ভংকর গল্প রক্ত মাখা শার্ট
ওয়াশিং মেশিন থেকে শার্টটা বের করল রুদ্র। কিন্তু খেয়াল করল সাদা রঙের শার্টটায় দাগ এখনো লেগে আছে। কিন্তু আগে কখনো এমন হয়নি। বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে গেল রুদ্রর। কোনো কাপড়ে দাগ বা ময়লা লেগে থাকলে ভীষণ অসস্তি হয় তার। শার্টটা আবার মেশিনে দিয়ে দিলো। আবার ধুতে হবে এটা।
ওয়ারড্রব থেকে অন্য একটা শার্ট বের করে খাটের উপরে রাখল।
আজকে এটা পরেই বের হবে সে। গোসল সেরে তোয়ালে গায়ে দিয়ে রুমে চলে আসলো।
শার্টটা হাতে নিলো। গায়ে দিতে দিয়ে কিছু একটা খেয়াল হতেই আবার খুলে ফেলল।
তার পরিষ্কার মনে আছে। শার্টটা দুমড়ে মুচড়ে নিচে ফেলে দিলো।
আরেকটা শার্ট বের করল সে। সেখানেও একই রকম ভাবে রক্তের দাগ।
সেটা এখন কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। অন্য একটা শার্ট বের করলেও একই রকম দেখল।
একে একে প্রায় ছয়টা শার্ট ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রুদ্র অবাক হয়ে শার্টগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। অদ্ভুতভাবে যেই শার্টগুলো পড়ে সে খু ন করেছে সেই শার্টগুলোর মধ্যেই রক্তের দাগ লেগে আছে।
শেষমেশ অন্য একটা ভালো শার্ট খুঁজে পাওয়া গেল।
সবগুলো শার্ট ওয়াশিং মেশিনে ধুতে দিলো সে। কিন্তু এবারেও দাগ কমলো না।
বরং আরো বেশি পরিমাণে বেড়ে গেল। রাগে শার্টগুলো নিয়ে জলন্ত চুলার উপরে দিয়ে দিলো রুদ্র।
ঠিক করল পুরাতন আর কোনো শার্ট সে পরবে না।
আজকেই নতুন শার্ট কিনে আনবে সে।
যাকে খু ন করার জন্য সে বের হচ্ছিলো তাকে একদিন বাদে খু ন করলেও কিছু হবে না।
আনমনে সে বলে উঠল, "পৃথিবীটাকে আরেকটা দিন দেখে নাও।"
পোড়া গন্ধ পেয়ে রান্নাঘরে ছুটে গেল লিয়ন। সেখানে অনেকগুলো শার্ট জ্বলছে।
সে দশম শ্রেণির ছাত্র। এই বিশাল বাড়িতে দুটো মানুষের বাস।
লিয়ন আর তার বাবা রুদ্র।
চুলায় সেই শার্টগুলো জ্বলছে যেই শার্টগুলো পরে তার বাবা খু ন করে এসেছে।
আর লিয়ন সেই শার্টগুলোতে দাগ ভরিয়েছে। সে অনেক কিছুই বুঝতে পারে।
সে চুলাটা নিভিয়ে দিলো না।
আগুনের দিকে তাকিয়ে থেকে লিয়ন মনে মনে বলল,
"আচ্ছা বাবা, আমাকে খু ন করার জন্য কেউ টাকা দিলে কি তুমি আমাকেও মেরে ফেলবে?"
হাতভর্তি অনেকগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে রুদ্র তার ছেলের ঘরে ঢুকল।
লিয়ন তখন ড্রইং করছিল।
"কী করছো ইয়াং ম্যান?"
দরজায় দাঁড়িয়ে রুদ্র উচ্ছাসিত ভঙ্গিতে কথাটা বলে উঠল।
ভয়ে জোরে চাপ পড়ে গেল রঙ পেন্সিলের উপর। আর সাথে সাথেই সেটা ভেঙে গেল।
রুদ্র ঘরে ঢুকে লিয়নের কাধে হাত রাখল। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
"আমার জানামতে আমি তোমার সাথে কখনো উঁচু স্ব্বরে কথা বলিনি পর্যন্ত।
তুমি আমাকে এত ভয় কেন পাও বলতো?"
লিয়ন জবাব দিলো না। সে মাথা নিচু করে রইল।
রুদ্র তার টেবিলের কাছে কয়েকটা শপিং ব্যাগ রেখে বলল,
"দেখো তো তোমার পছন্দ হয় কিনা? তুমি তো বাইরে ঘুরাঘুরি খুব একটা পছন্দ করো না।
তাই আমি একাই গিয়েছিলাম। একটা পরে এসে দেখাও তো।"
লিয়ন ধীর কণ্ঠে বলল,
"আমি পরে পরব।"
রুদ্র কিছুটা হতাশ কণ্ঠে বলল,
"আচ্ছা। আমি আসছি।"
বাবা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচল লিয়ন।
তার বাবা যতক্ষণ তার সামনে থাকে তার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়।
সামনে থেকে চলে যেতেই আবার সেটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। অথচ সে দূর থেকে সব খেয়াল রাখে।
সে এটাও জানে রান্নাঘরে লুকিয়ে রাখা চাকুটায় অনেক সময় রক্ত লেগে থাকে, মানুষের রক্ত।
ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ঘরে ঢুকলেও সে তার বাবার অস্তিত্ব টের পায়।
তার বাবা খুব যত্ন নিয়ে সেই রক্ত ধুয়ে আবার চাকুটা রেখে দেয়।
সে জানে তার বাবাকে ধরা সহজ না।
সন্দেহবশে ধরে রাখলেও কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ফিরে আসবে।
তখন এই পুরো বাড়িটায় তাকে একা থাকতে হয়। তার অভ্যাস আছে।
গাড়িটা মাঝ রাস্তায় খারাপ হয়ে গেল রুদ্রর। ঠিক করল বাকিটা রাস্তা সে হেঁটেই যাবে।
গন্তব্য আর বেশিদূরে না।
মোবাইলটা বের করতে গিয়ে চাবিটা পড়ে গেল নিচে।
সেটা তুলতে যেতেই একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মারল রুদ্রকে।
মুহুর্তেই রাস্তার সাথে পিষে গেল রুদ্রর দেহ।
গাড়ি থেকে মাতাল অবস্থায় বেরিয়ে আসলো এক লোক।
তার মাতাল ভাবটা অনেকটাই কেটে গেছে।
সে একটা লোককে পিষে ফেলেছে।
এমন একটা ঘটনা হওয়া সত্বেও কোনো চলন্ত গাড়ি থামছে না।
সে দৌড়ে গেল লোকটির কাছে।
কাছে যেয়েই বুঝল লোকটি মারা গেছে।
কিছুক্ষণ হতভম্ভ অবস্থায় লাশের পাশেই বসে রইল মাতাল লোকটি।
পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পকেট হাতরে একটা কাগজ খুঁজে পেল।
বের করার পর বুঝল সেটা একটা ফটোগ্রাফ।
রক্ত দিয়ে মাখামাখি অবস্থায় থাকা সত্বেও মাতাল লোকটির বুঝতে সমস্যা হলো না ছবিটা তার নিজেরই।
ছবির অপর পাশে তার নিজের নাম ঠিকানা সব ডিটেলস লেখা।
রুদ্রর অন্য পকেট থেকে একটা ধারালো ছুরির কিছু অংশ বেরিয়ে আছে।
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com