গল্প: ত্যাগ । পর্ব- ০৮
আকাশ তার প্রশ্নের কোনো জাবার না দিয়ে চলে গেলো, নেহা
- "জানি তো,
এই বাড়িতে সকলের সত্য থেকে পালিয়ে বেড়ানোর স্বভাব আছে। কিন্তু এটাই যে চরম সত্যি আর সত্যি টা সকলকেই মানতে হবে।"
মিম মায়ানকে গান শুনিয়ে ঘুম পারাচ্ছিলো। ইমান হঠাৎ এসে দরজা ধাক্কা ধাক্কি ৷ শুরু করেছে। সে তবুও দরজা খুললো না। এই মুহুর্তে মনের শান্তি টা কিছুতে'ই নষ্ট করতে চাইছে না সে।" আজ নেহা আকাশের বাসর রাত,
নেহার ইচ্ছেতে তাদের ঘর টা খুব সাদা-মাটা ভাবেই সাজানো হয়েছে। কিন্তু তাকে, কিছুতে'ই বাসর ঘর অব্দি নেওয়া যাচ্ছে না। সে জেদ করেই বসে আছে।
ইমান এসে বললো,
- "তোমার মা বোধহয় এতক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে?"তখন
হঠাৎ মিম কে দেখেই সে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো নেহা। কিন্তু মিম, তাকে কড়া গলায় শাসন করে বললো,
- "কি সমস্যা কি তোমার? তুমি অহেতুক, ঝামেলা করে বেড়াচ্ছ কেন সকলের সাথে? তা তো কম হলো না? নিজেও ঘুমাচ্ছো না, অন্যদের কে ও ঘুমতে দিচ্ছ না। কেন নিজের বাবাকে ছোটো করছ? তাকে সস্তা করে তুলছো এই বাড়ির লোকেদের কাছে?" ও নিচু গলায় বললো,
- "তুমি এখনো কিছু খাওনি কেন মা? আমি তোমার জন্য আলাদা খাবার সরিয়ে রাখতে বলেছিলাম মণি কে।
তোমার প্রিয় সকল খাবার সরিয়ে রেখেছি, বাবা কে বলেছিলাম সাতক্ষীরা থেকে মিষ্টি আনিয়ে রাখতে।" মিম তাকে তবুও বকুনি দিয়ে বললো,
- "আমি খাইনি কে বলেছে তোমাকে? আমি আমার পছন্দের খাবার খেয়েছি তোমাদের মতো হাইফাই খাবার কখনো রোচে না আমাদের মুখে।" ও তখন ফিসফিস করে বললো,
- "আমার ওই ঘরে যেতে ভয় করছে মা।" মিম মুচকি হেসে বললো,
- "এটা স্বাভাবিক, প্রথম প্রথম সবার'ই একটু ভয় লাগে। দোয়া করি সংসার জীবনে সুখী হও, এখন ঘরে যাও অনেক রাত হয়েছে।"পাশেই ইমান দাঁড়িয়ে ছিলো। মিমের সাথে কথা বলার চেষ্টা করতেই সে এড়িয়ে গেলো তাকে।
ও রান্নাঘর থেকে কিছু জিনিস নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। ঘরে ঢুকে দেখলো ইমান ছেলের সাথে খেলা করছে। মিম তার মতো কাজ করতে লাগলো ইমান হঠাৎ করেই ওর হাত চেপে ধরে বলল,
- "তোমার হাতের ড্রেসিং করাতে হবে।"
- "তার কোনো প্রয়োজন নেই।"
- "ডক্টর তুমি না কি আমি? মেডিকেল সায়েন্স সম্পর্কে তুমি কি বেশি জানো না কি আমার থেকে?" মিম তাকে চমকে দিয়ে বললো,
- "শুনুন, ড্রেসিং করা কোনো আহামরি ব্যাপার না, আমি সব টা জেনে নিয়েছি মুগ্ধোর কাছ থেকে।" এই নাম টা শুনে অস্থিরতা খুব বেড়ে গেলো তার, ইমান দ্রুতই চলে গেলো মিমের জন্য রাতের খাবার আনতে
হঠাৎ আকাশ মায়ের জন্য খাবারে'র প্লেট সাজিয়ে নিয়ে হাজির, সে জিজ্ঞেস করলো,
- "তোমার হাতের জ্বালাযন্ত্রণা কমেছে?" মিম বলল,
- "হুমম, তা তুমি এখানে কেন? বাসর ঘরে নতুন বউ বসে আছে।" ও হঠাৎ মাংস দিয়ে ভাত মাখাতে শুরু করলো, বললো,
- "আমি খাইয়ে দেবো তোমাকে?" মিম তার কথা শুনে মেকি হেসে বললো,
- "তার কোনো প্রয়োজন নেই আকাশ।" আকাশ মা এর হাত ধরে বললো,
- "কেন? কি হয়েছে?" মিম হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়িয়ে গেলো, রেগে গিয়ে বলে উঠলো,
- "কিছু হয়নি বলছ? তোমাদের বাবা ছেলের দেখছি গা বাঁচিয়ে চলার স্বভাব রয়েছে? জুতো মে'রে একে একে সকলে মিলে'ই দেখছি গরু দান করতে এসেছ আমাকে?"
- "দেখ মা, নেহা কিন্তু খারাপ মেয়ে না" মিম হাসতে হাসতে বললো,
- "হ্যাঁ, তবে ওর বিয়ে টা একটা ভুল মানুষের সাথে হয়েছে। হ্যাঁ, তুমি ওর জন্য সঠিক মানুষটা নও, বাবা। তোমার শুনতে খারাপ লাগলেও মা হিসেবে আমাকে এটা বলতেই হচ্ছে।"
আকাশ খাবারের প্লেট নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো, যেতে যেতে বললো,
- "তুমি খুব খারাপ, অনেক খারাপ মা। তুমি এতো টা বদলে গেলে কিভাবে?
তুমি বলছ আমি ভালো মানুষ নই, এটা তুমি কি করে বলতে পারলে? কি ভেবে? আমি জানি,আমি অনেক ভুল করেছি। কিন্তু, তাই বলে তুমি এই ভাবে কথা শোনাবে আমাকে?"
মিম ছেলের কথা হেসে উড়িয়ে দিলো,ততক্ষণে ইমান
তার দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়ে পরেছে কিন্তু, মিম যেন সে সব দেখেও দেখলো না। ইমান শান্ত গলায় বললো,
- "তোমার এরূপ বিক্ষিপ্ত আচরণে আমি কষ্ট পাচ্ছি, আমাদের ছেলে মেয়েরা ও কষ্ট পাচ্ছে।" মিম তাকে দরজা দেখিয়ে বললো,
- "আপনি এখন আসতে পারেন, অনেক রাত হয়ে গেছে। আমি আবার যাকে তাঁকে আমার ঘরে থাকার পারমিশন দেই না।"
ইমান ভেতরে ঢুকে দরজা লাগাতে লাগাতে বললো,
- "কিন্তু, আজ থেকে প্রতি রাতে শুধু আমিই থাকবো তোমার সাথে।"
- "বয়স হয়েছে, বুড়ো হচ্ছেন। তবুও ভীমরতি গেলো না আপনার?"
- "না গো কি করে যাবে? সেই তুমি আমার বাড়ির আঙিনায় পা রেখেছিলে মাএ পনেরো বছর বয়সে।"
- "হুমম, কচি খুকি দেখে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেননি। এখনো আপনার জিভ থেকে টপ টপ করে জল পরছে।" ইমান ধীর পায়ে তার কাছে এগিয়ে যেতে লাগলো হঠাৎ করেই তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
- "সে যা বলেছ, এখনো তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধ খুব আকৃষ্ট করে আমাকে।" মিম তখন নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলো, হুট করেই মায়ান কেঁদে ফেললো, বাবা-মা কে ধস্তাধস্তি করতে দেখে।
মিম নিজেকে এই সুযোগ ছাড়িয়ে নিলো, ইমান গিয়ে কোলে তুলে আদর করতে লাগলো ছেলে মায়ান কে।
অতঃপর, তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
- "আজ তোমাকে এক রাজা এবং তার দু'ই রানীর গল্প শোনাবো কেমন? সেই গল্প শুনে তুমি অনেক কিছু শিখতে পারববে।"
- "থাক বাবা, আমরা ছেলের এখুনি বিদ্যান হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আর তা-ছাড়া, আপনি বড় আপার ঘরে গিয়ে ঘুমচ্ছেন না কেন?"
- "আমার বিয়ে টা কি শুধু তোমার বড় আপার সাথে হয়েছে? তুমি কি আমার কেউ নও? তুমি কেন সকলে'র থেকে আলাদা মনে করো নিজেকে?"
- "আমি আলাদা তাই।
নাহলে, আপনি আর আপনার বউ মিলে তো এটা ও ঠিক করে দিয়েছিলেন যে আমার ক'টা বাচ্চা হবে।"
- "এভাবে বলছ কেন?"
- "তো কিভাবে বলবো? শুনুন, আমি আর মুখ বুঝে পরে থাকবো না এ বাড়িতে। আর আপনি এখানো এখানে পরে আছেন কেন কি হলো জান? বড় আপা
আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।"
ইমান বউয়ের পাশেই একটা বালিশ নিয়ে শুয়ে পরল
মিম মায়ানকে খিচুড়ি খাওয়াচ্ছে। মায়ান মায়ের চুল
নিয়ে খেলা কর ছিলো। মিম খাবার খাওয়ানো'র ফাঁকে ফাঁকে ছেলেকে আদর করছে। এদিকে, ইমান এর খোঁজ পরলো। মণি তখন আয়েশা কে গিয়ে বললো,
- "বড় ভাবি ভাইসাব কে একটু আগে'ই দেখলাম ছোটো ভাবির ঘরে যাচ্ছে।" এতটুকু কথাই আয়েশার
বুকে আগুন জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। সে নিজের ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে বসে আছে। ইমান কথায় কথায় মিম কে জিজ্ঞেস করলো,
- "তুমি কি চাও? আমি আয়েশা কে ডিভোর্স দিয়ে দেই? আমাদের বিয়ের কত গুলো বছর কেটে গেছে"
- "কোই আমি তো একবার এ কথা বলিনি, বলেছি? তাহলে নিজে'র কথা গুলো কেন বসানোর চেষ্টা করছেন আমার মুখে? একটা কথা বলুন, আমি কি শুধু এ বাড়িতে অপমানিত হতে এসেছি? আমার কি একটু ও সম্মান প্রাপ্য না আমার সন্তানদের কাছ থেকে আমি তাদের গর্ভে ধারণ করেছি,জন্ম দিয়েছি কেন? আপনার বড় বউয়ের অক্ষমতা ঘোচাতে? যদি তাই হয়, তাহলে বলুন...! আমি এখুনি 'খুলা তালাক' দিয়ে চলে যাবো আপনাকে।
আপনার কি চাই বলুন? কি হলো বলুন? যে-কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি চিরজীবনের জন্য চলে যাবো এ বাড়ি থেকে,আপনাদের জীবন থেকে দেখুন, আমি আপনাদের এতো অবজ্ঞা, অবহেলা আর অপমান মেনে নিতে পারছিনা।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আর আমি এই সংসার ও চাই না। এই সংসার আমার না। আমি যে-কোনো কিছুর বিনিময়ে 'খুলা তালাক' দিতে রাজি আপনাকে। কিন্তু আমি আমার মায়ান কে দিতে পারবোনা, আমি ওকে ভাগ করে নিতে পারবো না কারোর সাথে।" ইমান ও কে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
- "কি বলছ তুমি? পাগল হয়েছ? তালাক কোনো কিছুর সমাধান না। তালাক দিলে কি করে সবকিছু ঠিক হ'য়ে যাবে?
একবার ও ভেবে দেখেছ, আমি কি নিয়ে থাকবো?
তোমরা আমায় ছেড়ে চলে গেলে আমার কি হবে? আমি তোমাকে ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি আমাদের সন্তান কে। দয়া করে একটু বোঝার চেষ্টা করো আমাকে।"
- "আমার মনে হ'য় তালাক সব কিছু'র সমাধান।"
- "তাহলো এটা ও জেনে রাখো তোমার এই স্বপ্ন, সারাজীবন স্বপ্নই থেকে যাবে। কারণ, আমি নিজের ক্ষতি করে তোমাকে কখনো ছাড়তে পারবোনা। এর জন্য,
তুমি চাইলে স্বার্থপর ও বলতে পারো আমাকে। হ্যাঁ, আমি স্বার্থপর।
আমি চাইনা, তোমাকে এবং আমার সন্তান কে হারাতে। আমি তোমায় ভালোবাসি,
এ টা যেমন সত্যি, তেমন আমাদের সন্তানেরাও তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
হ্যাঁ,ওরা হয়তোবা আমার মতোই মুখে বলে প্রকাশ করে না।
কিন্তু ওরাও ওদের মা কে অনেক ভালোবাসে। আমাদের ডিভোর্স হলে তারা সে টা
মেনে নিতে পারবেনা।" - "তা কি করে পারবে? মান-ইজ্জত নিয়ে টানাটানি পরে যাবে।
আমার জন্ম'ই হয়েছে শুধু স্যাকরিফাইজ করার জন্য আজীবন আমায়
শুধু অন্যের জন্য নিজ এর শখ আহ্লাদ বির্ষজন দিয়ে যেতে হবে।"
ইমান চুপ করে বসে রইলো, তার খুব কষ্ট হচ্ছে। আয়েশার দু' চোখে জল তবে
এটাও সত্যি ইমানকে বিয়েতে রাজি না করালে তার আপনার খালা
রাবেয়া'ই তাকে যে করে হোক তাড়িয়ে দিতো এ বাড়ি থেকে সে মনেমনে
ভাবতে লাগলো,
- "ছোটো এতদিনে সবটা মানিয়ে নিয়েছে,তবে আমি কেন পারলাম না মন থেকে এইসব
কিছু মেনে নিতে" এ সব চিন্তা করতে করতে কখন যেন দু'চোখ লেগে গেলো আয়েশার?
এদিকে, মিম সে ও ঝগড়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।"
ইমান তখনো বউয়ের মাথার কাছে বসে,সে মিটিমিটি হেসে তার চুলে বিলি কেটে
দিতে দিতে বললো, - "এই সব ভুল-ভাল কথা কে শেখাচ্ছে তোমাকে? বরাবর,
আমি আয়েশা কষ্ট পাবে ভেবে চুপ করে থেকেছি। ও ভুল করলেও, আমি সব
সময় সাপোর্ট করে গেছি ওকে।
জানি, আমি কখনো তোমাকে বোঝার চেষ্টা করিনি।সবসময় ভেবে তোমার আর কষ্ট কিসের?
তোমার কাছে তো সবকিছু আছে? আমি ভুল ছিলাম, আমি প্রতিনিয়ত নিজের করা
অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে। বিয়ের পর,
প্রথম প্রথম আমি কখনো তোমাকে মেনে নিতে পারিনি।
অনেক অসম্মান অপমান করেছি তোমাকে। তোমার এস.এস.সি পরীক্ষা পর
আমি তোমাকে কলেজে ভর্তি হতে দেইনি। কারণ, আমি৷ চেয়ে ছিলাম তুমি
সবসময় বাড়িতে থাকতে ঘরকন্নার কাজকর্ম করবে। না করলে ও সমস্যা নেই
আমাদের সন্তানের মানুষের মতো মানুষ করবে।
কিন্তু তা আর হয়নি, নাহিয়ানের জন্মের পর আয়েশা চাকরি ছেড়ে বাড়িতে বসে
দেখাশোনা করতে লাগল তাকে। ওর জন্মের আট মাস পর, তুমি আবারও কনসিভ ক রলে।
আমার ভালো লাগতো সারা দিন পেসেন্ট দেখে বাড়ি ফিরে এসে তোমাদের দু'জন কে দেখতে।
স্পেশাললি, তোমার মুখটা দেখতে। তুমি আমাকে কতগুলো সন্তান দিয়েছ৷ বাবা হওয়ার সুখ দিয়েছ,
আমি কখনো সেসব অস্বীকার করিনি। করলে পাপ হবে। আয়েশা কষ্ট পাবে বলে, কখনো ওর সামনে তোমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করিনি ভেবে ছিলাম তুমি আমার না করার কারণ টা বুঝতে পারবে। আমি আমার জায়গায় ভুল ছিলাম, জানি। কিন্তু কখনো'ই ভাবিনি এইসব কিছু আমাদের মাঝে এতো টা দূরত্ব এনে দেবে। আমি আয়েশার পক্ষ নিয়ে তোমার কাছে আজ কোনো সাফাই গাইছিনা কারণ আমি জানি, ও হয়তো আমার কারণে তোমাকে কথায় কথায় ছোটো করার সুযোগ টা পেয়ে বসেছে। আমি স্বীকার করছি সব দোষ আমার, তুমি দয়া করে কখনো ভুল বুঝোনা আয়েশাকে। আমি যে ওকে অনেক ভালোবাসি, এ টা ওর দোষ না তোমার ও কোনো দোষ নেই গাফিলতি আমার দিক থেকে হয়েছে।
কিন্তু, আমি যে তোমাকে ভালোবাসি না এটা তোমার মনের ভুল। আমি তোমাকেও ভালোবাসি। কেন, কেন বাসবো না? তোমার জায়গায় টা কেউ কখনো কেড়ে নিতে পারবেনা আমার জীবন থেকে। তেমন আয়েশা ও আমি ওকে বুঝিয়ে বলবো যাতে ও নিজের লিমিট এ থাকে। বুঝেছ তুমি? শুনতে পাচ্ছে আমার কথা? কি হলো চুপ করে আছো কেন বলো? কখনো ছেড়ে চলে যাবে না তো আমাকে?"
মিমের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অস্থির হ'য়ে গেল ইমান৷ সে উঠে মিমের মুখ টা পাশ ফিরিয়ে দেখলো, সে অলরেডি ছেলেকে ঘুম পারাতে পারাতে নিজেও ঘুমিয়ে গেছে। ইমান বসে বসে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলতে লাগলো।
যখন সে বু ঝতে পারলো। এতক্ষণ, সে যা বলছিল তার কিছুই শুনতে পায়নি মিম। ও তো অনেক আগে 'ই ঘুমিয়ে গেছে। ভোর রাতে,
ইমান ঘুম থেকে উঠে দেখলো, মিম জায়-নামাজে
বসে তসবিহ হাতে জিকির করছে ইমান উঠে ঝটপট ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো। নিচে এসে দেখলো,
আয়েশা কোনো কারণে নাহিয়ান এবং আকাশ কে খুব বকাবকি করছে। বাবাকে দেখেই তারা দু'জনে ছুটে গেলো, বললো,
- "তোমার কি মনে হ'য় বাবা, যে আমরা দু'জনে না বলে টাকা সরাতে পারি আমাদের ঔষধ কোম্পানির একাউন্ট থেকে?"তখন নাবিল এগিয়ে গিয়ে বললো,
- "তবে কি আমি টাকা সরিয়েছি ফুফা? তোমরা কি চোর সাব্যস্ত করতে চাইছে আমাকে?"
মিম মায়ান কে আদর করতে করতে বললো,
- "দেখ আমি সঠিক জানি না যে কি হয়েছে?
তবুও আমি আমার ছেলেদের বিশ্বাস করি। আমার মনে হয় না,
ওরা ওদের বাবা কিংবা বড় মায়ের কোনো অনুমতি ছাড়া এক পয়সাও সরাবে অফিসের অফিসিয়াল ব্যাংক একাউন্ট থেকে।"তখন আয়েশা বলে উঠলো,
- "যা বুঝিস না, তা নিয়ে কোনো কথা বলিস না ছোটো।"
- "আমি দুঃখিত বড় আপা,এখানে আমার সন্তানদের চোর সাব্যস্ত করার চেষ্টা চলছে আর ওরা না তোমার দেওয়া শিক্ষায় শিক্ষিত? আর তুমি একটুও ভরসা করতে পারছনা নিজের দেওয়া শিক্ষা কে? তাহলে তুমি আর ওদের কি শিক্ষা দিলে? বড় আপা, বলো?"
- "ছোটো?"
- "চেঁচিয়ে লাভ নেই বড় আপা, আমার মনে হয় বাবা ও এখানে আমার সঙ্গে একমত হবে। আর রইলো নাবিলের কথা,
তোমার ভাইয়ের ছেলে বলে সে দুধের ধোঁয়া তুলসী পাতা এটাকে বললো তোমাকে? এর আগেও তোমার বাড়ির লোক আমাদের অফিস থেকে টাকা সরিয়ে ছিল কাজেই আমি ভরসা করতে পারছিনা নাবিলকে
। এছাড়া আমার কোনো বক্তব্য নেই, তোমরা এমনি তেও মানুষ হিসেবে গন্য করো না আমাকে।" তারপর মিম মায়ান কে বাগান দেখাতে নিয়ে গেলো। যেতে যেতে ছেলেদের হেয়ালি করে বলে উঠলো,
- "আশেপাশে খুঁজে দেখো,
প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস ঘেটে দেখ,চোর নিশ্চয় -ই কোনো ডকুমেন্ট'স ফেলে গেছে কিংবা প্রমাণ রেখে গেছে।" হয়তোবা তোমারা আমাকে সারাজীবন মনে করে গেছ গুরুত্বহীন, তবে আমি মা তো, সকল সন্তানেরা সমান হয় তাদের মায়ের চোখে।" নাহিয়ান আকাশ শান্ত ভাবে মায়ে'র মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। আয়েশা বলে উঠলো,
- "কোনো প্রশ্নই ওঠে না ইমান। আমাদের অফিসের ব্যাংক একাউন্ট থেকে পঁচিশ কোটি টাকা নাহিয়ান এবং আকাশ'ই সরিয়েছে।" হঠাৎ আকাশ এগিয়ে এসে বললো,
- "বড় মা বাবা আমরা নিজেদের কে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সাতদিন সময় চাই।" আয়েশা কি ভেবে? ধূর্ত হেসে বললো,
- "যাও, দশ দিন সময় দিলাম তোমাদের দু'জন কে।
এরপর যদি নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে না পার, তবে জেলে যেতে হবে তোমাদের দু'জন কে।" ইমান এইবার নিজের মৌনতা ভেঙে বললো,
- "কোনো প্রমাণ ছাড়াই, তুমি কি করে এতো টা কঠোর হচ্ছো আয়েশা ওদের সাথে? ওরা তোমার আমার সন্তান।"
- "সন্তান বলেই কি তারা চুরির মতো একটা বড় অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে?"
- "তুমি কি করে শিওর হচ্ছো কাজ টা ওদের?"
- "তাহলে তুমি কি বলতে চাইছ? চুরি টা আমার নাবিল করেছে?"
- "মায়ের চেয়ে মাসির দরদ কখনো বেশি হ'য় না বুঝলে? আকাশ?
আর তা-ছাড়া, নাবিল ভাইয়ের ছোটো বেলা থেকেই ছোটোখাটো হাত মারার অভ্যাস আছে।"
- "নেহা?"
- "চেঁচিয়ে কোনো লাভ নেই খালামণি, তুমি নিজেও কিন্তু খুব ভালো করে অবগত এই সত্যি টা সম্পর্কে।"
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com