Breaking News

প্রেম মানে পাগলামি । পর্ব - ০৫

নগ্ন লাবন্য কাপড় দিয়ে নিজের শরীর ঢাকতে ঢাকতে ধীরে ধীরে বিছানায় বসে রহস্যময় হাসি হেসে আয়ানকে বললো— আয়ান তুমি কি ভেবেছো আমার দেহ ভোগ করে তুমি জিতে গেছো? হা হা হা, এখনও তুমিই হেরেছো ধোয়াশার আড়ালে।

আয়ান ভীষণ অবাক হয়েও অতটা গুরুত্ব না দিয়ে চলে গেল।
লাবন্য আবারও রহস্যময় হাসি হাসলো একবার।
ভোর রাত, লাবন্যর ওখান থেকে ফিরে মেইন রোডের সাইট ধরে হাঁটছে আয়ান। অল্পসংখ্যক গাড়ির আসাযাওয়া ধীর গতিতে।
হঠাৎ পেছনের দিক থেকে বিকট গুলির শব্দ সেইসাথে একটা বুলেট আয়ানের কানের পাশ ঘেষে সাৎ করে চলে গেল।
আয়ান ঘুড়ে দাড়িয়ে দেখলো একটা মাইক্রোবাসে একজন মুখোশধারী আয়ানের দিকে বন্ধুক তাক করে দ্বিতীয় গুলি ছোড়ার নিশানা লক করছে। তাই দেখে আয়ান উল্টি মেরে রোডের সইট থেকে রোডের ভেতরে পড়লো কারণ আরও আরও চলমান গাড়ির ভীড়ে গুন্ডারা আয়ানের তেমন ক্ষতি করতে পারবেনা।

এদিকে আয়ান যেই বরাবর রোডে উল্টি মেরে পড়েছে সেই সোজা সাই-সাই করে ছুটে আসা একটা সাদা প্রাইভেটকার আয়ানকে এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে কষে ব্রেক মেরে অন্যদিকে কাট করতেই প্রাইভেটকারটা ছিটকে গিয়ে কারেন্ট এর খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে রাস্তার বাইরে উল্টে পড়ে।
গাড়ি জড়ো হয়ে যাওয়ায় আয়ানের ওপর আক্রমণ করা মাইক্রোবাসটা দ্রুত চলে যায়।
আয়ানের মনে হলো তাহলে কি এসব লাবন্যর ষড়যন্ত্র? যাই হোক এসব পরে ভাবা যাবে।
আয়ান দৌড়ে গিয়ে উল্টে যাওয়া প্রাইভেটকারের দরজা টেনেটুনে খুলে ভীষণ অবাক হয়ে যায়। গাড়ির ভেতর একজনই মানুষ এবং সে মেয়ে। মেয়েটিই ড্রাইভিং করছিল তাহলে। মেয়েটির চেহারা এবং পোষাক আসাক দেখে মনে হচ্ছে সম্ভ্রান্ত ঘরের উচ্চশিক্ষিতা মেয়ে।
মেয়েটির পকেট থেকে বেরিয়ে ঝুলে থাকা একটি আইডিকার্ড দেখে আয়ান আরও অবাক হয়ে যায়। মেয়েটির নাম সুমু, এবং সুমু খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির জেনারেল ম্যানেজার।
আয়ান লোকজনের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে সুমুকে গাড়ি থেকে বের করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে।
সুমুর ডানহাতে হালকা ফ্র্যাকচার হয়েছে এবং কপালের কাছ থেকে কেটে রক্তক্ষরণ। কিন্তু সুমুর জ্ঞান ফেরেনি এখনও।

ডাক্তার এসে বললেন সুমুর জন্য দুই ব্যগ O+ ব্লাড দরকার ইমার্জেন্সি। আয়ান বললো ডক্টর তাহলে আর দেরী কেন, আমার ব্লাড গ্রুপও O+, নিয়ে নিন।
রক্ত দেয়া শেষে আয়ান ওয়েটিং রুমে বসে বসে ভাবছে— এক লাবন্যর ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচতে আরেক নির্দোষ সুমুর জীবন মরণের প্রশ্ন হতে হলো।
নিজেকে কোনভাবে স্থির করতে পারছে না আয়ান, কেমন একটা অপরাধ বোধে ছটফট করছে সারাক্ষণ।
সেই সকাল থেকে আয়ান বসে আছে এক ভাবে, সুমুর জ্ঞান ফেরেনি এখনও। রাত প্রায় দশটা।
একজন নার্স এসে আয়ানকে বললো— স্যার ম্যাম এর জ্ঞান ফিরেছে, কথাবার্তাও বলছে। আপনাকে ডেকেছেন উনি।
আয়ান চুপচাপ এসে সুমুর বেডের সাইডে চেয়ারে বসলো। চোখ খুলে আয়ানকে দেখে— বিপদ যে এত হ্যান্ডসাম এবং সুদর্শন হয় তা আপনাকে না দেখলে বুঝতাম না— বলে মুচকি হাসলো সুমু।
এমন অবস্থায়ও সুমুর এমন কথাবার্তা ভীষণ মুগ্ধ আয়ান। সুমুর চোখের দিকে তাকিয়ে আয়ান বললো— আসলে এটা ক্ষমার অযোগ্য জানি তবুও স্যরি আমি, এর বেশি আর কি বলার আছে বলুন।
সুমু আবারও মুচকি হেসে বললো— তা বিপদ বলে কয়ে আসেনা জানি আমি, কিন্তু আপনি বিপদ কোথেকে এসে আমারই গাড়ির সামনে পড়েছিলেন শুনি? আর হ্যাঁ এটা ভেবে কষ্ট পাবেননা যে আপনার কারণেই আমার এই দশা, কারণ সবকিছু আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছেন সৃষ্টিকর্তা। এটা আমার কপালে ছিল তাই ঘটে গেল। আপনি বিপদ এই ঘটনার একটা উপাদান মাত্র, আর বাকিটা ওপরওয়ালা ইচ্ছে। তাই উল্টাপাল্টা ভেবে নিজে কষ্ট পেলে সেটা আপনার বোকামি।

আয়ান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সুমুর কথা শুনছে আর মুগ্ধ হচ্ছে।
আয়ানকে অন্যমনস্ক দেখে সুমু বললো— মিষ্টার বিপদ, আপনি নাহয় এক ধ্যানে আমার কথা গিলছেন, আমি কি গিলবো? আমার তো ক্ষুধা লাগছে খুব।
— ও হ্যাঁ, তাইতো— বলে আয়ান দ্রুত বাইরে বেরিয়ে গেল।
একটা স্ট্রবেরি জুস এবং লাচ্ছি নিয়ে ফিরলো আয়ান। স্ট্রবেরি জুস এবং লাচ্ছি সুমুর পাশে রেখে খেয়ে নিতে বললো আয়ান।
ভ্রু কুঁচকে সুমু বললো— মিষ্টার বিপদ, কারো হাত পা ভেঙে দিয়ে তার সামনে বিরিয়ানির প্লেট দিয়ে যদি খেতে বলেন, হাত দিয়ে ধরার ক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে কি মনে মনে খাবে? এ তো দাওয়াত করে সামনে থেকে খাবারের প্লেট টেনে নিয়ে সসম্মানে বিদায় করে দেবার মতো অবস্থা।
সুমুর কথা শুনে আয়ান হেসে ফেললো।
আসলে সুমু এসব এজন্যই বলছে যাতে আয়ান একটু ইজি ফিল করে।
— তাহলে এখন উপায়?— আয়ান বললো।
— উপায় তো একটাই, আপনাকে বাচাতে গিয়ে আমার হাতে শরীরে চোট, আপনার তো সবই ঠিক আছে, আপনি আমাকে খাইয়ে দিন— বলে মুচকি হাসলো সুমু।
— না মানে ইয়ে

— আপনি ইয়ে ইয়ে করতে থাকুন আর আমার পেটের নাড়িভুড়ি হজম হয়ে যাক ক্ষুধায়।
আয়ান চামচ দিয়ে সুমুকে লাচ্ছি খাইয়ে দিতে দিতে বললো— আসলে আপনার বাসায় তো কিছুই জানেনা, জানানো হয়নি উপায় ছিলনা বলে।
সুমু বললো— জীবনে যদি হঠাৎ করে কখনও খারাপ পরিস্থিতি এসে যায় তাহলে হুট করেই প্রিয়জনদের জানাবেননা, আপনার পরিস্থিতি তাদের সময়কেও খারাপ করে দেবে, টেনশনে ফেলে দেবে। তবে হ্যা খুশির সংবাদ শেয়ার করতে কখনোই বিলম্ব করবেননা, খুশি জিনিসটা যত দ্রুত সম্ভব শেয়ার করবেন, এটা অন্যদেরও মন ভালো করে তোলে তাই।
— কিন্তু আপনার পরিবারকে তো জানানো উচিৎ— আয়ান বললো।
সুমু চোখের ইশারায় স্ট্রবেরি জুস দেখিয়ে দিতেই আয়ান সুমুর মুখের সামনে ধরলো, স্ট্র তে মুখ লাগিয়ে এক চুমুক দিয়ে সুমু বললো— আসলে আমার বড়ো ভাইয়া নিউইয়র্কে সেটেল্ড, আব্বু আম্মু কিছুদিন আগে সেখানে গেছে কয়েকমাস থাকবেন বলে। ঠিক এমন একটা মুহূর্তে আমার এই অবস্থার কথা তাদের জানালে তাদের মনের অবস্থা কি হবে একবার ভাবুন। হ্যা আমি যদি মরে যেতাম তাহলে জানানোটা অবশ্যাম্ভাবী ছিল। সুতরাং বর্তমান এই পরিস্থিতি আমিই সামলে নিতে পারবো তবে অবশ্যই আমি যতদিন সুস্থ না হয়ে উঠি পুরোপুরি ততদিন এভাবেই আমাকে আপনার সেবাযত্ন করতে হবে মিস্টার বিপদ।
— না মানে ইয়ে— আমতা আমতা করে বললো আয়ান।

ভ্রু কুঁচকে সুমু বললো— ওসব ইয়ে মানে বাগানে ছুড়ে ফেলে আমার সেবাযত্নে মনোযোগী হোন, নয়তো ইচ্ছে হলে চলে যান। আপনি ভাবুন আপনার কারণে আমার এই অবস্থায় পাশে থাকবেন নাকি ফেলে চলে যাবেন?
আয়ানের মা বাবাও গ্রামে চলে গেছে যেহেতু আয়ানও আপাতত একা শহরে। আয়ান ভাবলো আয়ানের কারনেই যখন এই অবস্থা সুমুর, তখন আয়ানের উচিৎ সুমুকে সেবাযত্ন করে সারিয়ে তোলা।
নার্স এসে একটা কাগজ আয়ানের হাতে দিয়ে বললো— স্যার এই যে ম্যাডামের রিলিজ পেপার।
পেপারটা হাতে নিয়ে আয়ান অবাক হয়ে সুমুর দিকে তাকালো।

সুমু হেসে ফেলে বললো— এমন রিএকশন দিচ্ছেন যেন আমার বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্সির পজিটিভ রিপোর্ট আপনার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।
আয়ান হেসে ফেলে বললো— না মানে ডক্টর এত জলদি আপনাকে যেতে দিচ্ছে দেখে অবাক হচ্ছি।
সুমু বললো— আসলে আমিই ডক্টরকে বলে ম্যানেজ করেছি মিস্টার বিপদ। এখানে থাকলে আমি আরও অসুস্থ হয়ে যাবো তাই জলদি বাসায় ফেরার ব্যবস্থা করলাম।
নিচে এসে নার্সরা ধরে সুমুকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে চলে গেল। আয়ান উঠে বসবে এমন সময় একটা পুলিশের গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে কয়েকজন পুলিশ নেমে এ্যাম্বুলেন্স এর দিয়ে এগিয়ে আসছে দেখে আয়ানের বুকটা ধক করে উঠলো। এটা লাবন্যর নতুন কোনো চাল নয়তো?!

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com