একটি ভালোবাসার গল্প
ফারহার কাছে একটা নেশার মতো হয়ে গেছে
ফেসবুকটা। দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে প্রায় বেশিরভাগ-ই সে ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে।
কাছে একটা নিত্যদিনের রুটিন এর মতো হয়ে গেছে। তবে সে বেশি কারোর সাথে চ্যাট
করেনা। ওর কয়েকটা বান্ধবী আর ফেসবুকে পরিচিত দু'একজনের সাথে চ্যাট করে। তাও প্রতিদিন
না। তবে ওর বান্ধবীদের সাথে প্রতিদিন গ্রুপে চ্যাট করতো।
ফারহা হলো বাড়ির ভাই-বোনদের সবার ছোট। খুব আদরের মেয়ে।
ও ফেসবুক ব্যবহার করা তো দুরের কথা,মোবাইল শুদ্ধ ব্যবহার করতো না।
ওর বান্ধবীরা যখন প্রথম ফেসবুক ব্যবহার করে তখন ওকে বলে মোবাইল নেওয়ার জন্য।
যাতে করে ওর সাথে সবাই যোগাযোগ করতে পারে।
পরে সে একটা মোবাইল নেই।
আর তার বান্ধবীরা তাকে খুব পিড়াপিড়ি করে ফেসবুক একাউন্ট খুলার
জন্য। প্রথমে সে না করলেও,,, পরে ওর একটা বান্ধবী তাকে ফেসবুক একাউন্ট খুলে দেয়। ওর
বান্ধবীরা সবাই যার যার পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত।
ফারহা অনার্স ফাস্ট ইয়ারে এডমিশন নেয় ঠিক-ই।
কিন্তুু হঠাৎ করে একদিন ওর বাবা স্ট্রোক করে মারা যায়।এর পর থেকে আর তার পড়া হয় না।
সেই থেকে বাসায়।
তবে বাসায় সে প্রচুর ইসলামিক গল্পের বই পড়ে। মাঝে মাঝে কিছু উপন্যাসিকও পড়ে। গল্প শুনা কিংবা
গল্প পড়াটা তার খুব পছন্দের ছোটবেলা থেকেই। বলতে গেলে সে একটা
গল্পপ্রেমী। ফারহা ফেসবুক ব্যবহার করতেছে তিন-চার মাসের মতো হবে। প্রথম প্রথম তেমন
কিছু না জানলেও পরে তার বান্ধবী তাকে সবকিছুই বুঝিয়ে দেই। আর সে যেহেতু খুব
গল্পপ্রেমী,,, তাই তাকে তার বান্ধবী কয়েকটা বড় বড় পেইজের লিংক দেই। ফারহা সেগুলোতে
লাইক দেই আর সে ইচ্ছেমতো গল্প পড়ে।
তবে তারও মাঝে মাঝে খুব গল্প লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তুু লিখতে পারেনা। একসময় সাইফ নামের
একটা ছেলের সাথে পরিচিত হয় সে,,, সেই ছেলেটা ভালো গল্প লিখে। আর সেই তাকে
একটা রাইটার্স গ্রুপে এড করায়। কিন্তুু তারপরও ফারহা কিছুতেই গল্প লিখতে সাহস পেত না মনে। যদিও
ইচ্ছা করতো তার,,, তবুও সে লিখতো না।
সাইফের সাথে তার একটা ভাল বন্ধুুত্ব গড়ে উঠে। আর সাইফ তাকে গল্প লিখতে মনে সাহস যোগায়।
পরে ফারহা ঠিক-ই একটা গল্প লিখে প্রথম।তার বান্ধবীরা গল্পটা পড়ে খুব খুশী হয় এবং তাকে
আরো গল্প লিখার জন্য উৎসাহ দেয়।আর তখন থেকে ফারহা মাঝে মাঝে গল্প লিখে।আর
অনেকেই তার গল্প পড়ে তার লিখার প্রশংসা করে। তবে নিজে লিখার চেয়ে
সে অন্যের গল্প পড়তো বেশী। একদিন সে একটা গল্প পড়তেছিল একটা বড়ো পেইজে।
গল্পটা অর্ধেক পড়ার পর কেমন যেন মনে হলো,,, গল্পের কাহিনীটা তার স্কুল জীবনের
সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে। গল্পটা সে যতোই পড়ে পড়ে নিচের দিকে যাচ্ছে,,, ততোই সে
পুরোই অবাক হয়ে যাচ্ছে। কি করে সম্ভব এটি? একটা গল্প কি করে অন্য একটা বাস্তবিক জীবনের
সাথে মিলে যায়??? এসব ভাবতে থাকে আর গল্পটি পড়তে থাকে।
পড়তে পড়তে শেষে এসে যখন গল্পের লেখকের আইডির নাম টা দেখে,,,তখন তার বুকের
ভিতর যেন একটা ছোট্ট করে ব্যাথা অনুভব করে। কারণ,,, ওই লেখকটার আইডির নাম দেখে মনে
হলো,,, তার একদম চেনা এবং খুব পরিচিত। তাছাড়া,,, পুরো গল্পটাই তার জীবনের সাথে হুবহু মিল। তাই
সে আইডিটার প্রোফাইল এর মধ্যে ডুকে। ডুকে পুরো আইডিটার স্ট্যাটাস এবং সব গল্পগুলো ভাল
করে পড়ে। তারপর সে আইডিটার এবাউট দেখে পুরুই থ হয়ে যায়। কারণ,,, সে মনে মনে যেটা
ভাবছিল ঠিক-ই সেটাই হলো। সে গল্পটা পড়ার পর&আইডির নামটা দেখার পর যাকে ভাবছিল ইনিই
হচ্ছেন সেই। কিন্তুু ফারহা নিজেকে কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছেনা এই ভেবে যে,, মানুষটা
আজও তাকে মিস করে। আজও তার নামটা ওই মানুষটার নামের পাশে লিখে।
একটু পর ফারহা আবার ওনার প্রোফাইল টা দেখে। একদম শেষে গিয়ে ওনার ছবি দেখে নিজের
চোখ দিয়ে অজান্তেই লোনাজল গড়িয়ে পড়তে থাকে। কারণ,,, এই মানুষটাই ফারহাকে নিজের
জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবাসতো। অথচ সে কখনই তা মেনে নেই নি। বলতে গেলে
পাত্তাই দেই নি। আর সেই মানুষটা আজও আমায় মিস করে!!! এইসব ভাবতে ভাবতে সে কখন যেন
বোবা কান্না জুড়ে দেয়।
একটুপর সে তার বান্ধবীদেরকে বিষয়টা শেয়ার করে। তখন তারা তাকে বলে দেই,, ওনাকে
ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানোর জন্য। ফারহা ওদের কথামতো ওনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়।
ঘন্টাখানিক পর ওর রিকুয়েস্ট টা এক্সেপ্ট করে। কিছুদিন যাওয়ার পর ফারহা ওনার সেই গল্পটা আবার
পড়ে ওনার টাইমলাইনে গিয়ে।
ওনার নাম ছিল ওয়াজেদ বিনতে ফারহান
ফারহা গল্পটা পুনরায় পড়ার পর একটা ম্যাসেজ দেই ফারহানকে।
তখন সে অনলাইনে ছিলনা। পরে যখন সে অনলাইনে আসে তখন ম্যাসেজটার রিপ্লাই
দেই। এরপর থেকে তাদের মাঝে একটু একটু করে কথা হত মাঝে মাঝে। একদিন ফারহান নিজেই
ফারহাকে ম্যাসেজ দিয়ে বলে,,,
---আমরা কি একে অপরের ভালো বন্ধুু হতে পারি? ---[ফারহা যেহেতু ওনাকে চিনতো তাই ওর এক
কথাতেই বলে দেই] হ্যা অবশ্যই পারি।
---তাহলে আজ থেকে আমরা একে অপরকে তুমি বলে ডাকবো।
---ঠিক আছে।
অথচ ফারহান তখনও ফারহাকে চিনতে পারেনি যে,,,, এই সেই ফারহা!!! যাকে সেই স্কুল জীবন
থেকেই এতোটা ভালোবাসে,,, যাকে সে এখনো মন থেকে চায়। এই সেই ফারহা!!! তার
গল্পের মূল চরিত্রটি। আর কি করেই বা সে জানতে পারবে!!! কারণ,,, ফারহা তার পরিচয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন
দিয়েছিল শুধুমাত্র নামটা ছাড়া। তাকে সহজে ধরা দিতে চাইনি সে।
এরপর তাদের বন্ধুত্ব বেশ ভালোভাবেই চলতে থাকে। আর এদিকে ফারহা তার বান্ধবীদেরকে
সবকিছুই বলতো। আর ওরা ওকে বলতো ও যেন ফারহানকে ওর আসল পরিচয়টা দিয়ে দিতে। কিন্তুু
ফারহা না বলে দেই ওকে আর কিছুদিন ট্রাই করার জন্য। একদিন ওরা বরাবরই প্রতিদিনের মতো কথা বলতে লাগলো। কথা বলার এক পর্যায়ে ফারহা তাকে
জিজ্ঞেস করলো,,,
---আচ্ছা,,, তুমি যে এতো সুন্দর গল্প লিখ,,, গল্পের যে মেয়েটা আছে মানে ফারহা,,, ওকে
কি তুমি এখনও ভালোবাসো? ---হুম। অনেক বেশী ভালোবাসি। ---কিন্তুু ও কি কখনই তোমাকে ভালোবাসেনি? ---ঠিক জানতাম না। তবে যতোবার আমি ওকে প্রপোজ করেছি, ততোবার ও আমাকে না করে
দিয়েছে। ---কেন সেটা কি একবারও জানতে চাওনি ওর কাছ থেকে?
---না। কারণ হিসেবে আমি শুধু এটুকুই মনে করতাম যে,,, হয়তো সে আমাকে পছন্দ করতো না।
---ও। আচ্ছা সে এখন কোথায়??? জানো? ---
হ্যা জানি। ওর আব্বু মারা যাওয়ার পর ওর পড়ালেখা
বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে ও বাসায় আছে। --
-তুমি কি কখনই ওর সাথে একবারও ফোনে
যোগাযোগ করার চেষ্টা করনি?
---অনেকবার করছিলাম। কিন্তুু যদি করতাম ওর
প্রবলেম হতো। তাই আর করিনি। তবে মাঝে
মাঝে যখন গ্রামের বাড়ি যায়,,, তখন প্রায়ই ওর বাসার
দিকে যায়। গিয়ে ঘুরে আসি।
[তখন ফারহার চোখ দিয়ে আবারও অশ্রু গড়িয়ে
পড়তে লাগলো আর নিজে নিজেই বলতে
লাগলো,,, এখনো ফারহান আমায় এতোটা
ভালোবাসে!!!]
---আচ্ছা,,, তুমি কি আর অন্য কাউকে ভালোবাসোনা
এখন?
---মোটেও না। কারণ ফারহা-ই ছিল আমার জীবনের
প্রথম ভালোবাসা,,, প্রথম পছন্দের মানুষ। আর আমি
শুধু ওকেই ভালোবাসবো। যদিও কখনই ওকে
নিজের করে না পাই,,,, তারপরও দুর থেকেই ওকে
ভালোবেসে যাবো। তবে চেষ্টা করবো ওকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেতে।
--- আচ্ছা,,, ফারহান নামটা কি তুমি নিজে দিছ? নাকি তোমার ছোটবেলা থেকেই?
---হ্যা আমি নিজে দিছি। ওর নাম ছিল ফারহা! ওকে খুব বেশী ভালোবাসতাম। তাই ওর নামটাই আমার নামে
লিখি। আর এখনো ওকে ভালোবাসি বিধায়,,, ওর নামটা সব জায়গাতে লিখি।
আমার নাম ছিল মোঃ ওয়াজেদ বিন।
আর ওকে ভালোবাসার পর থেকে কেন জানি ওর
নামটা আমার নামের পাশে লিখতে ইচ্ছে করে। তাই
লিখি মোঃ ওয়াজেদ বিন ফারহান। আর এই নামটাই আমার
জীবনের সাথে জড়িয়ে রাখলাম। আমি ওকে ছাড়া
আর কোনো মেয়েকেই ভালোবাসতে
পারবোনা।
---ও যদি তোমার জীবনে,,, ও নিজেই তোমায়
ভালোবেসে আবার ফিরে আসতে চায় তখন???
---তখন এই পৃথিবীতে আমার চেয়ে সুখী,,,
আমার চেয়ে খুশী আর কেউ হবেনা।
---ও। তুমি ওর সিনিয়র ছিলে?
---হ্যা। আমি ওর তিন বছরের সিনিয়র ছিলাম। আমি যখন
ক্লাস টেন-এ তখন ও ক্লাস এইটে পড়ে।
গল্পেতো আশা করি সবটাই পড়েছ,,, তবুও বলছি।
ওকে যেদিন আমি প্রথম দেখি তখন-ই ওকে আমার
ভালো লেগে যায়। আর সেদিন-ই মনে
হয়েছিল,,, ওই পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুন্দরী।
আর সেদিন থেকেই আমি ওকে মনে মনে
ভালোবেসে ফেলি। যদিও সে আমায় বড়
হিসেবে সম্মান দিতো,,, ভাইয়া বলে কথা বলতো।
আমি তাকে ঠিক-ই ছোট হিসেবে স্নেহ করতাম।
তবে ভালোবাসাটা ছিল মনের ভিতর। পরে পরে
তাকে অবশ্য প্রপোজ করি। কখনো সরাসরি আবার
কখনো আমার ফ্রেন্ডের মাধ্যমে। কিন্তুু সে
কখনই এক্সেপ্ট করেনি। প্রতিবার-ই সে না করে
দিতো। শুধু এটুকু বিশ্বাস রাখতাম এবং এখনও রাখি যে,,,
ফারহার মনে যদি কখনই আমার জন্য একবিন্দু পরিমাণ
ভালোবাসা জন্মে,,,, সে আমার জীবনে না আসুক
অন্তত,,, আমার জন্য একবার হলেও একদিন না একদিন
তার ভালোবাসা প্রকাশ পাবে। তবে বেশিরভাগ
আল্লাহর কাছে বলতাম,,, যেন তাকে আমার
জীবনে কোনো না কোনো ওসীলায়
হলেও পাঠায়। কারণ আল্লাহর কাছে খাছ অন্তরে
এবং পবিত্র মন নিয়ে কিছু চাইলে নাকি সেটা পায়।
এখনো তার জন্য অনেক দোআ করি।
---সত্যিই!!! তুমি একজন মহান প্রেমিক পুরুষ। এতোটা
বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও,,, তুমি তাকে সেই
আগের মতোই ভালোবাসো।
আচ্ছা তোমার জন্মদিন কবে?
---এইতো সামনে। কেন?
---না এমনি। আমি কি তোমার ফ্রেন্ড হিসেবে
জানতে পারি না?
---না আসলে তা নয়!!!
---তাহলে? কত তারিখ?
---.............।[তারিখটা উল্লেখ করলাম না]
---তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তোমার জন্মদিনে
আমি তোমাকে একটা বড়ো সারপ্রাইজ দিতে চায়।
---তুমি? আমাকে?? হা,হা,হা,হা, কেন?
---সেটা তুমি সেদিন বুঝবে কেন সেটা!!! তবে
এটুকু বলতেছি,,, অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ।
---হা,হা,হা,হা, আচ্ছা ঠিক আছে।
এভাবেই ফারহা আর ফারহানের কথাবার্তা চলতে
থাকে। আর ফারহা ফারহানের জন্মদিনের জন্য
অপেক্ষা করতে থাকে। কখন সেই দিনটা আসবে
আর কখন সে তাকে বলতে পারবে,,, আমিও
তোমাকে ভালোবাসি।
কিছুদিনপর ফারহানের জন্মদিনটা আসে। এর আগের
দিন বিকেলে ফারহা তাকে ম্যসেজ করে বলে
যে,,, তাকে তার ফোন নাম্বারটা দিতে। তবে ফারহান
অন্যকিছু মনে করে,,, প্রথমে নাম্বার দিতে চাইনি।
কেননা,,, সে তার জীবনে একমাত্র তার
ভালোবাসার মানুষটাকে ছাড়া কাউকে জড়াতে চাই না।
কিন্তুু ফারহার খুব জোরাজোরিতে নাম্বারটা সে
দিয়ে দেই।
ঠিক রাত বারটার সময় ফারহা ফারহানকে ফোন দেই।
ফারহান রিসিভ করে,,,
---আসসালামু আলাইকুম!
---[কন্ঠটা শুনে একটু স্তব্ধ হয়ে একটু পর] ওলাইকুম
আসসালাম]
---হ্যাপী বার্থ ডে টু ইউ।
---[ফারহানের কাছে যেন স্বপ্নের মতন মনে
হলো। এইতো সেই চেনা কন্ঠ,,, এইতো সেই
চেনা মানুষটি,,, এসব ভেবে সে পুরু অবাক হয়ে
যায়] থ্যাংক ইউ সো ভেরি মাচ। তুমিই আমার সেই ফারহা???
---হুম। আমিই সেই ফারহা। যার নামটা আজও আপনি
নিজের নামে লিখেন।[ও যেহেতু ওনাকে আগে
থেকেই আপনি বলে ডাকতো সেহেতু]
---[একটু কান্নাভেজা কন্ঠে] আজ সত্যিই আমি অবাক
হয়ে গেলাম,,, আমি তোমাকে বুঝাতে পারবোনা
আমি এখন কতোটা যে আনন্দিত কতোটা যে সুখি
তা। মনে হচ্ছে যেন আমিই একমাত্র পৃথিবীর
সবচেয়ে সুখি মানুষ।
---সারপ্রাইজ টা কেমন দিলাম?
---বলার ভাষা নেই। ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। শুধু এটুকুই
বলবো,,, ফারহা!!! আজও তোমায় খুব ভালোবাসি।
---[ফারহা কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল]......
---আমি জানি না তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা। তবে
এটুকু বিশ্বাস ছিল যে,,, আমার ভলোবাসাটা যদি
সত্যিকারের হয়ে থাকে,,, তাহলে একদিন ঠিক-ই
তোমার ভালোবাসাট প্রকাশ পাবে।
---আপনাকে ঠিক কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিনা।
---কিছু বুঝে উঠার দরকার নাই। তবে হ্যা একটা কথা
বলোতো!!!
---কি কথা বলুন?
---তুমি যে এতোদিন আমার সাথে কথা বলছো,,,
অথচ একবারও সত্যি টা বলো নি কেন??? যে তুমিই
সেই ফারহা?
---একটু ট্রাই করছিলাম আর কি আপনাকে।
---তুমি আমাকে চিনতে পারছো কিভাবে??
---যখন প্রথম আপনার সেই গল্পটা পড়ি,,, তখন আমি
আপনার আইডিতে ডুকি। তারপর সবকিছু দেখি&আপনার
এবাউট টাও দেখি। তখন বুঝতে পারি যে আপনিই
ওয়াজেদ ভাইয়া। তাই আপনাকে রিকু দিই। এরপর আর
কি!!! চ্যাট করতাম। তবে মনে মনে ঠিক করছিলাম,,,
আপনাকে একদিন সত্যিটা বলবো। তাই আজ বললাম!
---আমাকে এখনো ভাইয়া বলে ডাকবা? আমি কি
আজও তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই?
---[একটু কান্নাভেজা কন্ঠে] আপনি তখনও আমার
যোগ্য ছিলেন। কিন্তুু আমার ভাইয়ার কারণে আমি
আপনাকে বারবার না করে দিয়েছি। একদিন ভাইয়াকে
কে যেন বলে দেই যে,,, আপনি নাকি আমাকে
নিয়ে অনেক পাগলামী শুরু করেছেন। স্কুলের
সবাই সেটা জানতে পেরেছে।
তারপর ভাইয়া আমাকে একদিন ডেকে নিয়ে বলে
দেই যে,,, যদি আমি আপনার এসব পাগলামীতে সাই
দিই কিংবা আপনাকে ভালোবাসি,,, এসব যদি ভাইয়া আর
কখনো শুনতে পাই বা জানতে পারে,,, তাহলে
আব্বুকে সব বলে দিবে&আমার পড়ালেখা সব বন্ধ
করে দিবে। আর আপনি তো জানতেন আমার আব্বু
কতোটা রাগী ছিল সেটা। তাই সেই ভয়ে
আপনাকে আমি বারবার না করতাম। তবে আপনাকে
যথেষ্ট সম্মান করতাম। আপনি যখন এসএসসি বিদায়
নিয়ে চলে আসেন,,, তখন কেন জানি ভালোবাসাটা
অনুভব করতে পারছিলাম। আমার বান্ধবীরা আমাকে
বারবার রিকুয়েস্ট করতো আপনাকে শুধু একবার হা
বলে দেওয়ার জন্য। নেহাদ ভাইয়াও [ফারহানের
ক্লাসমেট&ফারহার মামাতো ভাই] অনেক রিকুয়েস্ট
করতো আপনাকে হা বলার জন্য। আর ওনি আপনার
বিষয়ে অনেক কথা বলতো&বুঝাতো আমায়। কিন্তুু
আমি ওদেরকে আমার ভাইয়ার বিষয়টা খুলে বলি।
তারপরও বলতো একটু চেষ্টা করতে। এরপর
থেকে কেন জানি আপনার জন্য ভালোবাসাটা আরও
দ্বিগুন বেড়ে যায়। মধ্যখানে আপনার সাথে
যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম,,, কিন্তুু আর
পারিনি। তবে আমিও চাইতাম,,, যদি সত্যিই আপনি আমাকে
ভালোবেসে থাকেন,,, তাহলে আপনি অবশ্যই
আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। আর যদি সত্যিই
আমাকে নিজের করে পেতে চান,,, তাহলে
অবশ্যই আমার পরিবারের সামনে এসে দাড়াবেন।
সেটুকু অন্তত বিশ্বাস ছিল।
---আমিতো ঠিক-ই তোমার পরিবারের সামনে
দাড়াবো। কারণ,,, আমি এখন মাস্টার্স কমপ্লিট করছি এবং
চাকরির জন্যও এপ্লাই করছি। আর সবটা মনে মনে
ঠিক করে রাখছিলাম যে,,, চাকরিটা পাওয়ার সাথে
সাথেই আমি তোমার পরিবারের সামনে যাবো।
তোমার আব্বু মারা যাওয়ার পর জানতে পারি তোমার
পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাই। তখন খুব ভয় পেয়ে যায়
আমি,,, তোমাকে বিয়ে দিয়ে ফেলবে মনে
করে। তোমার পরিবার&তোমার সব খবরাখবর
নেহাদের কাছ থেকে নিতাম&জানতাম। আর ওই
আমাকে বলেছিল,,, পড়ালিখাটা শেষ করে তাড়াতাড়ি
একটা চাকরি নিতে। যাতে করে তোমার পরিবারের
সামনে দাড়াতে পারি।
---আপনি কি এখন চাকরি নিছেন?
---না। তবে এক সপ্তাহর মধ্যে হয়ে যাবে আশা
করি।
---আলহামদুলিল্লাহ। এবার আপনাকে একটা কথা বলি?
---হ্যা বলো।
---আমি সেদিন-ই আপনার কথাটার রিপ্লাই দিবো,,,
আপনাকে বলে দেয়া "না" টাকে "হ্যা" বলবো
সেদিন-ই,,, যেদিন আপনার চাকরিটা হবে সেদিন।
তাতে আর কোন বাধা থাকবেনা।
---অনেক অনেক বেশী খুশী হলাম।
ইনশাআল্লাহ!!! চাকরিটা হয়ে যাবে। আমিও সেই আশায়
রইলাম। তবে আজে মনে হচ্ছে যেন,,, আমি এক
নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছি।
---আমি সত্যি কখনই ভাবিনি যে,, আপনার সাথে আমার
এভাবে ফোনে কথা হবে। কল্পনা মনে হচ্ছে
সবকিছু।
---আল্লাহ চাইলেই সবকিছুই পারেন।
---হ্যা সেটাই।
---আচ্ছা অনলাইনে আসো। আর তোমার একটা ছবি
দাও। অনেকদিন হলো তোমায় দেখিনি।
এরপর ফোন কল কেটে দিয়ে তারা আবার চ্যাট
করে। একে অপরকে ছবি দেই আর কথা বলতে
থাকে। এরপর একে অপরকে এতোদিনের না বলা
দুজনের মনের কথা বলতে থাকে।
আর হয়তো এভাবেই নতুনভাবে শুরু হবে তাদের
এতোদিনের না বলা ভালোবাসার গল্প। হয়তো
একদিন সেই গল্প তাদের বাস্তবিক জীবনে
সত্যতাই পরিণত হবে।।।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com