Breaking News

অবুজ মেয়ে যখন বউ । পর্ব - ০১

বাসর ঘরে বউয়ের মুখ থেকে ভাইয়া নাম শোনার অভিজ্ঞতা এই জীবনে মনে হয় প্রথম আমিই করলাম। জানিনা আম্মু আমার মত স্টাইলিশ ছেলের জন্য এইরকম অবুঝ মেয়ে কোথা থেকে নিয়ে এসেছে?

আমি এখন বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
কিন্তু আমার জন্মদাত্রী মা আমার সাথে কিভাবে এই কাজটি করতে পারল আমি বুজলামনা।
কিন্তু আমার আম্মু আমাকে সানিয়া নামের এক অবুঝ মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছে।
আমার নাম লিমন আহমেদ।
আমার একটা ছোট বোন আছে যার নাম রিয়া আর সে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।
আমি পড়ালেখা শেষ করে একটা সফটওয়ার কোম্পানিতে সিনিয়র সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার
এর পোস্টে চাকরি করি। মোটামোটি আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী আমরা।
আম্মু আমাকে কয়েকদিন ধরে বিয়ের কথা বলছে কিন্তু আমি রাজি না বিয়ে করছে।।

কিন্তুু কি আর করার,, আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে আম্মুর পছন্দ মত মেয়েকে বিয়ে করে নিলাম।
আম্মু ছোট বেলা থেকে আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে তাই আম্মুর কথা ভেবে বিয়ে করে নিলাম।
আমি মেয়েটার মুখ পর্যন্ত এখনো দেখিনি।
আম্মুর মুখ থেকে শুনেছি মেয়েটা পড়ালেখা করেনা মানে ইন্টার ফাইনাল ইয়ার
পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। মেয়ে তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।
নাম তার সানিয়া। আম্মু তাকে তার বাচ্চাদের মত আচরনের জন্য পছন্দ করেছে।
আমিও বাধ্য ছেলের মত সানিয়াকে বিয়ে করে নিলাম চুপিচুপি।
আমার অফিসের কেউ জানেনা আমার বিয়ের কথা।
আমি বাসরঘরে ঢুকে দেখি সানিয়া হাটু পর্যন্ত একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
আমার উপস্থিতি টের পেয়ে সে খাট থেকে নামল। খাট থেকে নেমে আমাকে সালাম করল।
আমি : এই এই কি করছো?
সানিয়া : কেন ভাইয়া আমার শাশুড়িআম্মা বলেছে যে এই ঘরে যে প্রথমে আসবে তখন তাকে সালাম করতে হবে।
আমি সানিয়ার মুখ থেকে ভাইয়া নামটা শুনে আমার মাথা ঘুড়ে গেল। তাই আমি রাগান্বিত কন্ঠে বললাম
আমি : এই মেয়ে কে তোমার ভাইয়া হু?
সানিয়া ভয় পেয়ে বলল,

সানিয়া : কেনো ভাইয়া আমি আপনাকে ভাইয়া বলেছি। আপনি তো আমার গুরুজন আর গুরুজনকে সবসময় ভাইয়া বলে সম্বোধন করতে হয়। এইটুকু ভদ্রতা আমার আছে হু।
সানিয়ার কথা শুনে আমার এখন আম্মুকে চিল্লিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,
আমি : আম্মু তুমি আমাকে কোন মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছো এ তো পুরাই মেন্টাল। (মনে মনে)
সানিয়া : কি হলো ভাইয়া বলেন?
আমি : দেখো মেয়ে তুমি চুপ করো এখন,, আর আমি এখন ঘুমাবো, আমার ঘুম পাচ্ছে।
সানিয়া : আচ্ছা আপনি কি আমার বর?
আমি : হুম(বিরক্তকর কন্ঠে)
সানিয়া : আপনি তো আমার গুরুজন তাহলে আমি আপনাকে ভাইয়া বলব নাকি বর বলব?
আমি : ওহহহ খোদা উঠিয়ে নেও আমাকে, আমার এই দুনিয়াটা আর ভালো লাগছেনা (মনে মনে)
সানিয়া : কি হলো বলেন?

আমি : তুমি আমাকে ভাইয়া বর বলে ডেকো,, আর আমার ঘুম পাচ্ছে এখন
কথাটা বলেই আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
সানিয়া : এই এই আমার বিছানায় আপনি কেনো ঘুমাচ্ছেন?
আমি : তো কথায় ঘুমাবো আর এটা আমার বিছানা।
সানিয়া : কোনো ভাবেই না, এটা আমার বিছানা। রিয়া আপু আমাকে বলেছে এটা আমার,, আর আমার জামাইয়ের বিছানা।
আমি : ঠিকই তো বলেছে এটা আমার আর তোমার বিছানা।
সানিয়া : কিন্তু আপনি তো আমার ভাইয়া বর, আমার জামাই না ।
এখন আমার বলতে মনে চাচ্ছে
আমি : ওহহ ভাই মুঝে মারো কোই মুঝে মারো।
(মনে মনে)
আমি : এত কইফিয়ত দিতে পারবনা আমার সাথে ঘুমালে ঘুমাও নাহলে আমি ঘুমালাম।
(একটু রাগান্বিত স্বরে বললাম)
সানিয়া : কিন্তু আমার আম্মু আব্বু বলেছে যে কোনো পর পুরুষের সাথে না ঘুমাতে।
আমি : এই মেয়ে তোমার কি একটুও জ্ঞান বুদ্ধি নেই যে কে পর পুরুষ আর কে জামাই?
সানিয়া : হ্যা হ্যা আপনি আমাকে বকছেন কেনো শাশুড়ি আম্মার কাছে বিচার দিব
(কান্না করতে লাগল)

লিমন: এই মেয়ে কান্না থামাও বলছি।
(ধমকের সুরে বললাম)
আমার ধমক শুনে সানিয়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল।
লিমন : প্লিজ ডোন্ট ক্রাই। আমি মাফ চাচ্ছি। দয়া করে কান্না থামাও ।
সানিয়া কান্না থামিয়ে বলল,
সানিয়া : ঠিক আছে কান্না থামাবো কিন্তু আমাকে বলেন আপনি আমাকে আর বক বেন না।
লিমন : ঠিক আছে আর বকবনা এখন লক্ষী মেয়ের মত ঘুমাও।
সানিয়া বিছানায় উঠে আমার পাশে শুয়ে পড়ল আর মাঝখানে কোলবালিশ রাখল।
লিমন : কোলবালিশ কেন রাখলে?
সানিয়া : ওহহ আপনি জানেননা যে জামাই বউ এর মধ্যে ঝগড়া হলে তারা তাদের মাঝখানে কোলবালিশ রাখে? আমার আম্মু আব্বুর ঝগড়া হলে তারা তাদের মাঝখানে কোলবালিশ রাখত আমি দেখেছি।
লিমন : তা আমাদের মধ্যে কখন ঝগড়া হলো?

সানিয়া : আপনার কত ভোলা মন। একটু আগেই না ঝগড়া হলো আমাদের?
এখন আপনারাই বলুন আমি একে নিয়ে কি করব? আমি কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম ভাঙতে দেখলাম সানিয়া আমার বুকের উপর শুয়ে আছে।
আমাদের মাঝখানের কোলবালিশ খাটের নিচে পড়ে আছে।
গতকাল মেয়েটাকে ঠিকভাবে দেখলাম না। কিন্তু মেয়েটার চেহারায় এক রকম মায়া আছে।
সানিয়ার এইরকম মায়ায় ভরা মুখ দেখে অনেক ভালোই লাগলো।
মেয়েটা বাচ্চাদের মত জড়িয়ে আছে আমাকে।
এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে যেন আমি কোনো জায়গায় পালিয়ে যাবো।
আমি সানিয়াকে কোনোভাবে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
তারপর রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলে গেলাম। আম্মু আর রিয়া আগে থেকেই ব্রেকফাস্ট করছিল।
রিয়া : গুড মর্নিং ভাইয়া।
লিমন : হেব এ বেড মর্নিং সিস।
রিয়া : ভাইয়া তুই সবসময় আমার কথার উল্টাপাল্টা উত্তর দেছ কেনো?
আম্মু : চুপ থাক তোরা সকাল বেলায় এইরকম ভাঙা রেডিওর মত বাজার শুরু করছত।
বউমা কোথায়?
লিমন : জাহান্নামে ।

আম্মু : এইরকম করে বলছিস কেনো? আমি জানি তোর সানিয়াকে মেনে নিতে সময় লাগবে।
আমি তো তোকে বলেছিলাম যে তোর পছন্দের কোনো মেয়ে থাকলে বল কিন্তু তুই বললিনা
তাই এখন কোনো কিছুই হবেনা। এত লক্ষী একটা মেয়ে সেই তোর জন্য যোগ্য।
রিয়া : ভাইয়া তোকে দেখেতো মনে হচ্ছে এখনো গোসল করিস নাই।
লিমন : এই গাধী তুই কি কোনোদিন দেখেছিস যে আমি সকাল বেলায় গোসল করি?
রিয়া : প্রতিদিনের সাথে তো আজকের দিনটা আলাদা ব্রো।
কথাটা বলেই রিয়া মুচকি হাসা শুরু করল।
লিমন : তোর এই বকবকানি বন্ধ কর আর আম্মু খেতে দাও আমাকে অফিসে যেতে হবে ।
আম্মু : গতকাল বিয়ে হলো আর আজকেই অফিসে যাবি?
লিমন : হুম আজকে যেতে হবে কারন আজকে একটা ইম্পোরটেন্ট মিটিং আছে।
আম্মু : ঠিক আছে যাবি কিন্তু আগে বউমাকে নিয়ে তো আয়।
লিমন : আমি কেন নিয়ে আসবো তার ঘুম ভাংলে সে একাই আসবে।

আম্মু : যা বলছি বউমাকে ডেকে নিয়ে আয়।
মায়ের কথা শুনে আর বসে থাকতে পারলামনা।
চলে গেলাম নিজের রুমে আর গিয়ে দেখি সানিয়া ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে।
লিমন : এখানে এভাবে বসে আছো কেনো, চলো খেতে আসো
সানিয়া : আসলে আমার আম্মু বলেছিল যে জামাইয়ের কথা না শুনে একটি কাজও করতে তাই বসে আছি।
লিমন : ঠিক আছে এখন চলো আম্মু তোমার জন্য বসে আছে।
তারপর সানিয়াকে নিয়ে চলে গেলাম ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গেলাম৷
আম্মু : তা বউমা ঘুম কেমন হলো?
সানিয়া : ভালো শাশুড়ি আম্মা।
আম্মু : আমাকে আজকে থেকে মা বলে ডাকবা।
সানিয়া : ঠিক আছে মা।

লিমন : এখন বড়দের মত করেই কথা বলছে কিন্তু গতকাল তো একদম অবুঝদের মত কথা বলেছিল।
আচ্ছা সে কি সত্যিই অবুঝ নাকি অবুঝ হওয়ার ঢং করেছিল আমার সামনে? (মনে মনে)
রিয়া : কি হলো ভাইয়া কি ভাবছিস?
লিমন : না কিছু না, আম্মু আমার অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম।
আম্মু : আজকে কি না গেলেই হয় না?
লিমন : না হয়না আমাকে যেতে হবে।
আম্মু : ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসবি।
লিমন : ঠিক আছে।
আমি আমার গাড়ি বের করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আম্মু তো আর জানেনা যে আমার অফিসের কেউ জানেনা আমি বিয়ে করেছি।
আর আমি গতকাল অসুস্থতার অজুহাত ধরে ছুটি নিয়েছি।
আমি অফিসের পার্কিং এ গাড়ি পার্ক করে অফিসে চলে গেলাম।
বিল্ডিং মোট ৮ তলা আর আমি কাজ করি থার্ড ফ্লোরে।

আমি লিফট দিয়ে থার্ড ফ্লোরে চলে গেলাম। সবার সাথে দেখা করে আমি আমার কেবিনে চলে গেলাম।
হঠাৎ আমার কেবিনে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাহুল আসল।
রাহুল : কিরে দোস্ত কি খবর মানে তোর শরীর এখন ঠিক আছে?
লিমন : কি আর খবর হবে দোস্ত ভালোই আছি। তোর কি খবর?
রাহুল : আমি তো বিন্দাস আছি। ওহহ মনে পড়ল,,,বস তোকে ডেকেছে।
লিমন : আমাকে কেন ডাকবে আমি তো আমার ছুটির এপ্লিকেশন সারের ইমেইল এ পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
রাহুল : আমি কি করে বলব, হয়ত কোনো দরকার আছে তোর সাথে?
লিমন : ঠিক আছে আমি দেখা করে আসি তুই তোর কেবিনে গিয়ে কাজ কর
রাহুল : ঠিক আছে।
আমি বসের কেবিনে নক করলাম ।
লিমন : মে আই কাম ইন সার?
কেবিনের ভিতর থেকে ইয়েস কাম ইন
আমি সারের কেবিনে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমি পুরো ৪০০০ বোল্টে শক্ড খেলাম ৷

চলবে..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com