Breaking News

কবিতাঃফাগুন এসেছে

ফাগুন এসেছে আঙিনা জুড়ে,

খুশির জোয়ারে মন মেতে উঠে।
ফুলের রেণু গাছে গাছে ,
ঝরা পাতারা ভীষণ শোকে আছে।
দখিনা হাওয়া বইছে দেখো,
মন যে আজ উতলা হয় গো।
পাখিরা সব করে কলরব,
অতিথি পাখির বিদায়ের শোক।
সরষে খেতে ফুলের বাহার,
মৌমাছিরা খেলা করে আজ।
বকুল শিউলি রক্ত জবা,
রুপের বাহার দেখায় মনের আঙিনায় সদা।
এই বুঝি ফাগুন এসেছে,
পাড়ার খোকা খুকি হেসে খেলে আছে।
শীতল হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়েছে,
ফাগুনের দিনে মন রাঙিয়েছে।


খানিক দূরত্ব
------------------
ছোঁয়া থেকে স্পর্শ দূরত্ব থাকুক
যেমন দূরত্বে থাকে জন্ম থেকে মৃত্যু।
যার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই।
শীতকাল থেকে দূরত্ব টা গ্রীষ্মকাল যেন না হয়।
ছয়মাস অপেক্ষা করতে হবে।
হোক দূরত্ব টা এক ইঞ্চি,
যেন বলতে পারি মুখ দিয়ে না বলা কথাটা
মন দিয়ে বুঝাতে পারি-
অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায়।


কবি অথবা সন্ন্যাসী
---------------------------------
একবার বালক বয়সে যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তার মোড়ে
এক জ্যোতিষীকে দেখেছিলাম আতশ কাঁচের নিচে মানুষের হাত দেখছে,
পাশে কাগজে সুন্দর করে লেখা ছিল-
মাত্র এক টাকায় হাতের রেখা দেখে ভাগ্য বলা হয়, বিফলে মূল্য ফেরত।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখলাম,
জ্যোতিষী সবাইকে অবলীলায় খুশি করে দিচ্ছিল একই কথা বলে-
‘ আপনার একদিন প্রচুর টাকা-পয়সা হবে।’
প্রতিবারই তার টিনের কৌটায় জমা হচ্ছিলএক টাকা করে।
স্কুলের টিফিনের জন্য মার দেওয়া এক টাকার নোটটার মায়া ত্যাগ করে
এদিক ওদিক তাকিয়ে
অনেকটা লজ্জা নিয়ে দু’হাত বাড়িয়ে জানতে চেয়েছিলাম,
‘আমি কি পালাতে পারবো?’
জ্যোতিষী চমকে গিয়ে কিছু সময় ধরে আমার হাতের রেখা দেখল আতশ কাঁচের নিচে ফেলে;
হাত থেকে তুলে সেই আতশ কাঁচ
আমার চোখ বরাবর ধরে রাখল কিছুক্ষণ।
একসময় প্রচণ্ড আকুলতা নিয়ে খুব নিচু স্বরে বললো,
‘বালক,
তুমি জন্মের পরই পালিয়ে গেছ,
তুমি কখনোই তোমার মাঝে ছিলে না।’
আমি সেদিন আর স্কুলে যাইনি,
সারাদিন এদিক ওদিক রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছিলাম পলাতক আমাকে খুঁজতে।
তারপর থেকেই সারাজীবনই পালিয়ে যাওয়া আমাকেই খুঁজছি-
এমন কোথায়ও নেই যেখানে খুঁজিনি আমাকে!
জোনাকির আলোতে পুড়ে যাওয়া আকাশে,
স্বচ্ছ ‌অথবা নষ্ট হয়ে যাওয়া পুকুর জলে,
ভেঙে যাওয়া কাঁচের টুকরাতে,
একটি প্রাচীন বৃক্ষের দীর্ঘ বিষণ্ন ছায়াতে,
রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া মরচে পড়া এক আধুলিতে,
অপরিচিত বারান্দায় বাতাসে দুলতে দুলতে থাকা কোনো এক লাল ওড়নাতে,
আকাশে উড়তে থাকা ভয়ার্ত কাকের ডানায়,
সমুদ্রের পারে এলোমেলো ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা
হঠাৎ দেখা অজানা এক নারীর বাদামি চোখে,
প্রিয় নারীর অভিমানে,
দাদার কবরের মাটির গন্ধে,
বুকের ভিতরে দাবড়ানো না লেখা কবিতার প্রতিটি শব্দে,
অসংসারী হয়ে যাওয়ার প্রতিটি ইচ্ছেতে,
মার শাড়ির আঁচলে,
বাবার জায়নামাজে।
নিজেকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে
প্রচন্ড ক্রোধে নিজেরই শরীরের ছায়াকে কতবার যে গলাচেপে ধরেছি,
তবুও পাইনি আমার খোঁজ।
আমার বন্ধু বাপ্পাদত্ত দেখা হলেই বলবে,
‘খুঁজতে থাক নিজেকে
পেয়েও যেতে পারিস একদিন,
আর যদি কোনোদিনই খুঁজে না পাস নিজেকে,
তবে তুই নির্ঘাত একদিন তুই কবি হবি
না হয় সন্ন্যাসী ।’

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com