তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ১৭
মেলার জায়গায় চলে আসলো সবাই। জান্নাত রাতুলের হাত ধরে টেনে মেলার ভেতর ঢুকে পড়লো৷ রাজিব নেহার হাত ধরে অন্যপাশে চলে গেলো৷ মিহু মিথিলা একটা দোকানে দাঁড়ালো। বেচারা মেহেরাব জান্নাতের মেয়েকে কোলে নিয়ে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । কি আর করবে মেহেরাব মারিয়ামের দিকে তাকিয়ে
- আমি যদি বিয়ে করতাম তোর মতো একটা বাচ্চা থাকতো আমার । কিন্তু কপাল আমার খারাপ আমার। ঠিক সময়ে বিয়ে টা করতে পারলাম না। এখনো পড়াশোনা করতে হচ্ছে। এই দুঃখ কাকে বলি বল।
তামান্না কোচিং শেষে বাইরে বেরিয়ে হাটার টাইমে একটা ছেলে তামান্নার পিছু নেই। কিছুদূর যেতে আরো দুটো ছেলে। তামান্নার সেদিকে খেয়াল নেই। নিজের মতো করে হেঁটে যাচ্ছে। তামান্নাকে যে ফলো করছে তামান্না তা জানে না। হঠাৎ করে একটা ছেলে বললো
- মামা তোর পছন্দ আছে বলতে হয়। যেয়ে বলে দি।
- এক্ষুনি বলতে হবে না। আগে ওকে বুঝায় আমি ওকে পছন্দ করি।
আরেক জন বললো
- রিপন শুভ কাজে দেরি করতে নেই জানিস তো।
-কি করবি তুই শিপন।
- সরাসরি বলে দিবো তুই ওকে পছন্দ করিস।
- ও যদি না বলে
- না বলবে কি ইচ্ছার কথা।
- আগে ওকে বোঝায় আমি ওকে পছন্দ করি তারপর না হয় বলবো।
- তোর বুদ্ধি তে কিছু হবে না।
শিপন রিপনকে নিয়ে হেটে তামান্নার সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। তামান্না থমকে যেয়ে চমকে উঠলো। শিপন বললো
- আপনার সাথে একটা কথা ছিলো।
- আমি অচেনা মানুষদের সাথে কথা বলি না।
তামান্না পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। রিপন দাঁড়িয়ে আছে। শিপন তামান্নার পাশে হাটছে আর বলছে
- সমস্যা নেই আমরা চেনা পরিচিত হয়ে যাবো।
- আমার কোনো ইচ্ছা নেই।
তামান্না দ্রুত যেয়ে রিকশায় উঠে পড়লো। রিক্সা চলে গেলো। শিপন দাঁড়িয়ে থাকলো
মেধা খাবার অর্ডার করলো। ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেলো। নাহিদ মেধার দিকে তাকিয়ে আছে। মেধা লক্ষ্য করে বললো
- কি দেখছো এতো?
- তোমাকে।
মেধা কিছুটা লজ্জা পেয়ে
- আমাকে এতো কি দেখার আছে।
- তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। চোখ ফেরানো সম্ভব না।
মেধা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। আস্তে করে বললো
- এখন খেয়ে নাও। বিয়ের পর যত ইচ্ছা দেইখো।
- তা তো দেখবোই। কিন্তু এখন তোমার উপর থেকে চোখ সরানোর সাধ্য আমার নেই।
মেধার লজ্জার মাত্রা বেশি হয়ে গেলো। মেধা এবার মুখে খাবার তুলতে পারছে না। নাহিদ বললো
- হয়েছে এতো লজ্জা পেতে হবে না। মাথা উঁচু করো
মেধার চোখে মুখে হাসি। নাহিদ নিজে হাতে মেধাকে খাইয়ে দিচ্ছে।
জান্নাত রাতুলকে দিয়ে এইটা ঐটা কিনিয়ে নিচ্ছে। রাজিব নিজের পছন্দ মতো নেহাকে কিনে দিচ্ছে। নেহা তা পেয়ে খুব খুশি। মিহু মিথিলা দোকানে চুড়ি দেখছে। আস্তে করে বললো
- এবারের মেলায় তারা নেই। থাকলে কতো ভালো হতো।
মিহু আস্তে করে
- তুমি ঠিক বলেছো। এবার আর এই ভালোটা হয়তো নেই।
মিহু মিথিলার মন খারাপ হয়ে গেলো। দুজনের চুড়ি রেখে পিছন ঘুরতেই অবাক হয়ে গেলো। মুহুর্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো । হ্যা রাশেদ আর সজীব দাড়িয়ে আছে। মিহু মিথিলা দুজনে দুজনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে
মিথিলা রাশেদকে বললো
- তুমি
মিহু সজীবকে বললো
- তুমি হঠাৎ করে এখানে কি ভাবে খবর এলে
মিথিলা রাশেদ কে বললো
- তোমার না কাজ আছে
- ছুটি দিয়ে দিছে তাই তো চলে এলাম৷ যখন জানলাম মেলা তখন আর দেরি করি কিভাবে।
- আমাকে খবর দাও নি কেন?
- আমরা তো তাই জানি না।
- চলো।
সজীব মিহুকে নিয়ে এক পাশে গেলো। রাশেদ মিথিলাকে নিয়ে গেলো। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরাব আর কোলে মারিয়াম। মেহেরাব মারিয়ামের গালে চুমু দিয়ে
- চলো আমরা দুজনে ও কিছু কিনি। আমরা কি খালি হাতে যাবো নাকি। মেহেরাব মারিয়ামকে নিয়ে খেলনার দোকানের দিকে গেলো।
রিপন এসে শিপনকে বললো
- বলছিলাম না।
শিপন বললো
- মেয়েটার ডেমাগ বেশি।
- একবার শুধু লাইনে আনতে পারি ডেমাগ সব বের করে দিবো।
- তাহলে কি করবি।
- এই লিমন কাল বাইকে নিয়ে চলে আছিস।
- ঠিক আছে।
- আমি ও দেখবো আমার সাথে রিলেশন না করে থাকে কিভাবে।
- তুই মামা পারবি। তোর চয়েস আছে।
লিমন শিপন রিপন চলে গেলো।
তামান্নার মনের ভেতর ভয় কাজ করছে। মনে মনে ভাবছে মেহেরাব আমাকে পরীক্ষা করার জন্য এই ছেলেগুলোকে পাঠাইনি তো। আমি ওকে ভালোবাসি কি না এটা দেখার জন্য? না ও এমন ছেলেই না। মেহেরাবকে দেখলে মনের ভেতর কেমন একটা অনুভব হয়। না দেখলে কেমন জানি লাগে। এমনটা হচ্ছে কেন? এমন অদ্ভুত ঘটনা কখনো তো ঘটে নি।
***
রাশেদের দিকে মিথিলা হাত বাড়িয়ে দিলো। রাশেদ চুড়ি নিয়ে মিথিলার হাতে পড়িয়ে দিচ্ছে। সজীব মিহুর হাতের আঙ্গুলে আংটি পড়িয়ে দিলো। গলায় চেইন পড়িয়ে দিলো। খুব খুশি তারা। হাসিখুশি ভাবে তাদেরকে দেখছে। মিথিলা রাশেদকে বললো
- তুমি জানলে কি করে আমরা এখানে?
- সত্যি টা বলবো।
- হ্যা।
- মেহেরাব ফোন দিছিলো।
- ফোন দিয়ে
- তোমাদের মন খারাপ হয়ে গেছে। মুখটা কালো করে রেখেছো৷ তোমাদের মন ভালো করতে মুখে হাসি ফোটাতে চলে এসেছি।
- মেহেরাব বুঝলো কি করে?
- ওকে কি এখনো ছোট ভাবো নাকি। ও সবাইকে খুব করে বোঝে৷ বাচ্চা নেই বড় হয়েছে।
- হুম দেখতেই তো পাচ্ছি।
সবার কেনা কাটা শেষে গেইটের সামনে এসে দাঁড়ালো। কিন্তু মেহেরাব এখনো আসেনি রাশেদ সজীব জান্নাতকে দেখে অবাক হয়ে গেলো৷ রাশেদ জান্নাতকে বললো
- তুই কখন এসেছিস?
- গতকালকে ভাইয়া
- আমাকে তো জানালি না। কেমন আছিস ?
- ভালো আছি।
সজীব বললো
- তোর মেয়েকে আনিছ নি।
- এনেছি ।
- কই। দেখছি না তো৷
- মেহেরাবের কাছে।
মেহেরাবকে সবাই খুঁজছে। চোখগুলো চারপাশ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। কিছুক্ষণ পর মেহেরাব এসে সামনে দাঁড়িয়ে
- তোমাদের সবার কেনা কাটা হয়ে গেছে।
রাশেদ বললো
- তুই কই গেছিলি।
- ঐ ভেতরে৷
- একা একা আসছোস এখানে।
- কি করবো? তোমরা তো যে যার মতো কাপল। আমি সিঙ্গেল। তাই আর কি করবো আমার মেয়েটাকে নিয়ে ঘুরে দেখলাম। আর কি করবো?
- তোর মেয়ে তাই না।
- তা নই তো কি? এই জান্নাত রাতুল মেয়ের জন্য কি কিনেছিস?
- কিছু না।
- ভাইয়া ভাবি তোমরা
সবাই জিভে কামড় দিলো। মেহেরাব হেসে দিয়ে
- জানতাম তোমরা যে যার মতো বিজি । নিজেদের টা কেনার জন্য ব্যস্ত অথচ মেয়ের কথা মনে নেই। আমার মেয়েকে আমি কিনে দিবো।
মিথিলা মেহেরাবের কান ধরে
- খুব বেশি ভাব বেড়েছে তাই না।
- তোমরা কি আর আমার কষ্ট বুঝবে৷
- পড়াশোনাটা শেষ করে নাও৷তারপর সব বুঝবো৷
- আজ আমার বিয়ে হলে বাচ্চা হয়ে যেতো। জান্নাত রাতুল যখন বিয়ে করলো তখন কেন যে করলাম না।
- বাসায় চলো তোমাকে করাবো৷
মেধা খাওয়া শেষে নাহিদের সাথে বের হলো রেস্টুরেন্ট থেকে। বাইকে মেধাকে নিয়ে চলে গেলো৷ মেধা পিছন থেকে নাহিদ জরিয়ে ধরে বসে আছে। নাহিদ মনের আনন্দে বাইক চালাচ্ছে।
মেধা বললো
- আমার রাতের শহরটা খুব ভালো লাগে।
- আজ তোমাকে নিয়ে রাতের শহরটা দেখাবো৷
- হ্যা আমি এটাই চেয়েছিলাম। প্রিয় মানুষটার সাথে একসাথে রাতে শহরে ঘুরবো। আজ পূর্ণ হলো।
মেলার গেইট দিয়ে রাস্তার এ পাশে এসে রাশেদ বললো
- তাহলে তোমরা যাও। আমরা কাজে যায় তবে।
- ঠিক আছে।
মিথিলা রাশেদকে জরিয়ে ধরলো। মিহু সজীবকে জরিয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিলো.......
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com