অহংকারী বউ । পর্ব - ০২
মাঝরাতে আস্তে করে চোখ খুলে আবিরের দিকে তাকালো নীলা।
যখন বুঝতে পারলো আবির বিভরে ঘুমাচ্ছে তখন খুব সাবধানে বিছানা ছেড়ে নেমে গেলো নীলা।
তারপর ধিরো পায়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো।
দরজার কাছে গিয়ে দরজার লক খোলার জন্যে হাত বারাতেই নীলার হাতটা খপ করে ধরে ফেললো আবির।
আবিরঃ কি হলো জানেমান সদ্য বিবাহিত স্বামীকে ছেড়ে বাসর রাতে বাসর না করেই পালিয়ে যাচ্ছো?
এটা কি করে মেনে নেই বলো।
নীলাঃ কে স্বামী কিসের স্বামী, আমি তোর মতো একটা ছোট লোককে
কখনোই আমার স্বামী হিসাবে মানবো না।
আমার স্বামী হওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই তোর মাঝে।
কথাটা বলার সাথে সাথে নীলার গালে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দিলো আবির।
আবিরের চর খেয়ে ফ্লোরে পরে গেলো নীলা।
আবির নীলার কাছে এগিয়ে গিয়ে নীলার চুলের মুঠি ধরে নিজের দিকে ঘুরালো।
আবিরঃ স্বামী হিসাবে যখন মানতেই পারবি না তাহলে আমার সাথে ভালবাসার নাটক করেছিলি কেনো? কেনো গ্রাম থেকে আসা একটা সহজ সরল ছেলের বুকে ভালবাসার তীর মেরে ছিলি।
কেনো আমি বার বার ইগনোর করা সত্যেও আমার পিছু ঘুরে ঘুরে
আমার মনে ভালবাসার ফুল ফুটিয়ে ছিলি। আর কেনোই বা বিনা দোষে
তোর জন্যে আমায় জেল খাটতে হয়েছিলো উত্তর দে উত্তর দে আমায়?
কথাগুলো বলেই আবারও নীলার গালে থাপ্পড় মারলো আবির।আবিরের হাতের মার
খেয়ে নীলার ঠোট কেটে গিয়ে রক্ত পরতে শুরু করলো।
নীলা গালে হাত দিয়ে কেঁদে চলেছে একাধারে। নীলার ঠোটে রক্ত দেখে নীলাকে
কোলে তুলে নিলো আবির। নীলাও মাইর খাওয়ার ভয়ে আর কিছু বলছে না।
কোলে করে বিছানায় এনে বসিয়ে দিলো নীলাকে আবির।
তারপর নীলার ঠোটের কাটা জায়গাটা পরিস্কার করে দিয়ে আলতো করে একটা চুমো
একে দিয়ে গম্ভির গলায় বললো
আবিরঃ ঘুমিয়ে পরো, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রওনা দিতে হবে।
আবিরের কথা শুনে নীলা চিল্লিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবির রাগি
গলায় বলে উঠলো
আবিরঃ আর একটা কথা বললে তোমার জন্যে ব্যাপারটা খুব খারাপ হয়ে যাবে নীলা।
ভালো ব্যাবহার করছি বলে ভেবোনা আমি সেই আগের মতোই ভালো ও সহজ সরল ছেলে হয়ে আছি।
আমার খারাপ রুপটা দেখতে না চাইলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো।
আবিরের কথা শুনে আর কিছু বলার সাহস হলো না নীলার।
নীলা বাদ্ধ মেয়ের মতো শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো। আর আবির চলে গেলো বেলকুনিতে।
বেলকুনির গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আবির।
চোখ থেকে ঝড়ে পরছে কষ্টের অশ্রুধারা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে দের বছর আগের অতিতে ডুব দিলো আবির,,
দের বছর আগে,,
গ্রাম থেকে খুব ভালো রেজাল্ট নিয়ে ঢাকা শহরে কলেজে পড়ার জন্যে চোখে হাজার স্বপ্ন নিয়ে আসে আবির।
আবিরের মা আবির ছোট থাকতেই মারা যান।
সৎমা আবিরকে কষ্ট দিবে ভেবে আবিরের বাবা আর বিয়ে শাদী করেন না।
সারাদিন রিক্সা চালিয়ে কোনো রকমে বাপ ছেলে মিলে সুখেই ছিলো আবিরের বাবা আর আবির।
আবিরের বাবা অনেক পড়াশোনা জানা ভালো
শিক্ষিত লোক হলেও কেনো জানেনা সে কোনো চাকরি করতো না।
বরং রিক্সা চালিয়ে যা রোজগার করতো সেটা দিয়েই বাবা ছেলের বেশ ভালো ভাবেই চলে যেতো।
বাবার কষ্ট হবে ভেবে আবির ঢাকায় পড়াশোনা করতে চায়নি।
কিন্তু ওর বাবার জোরাজুরিতেই ঢাকার কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্যে রাজি হয় আবির।
গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে নিজেকে খুব অসহায় লাগতো আবিরের কাছে।
কিন্তু বাবার স্বপ্ন পুরোন আবিরকে করতেই হবে। বাবাকে যে খুব বেশি ভালবাসতো আবির।
ঢাকায় আসার পর আবিরের বাবার পরিচিত একজন লোকের বাসায় ওঠে আবির।
লোকটা বেশ ভালো ছিলো। আবিরকে সে অনেক ভালবাসতো।
ঢাকায় এসে ঢাকার একটা নামিদামি কলেজে ভর্তি হয় আবির।
রেজাল্ট ভালো থাকায় খুব একটা কষ্ট করতে হয়না ওর।
আর আবির ঢাকায় এসে যার বাসায় ওঠে তার সাথে কলেজের প্রিন্সিপালের ভালো সম্পর্ক
থাকায় আরো একটু উপকার হয় আবিরের।
প্রথম দিন কলেজের জন্যে একটা ঢোলা শার্ট ঢোলা প্যান্ট মাথার চুলে তেল লাগিয়ে চুল আচড়ে
রেডি হয়ে নেয় আবির। তারপর কলেজে চলে যায়।
কলেজের সবাই আবিরকে দেখে বেশ হাসাহাসি করে। একেকজন
একেক রকম অপমান জনক কথাও বলে। কিন্তু আবির সেগুলো গায়ে না লাগিয়ে
মনযোগ দিয়ে পড়াশোনায় ব্যাস্ত হয়ে পরে।
আবিরের তখন মাথায় একটাই চিন্তা ছিলো আর সেটা হলো বাবার স্বপ্ন ওকে
যে করেই হোক পুরোন করতে হবে।
ঢাকা শহরে আসার পর প্রায় ২ মাস কেটে যায় আবিরের। এর মাঝে আবির শহরে
থেকে নিজেকে ঢাকা শহরের সাথে অনেকটাই মানিয়ে নেয়।
নিজের ড্রেসাপও অনেকটাই চেঞ্জ করে ফেলে। আবিরকেও তখন অনেকটাই স্মার্ট লাগতো।
কিন্তু আবির কলেজের কারো সাথে কথা বলতো না।
সব সময় পড়াশোনার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতো।
আবিরকে দেখতে ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি হাইট,গায়ের রঙ উজ্জল শ্যাম,
মায়াবি চোখ, চৌকা নাক আর মুখে সব সময় মিষ্টি হাসি।
আবিরের চেহারাতেই ছিলো একটা নিশ্পাপ ভাব। আর বেশ হ্যানসামও।
পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় অনেক মেয়েই আবিরের সাথে প্রেম করার জন্যে এগিয়ে
এসে কথা বলতে চাইতো কিন্তু আবির সব সময় নিজেকে গুছিয়ে নিতো সবার থেকে।
কখনো কোনো মেয়ের সাথে ইচ্ছা করে কথা বলতো না।
একদিন আবির কলেজের গেট দিয়ে কলেজে ঢুকতেই একটি মেয়ে দৌড়ে এসে আবিরের
ওপর আছড়ে পরে। ঘটনার আকর্ষিকতায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই
মেয়েটিকে নিয়ে নিচে পরে যায় আবির। হাতে বেশ ব্যাথাও পায় আবির।
কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মেয়েটির দিকে না তাকিয়েই নিজের থেকে তারাতারি
মেয়েটিকে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়ায় আবির। তারপর অন্য দিকে ঘুরে সরি বলেই
হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে যায় আবির।
আবির চলে গেলেও পিছনে থাকা মেয়েটা এটা মানতে পারে না
যে ওকে কেউ ইগনোর করে চলে গেলো। ঢাকার বিশিষ্ট শিল্পপতির একমাত্র সুন্দরী মেয়ে নীলা।
যেমন তার রুপ তেমনই তার অহংকারে ভড়া। আর রাগটা যেনো তার আকাশ ছোঁয়া।
ওর দিকে না তাকিয়ে এভাবে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেনা
নীলা।রাগে ফোসফোস করতে থাকে ও। আর তখনি নীলার বান্ধবী অনু আর আখি এসে বলে
অনুঃ কিরে নীলা এটা কি হলো বলতো। তোর দিকে একবার ফিরেও তাকালো না
ছেলেটা। আহারে আমাদের তো ভাবতেই অবাক লাগছে তোকে দেখেও না
দেখার মতো করে চলে গেলো। এই তোর রুপের বাহার?
বান্ধবীদের কথায় মাথায় যেনো রক্ত উঠে যায় নীলার।
নীলাঃ ঐ গেও ভুতটার এত বড় সাহস ও আমাকে ইগনোর করে?
এই নীলাকে ইগনোর করে। ওকে তো আমি মেরেই ফেলবো।
আখিঃ মেরে ফেললেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে বল। ঐ ছেলেটা তো
তোকে দেখে এমন ভাব করলো যেনো তোর রুপে ওর কিছু যায় আসে না।
নীলাঃ তাহলে আমি ওকে হাত পা ভেঙে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার ব্যাবস্থা করবো।
অনুঃ তাতে কি তোর অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া হবে বল? বরং সবাই বলবে
গ্রামের একজন গেও ভুত তোর মতো রুপবতীকে পাত্তাই দেয়নি।
বান্ধবীদের কথায় রাগে যেনো নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে নীলার।
কিন্তু তবুও নীলা নিজেকে শান্ত করে বলে
নীলাঃ তাহলে আমি কি করবো বল। কি করলে আমার প্রতিশোধ নেওয়া হবে?
আখিঃ এমন কিছু কর যেনো ঐ ছেলেটা তোর পিছনে পোষা কুকুরের মতো ঘুর ঘুর করে।
তোর ভালবাসায় পাগল হয়ে যায়। তাহলেই বুঝবো তোর রুপের বাহার।
নীলাঃ ওয়াট, তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে আখি। কি বলছিস কি তুই?
আমি কিনা প্রেম করবো ঐ গেও ভুতটার সাথে। ইম্পসিবল যাষ্ট ইম্পসিবল।
অনুঃ আরে ইয়ার এতো সিরিয়াস হচ্ছিস কেনো?
আমরা তো তোকে বলিনি ওর সাথে সত্যি সত্যিই প্রেম করতে।
তুই শুধু ওর সাথে এমন কিছু কর যেনো ও তোর প্রেমে পরে।
পড়াশোনায় ভালো বলে খুব অহংকার ঐ ছেলেটার। ওর সব অহংকার ভেঙে দে।
আর যখন ও তোর পিছু পিছু ঘুরবে তখন অপমান করে তাড়িয়ে দিবি সিম্পল।
বান্ধবীদের কথায় কিছু একটা ভাবে নীলা। তারপর বাকা হেসে বলে
নীলাঃ ইয়েস, তোরা ঠিক বলছিস। আমি সত্যিই তাই করবো।
ঐ গেও ভুতটাকে আমার পিছনে কুকুরের মতো দৌড় করাবো আমি।
তারপর আমার এই অপমানের প্রতিশোধ নিবো। আর এটা আমার চ্যালেঞ্জ।
এই নীলার চ্যালেঞ্জ এটা।
ঐ ঘটনার পর থেকেই নীলা আবিরের সাথে ভাব করার অনেক ট্রাই করে কিন্তু আবির
পড়াশোনা ছাড়া কিছুই বুঝতো না। তাই নীলার দিকে তেমন গুরুত্বও দিতো না।
এটাতে নীলার রাগটা যেনো আরো বেশি বেড়ে যায়।
নীলা ভাবতে থাকে কি করে এই আবিরকে নিজের ফাদে ফেলা যায়।
এক মাস পর
আবির লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ছিলো। তখনি নীলা গিয়ে আবিরের সামনে দাড়ায়।
নীলাঃ হাই আবির, আপনার সাথে একটু কথা ছিলো।
যদি কিছু মনে না করেন আপনার পাশে কি একটু বসতে পারি?
নীলার কথা শুনে এক নজর নীলার দিকে তাকিয়ে মাথা নারিয়ে সায় দেয় আবির।
নীলা আবিরের পাশে বসে মিষ্টি হেসে বলে
নীলাঃ আসলে আবির, আমি শুনেছি আপনি নাকি কলেজে সবার চাইতে পড়াশোনায় অনেক ভালো।
বাট আমার মাথায় না এই পড়াশোনার প্যারাটা একদমই ঢুকছে না।
আপনার যদি ফ্রি সময় থাকে তাহলে আপনি কি আমাকে একটু টিউশনি পড়াতে পারবেন?
আপনাকে ভালো বেতন দিবো।
নীলার কথা শুনে আবিরের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কারন আবিরও চাইছিলো
কোনো একটা টিউশনি জোগার করতে। কারন ঢাকা শহরে থাকার খরচা অনেক বেশি।
যে খরচা দিতে গিয়ে ওর বাবার অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই আবির কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যায়।
আবিরঃ জ্বি পারবো। তবে আমি বিকেল ৪.০০ টা থেকে ৫.০০ টার মধ্যে পড়াতে পারবো।
আপনার কি সময় হবে তখন?
নীলাঃ কেনো হবে না অবশ্যই হবে আমি তো এই সময়েরই অপেক্ষাই করছিলাম।
আবিরঃ মানে, ঠিক বুঝলাম না?
নীলাঃ ও কিছু না। তাহলে আপনি আজকে বিকেল থেকেই পড়ানো শুরু করুন।
আমি আপনাকে পিক করে নিয়ে যাবো। আপনার এড্রেস টা দিন।
আবিরঃ না না তার কনো দরকার হবে না।
আপনি বলুন আপনি কোথায় পড়বেন আমি সেখানে সময় মতো চলে যাবো ইনশাআল্লাহ।
তারপর নীলা নিজের বাসার ঠিকানা আবিরকে দিয়ে দেয়।
নীলার বাবা বিজনেসের কাজে দেশের বাইরে থাকায় নীলার আরো একটু সুবিধা হয়।
আবিরের মতো নীলার মাও ছোট বেলায় মারা গেছেন।
তাই নীলাদের বাসায় কাজের লোক ছাড়া আর কেউ থাকতো না।
চলবে.....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com