Breaking News

অহংকারী বউ । পর্ব - ০১

হাতের ওপর হাত বুলাচ্ছে আর বসে বসে কান্না করছে নীলা।

আর নীলার ঠিক সামনেই লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে নীলার সদ্য বিবাহিত বর আবির।

আজকে আবির আর নীলার বাসার রাত।

আর বাসর রাতেই বরের হাতের লাঠির বারি খেয়ে বসে বসে কাঁদছে নীলা।

কাঁদতে কাঁদতে নীলা মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো।

নীলাঃ আমি ড্যাডির কাছে যাবো। তোকে আমি পুলিশে দিবো।
তোর এত বড় সাহস তুই এই নীলার গায়ে হাত তুলিশ। আমি তোর নামে মামলা করবো।
নীলার কথা শুনেই আবির হাতের লাঠিটা দিয়ে আবারও সজোরে একটা বারি মেরে দিলো নীলার পিঠে।
আবিরঃ ঐ আমি তোমার স্বামী। তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে তুই তুই করে কথা বলার। আপনি করে বলো নইলে বাসর রাতে আমার আদর খাওয়ার বদলে মাইর খাইতে হবে তোমার।
নীলাঃ এ্যা এ্যা কিসের বাসর রাত কিসের আদর।
আমি তোর মতো ছোট লোককে নিজের বর হিসাবে কখনোই মানবো না।
আমি ড্যাডির কাছে যাবো। এ্যা এ্যা
আবিরঃ চুপ একদম চুপ, ভালোয় ভালোয় বলছি একদম চুপ করো আর ভালো বউ এর মতো আমার কথা শোনো নইলে লাঠির বারি একটাও নিচে পরবে না।
আবিরের কথা শুনে নীলার কান্নার আওয়াজ যেনো আরো বেরে গেলো।
এর আগে কখনোই কারো হাতের মাইর খায়নি নীলা।
তবে বাসর রাতেই যে তাকে বরের হাতের মাইর খাইতে হবে এটা তার ভাবনার বাইরে ছিলো।

৩০ মিনিট আগে
লাল টকটকে রঙের পাথড়ের কারুকাজ করা লম্বা ল্যাহেঙ্গা আর লাল ওড়না পরে
বধুর সাজে বসে আছে নীলা। আজকে সন্ধাতেই বিয়ে হয়েছে তার।
ড্যাডির মুখে শুনেছে অনেক বড় লোক ঘরের ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে তার।
ছেলেটাকে দেখতেও বেশ হ্যানসাম।
যদিও এগুলো সব ড্যাডির মুখেই শুনেছে নীলা ছেলেকে ও দেখেও নি একবার।

কারন ড্যাডির ওপর তার অগাত বিশ্বাস ছিলো।
সদ্য বিবাহিত বরকে নিয়ে কতশত স্বপ্ন আঁকছিল নীলা এতক্ষণ।
বিয়ের পর কোথায় হানিমুনে যাবে।
কোন ফাইভস্টার হোটেলে ক্যান্ডালাইট ডিনার কারবে প্রতিদিন।
কোন শপিংমল থেকে দামি দামি শপিং করবে এসব নিয়ে আকাশ পাতাল ভাবছিলো নীলা।
হঠাৎ নীলার ভাবনায় ছেদ পরে দরজা খোলার শব্দে।
নীলা এমনিতে অন্য মেয়েদের মতো খুব একটা লজ্জা পায় না।
তবে বাসর রাত বলে কথা তাই না চাইলেও একটু লজ্জা চলেই আসে।
বরকে রুমে ঢুকতে দেখে মাথার ঘুমটাটা আরো একটু টেনে নিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে রইলো নীলা।
নীলার সদ্য বিবাহিত বর নীলার সামনে এসে দাড়িয়ে রাগি গলায় বললো
আবিরঃ বাসর ঘরে বর রুমে ঢুকলে সালাম দিতে হয় এটা কি তোমায় কেউ বলে দেয়নি নীলা?
আবিরের কন্ঠ শুনে হকচকিয়ে উঠে মাথার ঘুমটাটা সরিয়ে ফেলে নীলা।
কারন কন্ঠটা ওর খুব চেনা। বরের বেশে আবিরকে সামনে দেখে মাথায় যেনো
আকাশ ভেঙে পরে ওর। আবিরের মতো একজন গরিব ছোটলোকের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে
ভাবতেই যেনো পাগল পাগল লাগছে নীলার। নীলা দ্রুতো বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে অবাক হয়ে বললো

নীলাঃ আবির তুমি এখানে? আমার বর কোথায়? তুমি আমার বাসর ঘরে কি করছো?
আবিরঃ বাহ রে নিজের সদ্য বিবাহিত বরকে জিগ্যেস করছো যে সে তোমার বাসর ঘরে কি করছে? বলি বাসর ঘরে বর না থাকলে বাসর করবে কার সাথে শুনি? এখন সময় নষ্ট না করে আমায় সালাম করো জলদি।
নীলাঃ ওয়াট, তুমি আমার বর হতেই পারোনা। আমার তো বিয়ে হয়েছে বিশাল বড়লোকের ছেলের সাথে আর তুমি তো একজন ভিখেরি। বলো আমার বর কোথায় আমি আমার বরের কাছে যাবো।
আবিরঃ কবুল বলার সময় তুমি হয়তো বরের নামটা ঠিক করে শোনো নি নীলা তাই এমন আবোলতাবোল বকছো। তোমার বিয়ে কোনো বড় লোকের ছেলের সাথে নয় বরং আমার মতো এই ভিখেরির সাথেই হয়েছে।
নীলাঃ অসম্ভব এটা হতেই পারেনা। আমি মানিনা তোর মতো ভিখেরিকে আমার বর হিসাবে। আমি চলে যাবো এখনি এই মুহুর্তে আমি চলে যাবো এখান থেকে। ড্যাডি আমার সাথে এমনটা করতেই পারে না।
কথাগুলো বলেই দরজার দিকে পা বাড়ায় নীলা। সাথে সাথে রুমের এক কোনায় একটা লাঠি রাখা ছিলো সেটা হাতে নিয়ে নীলার হাতে বারি মেরে দেয় আবির। লাঠির বারি খেয়ে চিৎকার দিয়ে নিচে বসে পরে নীলা। (তার পরের ঘটনা তো প্রথমেই বলা হলো)

আবিরঃ ঐ ভাবে বসে বসে ন্যাকা কান্না না করে এখানে এসে আমার পা টিপো জলদি।
বিছানার ওপর শুয়ে পরে নীলার দিকে তাকিয়ে ওপরের কথাটা বললো আবির।
আবিরের কথা শুনে নীলা কাঁদতে কাঁদতে নাক টেনে টেনে বললো
নীলাঃ আমি পা টিপতে পারবো না। আমি ড্যাডির কাছে যাবো।
তোকে আমি পুলিশে দিবো তুই মিথ্যে বলে আমায় বিয়ে করেছিস।
তোকে আমি স্বামী বলে মানি না।

নীলার কথা শুনে লাঠিটা হাতে নিয়ে আবির রাগি গলায় বললো
আবিরঃ তবেরে দুইটা বারি খেয়ে পেট ভরেনি তাইনা। আরো কয়েকটা লাগাবো নাকি?
কথাটা বলেই বারি মারার জন্যে লাঠিটা উচু করে ধরলো আবির।
সাথে সাথে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নীলা চিৎকার করে বললো
নীলাঃ দিচ্ছি দিচ্ছি আমি পা টিপে দিচ্ছি আর মেরো না প্লিজ।
আবিরঃ এই তো আমার ভালো বউ। তাহলে আর বসে না থেকে এসো কাজে লেগে পরো।
কথাটা বলেই বিছানায় গিয়ে সটাং হয়ে শুয়ে পরলো আবির।
না চাওয়া সত্যেও বাদ্ধ হয়ে নাক টানতে টানতে আবিরের কাছে গিয়ে আবিরের পা টিপতে লাগলো নীলা।
পা টিপছে আর নাক টেনে টেনে কান্না করছে নীলা। সেদিকে আবিরের কোনো
খেয়াল নেই সে আরামে শুয়ে থেকে বউয়ের পা টিপে দেওয়ার মজা উপভোগ করছে। বেশ কিছুক্ষণ পা টেপার পর নীলার এক হাত ধরে হেচকা টান দিলো আবির।
আচমকা হাতে এমন টান পরায় তাল সামলাতে না পেরে আবিরের বুকে আছড়ে পরলো নীলা।
সাথে সাথে আবির নীলাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
আবিরঃ ঐ একদম নড়াচড়া করবা না আমি এখন ঘুমাবো।
নীলাঃ ঘুমাবি তো ঘুমানা আমাকে ছাড়। ব্যাটা ছোটলোক। আমি তোর সাথে ঘুমাবো না।
আবিরঃ লাঠিটা কি তাহলে আবার আনবো?
ভালোয় ভালোয় আমায় ঘুমোতে দাও আর নিজেও ঘুমাও নইলে সারারাত
ধরে না ঘুমিয়ে আমার পা টিপতে হবে আর লাঠির বারি খেতে হবে তোমার।
আবিরের কথা শুনে শব্দ করে কাঁদতে লাগলো নীলা।

নীলাঃ ও ড্যাডি গো আমায় এই ছোটলোকের কাছ থেকে নিয়ে যাও আমি এর সাথে থাকবো না।
আবিরঃ ঐ চুপ একদম চুপ। নইলে মাথার ওপর তুলে একটা আছাড় মারবো বলে দিলাম।
চুপ করে ঘুমাও বলছি কালকে আবার আমাদের আসল বাড়ি যেতে হবে তোমায়।
আবিরের কথা শুনে নাক টেনে ধরা গলায় নীলা বললো
নীলাঃ আসল বাড়ি মানে? এটা কার বাড়ি তাহলে?
আবিরঃ তোমার কি মনে হয় নীলা আমার মতো একজন গরিব মানুষের বাড়ি এটা হবে?
আরে এটা তো আমি একদিনের জন্যে ভাড়া নিয়েছি তোমায় বিয়ে করবো বলে।
কালকে তোমার আমার আসল বাড়িতে যাবো আমরা আমার কুড়ে ঘরে। এখন ঘুমাও তো।
আবিরের কথা শুনে নীলার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো।
ওর মতো এমন বড় লোকের একমাত্র মেয়ে কিনা কুড়ে ঘরে থাকবে।
ভাবতেই অবাক লাগছে নীলার।
কিন্তু লাঠির বাড়ি খাওয়ার ভয়ে কিছু বলারও সাহস পাচ্ছে না ও।
তাই মনে মনে বুদ্ধি করলো আবির ঘুমোলে ও চুপি চুপি উঠে পালিয়ে যাবে।
মনে মনে এসব ভেবে ঘুমিয়ে পরার ভান ধরলো নীলা।
আবিরও নীলাকে পরম যতনে বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

মাঝরাতে আস্তে করে চোখ খুলে আবিরের দিকে তাকালো নীলা।
যখন বুঝতে পারলো আবির বিভরে ঘুমাচ্ছে তখন খুব সাবধানে বিছানা ছেড়ে নেমে গেলো নীলা।
তারপর ধিরো পায়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো,,,,,,

চলবে,,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com