Breaking News

রুপের তরী । পর্ব - ০২

বিয়ে?" 'জ্বি'

কথাটি শুনে তরীর বাবা চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে রইলেন।
তৎক্ষনাৎ লোকটি তরীর বাবার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলেন। ব্যাগটা ওজনে বেশ ভারী লাগছিল তাই সামাল না দিতে পেরে হাত থেকে মাটিতে পরে যায়।
ব্যাগের চেইনটা খোলা থাকায় ব্যাগের ভেতরে থাকা বস্তুগুলো বেরিয়ে আসে।যেগুলো হলো টাকার বান্ডেল।
তরীর বাবা আর যাই হোক লোভী নন। তবে এমন সময় সংসার চালানোও বেশ কঠিন।ওনারও বয়স হয়েছে। খুব একটা খেটে রোজগার করারও সামর্থ্য ওনার নেই।
তাই সামনে থাকা ব্যাক্তিটির দিকে তাকিয়ে উনি বলেন,

'সাহেব আমি জানিনে আপনে কে,এইটেও জানিনে আমার মিয়েকে কির জন্নি নিজের বাড়ির বউ বানাইতে চান।তবে আপনেকে দেখে ভদ্দর লোক মনে কয়। তাই কই,আমি আমার মিয়েকে দিতে পারবো,তবে আমারে দুটে দিন সমায় দেন। '
(আকুতির স্বরে বলল কথাগুলি)
লোকটি কিছু একটা ভেবে উত্তর দিল,
"দেখুন আমি কালকের মধ্যেই আপনার মেয়েকে নিয়ে যেতে চাই।তাই যা ভাবার জলদি ভাববেন।আমি এখন আসি"
কথাটি বলে আর এক মূহুর্ত দেরি না করে চলে গেল লোকটি। যাওয়ার পথে লোকটি দেখতে পেল লাল হিজাবে তরী বাড়ির দিকেই আসছে।
বাড়ির সামনে অত বড় গাড়ি দেখে বেশ বিস্মিত হয় তরী। তাড়াতাড়ি গিয়ে বাড়িতে ঢোকে সে। উঠোনে গিয়ে দেখে,ওর বাবা উঠোনে একটা ব্যাগের পাশে পড়ে থাকা অনেকগুলো টাকার বান্ডেল গোছাচ্ছে।
বাবার কাছে গিয়ে কপাল হালকা কুচকে জিজ্ঞেস করে,
'বাবা? এত টাকা কোথায় পেলে তুমি?'
তরীর বাবা বেশ হকচকিয়ে জবাব দেন,

'তুই ঘরে যা তো,সব কতা তোর না শুনলেও চলবো,যা এহন ঘরে যা '
তরী আরও বেশি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় বাবার দিকে। টাকার ব্যাগ বাবার হাত থেকে উঠোনের একপাশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলে,
"বাবা তোমায় যেটা বলেছি তার জবাব দাও,এতটাকা কোথায় পেলে?'
'দেখ তরী, তোরে যেইডা কইছি সেইডা শোন।যা ঘরে যা। মাতা গরম করাবি না কইলেম'(বেশ রাগান্বিত হয়ে)
তরী বাবার এমন রাগ দেখে আর কিছু বলল না৷ ঘরে চলে গেল। আর যাই হোক এ বাড়ির কারও ওপর দিয়ে কথা বলার সাহস ও অনেকদিন আগেই হারিয়েছে ।
যখন থেকে এ বাড়িতে ওর নতুন মা এসেছে।
বিকেলের দিকে মা মেয়ের পুরো পাড়ার খবরাখবর নেয়া হয়ে গেলে বাড়ি ফেরে। রসুইঘরের দায়িত্বটা তরীই সামলায়।বলা চলে প্রায় সকল কাজই সে করে। ওদিকে মা মেয়ে দুজনে মিলে সারা গাঁ মেরে খায়।
পুকুরে গিয়ে গোসল সেরে দুজনে মিলে ঘরে ঢোকে। ঘরে ঢুকে চৌকির এক পাশে সেই ব্যাগ দেখতে পায়। ব্যাগে কি আছে তা দেখতে ব্যাগের চেইন খুলতেই দেখে অনেক টাকা। টাকাগুলো দেখে মা মেয়ে দুজনেরই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে টাকার বান্ডেলগুলো নাড়তে থাকে।
তরীর বাবা ঘরে প্রবেশ করলেই জিজ্ঞেস করে,
"হ্যা গো?কোথায় পেলে গো এত টাকা?চুরি চাকারি কইরলা নাকি লটারি লেগে গেছে?"
'আহ, তোমার শুরু হইয়া গেল না?আরে আজ একটা লোক তরীর বিয়ার জন্নি আইসিলো।সেই দিয়ে গেল এত টাকা,এহন এই টেকাডা যদি আজীবনের মত চাও, তাহলে আগে তোমরা দুজনে মিলে তরীরে বিয়ের জন্নি রাজি করাও,বুঝলা?'

সকাল সকাল সৎ মা ও বোনের আদর দেখে তরী হতভম্ব হয়ে বসে আছে। যে মহিলা কালই ওর মাথার চুলগুলো কেটে দিল আজ সে ওর চুলের জন্য আফসোস করছে?
হাতে একবাটি পায়েস,ছানার সন্দেশ, আরও কয়েকপ্রকার মিষ্টি এনে তরীকে আদুরে ভাবে খাওয়াচ্ছেন উনি। এতটা আদর তরীর মনে কেমন যেন ঝড়ের আভাস দিচ্ছে। কারন এর আগে যতবার এমন হয়েছে ততবারই কোন না কেন গন্ডগোল হয়েছে জর জীবনে।।
খাওয়া বাদ দিয়ে সৎ মাকে বলে ওঠে তরী,
"মা কিছু হয়েছে?আমাকে এত আদর যত্ন করছেন? "
নাটকীয় ভাবে সৎমা বলে ওঠে,
"আর বলিসনে তরী,আজ তোর বিয়া হইয়ে গেলে তো আর আদর করবার পারুম না, তাই জন্নি আজ তোর পছন্দের মিস্টিগুলান খাওয়াইতে আনলাম রে'
" বিয়ে?'কার বিয়ে?'
'ওমা, তোর বিয়ে'
'কিহ্!???'
এমন কিছুরই আশংকায় ছিল তরী। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ওর সৎমায়ের দিকে। ওদিকে বোনও মিটিমিটি হাসছে।
নিজেকে প্রচুর বোকা মনে হচ্ছে তরীর। এটা ছাড়া এ বাড়িতে আর কিই বা আশা করতে পারে ও। এর প্রতিরোধ কখনোই করতে পারবেনা সে জানে। এটাও বোঝার বাকি নেই কালকের টাকাগুলো কিভাবে এসেছে। বাকি রইল নিজের বাবার কথা,আচ্ছা নিজের মেয়েকে তাহলে বিক্রি করে দেওয়াটা খুবই গর্বের ব্যাপার?
সব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে দূর করে দিয়ে তরী ওর সৎ মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
'আমি কোন বিয়ে টিয়ে করতে পারবোনা '
কথাটি শুনে মূহুর্তের মাঝে ওর সৎমায়ের মুখ কালো হয়ে গেল। রাগান্বিত স্বরে বলল,
'করবোনা ব্যাস।'তোমরা আমায় জোড় করতে পারবেনা'
'হুহ মরন!তুই বিয়ে করবিনা তোর ঘার করবে।
শোন তরী আজ তোরে বিয়ে করে নিয়ে যাবি,
কোন গন্ডগোল পাকালে তোরে জম্মের শিক্ষা দিয়ে দিব'চল মিলি(তরীর সৎ বোনের নাম মিলি)
কথাগুলো শরীরে কাটার মত বিধলেও কিচ্ছু করার নেই।সৎ মায়ের স্বভাব সম্পর্কে খুব ভাল করে জানে।
যদি ওনার কথামত না চলা হয় তাহলে তরীর অবস্থা আরও খারাপ করে দিতে পারে। মন চায় পালিয়ে যেতে কিন্তু তাও করতে পারবেনা সে, কারন অতটা সাহস ওর মাঝে নেই। আর কোথায়ই বা যাবে ও,কিই বা করবে?কোথায় থাকবে?...

এতকিছুর মাঝে আরও একটা জিনিস ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,
আচ্ছা কে এত টাকা দিয়ে আমায় কিনে নিল?
শেষোক্ত কথাটি মনে করে নিজের অজান্তেই চোখের কোনে জল চলে আসে তরীর।
পরনে বোরখা ও মাথায় হিজাব পড়ে নিজের ঘরে বসে আছে তরী।
একটু আগেই রেজিস্টার পেপারে সাইন করলো সে।
এখন চলে যেতে হবে ওর।
একদম স্তব্ধ হয়ে বসে আছে সে।
যাকে নিজের জীবনটা দলীল করে দিল তাকে দেখা তো দূর নামটাও জানা হয়নি।
একটুপর তরীর রুমে সেই মধ্যবয়স্ক লোকটি প্রবেশ করলো। এবং গম্ভীর গলায় বলল,
'চল আমাদের অনেকটা পথ যেতে হবে'

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com