অহংকারী বউ । পর্ব - ০৩
বিকেল ৪.০০ টার সময় নীলার বাসার সামনে পৌছে যায় আবির।
নীলাদের বাসার সামনে পৌছে একদম হা হয়ে যায় আবির। বিশাল বড় নীলাদের বাড়ি আর গেইট দিয়ে ঢুকতেই ৪, ৫ টা প্রাইভেট গাড়ি দেখতে পায় আবির। বিশাল বড় দোতালা বাসা, বাসার সামনে অনেকটা বাগানের মতো করে ফুলগাছ লাগানো। আবির বেশ কিছুক্ষণ চারিদিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে। হঠাৎ নীলার ডাকে ধ্যান ভাঙে আবিরের।
নীলাঃ আবির স্যার আপনি এসেছেন? আসুন আসুন ভিতরে আসুন।
নীলার ডাকে পিছনে ফেরে আবির।
নীলা কালো রঙের একটা ছালোয়ার কামিজ পড়ে হালকা সাজে সেজে আছে চুলগুলো ছেড়ে রাখা।
অনেক সুন্দর দেখতে লাগছে নীলাকে। আবির নীলার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে নেয়। তারপর নীলার সাথে ভিতরে চলে যায় পড়ানোর জন্যে।
নীলা বেশ ভালো ভাবেই পড়তে থাকে আবিরের কাছে।
ওকে দেখে বা ওর কথা শুনে মনেই হয়না যে ও এত বড় লোক পরিবারের মেয়ে।
ড্রেসাপও পড়ে একদম সাদাসিধা।
নীলার এমন ভালো আচরন আর অহংকার মুক্ত দেখে আবিরের মনে একটা ভালো লাগা
সৃষ্টি হয় নীলার জন্যে। পড়ানো ছাড়াও নীলা দিনে ৪ থেকে ৫ বার ফোন করে কথা বলে
আবিরের সাথে। এমনকি অনেক কেয়ারও করতে থাকে আবিরের।
মাস শেষে ১০ হাজার টাকা তুলে দেয় আবিরের হাতে। আবির নিজে থেকে কখনো টাকা চায় না।
কিন্তু নীলা এমন ভাব করে যেনো সে আবিরের কষ্ট কমানোর জন্যে এমন করছে।
এভাবেই কেটে যায় ৩ মাস। আবির আর নীলা এখন অনেকটাই কাছাকাছি চলে আসে।
একদিন ছুটির দিনে নীলা আবিরকে ফোন করে ওর বাসায় ডাকে।
আবিরও খুশি হয়ে চলে যায় নীলার বাসায়। আবিরকে অবাক করে দিয়ে নীলা
খাটি বাঙালী মেয়েদের মতো করে শাড়ি পড়ে হালকা সাজে সামনে আসে আবিরের।
আবির নীলাকে দেখে একদম পাথড় হয়ে যায়। এমনিতেই আবিরের মাঝে ভাললাগা
কাজ করতো নীলার জন্যে কিন্তু সেই ভাললাগাটা যে কখন ভালবাসা হয়ে যায় আবির জানতই না।
লাল পাইরের সাদা শাড়ি সুন্দর করে গ্রামের মতো করে পড়েছে নীলা।
সাথে কানে বড় বড় এক জোড়া ঝুমকা, চোখে গাড়ো করে কাজল,
কপালে ছোট্ট একটি লাল টিপ, গলায় লাল পাথড়ের নেকলেস,
চুলগুলো খোপা করে তাতে লাল টকটকে গোলাপ গুজে রেখেছে নীলা।
ঠোটে পড়েছে গাড়ো করে লাল লিপস্টিক, হাত ভর্তি লাল সাদা মিক্সড চুরি।
সব মিলিয়ে একদম অসাধারন দেখতে লাগছে ওকে।
আবির নীলাকে এমন সাজে দেখে নিজের জায়গাতেই যেনো জমে গেছে।
নীলা গুটিগুটি পায়ে আবিরের সামনে এসে দাড়ায়।
আবির এখনো যেনো কোনো ঘোরের মাঝে রয়েছে।
নীলা আবিরের সামনে হাতের চুরিগুলো বাজিয়ে বলে ওঠে
নীলাঃ কি হলো আবির কিছু বলবে না আমায়? শুধু কি হা করে দেখেই যাবে?
আমার বুঝি লজ্জা করছে না?
নীলার কথায় ধ্যান ভাঙে আবিরের।
আবির বেশ কিছুটা লজ্জা পেয়ে নীলার দিক থেকে চোখ নামিয়ে নেয়।
তারপর হালকা কেশে বলে
আবিরঃ আমায় তুমি ডেকেছো কেনো নীলা?
আর তুমি আমায় স্যার না ডেকে নাম ধরে ডাকছো কেনো তাও আবার তুমি তুমি করে?
আবিরের কথায় নীলা লজ্জা পাওয়ার ভাব করে বলে
নীলাঃ তুমি কি সত্যিই বুঝতে পারছো না আবির?
তাহলে শোনো আমি তোমায় ভালবাসি আবির। কলেজে প্রথম
দেখাতেই তোমার প্রেমে পরে যাই আমি। আমার মন প্রান আমার
অস্তিত্ব জুরে শুধু তোমারই বসবাস। প্লিজ আবির আমায় ফিরিয়ে দিও না।
আজকের এই সাজ আমি শুধু তোমার জন্যে আমার আবিরের জন্যে সেজেছি।
প্লিজ আবির আমার ভালবাসা গ্রহন করো।
তুমি আমায় গ্রহন না করলে যে আমার আত্বহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
নীলার কথা শুনে আবির মুখটা শুকিয়ে যায়।
কারন আবিরও যে এ কদিনে নীলাকে ভালবেসে ফেলেছে।
আবিরঃ এ তুমি কি বলছো নীলা। এটা হয়না। কোথায় তুমি আর কোথায় আমি।
আমি সামান্য একটা রিক্সাওয়ালার ছেলে।
আর তুমি এত বড় লোকের একমাত্র মেয়ে আমার সাথে তোমায় কিছুতেই যায় না নীলা।
এটা অসম্ভব।
আবিরের কথা শুনে চট করে আবিরকে জরিয়ে ধরে নীলা।
নীলার এমন আচরনে অবাক হয়ে যায় আবির।
নীলাঃ প্লিজ আবির এভাবে বোলোনা। তোমার জন্যে আমি সব করতে পারি।
আমি আমার সব কিছু ছেড়ে তোমার সাথে চলে যাবো।
দরকার হলে এক বেলা খাবো তো এক বেলা না খেয়ে থাকবো।
তবুও আমি তোমায় চাই আবির। নইলে আমি বাচতে পারবো না তোমায় ছাড়া মরে যাবো আমি।
নীলার কথা শুনে আর না করতে পারেনা আবির।
আবিরও নীলাকে বুকে জরিয়ে নেয়। তখনও আবির জানতো না
তার জন্যে নীলা ঠিক কি প্ল্যান করে রেখেছে।
এভাবেই কেটে যায় আরো ১০ দিন।এই ১০ দিনে নীলা পুরোপুরি
ভাবে আবিরের বিশ্বাস জিতে নেয়। নীলা আবিরকে বলে কলেজের মাঠে
সবার সামনে ওকে প্রপোজ করতে। আবিরও ভালবাসা আর বিশ্বাসের কারনে রাজি হয়ে যায়।
সেদিন ছিলো কলেজে নবিনবরন উৎসব।
আবির লাল টকটকে একগুচ্ছ গোলাপ হাতে কলেজে সবার সামনে নীলার সামনে গিয়ে দাড়ায়।
তারপর হাটুগেরে বসে নীলার সামনে। সকলের সামনে নীলাকে প্রপোজ করে আবির।
আবিরের মনে ছিলো অফুরন্ত ভালবাসা আর বিশ্বাস।
কিন্তু আবিরের সেই বিশ্বাস এক নিমিশে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় নীলা।
আবিরের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে জোরে ছুড়ে মারে আবিরের মুখে।
নীলাঃ তোর সাহস কি করে হয় একজন রিক্সাওয়ালার ছেলে হয়ে আমায়
এই নীলাকে প্রপোজ করার। আমার পায়ের জুতার যে দাম সে দামও নাই তোর।
আর তুই কিনা এসেছিস এই নীলাকে প্রপোজ করতে। এত বড় বুকের পাটা তোর?
নীলার এমন আচরনে আবিরের পায়ের নিচের মাটি যেনো সরে যায়।
নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না আবির।
আবিরঃ এসব তুমি কি বলছো নীলা। তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে।
কি হয়েছে জান তুমি এমন কোনো করছো?
নীলাঃ হাউ ডেয়ার ইউ, ইউ ইডিয়ট। তোর সাহস হয় কি করে আমার
সাথে তুমি করে কথা বলার আমার নাম ধরে ডাকার।
তোর চাইতে আমার বাসার চাকর চাকরানিও বেশি বড়লোক আর তুই কিনা এসেছিস
আমায় প্রপোজ করতে।
নীলা কথা গুলো বলতে বলতে সেখানে এসে হাজির হয় চার পাঁচজন পুলিশের লোক।
পুলিশকে দেখে নীলা বলে
নীলাঃ স্যার আপনারা এসেছেন, আমিই আপনাদের ফোন করে ছিলাম।
এই যে গেও ছেলেটাকে দেখছেন। এই ছেলেটা আমার দামী গলার হাড় চুরি করেছে।
আপনি একে গ্রেফতার করুন।ওর পকেট চেক করলে আপনারা হাড়টা পেয়ে যাবেন।
নীলার কথায় যেনো মাথায় আকাশ ভেঙে পরে আবিরের।
কারন নীলা যখন আবিরকে বলে কলেজের মাঠে ওকে প্রপোজ করার জন্যে তখন নীলা
একটা দামি হাড় আবিরকে দিয়ে বলে ওটা যেনো
আবির নিজের কাছে রাখে কলেজে আসলে নিয়ে নিবে।
আবির তখন ভাবতেও পারেনি নীলা ওর সাথে এমনটা করবে।
পুলিশের লোকেরা আবিরের পকেট থেকে হাড়টা পায় আর
আবিরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আবিরের চোখ থেকে টপটপ
করে পানি পরছিলো। বিশ্বাস ভাঙার কষ্টটা যে কতটা বেশি আবির সেটা বুঝতে পেরেছিলো।
কিন্তু কলেজের মাঠ জুরে তখন পরেছিলো হাসাহাসির রোল।
জেলখানাতে থাকা অবস্থায় নীলা আসে আবিরের কাছে। নীলাকে দেখে আবির
ভেবেছিলো নীলা হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরে ওকে ছাড়াতে এসেছে।
কিন্তু নীলা সেদিন বলে ও আবিরের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে বান্ধবীদের সাথে
বাজি ধরে আবিরের সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে। আবির সেদিন একটা কথাও বলেনি নীলাকে।
শুধু ঘৃনা ভড়া অসহায় চোখে তাকিয়ে ছিলো নীলার দিকে।
নীলা চলে যাওয়ার একটু পরেই আবিরের কাছে খবর আসে,
আবির জেলখানায় শুনে ওর বাবা হার্টএটাক করে মারা গেছেন।
আবির প্রায় পাগল হয়ে যায় ওর বাবার মৃত্যুর শোকে।
একমাত্র নীলার কারনে ওর বাবার স্বপ্ন পুরোন করতে পারেনি ও।
বাবাকে হাড়াতে হয়েছিলো সেদিন।
সেদিন আবির মনে মনে প্রমিজ করে নীলার সব অহংকার ও চুরমার করে দিবে।
নীলাকে ও একজন প্রকৃত বাঙালী বউ বানাবে।
বেলকুনিতে দাড়িয়ে অতিতের সেই কথাগুলো নিয়ে ভাবছিলো আবির।
আবিরের চোখ দুটো বার বার ভিজে যাচ্ছিলো অসম্ভব কষ্টে।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com