প্রেম ভালোবাসা
জগতের প্রেম ভালোবাসাকে আমার দেবদাস নামে ডাকতে ইচ্ছে করে। দেবদাস যেহেতু শরৎ চন্দ্র রচনা করেছেন তাই কখনো প্রেম ভালোবাসাকে শরৎ বাবু নামেও ডাকি। তো একদিন চৌরাস্তার মোড়ে শরৎ বাবুর সাথে আমার হঠাৎ দেখা হয়ে গেল। উনি আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। তিনি হয়তো ভাবছেন আমি প্রেম ভালোবাসার পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছি। ঘটনা মিথ্যে নয়।
আমি যে রাস্তায় হাঁটি সে রাস্তায় প্রেম ভালোবাসাকে খুঁজে পাই না। আজ যেহেতু পেয়েছি, পথের সামনে না হয় দাঁড়িয়ে গেলাম। না হয় আজ হাঁটু গেঁড়ে বসে অনুনয় করে বলব, "ওগো আমাকে একটু প্রেম ভালোবাসা ভিক্ষে দাও। মানুষজন বলাবলি করে প্রেমহীন জীবন ঘাসবিহীন মাঠে পায়চারি করা গরুর মতন। আমাকে একটু প্রেম ভালোবাসা দিয়ে উদ্ধার করো গো।"
শরৎ বাবু ক্ষেপে গিয়ে বললেন, "এই ছেলে, পথ আটকে দাঁড়িয়েছো কেন?"
-শরৎ বাবু, আমার প্রেম ভালোবাসার বড়ই অভাব। আমার যে একটু প্রেম চাই, একটু ভালোবাসা চাই।
সেই যে কিশোর বয়সে একবার উঁকি দিয়েছিলে আমার ঝুলিতে।
সেই উঁকিতে না হলো প্রেম না হলো ছ্যাকা।
-আমার কাছে এসেছো কেন? তোমার প্রেম চাই। তোমার তো দেবদাস হওয়ার ইচ্ছে নেই। তুমি বরং চণ্ডীদাসের কাছে যাও। তার মাঝে প্রেম আছে।
কথিত আছে, চণ্ডীদাস রজকিনীর জন্য বারো বছর একই পুকুরে প্রতিদিন বড়শি পেতে মাছ ধরতে যেতেন। একসময় দেখা গেল, চণ্ডীদাস যেদিকটায় বসে বড়শি পেতে বসে থাকে, পুকুরের সেদিকটা শুকিয়ে গেছে।
চার আঙ্গুল পরিমাণ পানি বাকি আছে। রজকিনী যেদিক থেকে পানি নেয় সেই ঘাটের দিকে পানি আছে। বারো বছর পর একদিন রজকিনী কলসি ভরে পানি নেওয়ার সময় প্রশ্ন করলো, "এই যে, মাছ কি পেয়েছেন?"
জবাবে চণ্ডীদাস বলল, "এই মাত্র একটা ঠোকর দিলো।"
মানে সেই বারো বছরের মধ্যে দু'জনের কোনো কথা হয়নি।
চণ্ডীদাশের সাথে দেখা হলো। তিনি বড়শি কাঁধে নিয়ে ফিরে আসছেন। আমি এবারও পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন,
- "কী চাই?"
-শরৎ বাবু পাঠিয়েছেন আপনার কাছে। আপনি না-কি আমাকে প্রেম ভালোবাসা দিতে পারবেন।
-শরৎ বাবুর তো মদ খাওয়ার টাকা আছে। দেবদাস হয়ে পড়ে থাকতে পারেন।
তাই আমি বড়শি পেতে বসে, খেলাম না-কি না খেলাম।
মাছ পেলাম না-কি সেটা না জেনেই তোমাকে পাঠিয়ে দিলো আমার কাছে।
মিয়া আমি প্রেম ভালোবাসা পেলে তো তোমাকে দেব।
বারো বছরে একটা ঠোকর দিলো, ক্ষানিক বাদে কাকড়া এসে সুতোসহ বড়শি নিয়ে পালিয়ে গেল।
এই দেখো ছিপে বড়শি নাই। আমারই প্রেম নাই তোমাকে দেব কী?
তুমি তোমাদের বাংলার মিলন ভাইয়ের কাছে যাও। ইমদাদুল হক মিলনের কাছে।
তিনি ঘন ঘন প্রেমে পড়েন।
এই যুগে তুমি বারো বছর বড়শি পেতে বসে থাকলে প্রেম ভালোবাসা তো দূরের কথা
জীবনে আর বিয়েই করতে পারবা না।
ইমদাদুল স্যার মনে হয় ঘন ঘন চা খান। কিন্তু মুখে একটা হাসি লেগেই থাকে।
মেয়েরা তো এই হাসি দেখেই প্রেমে পড়ে যাবে।
তিনি চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, "শরৎ বাবু ব্যর্থ প্রেমিক জীবনকে শুধু প্রেম বলেননি।
পরিনীতার মত শুদ্ধ প্রেমের জন্মও দিয়েছেন।
প্রেম ভালোবাসা পথে ঘাটে জনে জনে খুঁজে পাবে না।
প্রেম তো নারীর মধ্যে। নারীই প্রেম, তাদের ভালোবাসো।"
আমি ফিরে এলাম। আরে ভাই প্রেম ভালোবাসার মতো নারী খুঁজে পেলে তোমার কাছে এলাম কেন?
তুমি তো ভাই শালীকার মধ্যেও প্রেম খুঁজে পাও।
"কমলা সুন্দরী'র" রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে অশ্লীলতাকেও পশ্রয় দিয়ে ফেলেন।
তাহলে দেহে কেন প্রেম হবে। দেহে প্রেম হলে সেই দেহটা নারীরই হতে হবে কেন?
থাক, উনি বিখ্যাত মানুষ, স্যার মানুষ। উনার ভুল ধরার যোগ্যতা আমার নাই।
বরং হুমায়ূন স্যারকে পেলে রাত্রি নিশীতে খালি পায়ে হলুদ পাঞ্জাবী পরে পথে পথে ঘুরে বেড়াতাম।
নয়তো মিশির আলীকে বলতাম আমার প্রেম ভালোবাসার যুক্তি দিন স্যার। কেমন করে পাব প্রেম ভালোবাসাকে। কিন্তু মিশির আলী মনে হয় কখনো প্রেমে পড়েনি।
রোগা পাতলা মানুষটা চোখে ভাসলে মনে হয় প্রেমের বয়স তার উবে গেছে।
তিনি জাগতিক চিন্তা চেতনার উর্ধে।
বাড়ি ফিরে আসার পথে এক সুন্দরী নারীর সাথে দেখা। দুর্বা ঘাসে ভরা মাঠে শাড়ি পরে একাকী বসে আছে। যেন কত যুগ পেরিয়ে যাচ্ছে তবুও একটু প্রেম ভালোবাসার অপেক্ষায়।
তার পাশে গিয়ে প্রেম ভালোবাসার কথা বলতেই তিনি রেগে গেলেন। বললেন,
"আমাকে চিনো তুমি? আমি রূপা। আজীবন হিমুর ভালোবাসা পাওয়ার অপেক্ষায় কাটিয়ে দেব।
তুমি যদি প্রেম ভালোবাসাকে পাবে বলে ভালোবাসো তবে সেখানে স্বার্থ লুকায়িত।
তুমি কিছুই পাবে না। এত বড়ো একটা শূণ্যের পিছনে দৌড়াবে।
কোনোদিন তাকে পাবে না এমনটা ভেবেই তাকে ভালোবাসো।
একটা শুদ্ধতম ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে।"
আমি ফিরে আসলাম, কাউকে আমি বুঝাতে পারিনি আমার মনের কথাটুকু।
আমি তো কাউকে পেলামই না, ভালোবাসব কী করে?
না পেলাম ভালোবাসাকে, না পেলাম ছ্যাকা যে নিজেকে দেবদাস মনে করে জীবন পাড়ি দেব।
আমার আগা গোড়া কেবল নেই নেই ধ্বনিতে মুখরিত। প্রেম নেই ভালোবাসা নেই।
তবে কোথায় গেলে পাব প্রেম ভালোবাসাকে?
অবশেষে প্রেম ভালোবাসার দেখা পেলাম। জীবন নদীর মধ্যিপথে ভেলায় করে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রেম।
আমি তাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখি।
তাকে এক পায়ে নুপুর পরে নাচতে দেখি। সুরেলা কণ্ঠে গান গাইতে শুনি।
তার কানের কাছে গুঁজে থাকা ফুলের ঘ্রাণে চারিদিক কেমন মাতাল করা।
আমি সেই নদীতে ভেলার কাছে ছুটে যেতে পারছি না। আমি যে সাতার জানি না।
আমার নেই কোনো ভেলা। নেই কোনো নৌকা। গলায় নেই সুর, যে তাকে সেই সুরে ডেকে আনব।
নৃত্য জানি না আমি যে তার নজর কেড়ে নেব। নদীর পাড়ে আমার কেবল একটা বড়ো বটগাছ আছে। যেখানে আমি রোজ নিয়ম করে হেলান দিয়ে শুয়ে থেকে প্রেম ভালোবাসাকে দেখতে পাই।
কিন্তু ছুঁতে পারি না। আমি বটগাছের পাতায় পাতায় লিখে দেব,
"হে নারী, আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
কখনো কোনো এক দক্ষিনা বাতাসে যদি কোনো পাতা উড়ে গিয়ে ভেলায় পড়ে।
তবেই কেবল সে দেখতে পাবে পাতায় লেখা, "আমি প্রেম ভালোবাসাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com