Breaking News

বাস্তবতা নিয়ে এই গল্পটি লেখা

ঐ পা ছাড় বলছি,

-আপা দশটা টাকা দেন?
-তুই কি পা ছাড়বি না লাথি মেরে ফেলে দেব।
-আপা দিন না দশটা টাকা?
-লাথি মেরে ফেলে দিলাম ছেলেটাকে, ছয় কি সাত বছর হবে বয়স।
মেজাজ গরম ছিল তাই বেশি রিয়েক্ট করে ফেলছি।

একটা কাজে কলেজে আসা, বফ এর সাথে ঝগরা মোবাইলে কথা বলতেছি এমন
সময় এসে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে টাকা চাইছে। এমনি এত প্যারা তার ওপর আবার
রাস্তার ছোকরা গুলা জন্মের কোনো ঠিক নাই।
অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফরম পূরণ চলছে এমনি ঝামেলা তার ওপর
সায়মন এর প্যারা আজকে ব্রেকআপ করেই ফেলেছি।
আর না ওর সাথে ফাইনালি সম্পর্কটা ইতি টানলাম।
প্রায় একটার দিকে সব কাজ শেষ হলো
এখন একটু শান্তি লাগছে। এত ঝামেলা খুব টেনশনে ছিলাম এখন রিলাক্স লাগছে।
বাড়ি চলে যাব কলেজএর মাঠে বট গাছ টা ঘিরে বাউন্ডারি দেওয়া সবাই বসে আড্ড
দেয় ঐ যায়গা টায় ছেলেটা বসে আছে। নাক দিয়ে যে রক্ত পরেছে এখনও রক্ত শুকিয়ে
লেগে আছে কপাল এর দিকে অনেকটা কেটে গেছে। ইশশশ কি অন্যায় টা না করলাম।
এক জুরা কাপল এসে ছেলেটা কে বকা দিয়ে নামিয়ে দিল সাথে একটা থাপ্পড় ফ্রি ।
বাচ্চা ছেলেটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচটায় গিয়ে বসে কাঁদছে।
অনেক খারাপ লাগছে, আমিও গেলাম গিয়ে ছেলেটার পাশে বসলাম।
ছেলেটা একটু সরে বসলো।
ঐ তোর নাম কিরে?
-নিশ্চুপ।

-তোকে আমি লাথি মেরেছি। সরি।
আরেকটু দূরে গিয়ে বসলো। আমি ছেলেটার সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে কানে ধরে বসলাম।
আচ্ছা বাবা সরি বললাম তো এবার তো মাফ করে দে?
-হি হি হি।
-ঐ হাসবিনা, আগে বল মাফ করেছিস কিনা?
-মাফ কেমনে করে?
-এইটুকু ছেলে কি করে ক্ষমা করে তাও যানেনা। আল্লাহ তোমার লীলা বুঝা বড় দায়।
আচ্ছা শুন আমি যে তোরে লাথি মারছি তুই পরে গেলি ব্যাথাও তো অনেক পেয়েছিস তো
আমার ওপর কি এখনো রাগ করে আছিস?
-কি যে কন? আমাগো মতো পোলা মাইয়া গো আরো কত মারে?
-ওঠে ছেলেটার পাশে বসলাম, দে তো তোর হাতটা দে?
-আমার হাতে ময়লা আপনার হতে বরবো।
-আমি যানি তোর হাতে ময়লা দে তো?
ছেলেটার হাত আমার দিকে এগিয়ে দিলো ছোট্ট ময়লা
জড়ানো হাতটা আমার দু হাতের মুঠোয় নিয়ে-
তোর নাম কি রে?
-আমার নাম জানিনা সবাই ছোটো বলে ডাকে।
-তোর বাবা-মা তোর নাম রাখেনি?
-বাবা-মায় রে তো দেহি নাই। তয় সর্দার কয় আমারে নাকি রেললাইনের পাশে কুড়ায় পাইছে।
-তোকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি, ছোটোর হাতটা আরো শক্ত করে ধরে,
তোর এই অপরাধী বোন টাকে মাফ করে দে ভাই।
-আপনি কি মানুষ নাকি ফিরেস্তা?
-আমি ফেরেস্তা না আল্লাহ তৈরি মাটি দিয়ে গরা রক্ত মাংসের মানুষ।
আচ্ছা চল আমার সাথে?
- কোথায়?
-কেন আমার সাথে যেতে ভয় পাচ্ছিস?
-না, চলেন।
-দাড়া, ঐ ছেলেটা না তোকে থাপ্পড় মারছে। এই ইটের টুকরাটা নে,
এটা দিয়ে একটা ঢিল মেড়ে দৌড় দিবি গেটের বাইরে বড় রাস্তার মুড়ে দাড়াবি আমি পরে আসছি।
হা করে না থেকে ধর?
-আইচ্ছা।
ছোটো ইটের টুকরো টা দিয়ে ঢিল দিয়ে এক পলকে হাওয়া মনে হচ্ছে ট্রেনিং প্রাপ্ত।
ঐ ছেলেটার মাথায় গিয়ে লাগছে। ঝরঝর করে রক্ত পরছে। আমি বেরিয়ে গেলাম বড় রাস্তার মুড়ে ছোটো দাড়িয়ে আছে অনেক চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমি আস্তে আস্তে ছোটোর পিছনে গিয়ে ভাউ,
ঐ ছোটো দাড়া আরে আমি রে।

অনেকটা দুর চলে গেছে দৌড় দিয়ে ভয় পেয়েছে অনেক। আমিও গেলাম দৌড়ে ছোটোর কাছে।
ওকে নিয়ে প্রথম ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলাম ড্রেসিং করে দিয়েছে কপালে ছোট্ট একটা বেন্ডিস, আর জ্বরের টেবলেট। সেই কখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে, আচ্ছা কি হয়ছে কাঁদছিস কেন হমম?
-এমনি।

-এমনি কেউ কাদে নাকি, আচ্ছা চল কিছু খাবি আমারও অনেক ক্ষুদা লাগছে চল।
ছোটোরে নিয়া একটা রেস্তোরায় ঢুকলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, রেস্তোরার বেয়ারা টা-
ঐ ছেলে এখানে কেন আসছি, সরি মেডাম আপনি বসুন আমি এরে দেখছি।
-ঐ ঐ এ আমার সাথে আসছে আমার ভাই, আর কেউ ছোট বাচ্চার সাথে এমন ব্যবহার করে?
মানুষ নাকি।
ঐ চল তো বস এখানে আর কি খাবি?
-আপনি যেটা খেতে দিবেন?
-আজ তুই যেটা খেতে চাইবি ওটায় খাওয়াবো বল?
-আমাদের সর্দার বড় বড় মুরগী আর মাছ খাইতো আমার খুব ইচ্ছা করতো খাইতে কিন্ত দিত না, হোটেলে গিয়া জিগাইছি একটা টুকরা পঞ্চাশ টাকা এত টাকা কই পামু।
-হমমম বুঝলাম, ওকে তুই বস আমি খাবার এর অর্ডার দিচ্ছি।
মুরগীর গুস্ত, গরুর গুস্ত, ডিম, আর ভুনা খিচুড়ি আমিও অনেক দিন খাইনা ভুনা খিচুড়ি জমিয়ে খাওয়া যাবে।
বেয়ারা এসে একে একে সব উপকরণ সাজিয়ে দিয়ে গেছে, এই নে ছোটো শুরু কর, ভাই অনেক ক্ষুদা পেয়েছে আমার,
-এত খাবার?

-কই কত অল্প একটু তো। আচ্ছা দাড়া আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। হাতটা ধুয়ে আসি।
হাত ধুতে জাব একটা ছেলে বলল, রাস্তার মেয়ে মনে হয় না হয় এমন একটা মেয়ে এমন নোংরা ছেলেকে সাথে নিয়ে আসে ওয়াক,,,
হাত ধুয়ে ঐ টেবিলে গেলাম, শালা কি বললি?
-আপনি আমার কলার ছাড়েন?
-তুই কি বললি একটু আগে,
রাস্তার ছেলে তোদের মতো কিছু জানোয়ার এর কারনে ছোটোর মতো বাচ্চার জন্ম হয়
পরে রাস্তায় ফেলে যায়। আজকে কিছু বললামনা।
ও আমার ভাই একটা কথা না বলে চুপচাপ গিল পরে চলে যা।

শালারা।
ভাই এই চেয়ারটাতে আয়।
যদি কারো এখানে খেতে প্রবলেম হয় সোজা বের হয়ে যান। আমার ভাই এখানেই খাবে।
ছোটো হা কর তো ভাই,
ছোটোকে খাইয়ে দিলাম আমিও খেলাম আজ অনেক তৃপ্তি নিয়ে খেলাম।
-জানেন আমি আজ দুই দিন ধরে খাইনা, তাই আপনার পা ধরেছিলাম অনেক ক্ষুদা পাইছিল।
-থাক ভাই বাদ দে আমি তো মাফ চাইলাম, আচ্ছা আর কি খাবি দই না আইসক্রিম?
-আর কিছু খাব না,
-আরে বল, আচ্ছা চল আইসক্রিম খাই। বস আমি নিয়ে আসছি।
এই নে ধর, আর আজ থেকে তুই আমার কাছেই থাকবি আমার ভাই হয়ে, আমার কোনো ভাই বোন নাই।
-আপা আপনি সত্যি ফিরিস্তা।
-চুপ কর আমি মানুষ, ঐ সব বললে আল্লাহ নারাজ হবে।
আচ্ছা তোর একটা নাম ঠিক করি স্কুলে ভর্তি হলে তো নাম লাগবে এই ছোটো নাম শুনলে সবাই হাসবে।
-স্কুল?

-হমমমম তোকে স্কুলে ভর্তি করাবো তুই পড়ালেখা করবি মানুষের মতো মানুষ হবি।
আরে আরে পা ধরছিস কেন। ছোটোকে তুলে বুকে জরিয়ে ধরলাম। পাগল ভাই, বস এখানে, আমার স্বপ্ন তোকে নিয়ে তুই সব পূরণ করবি। করবিনা ভাই?
-ইনশাআল্লাহ।
-আমার নাম মায়া। কি নাম আমার?
-মায়া আপা।
-ধুর আপু ডাকবি।
-হমমমম।আপু
-আমি ঐ কলেজটায় পড়ি, অনার্স এ এখন বুঝবিনা যেদিন পড়বি সেদিন বুঝবি। আর রেললাইন এর ঐ পাশ টায় আমার বাড়ী ছোট্ট একটা ঘর বেশি বড়না কিন্ত, আমার আপন বলতে মা। আর কেও নেই। আমি অত বড়লোক না ছোট্ট একটা চাকরী করি মা মেয়ের জীবন চলে যায়।
যাবি আমার সাথে?
-কি বলেন যাবনা, আপনে বললে জাহান্নমেও যাব।
-ধুর পাগল, তুই আমার ভাই হয়ে আমার সাথে যাবি। আমার মার ছেলে হয়ে যাবি? আর বোন কে কি কেও আপনি করে বলে।
-যামু আপু যামু আমার মায়ে কাছে নিয়া চলো?
-হমমম চল চল, মাও তকে দেখলে অনেক খুশি হবে।
আচ্ছা তোর একটা নাম তো রাখতে হবে কি নাম রাখবো।
-মাইমুন।

-কে?
-মায়ার ভাই মাইমুন। বোন গো আমাকে ক্ষমা করবেন আপনার মতো মন যদি প্রতিটা মানুষের থাকতো তাহলে এই ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা রাস্তায় ঘুরতো না। আমাকে ক্ষমা করেন বোন।
-আরে কি করছেন, নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন এই অনেক। আচ্ছা আমাদের বিলটা কত হয়ছে?
-বোন আপনার কাছ থেকে টাকা নিলে নিজেকে খুব ছোট মনে হবে।
-না ভাই, এ কথা বলবেন না এটা আপনার রিজিক। আপনি টাকা টা রাখেন, তবে একটা কথা রাখবেন আমার?
-বলেন বোন,
-যে কোনো পথচারী আসলে পেট ভরাতে না পারে ক্ষুদা মিটানোর জন্য একটু খাবার তার হাতে তুলে দিবেন। আমাদের ক্ষুদা লাগে ওদেরও তো লাগে। ওরাও তো মানুষ।
-বোন গো আমি আজ কথা দিচ্ছি কোনো পথচারী আমার রেস্তোরা থেকে অনাহারে ফিরে যাবেনা।
-ধন্যবাদ। আর নামটা কিন্ত অনেক সুন্দর। মায়ার ভাই মাইমুন। কিরে নামটা পছন্দ হয়ছে?
-অনেক।

-বোন আমি কিন্ত যাব বেরাতে আপনার ঐ ছোট্ট ঘরে বেরাতে আমার তিন কুলে কেও নাই এই দোকানে চাকরী করি মালিকটা ভালো ছিল, ওনি মারা যাওয়ার সময় দোকানটা আমার নামে লিখে দিছে। আমার নাম নাজমুল।
-আচ্ছা যাবেন, তবে আমার বাড়ী
-শুনে নিয়েছি যেতে পারবো। তবে আপনি মাসে একবার হলেও আমার দোকানে আপনার পদধুলী দিয়ে যাবেন।
-আচ্ছা আসবো। তো আসি এখন।
চল মাইমুন।
-চলো।
-তোর জন্য কিছু ড্রেস কিনে দিতে হবে চল।
মাইমুনের জন্য কিছু ড্রেস কিনে বাড়ী গেলাম, মা যতটা খুশি হবে ভেবেছিলাম তার থেকে অনেক বেশি খুশি হয়ছে। বাজার নিয়ে আসছি মা রান্না করতে গেছে,
কিরে মাইমুন বাড়ী টা পছন্দ হয়ছে?
-অনক পছন্দ হয়ছে আজ যে আমি কত সুখী বলে বুঝাতে পারবোনা।
-হমমম বুঝাতে হবেনা, চল গোসল করবি, এই যা তোর চুল কাটতেই তো মনে নেই আচ্ছা কালকে কাটিয়ে আনবো এই নে সাবান সেম্পু ভালো করে গোসল করে আয়।
-যায়তাছি।
-মা

-হমমম বল,
-মাইমুন কে নিয়া আসছি তুমি রাগ করনি তো?
-শুনো পাগলি মেয়ের কথা, আমার একটা ছেলে একটা মেয়ে আমার সাত রাজার ধন তোরা। আর মাইমুন আমার পেটের সন্তান।
-আমিও মা অনেক খুশি আমার একটা ভাই আছে, মা আমার ভাইরে আমি বড় IPS পুলিশ বানাবো। জনগনের সেবা করবে আমার ভাই। ভাই এর পড়ালেখার জন্য টাকা জমাবো এখন থেকে।
-আপু গোসল কইরা আইছি।
-বাহ্ আমার ভাইটা এত সুন্দর। মা দেখ দেখ আমার ভাইটারে।
-কই দেখিতো আমার ছেলে টারে, আমার ছেলে এটা।
-মা
-বাবা আবার মা বলে ডাক,
-মা, মা গো।
-আমার ছেলে, আমার বাবা।
-হ মা আমার মনে হয়তাছে আমি জান্নাতে আছি।
-শুনো পাগল ছেলের কথা। বাবা তোমার বোন তোমারে অনেক বড় পুলিশ বানায়তে চায়, অনেক স্বপ্ন তোমার বোনের তোমারে নিয়া, পূরণ করবা নি বাবা?
-হ মা আপুর সব স্বপ্ন আমি পূরণ করমু।
-আচ্ছা ভাই কালই তোরে স্কুলে নিয়ে যাব ভালো করে পরতে হবে কিন্ত?
-আইচ্ছা।
-আইচ্ছা কি বল আচ্ছা।
-আচ্ছা।

-ভাইটারে স্কুলে ভর্তি করায় দিলাম অনেক নামি দামি স্কুলে, বেতন অনেক টিউশন ফি।
মাইমুনের খরচ আমাকে এখন আরো ভালো কোনো জব খুজতে হবে। এক বছর পর একটা ভালো চাকরী পেলাম আমারও অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ। আজ এই খুশিতে মাইমুনরে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম, আজ আর আমার ভাইকে দেখলে কেউ বলবেনা যে কোনো পথচারী।
ঐ রেস্তোরায় ঢুকলাম, আমাকে দেখেই নাজমুল ভাই দৌওড়াইয়া আসলো।
-বোন আপনি আসছেন, আপনি তো আমাকে কথা দিছিলেন যে প্রতি মাসে একবার আসবেন, আর আজ ঠিক এক বছর পর ঠিক ঐ টাইমেই আসলেন।

-ভাইয়া নানান কাজে ব্যস্ত সময়ই পাইনা তবে এখন থেকে আসবো।
-বোন আজ এই দিনে মাইমুন কে খুজে পাইছেন আজ আমি আমার ভাইটার জন্মদিন বানাতে চাই,
-কি বলেন আমি তো এত টাকা সাথে আনি নাই।
-আমাকে ভাই ডাকেন আর এ কথা বলছেন মাইমুন আমারও ভাই। আজ এই দিনে প্রতি বছর আমি আমার ভাই এর জন্মদিন উপলক্ষে সকল পথচারী কে খাওয়াবো নিজে ডেকে আইনা। তুমি যানো সেদিন এর পর থেকে কোনো পথচারী কে ক্ষুদা নিয়ে যেতে দেইনি।
-ভাইয়া আল্লাহ আপনাকে আরো দিক দোয়া করি।
-আজকের দিনটা আমার সারাজীবন মনে থাকবো।
-বোন প্রতি বছর আমার ভাই এর জন্মদিন পালন করমু তুমি মাইমুনরে নিয়ে আমার মা রে নিয়া আসবা। আমি যাব আমার মারে দেখতে।
আচ্ছা আইসেন। আজকে যাই তাহলে।
-আচ্ছা।
দিন গুলা পেরিয়ে যাচ্ছে, দিন যাচ্ছে মাস যাচ্ছে বছর। ভাইটাও এসএসসি পরীক্ষা দিলো গোল্ডেন A+পাইছে আমার ভাই। নাজমুল ভাই আসছে মিষ্টি নিয়া পুরা এলাকার সবাইকে মিষ্টি বিতরণ করছে আজকের খুশিতে তো ওনি দোকানে ফ্রি করেদিছে আজকে কারো থেকে টাকা নিবেনা।
-আপু আজ আমি অনেক খুশি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো আমি।
-হমমম ভাই জানি তুই পারবি।
-তোমাদের এই ঋণ আমি আমার শরীরের চামড়া কেটে তোমাদের পায়ের জুতা বানায় দিলেও সুধ করতে পারবোনা।

-ভাই এই সব কোনো দিন বলিস না, আমি মরে গেলে মারে আর তোর নাজমুল ভাইরে দেখে রাখিস।
-ঐ আপু কি বলো, তুমি আমাকে রেখে কই যাবা?
-দেখ কান্ড, মানুষ কে তো একদিন মরতে হবে।
-তোমার কিচ্ছু হবে না।
-আচ্ছা হবেনা,
আচ্ছা শুন আজ বাড়িতে একজন অতিথি আসবে, আমার বন্ধু টাকা টা ধর বাজার করে নিয়ে আয়, আমার হাতের রান্না খেতে চায়ছে।
-বন্ধু না অন্য কেউ?
-বেশি বড় হয়ে গেছিস তাইনা?
-বুঝি আমি।
-তবেরে দাড়া?
-মা গো বাচাও গো?
-আবার শুরু করলি তোরা কবে যে বড় হবি।
-আমি গেলাম বাজারে।
-মা আজকে একজন আসবে আমাদের বাড়িতে আমার বন্ধু। আর আমি রান্না করবো।
-ও বন্ধু।
-হাসছ কেন?

-না এমনি, আচ্ছা রান্না করিস।
সত্যি কথা বলতে আমি আকাশ কে অনেক ভালোবাসি আর আমার থেকে বেশি আকাশ
আমাকে ভালোবাসে। সায়মন এর সাথে এই রিলেশন টিলেশন একটা প্যারা মনে হতো
কিন্ত আকাশ আমাকে অনেক বুঝে সব সময় আমাকে হাসায় আমার মন ভালো রাখার চেষ্টা করে।
হ্যালো মায়া আমি তো আসছি বাহিরে দাঁড়িয়ে।
-ওমা বাহিরে কি করো, আচ্ছা আমি আসছি।
-ওকে।
-ভিতরে আসতে পারতে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছ।
-পরি তোমাকে দারুণ লাগছে, শাড়ী তে তোমাকে দেখবো আর এত সুন্দর লাগছে কি বলবো।
-হয়ছে হয়ছে আর পাম দিতে হবেনা।
-কসম, একটুও পাম দিচ্ছি না।
-আচ্ছা চলো তো,
-হমমম চলো, আচ্ছা মাইমুন কই,
-ও একটু দোকানে গেছে।

মা এ হচ্ছে আকাশ এক সাথে কাজ করি আমরা।
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন?
-এইতো বাবা ভালো তুমি?
-আমি ভালো আছি।
-আকাশ বসো, আমি একটু সরবত নিয়ে আসি।
-আপু এই নাও,
-আরে মাইমুন কেমন আছ?
-আসসালামু আলাইকুম, ভালো আপনি?
- আমি ভালো আছি।
-আচ্ছা তোমরা গল্প কর আমি আসছি।
-তো কি খবর।
-এই তো,
-আমাদের বাড়ীতে এসো একদিন।
-আচ্ছা যাবো আপনি আসছেন খুশি হয়েছি অনেক।
-ভাই তোমার জন্য এই ঘড়ী টা এনেছি, যদি পছন্দ হয় রাখতে পারো।
-এসবের কি দরকার ছিল আকাশ?
-দরকার ছিল বলেই এনেছি।

-ভাইয়া ঘড়ী টা অনেক সুন্দর। আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।
-ধন্যবাদ ভাই, আমি পছন্দ করতে পারিনা তাও আনলাম। আন্টি এইটা আপনার জন্য।
-এসবের কি দরকার ছিল বাবা।
-কি যে বলেন আন্টি, আর মায়া এটা তোমার জন্য।
-তুমিও না আকাশ সব সময় একটু বারাবারি করো কি দরকার ছিল এসবের।
-অনেক দরকার ছিল।
-আচ্ছা চলো খাবে, মা আসো।
মাইমুন আকাশ কে নিয়ে আয়।
-আসছি, তুমি খাবার রেডি করো।
আসেন ভাইয়া। আজ আপু সব নিজের হাতে রান্না করেছে, অনেক বাজে রান্না করে কিন্ত আপু।
-মাইমুন, তুই কি বলছিস হমমমম?
-আচ্ছা এত আস্তে বললাম আপু শুনলো কি করে?
-হা হা হা কি জানি।
-আসেন,

ভালোবাসার মানুষ টিকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে অনেক ভালোই লাগে,
আসলে এত ভালো লাগার কারন হচ্ছে আকাশ, আসলে ভাগ্য করে ওরে আমার জীবনে পেয়েছি।
আকাশ আমার শান্তির নীড়, সারাদিন পরিশ্রম করে ওর সাথে একা
একটু কথা বললে সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
খাওয়া দাওয়া শেষ, মাইমুন আকাশকে নিয়ে যা বাহিরে এই নে কফি যা আমি আসছি।
-চলেন বাহিরে বসি।
-চলো
-আমি যানি আপনারা একে অপরকে ভালোবাসেন।
-কি করে বুঝলে?
-দুলাভাই আমি তো বড় হয়েছি বুঝি।
-হা হা হা, হমমমম আমার শালা বাবু অনেক বড় হয়েছে।
-হমমমম।
-কি নিয়ে এতো হাসাহাসি হচ্ছে?
-ও তুমি বুঝবেনা আপু।
-হমমমম রে আমার বড় ভাই।
তুই সব বুঝিস,
-আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি যাই।

-দারাও ভাই তোমাকে যেতে হবেনা, আমি এখন চলে যাবো অনেক বেলা হয়ে গেছে
অফিসের কিছু কাজ জমা আছে যাই তাহলে। আসি মায়া, মাইমুন সবাইকে নিয়ে চলে এসো
একদিন, আমি একা মানুষ যতটুকু পারি আপ্পায়ন করবো।
-যাব যাব কতো যে যাবো পরে বিরক্ত হবেন।
-কি যে বলো।
আচ্ছা যাই তাহলে,
-আকাশ এক মিনিট,
এই নাও,
-কি এটা?

-তোমার রাতের খাবার, যানি অনেক কাজ করবা আস রান্না করবেনা না খেয়ে ঘুমিয়ে যাবা।
-কি দরকার ছিল?
-আরে নাওতো।
-আচ্ছা আসি কাল দেখা হচ্ছে।
-হমমমম, খোদা হাফেজ।
-আপু, আপু
-হমমম
-ঐ আপু,
-কি বল?
-দুলাভাইকে কিন্ত আমার অনেক পছন্দ হয়ছে।
-তবেরে পাজি। দৌড়ে পালাবি কই?
কাজ শেরে বারেটার দিকে ঘরে ঢুকলাম, আকাশের দেওয়া বক্স টা খুললাম, নীল রং এর শাড়ি, নীল রং এর কাঁচের চুড়ি, কানের দুল আর একটা নীল খাম,
শাড়ী টা বিছানায় রেখে খাম টা খুললাম,একটা চিঠি,
প্রিয়তমা মায়,

আমার পরি, তোমাকে এত এত ভালোবাসা। আমি তোমাকে যে ভালোবাসি তা নয়, তোমার সব কিছু হতে চাই, তোমার তুমি হতে চাই, আমি চাইনা তুমি সবাইকে ফেলে আমার কাছে চলে আসো, তুমি সবাইকে নিয়ে আমার কাছে আসো তারা তো আমারও আপনজন। পরি তোমাকে ছাড়া আমার আর ভালোলাগেনা, তুমি আমার হয়ে যাও প্লিজ। আমি তোমাকে যত তারাতারি সম্ভব আমার বউ সাজে দেখতে চাই। আর জানিনা উপহার গুলো তোমার পছন্দ হবে কিনা যদি হয় তাহলে এই শাড়ী পরে একটা পুরো বিকেল আমাকে দিবে?
পাগল একটা, মোবাইল নিয়ে আকাশ কে কল করলাম,
হ্যালো পরি,
-হমমমম কি করো,?
-এই তো কাজ করছি,
-খেয়েছ?
-না, তুমি খাইয়ে দিয়ে যাওনা?
-পাগল একটা খেয়ে নাও আর তারাতারি শুয়ে পর কেমন?
-মায়া শুনো?
-হমমম বলো,
-তুমি কবে আমার হবে?
-কালকে কথা হবে রাখি,
শুনো?
-হমমম বলো?

-I love you,
কেটে দিলাম, পাগল একটা, আমার কি আকাশকে ছাড়া থাকতে ইচ্ছা করে।
কিন্ত মাইমুন এর এখন জীবনের একটা কঠিন সময়। এখন পুলিশ ট্রেনিং এ ভর্তি করাতে হবে।
মা ঘুমিয়ে গেছো?
-না আয়। কিছু বলবি?
-হমমম,
মা এই নাও চেক বই।
-কিসের?
-মা মাইমুনের জন্য টাকা জমিয়েছিলাম, আমার যদি কিছু হয়ে যায় তুমি আমার ভাইটারে মানুষ করো,
-কি বলছিস এসব?
-হমমম মা। দোয়া করো কালকে যাবো মাইমুনের ট্রেনিং এর ব্যাপারে কথা বলতে।
-সে তো ভালো কথা, এগুলা তোর কছেই রাখ।
-না মা তোমার কাছে রাখ আর ঘুমিয়ে পরো কেমন, যাই তাহলে।
কয়েকটা দিন অনেক ব্যস্ততায় কাটলো আকাশের সাথে দেখা বা কথা কোনোটাই হয়নি আজকে ফ্রি। আজকের বিকেলটা আকাশের জন্য আর আজকে তো অফিস বন্ধ।
হ্যালো আকাশ, নদীর পাড়ে থেকো ৩.৩০মি. এ আমি আসছি।
-ওকে।

-আকাশের দেওয়া, শাড়ী কসমেটিক্স পরে বেরিয়ে পরলাম,
নদী পড়ের বেঞ্চটায় আকাশ বসে আছে। আকাশের পাশে বসলাম, কেমন আছ?
- তোমাকে ছাড়া কি করে ভালো থাকি?
- আমি তো শুধু তোমার।
-হমমম, কিন্ত অনেক দূরে।
-কই দূরে, আচ্ছা শুনো মাইমুন তো ট্রেনিং এ চলে গেছে।
-তাই যাক ভালো তোমার স্বপ্নটা পূরণ হলো।
-এখন তুমি চাইলে আমাকে তোমার বউ করে নিতে পারো।
-সত্যি?
-জানিনা,
-মায়া আজ আমি অনেক খুশি, আমি তোমাকে যত তারারারি সম্ভব আমার বউ করে আমার কাছে নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা চলো হাটি,
-বিয়ের পর সব লজ্জা দূর করে দিব, তখন আমাকে ছাড়া কিছু দেখবেনা।
-ধূর কি যে বলো চলো তো?
-চলো
দুজনে হাটতে হাটতে অনেকটা দূর চলে আসছি স্বপ্ন গুলা সাজাচ্ছিলাম,
কিন্ত স্বপ্ন যে স্বপ্নই থাকবে কে যানতো?

-কি একাই কি খাবেন নাকি দাদা, আমাদেরও একটু শেয়ার করেন?
-ভয়ে আকাশের হাত চেপে ধরেছিলা। এটাই ছিল প্রথম, আর এটাই যে শেষ হবে জানতামনা।
ছেলে গুলা আমাকে আর আকাশকে ঘিরে ফেলে আকাশও কিছু বলতে পারছিলনা কারণ তারা অনেক আর আমার আকাশ শুধু একা ছিল, তাদে হাতে চাকুও ছিল। দুইটা ছেলে আমার হাত ধরে টানাটানি করে বুঝতে আর বাকি ছিলনা ওরা কি চায়। আকাশ অনেক মিনতি করছিল আমাদের ছেড়ে দিতে কিন্ত ওরা আমার আকাশকে ছুরী দিয়ে আঘাত করে, আমার চোখের সামনে আমার আকাশ মাটিতে ছটফট করে, আমি তো শুধু আকাশের অন্য কারো হওয়ার কথা ভাবতেই পারিনা আর এরা তো, একজনের হাত থেকে ছুরী কেড়ে নিয়ে নিজেকে শেষ করে দেই, আকাশ এর ডাক কানে আসছিল মায়া, এটা তুমি কি করলে,

আমি বন্ধুদের সাথে বসে লাঞ্চ করতেছিলাম, এমন সময় বড় স্যার এসপ বললো মাইমুন তোমার বোন মায়া মারা গেছে আমি সেদিন কি করে যে বাড়ী গেলাম যানিনা, আমার বোন আর দুলাভাই দুজনের শরীর রক্তে লাল হয়ে গেছে। মা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলন। কয়বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে। আপুর আর দুলাভাই এর মৃত দেহ ছুয়ে কথা দিয়ে ছিলাম ওদের আমি ফাসি তে লটকাবো তাই করেছি, আর আপুর স্বপ্ন আমি পূরণ করেছি। সে পথচারী ছোটো আজ IPS পুলিশ মাইমুন।
আজ আমি পেরেছি কিন্ত আপু আর নেই। ঐ বয়সে আমি আকাশ ভাইয়ার চোখ দেখে বুঝেছিলাম ওনি আপুকে কতটা চান কিন্ত তারা একে অপরকে পেলো না।

আমি পথচারী শিশুদের জন্য স্কুল তৈরি করেছি যতটুকু পারি হেল্প করি।
-মন খারাপ করবেন না আল্লাহ মায়া আপুর মতো একজন মানুষকে জান্নাত দিবেন আর সেখানে তারা এক সাথেই থাকবে।
-কেঁদনা, একটা সময় অনেক কাঁদতাম এখন চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।
তোমার কাছে আমার একটা রিকুয়েস্ট আমার মাকে কোনো দিন একমুহূর্তের জন্য কষ্ট দিবা না।
আজ আমাদের বাসর রাত আমি আমার অতীতটা তোমাকে বললাম আজান দিচ্ছে নামাজ টা পরে নিও। আমি মসজিদে যাচ্ছি। মোয়াজ্জম এর কন্ঠে ভেসে আসছে আসসলাতু খাইরুম মিনান নাউন।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com