গল্প: ত্যাগ । পর্ব- ০১
ডিম লাইটের আবছা আলোয় বউয়ের কোমল, নরম মুখ খানা দেখে তার মনের মধ্যে অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করছে। যদিও বা,
এতো বছরের সংসার জীবনে দাম্পত্যকলহ টা আজ যেন বেশ অনেক টাই মাএা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভদ্র -লোক কিভাবে বউয়ের রাগ ভাঙাবে? সেই চিন্তায় চিন্তায় ঘাম ছুটে যাচ্ছে তার।
এদিকে, তাদের দেড় বছরের পুএ সন্তান ঘুম ঘুম চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন সে কেঁদে দিলেই সব শেষ। বউ একবার বিছানা ছেড়ে উঠে গেলে তাকে আজকের মতো ঘর ছাড়া হতে হবে। এ সব ভাবতে ভাবতে সে আড় চোখে এক বার ছেলে মায়ানে'র মুখের দিকে তাকালো।
মায়ান ততক্ষণে, মায়ের কোলের মধ্যে'ই ঘুমিয়ে গেছে। বেশকিছু ক্ষণ পর,
ভদ্রলোক তাকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে দোলনায় শুইয়ে দিলো তারপর সে চুপচাপ পা টিপে টিপে এসে
ছেলের জায়গায় নিজেই শুয়ে পরলো বউয়ের পাশে।
অতঃপর, সে তার কপালে চুমু খেলো। মিটি মিটি হেসে তার কানে ফিসফিস করে বললো,
- "আমাকে এতো গুলো বছর ধরে সহ্য করার জন্য
অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে। যদিও বা আমি মানুষ টা হয়তোবা তোমার জন্য সঠিক নই?
বিশ্বাস করো আমি চাইনি আমাদের পঁচিশতম বিবাহ বার্ষিকীর দিন টা নষ্ট করতে।
তোমাকে আমি হয়তো তোমার মতোন করে কখনো ভালোবাসতে পারিনি।
কিন্তু ভালো যে বাসি না তা না।
বাসি, কারণ তুমি বাবা হওয়ার সুখ এবং পরিপূর্ণতা দু'টোই দিয়েছ আমাকে আমার।
পাঁচ পাঁচ জন সন্তানের মা তুমি। তোমার তুলনা তুমি নিজেই, তুমি অনন্য।
এ কথা গুলো মুখ ফুটে কখনো তোমায় না বলতে পারলেও এই কথা গুলো
আমার অন্তরে মিশে আছে।" কথা গুলো বলা শেষ করেই, সে বউকে শক্ত
করে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো৷ তখন তার স্ত্রী হুট করে'ই তাকে
ধাক্কা মে'রে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো,
- "কি করছেন কি আপনি?
বুড়ো বয়সে এই সব একটুও আনন্দ দেয় না আমাকে
আপনার শরীরে যখন এতো জ্বালা, তখন আপনার বড় বউয়ের কাছে জান।
এতো রাতে, কি চাইতে কি
এসেছেন আমার কাছে? লজ্জা করে না আপনার? বয়স হয়েছে তো?
দাদা নানা হওয়ার বয়সে বাচ্চার বাপ হওয়ার আশা ছেড়ে দিন। দয়া করে,
মুক্তি দিন আমাকে।" তিনি থতমত খেয়ে স্ত্রীয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সে বললো,
- "এতো রাতে এই ঘরে কি?
কত রাত আপনি নিজের প্রয়োজন ছাড়া কাটিয়েছে -ন আমার সাথে?
বড় বউয়ের ন্যাওটা যখন, তখন তার আঁচল ধরে ঝুলে থাকুন!
এখুনি বের হন আমার ঘর থেকে। আমি বছর বছর সন্তান জন্মদানের মেশিন নই।
এতো জ্বালা থাকলে আবারও বিয়ে করুণ, কেউ আটকে রাখেনি আপনা- কে।
" সে পুরো বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই নিয়ে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
- "শুভ বিবাহ বার্ষিকী।"
- "হয়েছে আপনার ন্যাকামো? জান, আপনার বড় বউ না অসুস্থ? গিয়ে দেখুন,
হয়তোবা ম'রে টরে পরে আছে?
ওই মহিলার তো আবার নাটকের শেষ নেই, আমার সুখ দেখলেই রেগে ধরে
ওনাকে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনা, যত রাজ্যের লোক দেখানো নাটক শুরু হয়ে
যাবে।"
কথা গুলো শেষ হতে না হতেই তার গালে পরলো চড় অবশ্য,
সেই মহিলা একটুও অবাক হহনি তার স্বামীর
এই রূপ দেখে। এসব তার কাছে নতুন না, এতো দিন এই সব সহ্য করতে করতে
সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
তিনি তখন এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে স্বামী কে উদ্দেশ্য করে বললো,
- "বাড়িতে পুলিশি কোনো ঝামেলা না চাইলে এখুনি বেড়িয়ে জান আমার ঘর থেকে।
ভাববেন না আমি এখন আর সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করবো। আমার কপাল খারাপ,
যে আপনার মতোন একটা বয়স্ক লোকের সাথে আমার বিয়ে টা হয়েছে।
আমি জ্ঞানহত কখনোই দোজবরে বিয়ে করতাম না৷ আমার রুচি এতো টাও খারাপ না,
যে নিজের থেকে বয়সের দ্বি-গুণ একটা লোকের সাথে বিয়ে বসে
যেতাম তার টাকা-পয়সা দেখে। কি হলো? জান? এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
নাটকের আর কিছু বাকি আছে?" তখন হঠাৎ আয়েশা এসে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
- "আমি দুঃখিত বোন, আমার জন্য তোর আনন্দ অনুষ্ঠান সব পণ্ড হয়ে গেছে।"
- "হ্যাঁ তো? এখানে কি নাটক দেখতে এসেছ? না কি নিজের স্বামীকে নিতে এসেছ?
হুমম? কি চাইতে কি এসেছ আমার কাছে?" তখন নাহিয়ান এসে বলে উঠলো,
- "মা তুমি এভাবে কথা বলতে পারো না বড় মায়ের সাথে।"
- "হু দ্যা হেল আর ইউ? তুমি আমার পেটে হয়েছ? না কি আমি হয়েছি তোমার পেটে?
বড় মায়ের চামচা গিরি করতে হলে তার ঘরে গিয়ে করো,
এইসব এখন আর আমি মুখ বুঝে সহ্য করবো না ঠিক আছে?
ফারদার, আমার মুখে মুখে তর্ক করলে এক চড়ে গালের সব দাঁত ফেলে দেবো,
বেয়াদব, কুলাঙ্গার জন্ম হবে জানলে, গর্ভেই মে'রে ফেলতাম সব ক'টা কে।
" আয়েশা এগিয়ে এসে মিমের হাত ধরে বললাম,
- "বললাম বোন, সব আমার দোষ।"
- "ও হো, তাই বুঝি? কি কষ্ট? তা আপনার মাদার তেরেসা সাজা হ'য়ে গেছে? হয়েছে শান্তি? প্লিজ লিভ
সাথে আপনার বুড়ো জামাই টা কেও সঙ্গে নিয়ে জান
আমার কোনো ইন্টারেস্ট আসে না এই লোকটা কে দেখে।
আমি ইন্টারেস্টড নই, আমার ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে৷ আমার দুধের বাচ্চাটার ও অসুবিধে হচ্ছে। সো, প্লিজ ন্যাকামো না করে নিয়ে জান ওনাকে অন্যের ব্যবহৃত
জিনিসে'র প্রতি আমার কখনো আগ্রহ ছিলো না৷ নেহাৎ কপাল খারাপ তাই জুটে গেছে।"
ছোটো স্ত্রী এর মুখে এতো কথা শুনে হতভম্বে'র ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি, আয়েশা সাথে করে নিয়ে গেল তাকে মিম তাদের মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে এসে
ছোটো মায়ান কে দোলনা থেকে নিয়ে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পরলো, এখন আর তার একটুও মায়া-দয়া হ'য় না এই লোকটা কে দেখে। সে ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।
ইমান অন্ধকার ঘরে একা'ই বসে আছে, চোখে তার ঘুম নেই, তখন আয়েশা কফি করে নিয়ে এসে বলল,
- "এটা ট্রাই করে দেখ তোমার ফেভারিট, মুড ভালো হ'য়ে যাবে।"
ইমান হঠাৎ তার পরনে নতুন শাড়ি দেখে বললো,
- "এতো রাতে সেজেছ কেন?
যাও গিয়ে ঘুমাও, নয়তো তোমার শরীর টা খারাপ হয়ে যাবে।"
- "এভাবে বলছ কেন? আমি তোমাকে খুশি করার জন্য সেজেছি।" তারপর সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তাকে, ইমান কিছুক্ষণের জন্য তার মধ্যে অন্য কাও কে খোঁজার চেষ্টা করলো,
ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে হঠাৎ আয়েশা ব্যাথায় ডুকরে কেঁদে উঠলো, ইমান হুঁশ ফিরতে'ই সে সরে গেলো সাথে সাথে। ও আয়েশার কাছে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে লাগলো,
রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হলো আয়েশা কে।
বড় বড় ছেলেদের সামনে এ-সব কথা আলোচনা করা ভীষণ লজ্জার তাই আলাদা ভাবে ডেকে ডক্টর
আজান, ইমান কে বললো,
- "আপনি দেশের একজন সনামধন্য কার্ডিওলজিস্ট
হওয়া সত্ত্বেও এই ভুল টা করলেন কিভাবে? আপনি বেশ ভালো করেই জানেন আপনার মিসেসের জরায়ু ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও তার ওই একই জায়গায় ইনফেকশন আছে
জনাব, এতো বড় ভুল আপনার দ্বারা কাম্য না। ওনা কে হয়তো সাতদিন হাসপাতালে রাখতে হবে কারণ
ইনফেকশনের জন্য এক্সেসিভ ব্লাড লস হয়েছে এই মুহুর্তে আমি আর কিছু বলতে পারছিনা, তবে ওনার রিকোভার করতে বেশ টাইম লাগলো।"
কিছুক্ষণ পর, ছেলোরা এসে বাবার কাছে তাদের বড় মায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলো,৷ ইমান কোনো উওর দিতে পারলো না তাদেরকে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মিম আয়েশার অসুস্থতার খবর পেলো, অবশ্য এ নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখালো না সে। রাবেয়া এসে ছেলের ছোটো বউকে বেশ আদুরে গলায় বললেন,
- "মা, উঠেছ তুমি? শুনেছ?
সোনা বউ অসুস্থ, ওরা সকালে নাস্তা কিনে খেয়েছে
দুপুরে হাসপাতালে ভাত পাঠাতে হবে।"মিম হাসিমুখে
বলে উঠলো,
- " তাহলে আপনি বরং রেঁধে পাঠান মা আর নয়তো
ফুলির মা ডেকে কে বলুন, ঠিক আছে?
জানেন, নিশ্চয়ই? বেশ ক'দিন ধরে আমার শরীর টা ও ভালো নেই, আমি নিশ্চয়ই, মেশিন নই। আমার শরীরের ও কষ্ট আছে। একটু আমার দিক টাও ভেবে দেখুন মা,
সারাদিন সোনা বউ, সোনা বউ, সোনা বউয়ের নাম
যব করতে থাকলে হবে?" ছোটো বউয়ের কথায় মুখ টা কালো হয়ে গেলো তার, মিম সারাদিন রুম থেকে বের হয়নি বরং নিজের ঘরেই থেকেছে।
ইমান সারাদিন খুব আগ্রহ নিয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে বসে, তবে একজন বাদে অনেকেই তাকে ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছে।
দুপুরে, রাবেয়া খাবার নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে গেলেন। ইমান এদিক-সেদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- "মা ছোটো আসেনি তোমাদের সাথে?" তিনি তখন হেয়ালি করে বললেন,
- "না বাবা, তার না কি শরীর খারাপ। আজ রান্না টা ও আমাকে করতে হয়েছে।" আয়েশা জিজ্ঞেস করল,
- "মা বোন কি এখনো আমার ওপরে রেগে আছে?"
আবিন বললো,
- "বাদদাও মা, মায়ের রাগের ধার কে ধারে বাড়িতে?
এক দিন তার হাতের রান্না না খেলে মরে যাবো না।"
স্বপ্না বললো,
- "হয়েছে বাদ দাও, এখন আর কথা বাড়িয়ে কি হবে
?" সেদিন বিকেলেই সকলে আয়েশা কে নিয়ে বাড়ি তে এলো,আয়েশার বড় ভাই মোজাম্মেল সাহেব মিম কে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
- "বোন শুনলাম, তুমি হাসপাতালে দেখতে যাওনি আয়েশা কে?"
- "হ্যাঁ যাইনি কেন? তার জন্য শূলে চড়ানো হবে না কি আমাকে?"
- "না মানে, তোমরা দু'জনেই বোনের মতো একসাথে মিলেমিশে থাকো।"
- "সরি, উনি৷ আমার বোন নন, আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। হ্যাঁ, একসাথে মিলে-মিশে থাকি। তবে তাকে লাই দিয়ে মাথায় তোলাটাই বোধহ'য় আমার ভুল হয়েছে?
আর তাছাড়া আপনার বোন কোনো মন্ত্রীমহোদয় নন, যে সবাই গিয়েছে বলে আমাকেও দেখতে যেতে হবে তাকে।" মিমের আচার-ব্যাবহার দেখে সকলেই বেশ অবাক, ও ছেলের জন্য খিচুড়ি নিয়ে ঘরে এসে দেখলো ইমান তার পাশে বসে আছে।
সে স্ত্রী'র উপস্থিতি টের পেয়ে নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,
- "শুনলাম, তুমি আজ রান্না করতে বলেছিলে মা কে
?"
- "হুমম, বলেছি, কেন? হঠাৎ কৈফিয়ত চাইছেন কেন? আমি কি রাঁধুনি গিরি করতে এসেছি না কি এ বাড়িতে?
একাধিক স্ত্রীয়ের মধ্যে যখন সমতা বজায় রাখতে পারবেন না, তখন আমার জীবন টা ধ্বংস করলেন কেন?
আমার জীবন টা নষ্ট করার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?"
ইমান হঠাৎ তার কপাল স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করলো,
- "শরীর খারাপ লাগছে না তো?
ডক্টর ডেকে পাঠাবো? একবার আসতে বলবো তাকে
- "শুনুন, আপনার ভরসায় আমি বসে নেই। ডক্টর এসেছিল, তার সাথে আমার কথাও হ'য় গেছে।"
ইমান অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো,
মিম ছেলেকে নিচে নিয়ে এসে দেখলো আয়েশা হলে বসে আছে। সে মিম কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
- "আমি বুঝতে পারিনি এতো টা অসুস্থ হয়ে পরবো ছোটো, আমার শরীর এতো টা খারাপ করবে।" মিম হাসতে হাসতে বললো,
- "কি বলুন তো? বেশি লোভ করলে, অন্যের হক মে'রে খেলে শাস্তি তো পেতেই হবে। আর তাছাড়া যে কাজ গুলো আপনার শরীরে সয়না সেই কাজ গুলো
কেন করতে জান? বলুন তো?"
আয়েশা মুখ কালো করে বললো,
- "জানিস, আজ আমার বাপের বাড়ি থেকে আকাশ আর নেহার বিয়ে'র কথাবার্তা বলার জন্য লোকজন আসবে ছোটো।"
- "সে আসবে আসুক।
তবে আমি বিন্দু মাত্র আগ্রহী নই আপনাদের বোনের মেয়ে কে আমার ছেলের বউ করে আনতে।" আকাশ
বলে উঠলো,
- "মা এইবার কিন্তু তুমি অনেক বেশি বলছ?"
- "বলবো নদ বলছ?
পেতে পেতে তো সারাজীবন পেয়েই বসেছ আমাকে। আমি জন্ম দিয়েছি। অথচ, আমার কোনো অধিকার নেই, আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবোনা আমার সন্তানদের ভালোমন্দের কথা ভেবে?"
- "নেহা খারাপ মেয়ে না ছোটো।"
- "তোমার বোনের মেয়ে তো আপা? বড়জোর হলে তোমার মতোই হবে। আমি তোমার ওপরে কখনো কনফিডেন্স পাইনা,তোমার ওই বোনের মেয়ের ওপর আমার কনফিডেন্স কি করে আসবে?" ইমান তখন
পরিস্থিতি সামাল দিতে মিম কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
- "তুমি নিশ্চয়ই রান্না করবে?"
- "কেন? আমি রান্না করবো কেন? দাসী-বাঁদী করে এনেছিলেন বুঝি আমাকে এই বাড়িতে?
আসবে আমার সতীনের বাড়ির লোক। আমার কি দায় পরেছে তাতে? নিজের শরীর ভালো নেই, আমি কি না যাবো সতীনে'র চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে। শুনুন,
খাবার দাবার যা আনানোর বাহির থেকে নিন। আমি
এখন বিশ্রাম নেবো, ঠিক আছে? আর তাছাড়া, যে বিয়েতে আমার কোনো মত নেই সেই বিয়ে নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথাও নেই, দয়া করে আমাকে
ইনক্লুড করার চেষ্টা করবেননা এই সবের সাথে। আর একটা কথা, এই সব কুলাঙ্গারদের মা আমি না। মানে না, ওরা আমায় মা না বলে ডাকলে আমার অনেক ভালো লাগবে।" কথা গুলো বলে'ই ছেলে মায়ান কে সঙ্গে নিয়ে ঘরে চলে এলো মিম। রাবেয়া মহসীন সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
- "তুমি কিছু বললে না ছোটো বউ মা কে?" তিনি চশমা ঠিক করতে করতে বললেন,
- "আমি আর কি বলবো? মা যখন চাইছেনা তোমরা কেন জোরাজুরি করছ তার সাথে। মা হিসেবে সে কি নিজের সন্তানদের নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখেনি? তারও নিশ্চয়ই কোনো পছন্দ-অপছন্দ আছে?" ইমান বলল
- "সবই বুঝলাম বাবা,
কিন্তু আয়েশা? ও নিজের হাতে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছে আমাদের রাফসাম, নাহিয়ান, আকাশ আবিন কে।"
- "তবুও, জন্মদায়িনী মায়ের তার সন্তানদের ওপরে অধিকার বোধ একটু বেশি'ই থাকে। আয়েশা ওদের দশমাস দশ দিন পেটে ধরেনি ইমান কাজই ও জানে না। ঠিক কতটা কষ্ট হয়, যখন সন্তান এক টা অন্য মহিলার সামনে অবজ্ঞা এবং অপমান করে নিজের মা কে। সে যাই হোক,
আকাশ আমি আশা করছি মায়ের মুখে মুখে কথা বলার জন্য, তুমি তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেবে।
বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চাইলে সন্তান কখনো ছোটো হয়ে যায় না।" আকাশ মহসীন সাহেবর কথা শুনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি একটু থেমে আবারও বলতে শুরু করলেন,
- "দেখ বড় বউ মা,
বাপের বাড়ি লোকজন আসছে তোমার কাজেই তুমি ছোটো বউ মায়ের ভরসায় থেকো না ঠিক আছে?"
মিম সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বললো,
- "সেটাই বাবা, এ বাড়িতে আমার বাপের বাড়ির লোক কয়দিন আসে?" ইমান গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো,
- "তাদের কি এই বাড়িতে আসতে কেউ, কেউ মানা করেছে?"
- "হ্যাঁ আপনারা বিরক্ত হন, বলেই তাদের এ বাড়িতে আসা বারণ আছে। এর জন্যই তারা এখানে আসে না কাজেই আমি মনে করি না আমার সতীনের আত্নীয় স্বজন নিয়ে আমার মাথা করার মতো কোনো কারণ আছে।
আত্মীয়স্বজন আসবে ওনার উনি বুঝুক,আমি চাইনা যেচে পরে অন্যের বিষয়ে নাক গলাতে।" ইমান তখন কি ভেবে বললো,
- "একটু মানবিক দিক থেকে ভেবে দেখো, ছেলে তোমার, প্রশ্ন উঠবে।"
- "এই এলেন মানবতার জাহাজ,আই ডোন্ট কেয়ার। আর এইসব গুরুত্বহীন বিষয়ে দয়া জড়ানোর চেষ্টা করবেন না আমাকে।"
- "আমাকে ক্ষমা করে দাও মা।" হঠাৎ ছেলের এমন রঙ বদল দেখে মিম হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
- "এরকম কোরো না বাবা, গিরগিটি স্বয়ং তোমাকে দেখলে লজ্জা পাবে।"
মায়ের কথায় স্থির হ'য়ে দাঁড়িয়ে পরলো আকাশ। মিম রান্নাঘরে চলে এলো ছেলের জন্য মাছ ভাজতে
কারণ মায়ান মাছ ভাজা খেতে চেয়েছে। ইমান গিয়ে তার হাতে হাতে এটাসেটা এগিয়ে দিতে লাগলো তবে হঠাৎ বেখেয়াল বশত তার হাত মিমের শরীর স্পর্শ করতেই সে ইমান কে ধাক্কা মে'রে দূরে সরিয়ে বলল,
- "একদম আমায় স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না। আমার ঘেন্না লাগে।"
সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো, মিম ততক্ষণে মাছ ভাঁজা নিয়ে ঘরে ফিরে এলো ছোটো মায়ানের কাছে।
মায়ান বরাবরই মা ভক্ত, বেশির ভাগ সময় টাই সে মায়ের কাছে থাকে। আয়েশা তাকে দেখতে ইমানের সাথে ঘরে এলো, তবে সে একটুও পছন্দ করেনা আয়েশা কে। সে মায়ের কোলে ঢুকে পরলো, ইমান
চেষ্টা করেও কোলে নিতে পারলোনা তাকে সে সকল
তিক্ততা ভুলে মিমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
- "আমরা কালকে ঘুরতে যাবো কেমন? আমার ফোন টা সাইলেন্ট থাকবে।"
- "শুনুন, আপনার সাথে অন্তত কোথাও
যাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। যাও বা একটু স্বাধ ছিল তা মিটে গেছে।"
- "আমার জন্য তুই ওনাকে ভুল বুঝিস না ছোটো।
আমি চাইনি তোর স্পেশাল দিনটা খারাপ করে দিতে
- "না আপা আপনি তো কিছু'ই চান না, সব ভূতে করে দিয়ে যায়।
তা বারবার বাচ্চা নষ্ট করে নিজের এই হাল করতে কে বলেছিল আপনাকে?
আপনার স্বামী কে ও তাহলে আমার সাথে বিয়ে দিতে হতো না
আর না আমাকে সংসার করতে হতো
এই রকম একটা সতীন নিয়ে বুড়ো লোকের সাথে।
সে যাই হোক, আপনার স্বামী নিয়ে আমার ঘর থেকে এখুনি বেরিয়ে জান।
আমি এই লোকটা কে আর সহ্য করে পারছি না নিজের আশে-পাশে।"
- "আমি তোমার গায়ে হাত তুলতে চাইনি।"
- "ব্যাক্তিগত বিষয় বলে কি কোনো কিছুই থাকবে না আপনার এবং আমার মাঝে?
না কি নিজের বড় বউ কে আনন্দ দিবেন বলে আমাদের সকল বিষয় নিয়ে তার সামনে
আলোচনা করবেন। আমি তো চাইনা কোনো তৃতীয় ব্যাক্তিকে আমাদের
গোপনীয় বিষয় গুলো জানতে দিতে।"
ইমান তার হাত চেপে ধরলো, মিম দ্রুত তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
- "দয়া করে জান, প্লিজ লিভ। আমি একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই আমার ছেলের সাথে।"
- "আমাদের এই মুহুর্তে কথা বলা খুবই প্রয়োজন একে অপরের সাথে।"
- "আমি তা মনে করি না।" মিম তারপর খুনসুটিতে মেতে উঠলো ছেলের সাথে।
ইমান অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আয়েশার ঘরে এসে আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলো
নিজেকে চেহারায় বয়সের ছাঁপ তার তেমন বোঝা যাচ্ছে না তবুও সে আয়েশাকে জিজ্ঞেস
করলো,
- "বয়স হয়ে যাচ্ছে না, চুল পেকে যাচ্ছে তাই আর তোমার বোনের পছন্দ হচ্ছে না আমাকে।
সে এখনো কতটা সুন্দর, বয়স কম।
এ টা আমার ব্যার্থতা, যে আমি তার মতো করে কখনো ভালোবাসতে পারিনি তাকে।"
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com