ফুল বিক্রেতার সোহাগিনী
আমান আলম আলভি, পেশায় তিনি একজন ফুল বিক্রেতা। জিন্দাবাজার পয়েন্টে উনার একটি বড় ফুলের দোকান আছে। দোকানের সামনে খুব বড় করে লেখা, "কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার সময় বউয়ের জন্য গোলাপ কিংবা রজনীগন্ধা হাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বউয়ের হাসিমুখটা দেখে বাসায় ঢুকুন"।
তো সিলেটের বিবাহিত রোমান্টিক পুরুষেরা কাজ শেষে
ফেরার পথে ঠিকই আলভির দোকান থেকে ফুল কিনে বাসায় ফিরে।
এতে আলভিরও ভালো লাভ হয়।
আলভির দোকানে একটি গোলাপ ৭০টাকা
আর একজোড়া গোলাপের দাম ১৩০টাকা। ৭০+৭০=১৪০, এই টাকার জায়গায় ১০টাকা কম পাচ্ছে,
তাই তারা একজোড়া ফুল হাতে বাসায় ফিরে।
দামটা বেশি হলেও ১০টাকা কম যে।
আলভির একটি বুদ্ধিমত্তায় ভরা সুন্দরী বউ আছে। তার নামটাও ভীষণ সুন্দর, সোহাগি স্নিগ্ধা সুমি। আলভি আদর করে সোহাগিনী নামে ডাকে।
আলভির একটি কমন ডায়লগ, যা সে সব সময় নিজের দোকানে ফুল কিনতে আসা
কাস্টমারদেরকে এই ডায়লগ দিয়ে থাকে। 'ভালোবাসার জিনিস কিনতে আবার
দামাদামি কি জন্যে করেন ভাইয়া এবং আপুরা'
গোলাপ কিংবা যেকোনো ফুলকেই ভালোবাসার প্রতিক বলা হয়।
শুধু কচু ফুল ছাড়া, চুলকানি ফুলে ভালোবাসায়ও চুলকানি ধরে যাবে।
একদিন সন্ধ্যেবেলা রক্তিম ডুবে যাওয়া সূর্যের সাথে সাথে সোহাগিনী আর আলভির বোন আসে আলভির ফুলের দোকানে। কোনো এক কাজে জিন্দাবাজারে এসেছিল তারা।
সোহাগিনী ভাবলো প্রিয় স্বামীর ফুলের দোকানে একটা উঁকি দেওয়া যাক।
সোহাগিনী দেখতেছে ফুলের দোকানে মানুষের ভীড়। সোহাগিনী আনন্দে আত্মহারা।
পুরুষেরা বউকে ভালোবাসে বলেই তারা আজ ফুলের দোকানে ভীড় করে।
সোহাগিনী শুনতে পায় তার স্বামীর ডায়লগ। 'ভালোবাসার জিনিস কিনতে এতো দামাদামি কিসের'
সোহাগিনী দেখলো, প্রেমিক পুরুষেরা ঠিক দামে কিনে নিচ্ছে ফুল।
সোহাগিনী তার অবিবাহিত জীবনে একবার ফুল কিনেছিল, তখন গোলাপ ছিল ৩০টাকা।
তাইলে স্বামীর দোকানে ফুলের এতো দাম। সোহাগিনী মনে মনে হাসলো শুধু।
রাত ৯টা, আলভি দুইজোড়া গোলাপ হাতে বাসায় ফিরে, সোহাগিনীর সামনে দাঁড়িয়ে ভালোবাসি বলে ফুলগুলো তার হাতে দেয়। সোহাগিনী আজও মুচকি হাসলো। এটা তার প্রতিদিনের অভ্যাস।
ফুল বিক্রেতা বর তার, বাসায় ফেরার সময় তো ফুলই আনবে।
তবে এটা ভেবে মাঝেমধ্যে হাসতো,
কোনো ব্যাংকের ম্যানেজার বাসায় ফিরে বউকে কিন্তু টাকা হাতে দিয়ে ভালোবাসি বলতে পারে না।
এটা একমাত্র ফুল বিক্রেতাই পারে।
সকাল হলো, যত্নে রাখা দুইজোড়া গোলাপ হাতে সোহাগিনী দাঁড়িয়ে আছে আলভির সামনে।
আলভি দু'চোখে যেন আজ ভিন্ন কিছু দেখছে৷ বিয়ের দুইবছর হতে চলল, তার প্রিয় সোহাগিনী আজ এই প্রথমবার তার সামনে দুইজোড়া গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
আলভির মনের ভিতর ভূমিকম্প হচ্ছে, কল্পনার আকাশে উড়ছে পাখি, গেয়ে যাচ্ছে মধুর গান।
আলভির শহরে শীতল তুষারপাতে সাদাতে ছুঁয়ে যাচ্ছে রাস্তার পর রাস্তা।
আলভি চোখজোড়া বন্ধ করে অনুভব করতে শুরু করল, অনুভবে শব্দরা মিছিল দিচ্ছে,
কোকিল কণ্ঠের এক অনুপম মিছিল, ভালোবাসি আলভি ভালোবাসি।
আলভি এবার চোখজোড়া খুলে তাকালো,
সোহাগিনী তার পূর্বের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে ফুল হাতে। মুখে তার সুন্দর মুচকি হাসি।
আলভি হাত বাড়ালো,
সোহাগিনী মুক্তা জড়ানো হাসি দিয়ে কোকিল কণ্ঠে ভালোবাসি প্রিয় স্বামী
বলে ফুলগুলো আলভির হাতে দিলো।
আলভি ফুলগুলো হাতে নিয়ে নাকের কাছে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।
গোলাপে যেন আজ ভিন্ন এক ঘ্রাণ।
আলভি চোখ খুলে তাকায়।
সোহাগিনী হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আলভি ভাবলো ফুলগুলো চাচ্ছে বুঝি।
কিন্তু সোহাগিনী চাইলো ভিন্ন কিছু।
প্রিয় স্বামী আমার, বাড়িয়েছো হাত, দিয়েছি ফুল।
পাঁচ হাজার টাকা দাও এবার, সামনে রাখিলাম হাত, পকেটে হাত ঢুকাতে হয় না যেন ভুল।
আলভি এবার উঠলো হালকা কেশে৷ ভাবনার দ্দেয়াল জোড়ে আটকে থাকা সব রোমান্টিক শব্দগুলো পালালো দেয়াল ভেঙে, ছোট আসলো একটি শব্দ।
পাঁচ হাজার টাকা?
সোহাগিনী হাসলো এবার।
হুম গো প্রিয় স্বামী, পাঁচ হাজার টাকা।
আলভি এবার হালকা ভেবে বলল কেশে,
কেন?
ফুলের দাম পাঁচ হাজার টাকা?
হুম।
আচ্ছা আমি তোমায় দুই জোড়া ফুলের দাম ২৬০টাকা, আমি তার জায়গায় তোমায় ৩০০ টাকা দিচ্ছি।
সোহাগিনী একটু সামনে এগিয়ে আলভির কানের কাছে নিজের মুখটি নিয়ে বলল,
'ভালোবাসার জিনিস কিনতে আবার দামাদামি কিসের জন্য প্রিয় স্বামী?'
আলভির কণ্ঠ থেকে কোনো কথাই বের হল না।
তবে হাত ঢুকল পকেটে,
মানিব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে সোহাগিনীর হাতে দিয়ে মন খারাপের কণ্ঠে বলল,
আমাকে আমার ডায়লগে করলে ফকির।
সোহাগিনী হাসলো শুধু।
বাহিরে ভালোবাসা বিক্রি করে টাকা আয়ে ভালোবাসারই জয় গান৷
ঘরে কেন তাহলে এই ভালোবাসা কিনতেই হয়েছে কালো তোমার মুখখান।
আলভি মনে মনে বলল শুধু,
সোহাগিনী ভুলে গিয়েছিলাম, তুমি একজন ফুল বিক্রেতা আলভির স্ত্রী।
<> সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com