গল্প: ত্যাগ । পর্ব- ১০
আমি কি একবার ও এ কথা এনেছি নিজের মুখে?"
- "জানি, বলতে লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু, আমি তোমার নিজের মানুষ। এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে?"
মিম তখন লজ্জার মাথা খেয়ে হলে গিয়ে শশুরের সামনেই জিজ্ঞেস করলো,
- "আমি মা হতে চলেছি এমন গুজব কে ছড়িয়েছে এ বাড়িতে?
একটা মন্তব্য করার আগে, অন্তত আমার কাছ থেকে তো শুনে নেবে.........! এই ধরনের উদ্ভট চিন্তা ভাবনা কার মাথায় আসে?
এসব কি? তোমাদের কি খেয়ে কোনো কাজ নেই, না কি সারাক্ষণ রংতামাশা করে বেড়াতে খুব ভালো লাগে? আমাকে দেখে কি তোমাদের জোকার বলে মনে হয়? কি সমস্যা কি তোমাদের খুলে বলো এখুনি খুলে বলো আমাকে?"
সকলে একে অপর কে দেখাতে শুরু করলো, মিম অট্টো হাসি দিয়ে বললো,
- "সরি আমি সন্তান সম্ভবা নই, তোমাদের কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আর হ্যাঁ, এই কথা টা তোমাদের বাবাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলো।
কারণ, টই লোক টা আমাকে অযথাই জ্বালাতন করে মারছে। অসহ্যকর লোক একটা, খেয়ে কোনো কাছ নেই সারাক্ষণ, আমার কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে বেড়াচ্ছে।" ইমান মুখ কলো করে বললো,
- "তবে যে আনিশা বললো?"
- "আপনার মেয়ে আপনার মতোই, কি শুনতে কি শুনেছে?
বাবা মেয়ে কেউই আপনারা কম জান না, এই মাথার গোবর নিয়ে আপনি কার্ডিওলজিস্ট হলেন কিভাবে?
আপনার মেয়ে ও আপনার সমমান, বিয়ে হ'য়ে গেছে বলে তার জীবনের লক্ষ এবং উদ্দেশ্য দুটোই হাওয়ায় উবে গেছে।" আনিশা তখন বললো,
- "ভাবিরা রে রান্না ঘরে বসে আলোচনা করছিলো? আমার কি দোষ মা? বলো আমাকে?"
সুহানি পরিস্থিতি খারাপ দেখে বলে উঠলো,
- "দেখ মা,
আমি কিছু'ই জানি না মা, নেহা বলছিল বাবা না কি তোমাকে একাধিক সন্তান জন্মদানের জন্য উৎসাহ প্রদান করছে?
তাই আমরা ভেবেছিলাম আবারও খুশির খবর পাবো আর তাই গোকূল চাচাকে দিয়ে মিষ্টি আনিয়েছিলাম বাজার থেকে।" সে চোখ গরম করে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
- "যে বাজখাঁই গলা আপনার? মনে হয়, এতক্ষণে পাড়া-প্রতিবেশি ও জেনে গেছে।" ইমান খুব লজ্জা পেতে লাগলো, সে বউয়ের হাত টেনে তাকে বললো,
- "ঘরে চলো কথা আছে।"
- "কি কথা? এখন বলুন?"
- "প্রামাণ দাও যে তুমি সন্তান সম্ভবা নও।"
- "কেন আমার মুখের কথা বিশ্বাস করতে বুঝি খুব কষ্ট হচ্ছে?"
- "না মানে তবুও, কেন যেন মন টা খুব, খুব খচখচ করছে?" রাতে মিম মায়ানকে কোলে নিয়ে বারান্দায় পায়চারী করছিলো,
তখন সে খেয়াল করে দেখলো আয়শা বাগানে বসে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে? বিষয় টা ওর বেশ অদ্ভুত মনে হলো...!
খেয়াল করে দেখলো হঠাৎ আয়েশা ইমানে'র গলার আওয়াজ শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে। ও দ্রুত কল টা কেটে বাড়িতে চলে এলো। মিম আর আমলে নিল না এই ব্যাপার টা কে।
তবে আজ নতুন নয় এর আগেও মিম বেশ কয়েক বার আয়েশা কে এমনতরো আচরণ করতে দেখেছে। সে ইমানকে ব্যাপার টা জানিয়েছিল, যার ফল স্বরূপ বড়সড় একটা ঝামেলা বেঁধে যায় দু'জনের মাঝে। ভোর রাতে, উঠে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে কিট টা নিয়ে গিয়ে মিম ইমানের কপালে ঠেসে ধরলো। ইমান সেটা চেক মাথা চুলকতে চুলকতে বললো,
- "এতোক্ষণে অনাগত সন্তান নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা করা হয়ে গেছে।"
- "ও তাই? আমি ভাবলাম, এতক্ষণে বুঝি আপনার শুভবুদ্ধি উদয় হ'য়েছে। গাছে কাঁঠাল নেই, এদিকে
আরেকজন সৈন্য-সামন্ত সমেত তা দিয়ে বসে আছে"
- "এভাবে বলছ কেন? ক্ষাণিক ক্ষণের জন্য হলেও
আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম।
যদিও, এখন সেই স্বপ্ন আল্লাহ তায়ালা চাইলে পূরণ
হবে। আর মায়ান বাবু তো আছেই সে যাই হোক বাবা হওয়ার ফিলিং টা অন্য রকম,মা হওয়ার ফিলিংস টা ঠিক যেমন তোমার কাছে?" মিম তার কথা শুনে হাসতে লাগলো, বললো,
- "চা টা খেয়ে নিন,ঠাণ্ডা হ'য়ে যাচ্ছে।"হঠাৎ মিম নিচ
থেকে মায়ানের কান্নার শব্দ শুনতে পেলো।
ও দ্রুত সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে মাথা ঘুরে পরে যেতে লাগলো মেঝেতে। ততক্ষণে, ইমান তাকে ধরে ফেললো, মিম কে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর এক জন চিকিৎসক ওর চেকআপ করে ইমানকে বললো,
- "স্যার, ম্যাডামের শরীর অনেক দূর্বল হয়ে আছে
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি অনেক, এ ছাড়া দিন কে দিন ম্যাডামের ওজন কমে যাচ্ছে উনি বোধহ'য় ঠিক করে খাওয়া-দাওয়া করছেন না নিজের যত্ন নিচ্ছেন না।
বলতে পারেন একরকম অনীহার ফলেই ওনার এমন তরো জটিল সমস্যা দেখা দিয়েছে।"
ডক্টর পল্লবের মুখে সবটাই শোনার পর, ইমান চুপটি করে মিমের মাথার কাছে বসে আছে। তার কোলেই মায়ান, বাচ্চা ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে বাবার কোলেই ঘুমিয়ে গেছে।দুপুরে নেহা,সকালের জন্য খাবার নিয়ে
এলো। তখন মিমের জ্ঞান ফিরে এসেছে,সে ইমান কে বললো,
- "খেয়ে নিন।" কিন্তু, সে মিম কে বললো,
- "আমি বাহিরে যাচ্ছি, তোমার জন্য কিছু ঔষধ কিনতে হবে।"
- "তার কোনো প্রয়োজন নেই।" তবে ইমান তাকে
কড়া গলায় বললো,
- "অবশ্য'ই আছে।" অতঃপর, সে খুব দ্রুত মিমের কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ কিছু ক্ষণ পর, এনা দেখা করতে চলে এলো মিমের সাথে।
দু'ই বান্ধবী বসে সুখ দুঃখের গল্প কর ছিলো, কথায় কথায় এনা হাসতে হাসতে বললো,
- "তুই অনেক ভাগ্যবতী,দুলাভাই অনেক ভালোবাসে
তোকে।"
- "ভাগ্যবতী না ছাঁই, ওনার বড় বউ কিছু বললে উনি আমাকে এখানেই পুঁতে রাখবে।" এনা অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো, মিম মেকি হেসে বললো,
- "বাদদে, মুগ্ধ কেন এলো না তোর সাথে? এনা মৃদু হেসে বললো,
- "উনি গ্রামের বাড়িতে গেছে,জায়গায় জমি সংক্রান্ত কিছু কাজ পরে গেছে।
ওনাকে তোর খবর টা দেইনি জানলে তোর কাছে না এসে কিছুতেই থাকতে পারতো না সে।" মিম হাসতে হাসতে বললো,
- "ভালো করেছিস।"
- "কি ভালো? জানলে, সে আমার চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করবে।"
- "ছেলেরা ভালো আছে? হ্যাঁ, দু'জনেই যে যায় মতো লেখাপড়া নিয়ে বিজি। সুযোগ পেলে পাঁচ সাতদিনের জন্য দেশে আসার কথা বলেছে।" দু'জনে গল্প করার সময় খেয়াল করে দেখেনি ইমান দরজায় দাঁড়িয়ে। মিমের বলা বেশ কিছু কথা তার কানে বাজছে। মিম কে রাতে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো ডক্টর, তাকে বেড
রেস্ট দিয়েছে।
মিম বিছানায় শুয়ে মায়ান কে গল্প শোনাচ্ছিলো। মায়ান খুব মনোযোগ দিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে তার মুখ থেকে গল্প শুনছে। ইমান খাবার নিয়ে এসে মিম এর পাশে বসলো। মিম তাকে দেখে'ই মুচকি হেসে বললো,
- "এতো ঝামেলা কে করতে বলেছে আপনাকে? আমি পরে খেয়ে নেবো।"
- "তুমি পরে কখন খাবে? তোমার ওজন কমে যাচ্ছে দিন কে দিন, হিমোগ্লোবিন কমে গেছে।"
- "সো হোয়াইট?"
- "তুমি ডক্টর না আমি ডক্টর?"
- "দেখুন, আপনি ডক্টর তবে আপনার লেনাদেনা হার্ট এর সাথে।"
- "একটু বেশি বলে ফেলছনা তুমি? আজ রাত থেকে
আমি থাকবো তোমার সাথে।"
- "আর বড় আপা?"
- "সে বাচ্চা না। নিশ্চয়ই, তোমার এই সকল সমস্যার গুরুত্ব সে বুঝবে?"
- "কি জানি বাবা? আবার সে না মনে করে বসে আমি নিজের কাছে জোর করে আটকে রাখতে চাই- ছি আপনাকে।"
- "আমি তোমারও স্বামী ছোটো।"মিম হাসতে হাসতে
বললো,
- "জেনে ভালো লাগলো আপনার সেটা মনে আছে।" হঠাৎ নাহিয়ান মায়ের ঘরে এসে হাজির, সে খুব নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,
- "মা এখন তোমার শরীর কেমন আছে?"
- "বেশ ভালো।" তারপর ইমান, মুখে তুলে খাইয়ে দিতে লাগলো তাকে। মিম কোনো কথা না বাড়িয়ে তার হাত থেকে খাবার খেয়ে নিলো।
আয়েশা তার ঘরে শোয়ার জন্য ডেকে নিয়ে গেলো ইমান কে। ইমানে চলে যেতে'ই মিম, প্রচণ্ড একা অনু ভব করতে লাগলো। তার যেন এ বাড়িতে দম বন্ধ হয়ে আসছে? সে উঠে দরজা লাগানোর জন্য এগিয়ে
গেলো। হঠাৎ ইমান তাকে বাঁধা দিয়ে বলে উঠলো,
- "এই অসুস্থ শরীর নিয়ে, রাতে একা একা আমায় ছেড়ে তুমি কি করে থাকবে?"
- "এর আগেও আমি অসুস্থ হয়েছি, গুরুতর অসুস্থ হয়েছি আপনি ঠিক ক'টা রাত ছিলেন আমার পাশে?
দেখুন, আমার আপনাকে কোনো প্রয়োজন নেই। আর আমি চাইনা নিজেকে অন্যের ওপরে নির্ভরশীল করে তুলতে।" কথা টা বলে'ই মিম দরজা লাগাতে গেল, কিন্তু ইমান তাকে বাঁধা দিয়ে ওর সকল ঔষধ নিয়ে প্রবেশ করলো শয়ন কক্ষে। মায়ান ততক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে, ইমান কি ভেবে বললো,
- "চলো না দু'জনে মিলে ছাঁদে গিয়ে চাঁদ দেখি পাশা পাশি বসে।"
- "আমার একটু ও এ সব ভালো লাগছে না।"
- "আমরা কখনো বৃষ্টিতে ভিজিনি এক সাথে। রাস্তায় হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটিনি।"
- "দেখুন,আমাদের এসব করার বয়স অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে।"
- "এখনো সময় পেরিয়ে যা'য়নি।"
- "কিন্তু,
আমার কাছে সেই সময় টা অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। শুনুন, এই নিয়ে আমার কোনো আফসোস এবং অভিযোগ নেই। সব সুখ লেখা থাকে না সবার ভাগ্যে।
আমি না হয় ধরে নিলাম সব আমার কপালের দোষ।
আমি সমঝোতা করে নিয়েছি, নিজেকে মানিয়ে ও নিয়েছি সকল কিছুর সঙ্গে।" কথা গুলো বলে ছেলে কে জড়িয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরলো মিম।
ইমান না ঘুমিয়ে, সারা রাত জেগে জেগে কাটিয়ে দিয়েছে।
সকালে হলে বসে সকলে ইমান এবং আয়েশার বিয়ে এর ছবি দেখছিলো। তখন সুহানি খুব আগ্রহ নিয়ে আয়েশা কে জিজ্ঞেস করলো,
- "বড় মা,তুমি কোন কোন দেশ ঘুরেছ বাবার সাথে?
সে হাসতে হাসতে ইমানের কাঁধে মাথা রেখে বললো,
- "পঁচিশ থেকে এিশ টা দেশ ঘুরেছি, উনি আসলে খুবই লজ্জা পেতেন ছোটোকে নিজের সাথে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে।" নেহা আয়েশার কথায় কিছু টা বিরক্ত হয়ে মিমকে জিজ্ঞেস করলো,
- "মা বিয়ের পর তুমি কোথায় কোথায় ঘুরতে গেছো বাবার সাথে?" সে হাসিমুখে বললো,
- "কোথাও না মা, শুধু একবার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ছিলাম তাও আমার বড় চাচাশশুরের চল্লিশা খেতে।"
ইমান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো,
- "কখনো আমার সাথে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ হ'য় -নি তো কি হয়েছে?
তোমার পাসপোর্ট করতে দিয়েছি, আমার দু'জনে হজ্জ করতে যাবো এক সাথে।
" আয়েশা চমকে গিয়ে বললো,
- "ছোটো কে নিয়ে তুমি হজ্জ করতে যাবে? কোই আমাকে তো বললেনা?
আমি ও হজ্জে যেতে চাই তোমার সাথে।" ইমান কড়া গলায় বললো,
- "আমরা না হ'য় পরে কখনো যাবো আর তাছাড়া ছোটো মাঝেমাঝে হজ্জ করার কথা বলতো আমাকে
আর তুমি কখনো'ই হজ্জে যাওয়ার কথা বলোনি। তুমি শুধুমাএ এই দেশ, ওই দেশ ঘুরে বেড়াতে চেয়েছ আমার সাথে।" ইমানের এক কথায় চুপ হয়ে গেলো আয়েশা।
সে আর চোখে ছোটো বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখল,
সে ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। তার চোখে-মুখে প্রসন্নতার কোনো রেস নেই আর না হজ্জ করতে যাওয়ার জন্য কোনো উৎসাহ দেখাচ্ছে সে। সে উঠে হঠাৎ রান্না ঘরে চলে এলো। ইমান এসে তার হাত টেনে ধরে বললো,
- "তুমি এখানে কি করছ? ডক্টর তোমাকে রোদে তাপে যেতে বারণ করেছে?"
- "তো আমার ছোট্ট বাচ্চা টা কি সারাদিন না খেয়েই থাকবে?"
- "আমি মণি কে ডেকে দিচ্ছি, ফুলির মা কে বলে দিচ্ছি।"
- "শুনুন,এতো আদিক্ষেতা না করলেও চলবে আমার
সাথে।"
- "তুমি আমাকে সত্যি'ই ডিভোর্স দিতে চাইছ?"
- "হ্যাঁ, চাইছি এবং তার ক্রাইটেরিয়া আপনাকে অল রেডি এক্সপ্লেইন করা আছে।"
- "আমি যদি কখনো ভুল বশত তোমার গায়ে হাত তুলে ফেলি?"
- "ভুলবশত কেন তুলবেন? নিশ্চয়ই,আপনার নিজস্ব কোনো না কোনো লজিক থাকবে।
আর তাছাড়া আমি এ সব ফালতু বিষয় নিয়ে এখুনি আলোচনায় আসতে চাইছি না এমন সিচুয়েশন তৈরি হলে না হয় তখন ভেবে দেখা যাবে?" মিমের প্রতিটি কথা ইমানকে খুব আঘাত করলো।
সে সকালের নাস্তা না খেয়ে হাসপাতালে চলে এসেছে তাকে অন্য মনস্ক দেখে আবিন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
- "কি ব্যাপার বাবা? তোমার কি কোনো কারণে মন খারাপ?"
- "না তেমন কিছু না, আসলে বেশ কিছু দিন ধরে আমার ওপর থেকে খুব স্ট্রেস যাচ্ছে।"
- "তাহলে বেশ কিছু দিনের জন্য ছুটি নিয়ে নাও, বড় মা কে নিয়ে ঘুরতে যাও। তাহলে আই গেস তোমার মন টা আগের মতোন ভালো হ'য়ে যাবে।" ইমান ছেলের কথা শুনে মেকি হাসলো, তাকে জিজ্ঞেস করলো,
- "আচ্ছা সেসব বাদদেও আর এটা বলো তোমাদের মা কে নিয়ে ঘুরতে গেলে কেমন হবে?"
- "তুমি মা কে নিয়ে যাবে ঘুরতে? তবে গ্রামেই যাও,
উনি আর ট্রাভেল করার কি বোঝে?" ইমান চিৎকার করে বলে উঠলো,
- "মুখ সামলে কথা বলো আবিন, লজ্জা করে না? নিজের মা কে নিয়ে এমনতরো নোংরা মন্তব্য করতে?
।" বাবার কাছে ঝাড়ি খেয়ে বেশ চুপচাপ হয়ে গেলো আবিন। দুপুরে ইমান কাজ থেকে বিরতি নিয়ে ফিরে এলো বাড়িতে। সে বাড়িতে প্রবেশ করতে করতে দেখলো, মিম বাগানে গাছ লাগাচ্ছে। তার পেছনে'ই
তার ছোটো শালা অর্থাৎ আয়েশার ছোটো ভাই আমান দাঁড়িয়ে আছে। সে মিম কে জিজ্ঞেস করলো,
- "কেমন আছেন ভাবি?" মিম বিরক্ত হয়ে বললো,
- "আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো,
তা এবার কত তম স্ত্রী কে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে এসে- ছেন আমাদের বাড়িতে?" আমান লজ্জা পেয়ে চুপ করে রইলো, ইমান এগিয়ে এসে বললো,
- "বোধহ'য় ছয় কি সাত হবে? কি জানি? তোমাকে না নিষেধ করলাম রোদে তাপে যেতে?"
মিম তার কথার উওর না দিয়ে ঘরে চলে এলো তখন আমানা ইমান কে জিজ্ঞেস করলো,
- "ভাইয়া ছোটো ভাবি কি গোস্বা করেছে?" সে তার কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে ঘরে চলে এলো। ফ্রেশ
হয়ে এসে দেখলো,
নিচে তাকে ছাড়া'ই জমজমাট আড্ডা বসেছে। সে ও আড্ডায় অংশগ্রহন করলো, গল্প করতে করতে মাঝে মধ্যেই সে আরচোখে এদিক-সেদিক তাকিয়ে ছোটো বউ কে খুঁজছে মিম ছেলের খিচুড়ি নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ইমান খেয়াল করে দেখলো, রাবেয়া খাতুন গম্ভীর মুখ নিয়ে মিমের পেছন পেছন যাচ্ছে।
তিনি গিয়ে বিছানায় বসলেন, হাসি মুখে'ই বললেন,
- "মা আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে।"
- "জ্বি, বলুন!"
- "মানুষ মাএই ভুল হয়,জানি আমাদের এবং আমার
ছেলের অনেক ভুল আছে। আমি জানি, বুঝতে পারি মা ও তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে, কটু কথা বলে ও আঘাত করেছে।
কিন্তু, সে আজ নিজে ও চাইছে নিজের করা ভুল গুলো সংশোধন করে নিতে।
তুমি একটি বার তাকে সুযোগ দিয়ে দেখ, তোমরা পঁচিশ বছর ধরে সংসার করেছ এক সাথে।
তার সন্তানদের মা তুমি। তুমি যদি তোমার সংসার ছেড়ে চলে যেতে চাও তাহলে
কি করে হবে? ইমান চেয়েছিল, বাচ্চারা তাদের দু'ই মায়ের আদর- যত্নে বেড়ে
উঠুক আয়েশার ও মা হওয়ার স্বপ্ন টা পূরণ হোক।
আর তাই সে তোমার বাবার কথা অগ্রাহ্য করে তোমাদের দু'ই জনকে
একই বাড়িতে'ই রেখেছে।"
- "আর?"
- "তুমি আমার এই বাড়ির লক্ষী, বাড়ি লক্ষী ছাড়া হয়ে গেলে কেমন হবে?"
মিম হাসতে হাসতে বললো,
- "তেমন কিছুই হবে না মা।
আপনি জাস্ট, আপনার কত গুলো মন গড়া কথা এসে শোনাচ্ছে আমাকে।
আর আমি যদি এ বাড়ির লক্ষী'ই হতাম...!
তবে কথায় কথায় আপনারা এতো অপমান আরন অসম্মান করতেন না
আমাকে আর রইলো আপনার ছেলের ভুলের কথা,
আসলে, ওই লোকটির জন্ম,হা আপনার ছেলের জন্ম, শুধু মাএ ভুল করার জন্য'ই হয়েছে।
আর হ্যাঁ, আমি কখনোই তাকে ক্ষমা করবো না।
আপনি দয়া করে তার হয়ে কাঁদুনি গাইবেন না আমার কাছে এসে।'
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com