প্রেম মানে পাগলামি । পর্ব - ০২
লাবন্যর হাত ধরে কাছে টেনে সবার সামনেই লাবন্যর ঠোঁটে চুমু খেয়ে আবার ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলো আয়ান।
কফি-শপে উপস্থিত সকল লোকজন অবাক হয়ে পলকহীন চোখে
তাকিয়ে আছে আয়ান ও লাবন্যর দিকে। রাগে লাবন্যর শরীর কাঁপছে থরথর করে।
তুই বললি রাস্তার ছেলে, আরে দেহটা রাস্তায় পড়ে থাকুক অথবা রাজপ্রাসাদে,
ভালোবাসা কিন্তু দেহের ভেতর হৃদয় মাঝেই থাকে সবার।
অর্থ আভিজাত্যের কাগজে মোড়ানো তোর মন কীভাবে বুঝবে কোনটা নির্লোভ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা? কোটিপতির মেয়ে বলে নয়, মন তার গন্তব্য খুঁজে পেয়েছে তোর মাঝে তাই তোর প্রেমে পড়েছে।
আমি তোকে চেয়েছি তোর বাবার টাকাপয়সা নয়।
রেগেমেগে লাবন্য বললো— এটা একদম ভালো করলি না, তোকে যদি দুইদিনের মধ্যে এলাকা ছাড়া না করেছি তাহলে আমার নাম লাবণ্য চৌধুরী নয় মনে রাখিস।
আয়ান লাফ দিয়ে টেবিলের ওপর থেকে নেমে লাবন্যর সামনে দাড়িয়ে লাবন্যর কোমর ধরে টেনে এনে বুকের সাথে চেপে ধরে চোখে চোখ রেখে বললো— সে তুমি লাবন্য চৌধুরী হও আর যে-ই হও, এলাকা ছাড়লেও তোমায় ছাড়ছি না মিস, মাইন্ড ইট।
লাবণ্য রাগে গজগজ করতে করতে বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে চলে গেল।
একজন ওয়েটার ডেকে আয়ান কফি অর্ডার করে বসলো। এক যুবক এগিয়ে এসে আয়ানের পাসের টেবিলে বসে হাসতে হাসতে বললো— ভাই আপনারই কপাল!
আয়ান আড় চোখে তাকিয়ে বললো— কেন আপনার কপাল কি কপাল নয়?
যুবক বললো— ভাই কফিশপে এসে সবাই কফি খায়, আপনি খাইলেন চুমু তা-ও আবার পরীর মতো একটা মেয়েকে। এর জন্যই বলছি আপনারই কপাল।
— আচ্ছা আচ্ছা, তো আপনার জ্বলে নাকি চুমু খেতে দেখে?
— ধুর কি বলেন, ভাত জোটেনা কফি খাবার চিন্তাভাবনা তো বিলাসিতা, কফি খাইতেই হিমসিম খাই চুমু খাওয়া তো দিবাস্বপ্ন। তাই আর জ্বলেনা, অনেক আগেই নিভে গেছে।
— মানে?
— প্রেম পিরিতের মোমবাতি।
— হা হা হা, নাম কি আপনার?
— জ্বি আমি মজনু।
— তাহলে লাইলির হাতে লাইটার তুলে দিলেই হয়, নিভে যাওয়া মোমবাতি আবার জ্বালিয়ে দিবে।
— ভাই লাইটার ছাড়াই জীবনটাকে এমন ভাবে জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে যে রাতদিন তার বিরহে জ্বলছি। কফিশপে এসে আপনার রোমান্টিক সিন দেখে পেছনের স্মৃতি মনে পড়ে গেল তাই কথা বলার ইচ্ছে হতেই চলে এলাম আপনার কাছে।
ওয়েটার এসে আয়ানের সামনে টেবিলে কফির কাঁপ রেখে গেল।
কাপটা ধরে আয়ান কফিশপের মেঝেতে ইচ্ছে করে ফেলে দিতেই মজনু লাফিয়ে উঠে বললো— এ কি করলেন?
আয়ান শান্ত গলায় বললো— অর্ডার যেহেতু আমি করেছি সেহেতু কফিটা আমারই ছিল তাইনা? এখন কোনো একটা কারণে কফিটা আমি খেতে পারিনি বলে কি আজীবন এই একটা কফির জন্য আফসোস করে মরবো? একদমই না। আবেগ বাদ দিয়ে নতুন করে অর্ডার করে খেয়ে নিলেই হলো। এটা সামান্য একটা উদাহরণ মাত্র। যেটা আপনার নয় সেটা কিছুতেই আপনার হবেনা, তাই তাকে নিয়ে ভেবে দুঃখ হতাশা দীর্ঘায়িত না করে নতুন করে ভাবুন, নতুন করে শুরু করুন পথচলা।
আয়ানের কথায় ভীষণ খুশি হলো মজনু। মজনু নিজে পুনরায় দুকাপ কফি অর্ডার করে দু'জন মিলে খেয়ে মজনু বিদায় নিলো।
সন্ধ্যার পরে আয়ান বাসায় ফিরে সবকিছু এলোমেলো, ভেঙ্গেচুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেখে ভুল বাসায় ঢুকে পড়ছে ভেবে বের হয়ে যাবে এমন সময় আয়ানের বাবা বললো— বাসা ঠিকই আছে বাবা শুধু জিওগ্রাফি পাল্টে গেছে। তা মেয়েটা কে শুনি?
আয়ান থতমত খেয়ে বললো— কোন মেয়ের কথা বলছো বাবা?
বাবা বললো— সাইক্লোনের মতো এলো, এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে সাথের গুন্ডারূপি বুলডোজার দিয়ে সবকিছু তছনছ করে চলে গেল। সত্য করে বলতো কি এমন মহৎ কর্ম সাধন করলি যার ফলাফল সাইক্লোন হয়ে এলো।
আয়ানের মা বললো— তুমি থামো তো, আমার ঐটুকু ছেলে আর এমন কি করবে।
আয়ানের বাবা বললো— আহা হা, ঐটুকু ছেলে! মনে হচ্ছে তোমার ছেলে এখনও ফিডার খায়। তোমার ছেলের জন্য সাজানো সংসার ভেঙ্গেচুরে ভেস্তে গেল।
মা বললো— সে যায় যাক, সবকিছু আবার নতুন করে কেনা যাবে, কিন্তু মেয়েটাকে হাতছাড়া করা যাবেনা বুঝলে আয়ানের বাপ।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আয়ানের বাবা বললো— ভালোই বুঝতে পারছি, আমার ওপর অত্যাচার বাড়াতে দল ভারী করতে চাও।
আয়ানের বাবার কথা শুনে আয়ান ও আয়ানের মা হেসেই অস্থির।
আয়ানের বাবা বললো— তবে যা-ই হোক মেয়ের ক্যারেক্টার কিন্তু আমার দারুণ লাগছে আয়ানের মা। ছেলের বউ হিসেবে দারুণ হতো।
হাসতে হাসতে আয়ানের মা বললো— প্রশংসা করছো নাকি ইশারা ইঙ্গিতে ছেলেকে লেলিয়ে দিচ্ছো?
— বাবা তোমরা সবকিছু গোছগাছ করো আমি আসছি— বলে আয়ান নিচে নেমে এসে বাইক স্টার্ট করে সোজা লাবন্যর বাসার কাছাকাছি এসে থামলো।
দেয়াল টপকে পাইপ বেয়ে দোতলার বারান্দায় এসে সোজা লাবন্যর রুমে ঢুকে পড়লো। বেশ গোছানো পরিপাটি লাবন্যর রুম, লাবন্যর মতোই সুন্দর।
কিন্তু লাবন্য রুমে নেই! ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে বাথরুমের সামনে আসতেই ভেতর থেকে আসা ঝর্ণার পানির শব্দ পেয়ে আয়ান বুঝলো লাবন্য ভেতরে আছে হয়তো।
রুম থেকে বেলকনির দরজা খোলা ছিল বলে আয়ান ঢুকতে পেরেছে রুমে, কিন্তু রুমের ভেতরের দরজা বন্ধ বলে অন্য রুম থেকে কেউ লাবন্যর রুমে আসতে পারবেনা বলে বাথরুমের দরজার সিটকিনি লক না করে গোসল করছিল লাবন্য।
আয়ান বাথরুমের দরজায় হাত রাখতেই দরজা খুলে গেল, শরীরের সব কাপড় খুলে গোসল করছিল লাবন্য। এই অবস্থায় লাবন্যকে দেখে যেমন আয়ান শকট, তেমন আচানক আয়ানকে দেখে লাবন্য হতভম্ব এবং নির্বাক। দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লাবন্য চিৎকার করবে এমন সময়...
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com