গল্প: ত্যাগ । পর্ব- ০২
তখন আয়েশা এসে তাকে বোঝাতে শুরু করলো, ইমান বললো,
- "আমি এখন উঠি, আমাকে ওই বিষয় টি নিয়ে ওর সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।" আয়শা কেন যেন তাকে বাঁধা দিতে গিয়েও বাঁধা দিতে পারল না। সে কি বলে আটকে রাখবে তাকে?
ইমান এক হ্রাস অস্থিরতা নিয়ে ঘরে মিমের কাছে ফিরে এলো। সে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে বুঝতে পারলো মিম দরজা লাগিয়ে রেখেছে। ও বেশ কিছুক্ষণ,
ধরে বউয়ের নাম ধরে ডাকাডাকি করতে লাগলো। তবে তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সময় শুনতে পেলো।
মিম দরজার ওপাশে কার সাথে যেন হেসেহেসে কথা বলছে? তার হাসি থামার যো নেই।
ভীষণ খুশি বলে মনে হচ্ছে তাকে। ভদ্রলোকের অস্থিরতা বেড়ে গেলো কয়েকশ গুণ,
সে ফিরে না গিয়ে আবারও নাম ধরে ডাকতে লাগলেন নিজের স্ত্রীকে।
মিম কথা শেষ করে দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো। ইমান একটু রাগীরাগী গলায় জিজ্ঞেস করলো,
- "এতক্ষণ ধরে তুমি কথা বলছিলে কার সাথে?"
- "যার সাথে কথা বলি না কেন আপনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে?"
- "তুমি আমার স্ত্রী।"
- "তাহলে আপনি আপনার বড় বউকে গিয়ে আগে জিজ্ঞেস করে আসুন, সে কেন অফিসের নাম করে রোজ রাতে মদ্যপ অবস্থায় ফিরে আসে বাড়িতে?
কি হলো? চুপ করে আছেন কেন? বলুন?
এর কোনো উত্তর আছে কি আপনার কাছে? দেখুন, আমি কারো সাথেও থাকি না আবার পাছেও থাকি না। কাজেই দয়া করে অযথা ভুল বুঝে সন্দেহ করবে
-ননা আমাকে।"
- "সে নয়তো বুঝলাম কিন্তু কে ফোন করে ছিলো তোমাকে?"
- "আমার ছোটো বেলার প্রিয় বন্ধু,আমার বন্ধু ফোন করেছিলো আমাকে।"
- "তিনি ছেলে না মেয়ে?"
- "যদি বলি ছেলে? আপনার এতো কিছু জেনেশুনে কোনো লাভ আছে?" সঙ্গে সঙ্গে ইমানের মন খারাপ হ'য়ে গেলো। মিম ঘরে এসে চুপটি করে শুয়ে পরলো ছেলের পাশে।
মায়ান সাথে সাথে'ই মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলো মিম মন খুলে, বুকে জড়িয়ে আদর করতে লাগলো তার বাচ্চা ছেলে টাকে ইমান মা ছেলে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রিয়ন্তী এসে ইমানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
- "বাবা বড় মা আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছে।" ইমান ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো মিম দরজা লাগিয়ে দিলো ভেতর থেকে। বিকেলে আকাশ এবং নেহার বিয়ের পাকা কথা বলার জন্য আয়েশার বাপের বাড়ি থেকে
লোক চলে এলো,মোটামুটি দু'ই পরিবার থেকে সকল
আলাপ-আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তখন নেহা আয়েশা কে জিজ্ঞেস করলো,
- "খালামণি,
মা কোথায়? মায়ান বাবুকে দেখতে পাচ্ছি না কারোর কাছে?" মহসীন সাহেব তখন মুচকি হেসে বললেন,
- "ছোটো বউ মা এই বিয়েতে রাজি না,
তাই তিনি বিয়ের কোনো অনুষ্ঠানে থাকবেন না সেটা আমাদের স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে।" আয়েশার মুখ টা কালো হয়ে গেলো, বললো,
- "বাবা এই কথা গুলো না বললে হচ্ছিলো না নেহা কে?"
- "কেন? আমি বলে কি এমন অপরাধ করে ফেলেছি যে তোমার এই সত্যি টা মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে?
দেখ বড় বউ মা,ওর সত্যি টা জানা প্রয়োজন।
কারণ এ বাড়িতে এসে ওকে সর্ব প্রথম নিজের শাশুড়ির মন জয় করতে হবে।"
- "আমিও ওর শাশুড়ি বাবা।"
- "তার আগে তুমি নেহার আপন খালা, তাই আমি হিসেবে ধরছি না তোমাকে।"নেহা চুপচাপ সবটা শুনে
বললো,
- " আমি কি এক বার কথা বলতে পারি মা, মায়ের সাথে?"
- "তোমার ওনার সাথে কথা বলার কি প্রয়োজন নেহা? আমরা গোনায় ধরি না ওনাকে।"
- "আকাশ, তুমি এটা বড্ড অযৌক্তিক কথা বলে ফেললে না? মায়ের কখনো তুলনা হয় না, ঠিক আছে
?"
- "কিন্তু তিনি তোমার সাথে কোনো কথা বলবে না।"
- "কেন? ভবিষ্যৎ বাণী করে আছো আগে থেকে?"
আয়েশা হাসতে হাসতে বললো,
- "মা ও ভুল কিছু বলছে না।"
- "সরি খালামণি, যে যাই বলুক না কেন আমি অন্তত
পারলাম না তোমাদের মুখের কথা বিশ্বাস করতে।"
ইমান কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না, নেহা বললো,
- "বাবা আমাকে একটু নিয়ে যাবেন মায়ের কাছে?" ইমান তাকে নিয়ে দোতলায়,ছোটো বউয়ের ঘরে চলে এলো।
নেহা দরজা নক করে বললো,
- "মা আসবো?"
মিম শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি তাকে। নেহা এসে তার পাশে বসলো,কোমল স্বরে বললো,
- "মায়ান বাবু কি দুধ খাচ্ছে?" মিম ছেলের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো,
- "হুমম, তুমি কেমন আছো? তোমার বাবা কেমন আছে?"
- "জ্বি, ভালো মা। বলছিলাম, যে আমি তোমার জন্য কিছু কেনাকাটা করেছিলাম মার্কেট থেকে।"
- "তার কোনো প্রয়োজন ছিলো না।" নেহা শাড়ি টা তখন তার গায়ে ধরে বললো,
- "এই মিষ্টি কালারের শাড়ি টায় তোমাকে অনেক সুন্দর লাগবে।"
- "দেখ আমার এই সবের কোনো প্রয়োজন নেই।"
- "তোমার সন্তান হিসেবে কি আমি কিছু দিতে পারি না তোমাকে?"
- "আমার সন্তান হওয়ার কারো কোনো প্রয়োজন নেই, আমার কোনো সন্তান নেই। তুমি এখন আসতে পারো, তোমার সময় ফুরিয়ে গেছে।"
নেহা চুপচাপ ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো ইমান বললো,
- "এতোটা কঠোর তুমি না হলেও পারতে মা ম'রা মেয়েটির সাথে। তুমিও তো মা কে হারিয়েছ।"
- "হ্যাঁ, মা কে হারিয়েছি বলেই আমার বাবা নিজের
স্বার্থ হাসিলে'র জন্য আমার বিয়ে টা দিয়ে দিলো বয়সের দ্বিগুণ একটা লোকের সাথে।
সে যাই হোক,এ নিয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে না। আমি আর কোনো আগ্রহ খুঁজে পাইনা এসবের মাঝে।" ইমান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো, মিম বললো,
- "কি হলো জান? আপনার আর কোনো ট্রাম্প কার্ড ফেলা আছে?"
- "ছেলের বিয়েতে থাকবে না বলছ?"
- "ওমন কুলাঙ্গার আমি কখনো জন্ম দিয়ে ছিলাম ভেবেই আমার লজ্জা লাগে।"
ইমান আর কোনো কথা না বাড়িয়ে হলে চলে এলো।
রাফসাম নেহা কে বললো,
- "মা দিয়েছে নিশ্চয়ই তোমার মুখে ঝামা ঘষে?"
- "এতো শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষিতদে'র মতো কথা বার্তা কিভাবে বলেন ভাইয়া?
এমনও হতে পারে মা আপনাদের কোনো কথায় এবং কাজে কষ্ট পেয়েছে? নিজেদের বেলায় ষোলো আনা কখনো এটা জানতে চেয়েছেন মা কি চাইছে? অবশ্য সেসব জানতে চাওয়ার কথা না। সে তো আর জন্ম দেয়নি আপনাকে কপাল গুণে আপনাকে পালক সন্তান হিসেবে নেওয়া হয়েছিলো।
সে যাই হোক আমি আর যেতে চাইছিনা সে হিসেবে"
তখন মেয়ে আনিশা এসে হঠাৎ ইমান কে জড়িয়ে ধরলো, সে চমকে তাকিয়ে রইলো মেয়ে এবং জামাই এর দিকে। আয়েশা হাসতে লাগলো, ইমান মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
- "হঠাৎ এমন সারপ্রাইজ দেওয়ার কারণ? সব কিছু বুঝি প্ল্যান করে এসেছ তোমার বড় মায়ের সাথে?"
তখন অনিক মিম কে সিড়ি বেয়ে নামতে দেখে তার পায়ে সালাম করতে যেতেই মিম ঝাড়ি মে'রে বলে উঠলো,
- "খবরদার, মদ খেয়ে এসেছ তুমি? আমি সবে মাএ নামাজ পড়ে এসেছি নামাজ ঘর থেকে। দূরে থাকো, তোমাকে যেন আমি না দেখতে পাই আমার আশে- পাশে।"
- "এভাবে বলছিস কেন ছোটো? তোর হয়তোবা এই সব পছন্দ না কিন্তু এসব নর্মাল, বলতে পারিস রোজ -কার ব্যাপার-স্যাপার আমাদের কাছে।"
- "হ্যাঁ তা তো হবেই, বাপ-দাদার ছিলো নেশাখোর, মাতাল তাদের সন্তান আর কেমন-ই বা হবে?" ওর এক কথায় চুপ করে গেলো সকলে। আনিশা বললো,
- "মা তুমি এভাবে কথা না বললে ও পারতে অনিক এর সাথে।"
- "তুমি চুপ করো? কে তোমার মা? মা বলে ডাকবে না আর কখনো তুমি আমাকে।"
- "তোমার পছন্দ মতো, ওই হাবা-গোবা আর ক্লাস লেস ছেলে টা কে বিয়ে করলে তুমি নিশ্চয়ই অনেক ভালোবাসতে আমাকে?
তোমার এমন সস্তার ভালোবাসার আমার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি না কখনো চাইলেও পারবে না আমার বড় মায়ের মতোন হতে।"
- "আমি তোমাদের বড় মা হতেও চাই না, তোমাদের বড় মায়ের মতোন আমি কোনো পরজীবি না কথাটা নিজের মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নাও মা, ঠিক আছে?" আনিশা তারপর গিয়ে আয়েশা কে জড়িয়ে ধরলো, মিম রান্না ঘরে গিয়ে ছেলের খাবার গরম করে ঘরে ফিরে যেতে লাগলো তখন আনিশা তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে বললো,
- "দেখ বড় মা, এই বালা জোড়া তোমার জামাই তোমার জন্য গড়িয়েছে আর আমি তোমার জন্য এই চেইন টা বানিয়ে ছিলাম।"
- "বাহ মা, জিনিস গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। তা ছোটোর জন্য কি গড়িয়েছিস?"
- "কিছু না।"
- "আনিসা?"মিম ততক্ষণে নিজের ঘরে চলে এসেছে
ইমান মায়ানের কাছেই বসে ছিলো, সে বললো,
- "তোমার অগোচরে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি বলে তুমি। ঠিক করে কথা কি, কথাই বলো না তার সাথে। আমি জানি আমার অনেক দোষ আছে। কিন্তু, তোমাকে ও ওর দিক টা একটু ভেবে দেখতে হবে?"
- "দেখুন, আমার আপনার ভাষণ শোনার মতো ধৈর্য্য নেই আর তাছাড়া বড় আপা বন্ধ্যা বলেই আপনি বিয়ে টা করেছিলেন আমাকে।
আপনার সন্তানের প্রয়োজন ছিলো সে টা অলরেডি পেয়ে গেছেন, আর এটাই সত্যি দয়া করে বার বার সাধুসন্ন্যাসী প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন না নিজেকে।
আমার আফসোস আমি আমার কোনো সন্তানকে নিজের মতো করে মানুষ করতে পারিনি, তবে মায়ান কে আমি আমার মতো করেই মানুষ করবো। আশা করি ওকে ও আমার মুক্তহস্তে দান করে দিতে হবেনা আপনার বন্ধ্যা ওই স্ত্রীকে।
আমি এতো মহান হতে পারবো না। আপনি এখন আসতে পারেন, আমার কিছু কাজ আছে।" আনিশা এসে তখন মিম কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
- "তোমার মন এতো ছোটো কেন মা? আমার লজ্জা হয় তোমাকে নিজের মা বলে লোকের কাছে পরিচয় দিতে।" মিম তখন তার গালে স্ব-জোরে দু'টো চড় মে'রে দিলো, বললো,
- "যা বোঝো না,তা নিয়ে কোনো কথা বলবে না ঠিক আছে? আর আমার সামনে কখনো গলা উঁচিয়ে কথা বলবে না। আমি তোমার এই সমস্ত বেয়াদবি কখনো সহ্য করবো না, ঠিক আছে?
আর আপনি দয়া করে এই ঘর থেকে জান প্লিজ।"
তখন সুহানি এসে মিম কে বললো,
- "মা একটু নিচে আসো প্লিজ, তোমার জন্য কে যেন অনেক নামি-দামি গিফট পাঠিয়েছে বিদেশ থেকে?"
সুহানির কথা শুনে বেশ চমকে গেলো গেলো মিম৷ ও নিচে এসে দেখলো অনেক শ্যাপিং ব্যাগ, গুচ্ছির পার্স
, দামি দামি শাড়ি এবং গহনাগাঁটি রাখা আছে শপিং ব্যাগ গুলোর মধ্যে।
ও ভীষণ চমকে গেলো, হঠাৎ তার কাছে ফোন এলো এক টা অপরিচিত নম্বর থেকে। মিম দ্রুত কল টা রিসিভ করলো, অপর পাশ থেকে কেউ এক জন হাসতে হাসতে বললো,
- "কি ব্যাপার ম্যাডাম?
আপনার শাড়ি গহনা সব পছন্দ হয়েছে?" মিম মুচকি হেসে বললো,
- "আমি আন্দাজ করেছিলাম।"
- "আই লাভ ইউ।"
- "তোর বউ কি জানে মুগ্ধ? তুই ফোন করে আইলাভ ইউ বলছিস নিজের ছোটো বেলার বান্ধবীকে?"
- "তুই এনার কথা বলছিস? ওর সামনে বসেই আই লাভ ইউ বললাম তোকে। কথা বলবি?"
- "একদিন বউ বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে চলে আয় না বাড়িতে?"
- "ওকে, লোকেশন শেয়ার কর।"
মিম ঠিকানা দেওয়ার কর মুগ্ধ বললো,
- "শোন, একটু পরে কথা বলছি, এখন একটু ব্যাস্ত আছি। আমার O.T তে যেতে হবে।" মিম হাসতে বললো,
- "দেন ফাইন, সময় করে কিন্তু একদিন আসতে হবে এ বাড়িতে।"
- "আচ্ছা, আসবো ম্যাডাম৷ আই লাভ ইউ।"
- "বুঝেছি তোর মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে।" ও কথা শেষ করে দেখলো সকলেই বেশ অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ইমান বললো,
- "কখনো বলোনি তো, যে তোমার একজন ছেলে বন্ধু আছে?"
- "বলার প্রয়োজন মনে করিনি তাই বলিনি,
আর তাছাড়া আমার মনে হ'য় না যেচে পরে কাওকে কোনো কিছু বলার প্রয়োজন আছে।" নাহিয়ান বলল
- "তবুও মা, তোমার এতো ভালো একজন বন্ধু আছে
সেটা কেউ কখনো জানতে পারেনি এ বাড়িতে?"
- "হ্যাঁ, জানতে পারেনি তো? এখন কি জনে জনে কৈফিয়ত দিয়ে বেড়াতে হবে না কি সবাইকে?" সে বললো,
- "না তবুও আমি কখনো জানতে পারিনি।"
- "আপনি কি জানেন কি আমার সম্পর্কে? ঘোড়ার ডিম জানেন আপনি আর আমার জানানোর কোনো ইচ্ছেও নেই আপনাকে।" অতঃপর, সে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে ঘরে চলে এলো ছেলের কাছে।
মায়ান বিছানায় শুয়ে নিজের খেলনা নিয়ে খেলছিল,
মা কে দেখে উচ্ছাসিত হতে শুরু করলো সে। মিম গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে লাগলো
মায়ান মিশে রইলো তার মায়ের বুকের সাথে। তারপর সে ছেলে ঘুম পারানো জন্য বিছানা তৈরি করে নিলো
হঠাৎ ইমান এসে নাম ধরে ডাকা ডাকি শুরু করলো তাকে। মিম কোনো সাড়া শব্দ করলো না, ইমান অধৈর্য্য হয়ে বললো,
- "তুমি কি খাবে না? কত রাত হ'য়ে গেছে। ছেলেকে ব্রেস্ট ফিডিং করাচ্ছে নিজে যদি ঠিক করে না খাও। তোমার শরীর সুস্থ কি করে হবে?" মিম তার কোনো কথা, গায়ে মাখলো না। আয়েশা প্রিয়ন্তি কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
- "তোমার বাবা এখন কি করছে?"
- "বাবা এখন মায়ের ঘরের সামনে বসে মা কে ছাড়া না কি কোনো খাবার খাবেনা সে।" আয়েশা নিজের অসুস্থ শরীর নিয়ে ইমান কে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে লাগলো, ইমান উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,
- "কি সমস্যা কি তোমার? অসুস্থ শরীর নিয়ে এখানে কে আসতে বলেছে তোমাকে?" আয়েশা মুখ ফুটে আর কিছু বলতে পারলো না, আনিশা বললো,
- "বাবা,
তুমি না অযথা সময় নষ্ট করছ এখানে বসে।" তিনি রেগে গিয়ে মেয়েকে বললেন,
- "তুমি একটু বেশি কথা বলছ না? বড়দের কথার মাঝে কে কথা বলতে বলেছে তোমাকে?" আনিশা
আয়েশা কে নিয়ে ঘরে চলে এলো। মিম রাত তিনটায় উঠে, তাহাজ্জুদের নামাজ পরে অনুভব করলো তার খিদে লেগেছে।
সে উঠে দরজা খুলে রান্না ঘরে চলে এলো, তারপর নিজের পছন্দ মতো ঝটপট ফ্রাইড রাইস আর চিলি চিকেন করে প্লেটে সাজিয়ে নিলো সে।
তারপর সে ঘরে'র দিকে পা বাড়ালো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে সে ধাক্কা খেলো একজনের সাথে। সে তখন মিটিমিটি হাসতে হাসতে লাগলো৷ মিম কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে এলো ছেলে'র কাছে। ও খাবারের প্লেট টা রেখে দরজা লাগাতে গেলো ইমান তাকে বাঁধা দিয়ে বললো,
- "আমি এখনো খাইনি।"
- "আমি কি খেতে বারণ করে ছিলাম আপনাকে?"
- "শোনো, আমরা কিন্তু কাল ঘুরতে যাচ্ছি, নতুন একটা রুফ টপ রেস্টুরেন্ট হয়েছে আমাদের হাসপা -তলের কাছে।"
- "কোন রেস্টুরেন্ট?
যেখানে আপনি আর আপা আপনাদের চল্লিতম বিবাহ বার্ষিকী বার্ষিকী সেলিব্রিট করেছিলেন এক সাথে?" ইমান মেকি হেসে বললো,
- "তাতে কি হয়েছে?"
- "হ্যাঁ সেটাই, দেখুন যা হওয়ার ছিল তা হ'য়ে গেছে।
আর আমার বিন্দু মাএ আপনার সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করার কোনো ইচ্ছে নেই। এখন আসুন অনেক রাত হয়েছে।"
- "কালকে আমি ফ্রী আছি।"
- "তো? সময় কাটান বড় আপার সাথে।"
- "আমি তোমার সাথে সময় কাটাতে চাই।"
- "শুনুন, আপনার মুখে এই ধরনের কথাবার্তা শুনলে আমার শুধু হাসি আছে।"
- "আমি ফোন সাইলেন্ট করে রাখবো।"
- "থাক বাবা, তারপর আবার পান থেকে চুন খসলে আমার দোষ হবে।"
- "কোনো দোষ হবে না।"
- "একটা সত্যি কথা বলবো?"
- "কি?"
- "আমি ভালোবাসি না আপনাকে, নেহাৎ মায়ানের জন্য মানিয়ে গুছিয়ে থাকার চেষ্টা করছি আর নয়ত অনেক আগেই ডিভোর্স দিয়ে দিতাম আপনাকে।"
- "ডিভোর্স? আমাদের বাড়িতে কখনো ডিভোর্স হ'য় -নি এর আগে।"
- "হ'য়নি বলে যে কখনো'ই হবে না। এটা এ বাড়ির কোথায় স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে লেখা আছে? শুনুন, এরপর থেকে আপনি আর কখনো আমার গায়ে হাত তুললে আমার ল'ইয়ার আসবে এই বাড়িতে।"
ইমান স্থির হ'য়ে দাঁড়িয়ে গেলো, মিম নিজের ঘরের বাহিরে ছেড়ে এলো তাকে।
তারপর সে পেট ভরে খেয়ে নিলো,এখন আর কোনো কষ্ট যেন ছুঁতে পারেনা তাকে। ইমান ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো, ডিভোর্সের কথাটা বারবার তার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। সে আয়েশা’র কাছেও য়ায়নি, স্টাডি রুমে অন্ধকারের মধ্যে বসে আছে।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com