামনে থেকে।
হৃদ আবার আমাকে বোঝাতে চায় সে ভুল করেছে কিন্তু আমি এবার ওর কোনো
কথাই শুনি না।ওকে অনেক কিছু বলে অপমান করে বলি, এবাড়ি থেকে চলে যেতে।
আমি বুঝতে পারি হৃদের খুব কস্ট হচ্ছে আমার মুখে এসব কথা শুনতে।
কিন্তু কি করবো! ওর ভুলের যে কোনো ক্ষমা হয় না।
আমি চোখের পানি আটকিয়ে হৃদকে আবার বলি,
আপনার ভুলের কোনো ক্ষমা হয় না।তাই আপনি ক্ষমা পাওয়ার কথা ভাববেনও না।
আমার লাস্ট কথাটা বলতেই হৃদ কষিয়ে আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলে, তোর মা আমার জন্য বিষ খেয়েছিলো তাই না ফুল?
হৃদ এদিকে ওদিকে তাকিয়ে টেবিলের উপরে ইঁদুর মারা ওষুধের শিশিটা দেখতে পাই।
হৃদ গিয়ে শিশির মুখটা খোলে।আর আমাকে বলে, এখন আমি মারা গেলে এর জন্য দায়ী হবি তুই,
মা আর বাবা সবাই।আমার একটা ভুলের জন্য আজ তোরা আমাকে এতোটা পর করে দিলি?
এতোটা কস্ট দিলি? ক্ষমা করা যায় নারে আমাকে।
হ্যাঁ, আমি নিজের ভুলের মাষুল দিবো।তোর মায়ের মতোন আত্নহত্যা করে।
তোকে আমি বলেছিলাম ফুল তুই ছাড়া আমি একটা রাতে ঘুমোতে পারি না।
এটা তোর দেহ ভোগ করার জন্য নয় তোকে ভালোবাসি তাই তোকে জড়িয়ে ঘুমায়।
আর মা কি যেন শিখাচ্ছিলে ফুলকে তুমি? আমি ওর মায়ের খুনী, আমাকে ক্ষমা করা যায় না।
আচ্ছা মা আমি তো তোমারই ছেলে ধর এই বিষটা খাওয়ার পর আমি মারা গেলাম
তখন কি আমার মৃত্যুর জন্য তোমার নিজেকে একটুও অপরাধী, খুনী মনে হবে না?
আমি খালাম্মা কেউ কোনো কথা বলছি না।শুধু হৃদের কথাগুলো মন দিয়ে শুনছি
আর ভাবছি হৃদ তো ঠিকই বলছে।
আমি কিছু বলতে যাবো এরই মধ্যে হৃদ ডগমগ করে এক শিশি ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে ফেলে।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com