অনুভূতিহীন । পর্ব - ২৪
রহিমঃ কি বলছিস!!!!! তুই তিথির বর????(উত্তেজিত হ্যাঁ) তা হলে বললি যে তোর বিয়ে এবং বিয়ের বাজার করে এসেছিলি??
রহিমঃ তুই কি করেছিস একবারো কি ভেবে দেখেছিস? মেয়েটা কত কষ্ট বুকে রেখে বেচে।
অরশঃ আমি আমার স্ত্রীর জন্য কিছু করতে পারিনি আমার বেচে থাকার কোন অধিকার নেই। তুই আমাকে মেরে ফেল আমাকে মেরে ফেল। (সামনে রাখা টেবিলে জোরে পাম্পস করে)
রহিমঃ অরশ তুই শান্ত হ। এখনো অনেক কিছু করার আছে। তিথিকে নতুন করে স্ত্রীর অধিকার দেওয়ার সময় রয়েছে তাকে ভালোবাসার জন্য বাকি জীবন পড়ে আছে। তুই যদি মরে যাস তা হলে তিথির কি হবে?
অরশঃ কোথায় আমার তিথি কোথায়? (কান্না করে)
রহিমঃ ধৈর্য ধর ভাই তোর তিথিকে তুই ফিরে পাবি।
অরশঃ তুই এক্ষুনি আমার তিথিকে এনে দে।
রহিমঃ আগে শান্ত হয়ে বাসা যা আমি দেখতেছি কি করা যায়।
অরশঃ না না তিথিকে না পেলে আমি বাসায় যাবোনা ঐ বাসার প্রতিটি ইটে তিথির স্মৃতি মিশে আসে।
রেস্টুরেন্টের বেয়ারা এসে বলেঃ স্যার এখানে অনেক কাস্টমার আছে প্লিজ এমন কিছু করবেন না যাতে মান সম্মানের প্রশ্ন আসে।
রহিম বুঝতে পারছে এই মুহুর্তে অরশকে কন্ট্রোল করা অসম্ভব।
আগে বাসায় নিতে হবে পরে যা হবার হবে।
অরশকে ধরে বাসায় নিয়ে এলো রহিম।
অরশের বাসা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
বিয়ে বাড়ি রং বেরঙের আলোক সজ্জা।
চারি দিকে দুলে দুলে উড়ছে হাজারো টুকরো রঙিন কাপড়।
ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে।
আনন্দ মুখর এক মনরোর পরিবেশ।
গেটের পাশে একটা বড় লোহার দন্ড পড়ে আছে।
অরশ সেটি হাতে তুলে নিয়ে গেটে বাড়ি শুরু করেছে।
দারোয়ানেরা তাকে ধরে ফেলে।
অরশের মুখ দেখে দারোয়ান সব ছেড়ে পালায়।
মুহুর্তের মাঝে গেট ভেঙে চুরমার করে দিলো অরশ।
খবর পৌঁছে যায় বাসার ভিতর।।
সবাই ছুটে আসে অরশের কাছে।
অরশ একটার পর একটা সাজানো মহল ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে।
খুব জোরে জোরে চিৎকার করছে। সামনে যা পাচ্ছে তাতে আঘাত হানছে।
সকলে ভাবছে অরশ নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে।
অরশের পি,এ আসিফ দৌড়ে এসে অরশকে বাদা দিতে নিলে অরশ বলেঃ আমার কাছ থেকে সরে যাও। আমার সামনে যে আসবে তাকে খুন করে ফেলবো। আসিফ সরে যায়। বাহিরের সাজানো বাগান মুহুর্তের মাঝে ডাস্টবিন করে ফেলেছে।
ড্রইংরুম যেয়ে সামনে যা পাচ্ছে তাতেই আঘাত হানছে। দামিদামি সব ফার্নিচার।
বিদেশি সপিজ।
সব গুড়িয়ে দিচ্ছে।
অরশ ভাই সিহাব অরশের হাত ধরে বলেঃ অরশ তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? কি করছিস এইসব।
অরশঃ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি আমার সামনে থেকে সরে যাও (হুংকার দিয়ে)
সিহাবঃ ওহ অরশ শান্ত হ বাড়ি ভর্তি মেহমান। কি হয়েছে খুলে বল। তিনদিন পর তোর বিয়ে এখন যদি এমন করিস মান সম্মান কোথায় যাবে?
সামনে রাখা ৬৪ ইঞ্চি এল,ই,ডি টিবিতে বাড়ি মেরে অরশ বলেঃ বিয়ে বিয়ে বিয়ে জীবনে কত গুলো বিয়ে করতে হবে আমার। এই বাড়ি থেকে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলো। কোন বিয়ে হবেনা কিচ্ছু হবেনা। কোন সম্মান নেই। সম্মান সম্মান দৌড়ে চলে আসে ৩ তলায় নিজের রুমে যে রুমে কারো ঢোকার সাহস নেই। সবাই পিছু পিছু উপরে আসে। রুমে যা পাচ্ছে তাতেই আঘাত করছে। অরশকে সামলাতে মেতে উঠেছে সবাই।
রহিম এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
সে জানে এই মুহুর্তে কোন ভাবেই তাকে সামলাতে পারবেনা।
অরশ খুব নরম মনের মানুষ সে এতিমদের খুব ভালোবাসে কিন্তু নিজের এতীম স্ত্রীর উপর যে অত্যাচার করেছে সে জন্য নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবেনা। নিজের আভিজাত্য আজ ভেঙে গুড়িয়ে দিবে।
অরশের মা এতোক্ষন চুপ করে ছিলেন।
তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেনঃ তোমরা কেউ অরশে কাছে যেওনা। অরশ যা ইচ্ছা করতে থাকুক যখন সময় হবে তখন নিজেই শান্ত হয়ে যাবে।
৩ তলা ২তলা ১ তলা সামনে যা পেয়েছে তা ভেঙেছে।
একটু আগেই বাড়িটি কত সুন্দর ভাবে সজ্জিত ছিলো।
এখন এক ধ্বংস লিলায় পতিত হয়েছে। সব কিছু তছনছ করে দিয়ে ঝড়ের মত করে। চিৎকার দিতে দিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অরশ। ডাক্তার এসে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছেন। ব্লাড প্রেসার হাই।
ডাক্তার বলেছে অরশের জ্ঞান ফিরতে সকাল ১০ টা বাজবে।
রহিম চলে গিয়েছে।
তার কাজ আছে।
সকালে আসবে, এখন এখানে থেকে আর লাভ নেই।
অরশের বিছানার পাশে সবাই বসে আছে।
সকলের মুখে একই কথা, কি হয়েছে অরশের।
কার উপর ক্ষেপে আছে? ৪ বছর পর বিদেশ থেকে এসে নিজেই ধুমধামের সাথে বিয়ে করতে চাইলো আজকে কত মার্কেট করলো। রাতে বাসায় ফিরে সব শেষ করে দিলো। কে রাগিয়েছে অরশকে?
অরশের মুখ থেকে ভেষে আছে তিথি।
তিথির নাম শুনেই সবাই থমকে যায়।
তা হলে কি তিথির রাগিয়েছে অরশকে?
৩ দিন পর অরশের বিয়ে, এখন যদি সে এইসব করে তা হলে বিয়ে কিভাবে হবে। বিয়ে না হলে পাত্রী পক্ষকে কিভাবে জবাব দেব।
অরশ ঘুমের মাঝেই বার বার তিথির নাম বলতিছে।
সবাই একটাই ভয় পাচ্ছে তা হলে কি তিথির সাথে দেখা হয়েছে? তিথি কি এমন কিছু বলেছে যার জন্য অরশের এই অবস্থা। মানুষের কত রুপ থাকে তা তিথিকে দেখে শিখেছে অরশের পরিবার। তিথি অরশের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মনে কষ্ট দিয়েছে। তিথিকে সবাই খুব ভালোবেসেছিল কিন্তু সেই তিথির হঠাৎ করে এভাবে পালিয়ে যাবে কেউ ভাবতে পারেনি। সবার মনে তিথির জন্য একটা স্পেশাল যায়গা রেখে গিয়েছে৷ সবাইকে ভালোবাসার সাগরে ভাষিয়ে চোরের মত মাত্র ২০ লাখ নিয়ে তিথি উদাহ
অরশের মা কেদে কেদে বুক ভাষাচ্ছেন।
প্রতিটি মা তার সন্তানকে বুঝতে পারে।
মা এমন এক মমতাময়ী শব্দ যার মাঝে লুকিয়ে আছে হাজারো প্রশান্তি।
মা সন্তানের দিকে তাকিয়েই বলে দিতে পারেন তার সন্তান কি চায়। আপনার ক্ষুধা পেলে মাকে বলতে হবেনা মা আমার ক্ষুধা পেয়েছে। দেখবেন মা নিজে থেকেই খাবার এনে দিবেন। মাত্র ৩ দিন বাইরে থেকে বেড়িয়ে আসুন দেখবেন কেউ কিছু না পেলেও মা ঠিকি বলে দিবেন আপনার শরীরের কোথায় কি পরিবর্তন হয়েছে। সন্তানের ব্যথা কেউ না বুঝলেও মা বুঝতে পারে।
অরশের কষ্ট এই মুহুর্তে তার মা একাই বুঝতে পারছেন।
সন্তানের ব্যথায় যে মায়ের কলিজা চিরে যায়।
অরশের মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের জলে বুক ভেজাচ্ছেন তিনি। তার ছেলে আর যাই হোক কখনো মানুষের ক্ষতি করতে পারেনা। অরশ যেহেতু ধ্বংস লিলা চালিয়েছে সেহেতু বিয়ে যে করবেনা সেটা তিনি নিশ্চিত। এতো বছর পর বুকের আগুন দাউ দাউ করে জলে উঠেছে।
সকাল ১০ টা।
অরশের জ্ঞান ফিরেছে।
জ্ঞান ফিরেই অরশ রহিম রহিম বোলে চিৎকার করছে।
অরশের মুখে রহিমের নাম কেউ কখনো শুনেনি।
অরশের মা রহিমকে চিনতো।
রহিম এতিম ছেলে ছিলো। রহিম অরশের খুব ভালো বন্ধু ছিলো। রহিম অনেকবার এবাড়িতে এসেছে।
অরশের মাকে কে বা বলে ডেকেছিল অরশের মাও রহিমকে খুব ভালোসতেন
কিন্তু সেতো স্কুল জীবনে ঘটনা। স্কুল জীবনের পরে কখনো আর রহিমের নাম শুনা যায়নি। তা হলে এতো বছর পর আবার কেন অরশের মুখে রহিম রহিম?
একটু পরেই বাসার ভিতরে একটি অপরিচিত ছেলে প্রবেশ করে। (রহিম রাতে এসেছিলো, তখন অনেক মানুষ ছিলো এবং অরশের পাগলামোর জন্য কেউ রহিম কে লক্ষ করেনি।)
অরশের ভাবি রহিমের দিকে তাকিয়ে আছেন।
রহিমঃ আমি অরশের সাথে দেখা করতে এসেছি। অরশ কোথায়?
ভাবিঃ অরশের সাথে এখন দেখা হবেনা। পরে আসো।
রহিমঃ আমি জানিনা আপনি কে। আমি অরশের ছোট বেলার বন্ধু রহিম।
ভাবিঃ তুমি রহিম!!!! দ্রুত আমার সাথে উপরে আসো। জ্ঞান ফেরার পর থেকে অরশ শুধু তোমায় ডেকে চলেছে। আমি অরশের ভাবি।
রহিম ভাবির সাথে উপরে রওনা হলো।
সিড়ি বেয়ে দুই পা সামনে এগোতেই রহিম থেমে যায়।
ভাবিঃ কি হলো দাড়িয়ে পড়লে কেন? আমার সাথে উপরে চলো তাড়াতাড়ি।
রহিম মূর্তির ন্যায় স্তম্ভিত।
ভাবি দেখতে পান অরশ উপরের দিকে তাকিয়ে পাথরের মত ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে। উপরে আছে অরশের মা যিনি সিড়ি দিয়ে নিচে আসছিলেন।
রহিমকে এই ভাবে থাকিয়ে থাকতে দেখে অরশের মা জিজ্ঞেস করেন কে তুমি!!
এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
রহিম নিশ্চুপ ভাবে অরশের মায়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
অরশের মা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সাথে ভাবিও অবাক হচ্ছেন কে এই রহিম?
রহিম অরশের মায়ের সামনে গিয়ে বলেঃ মা গো মা আমি তোমার রহিম। আমায় তুমি চিনতে পারছো না।
অরশের মাঃ তু তু তুমি রহিম!!!
রহিমঃ হ্যাঁ মা আমি আমিই তোমার সেই ছোট্ট রহিম।
মাঃ কত বড় হয়ে গেছিস তুই চিনতেই পারছিনা। তুই আমাকে চিনলি কিভাবে বাবা?
রহিমঃ মা গো তোমায় মা ডেকে আমি আমার মায়ের অভাব পূর্ন করে করেছি। তোমার হাতে খাবার খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি। তোমার বুকে ঠাই দিয়ে এই এতিমের জালা মিটিয়েছো।
তোমায় কি ভুলা যায় মা। (চোখের জল ছেড়ে)
মাঃ তুই সব মনে রেখেছিস?
রহিমঃ মা গো মা তুমি ছাড়া এই এতিম ছেলেকে কেউ কোন দিন বুকে তুলে নেই নেইনি। তুমি ছাড়া কেউ মুখে তুলে খাবার খাওয়ায়নি। তুমি ছাড়া কাউকে মা ডেকে মনের জালা মিটাতে পারিনি। গত ১৬ বছরে একটি বারের জন্য কাউকে মা বলে ডাকার সুযোগ পাইনি। কারো বুকে মাথা রেখে সুখের কান্না করার অধিকার পাইনি। মা গো মা তুমি যা দিয়ে মৃতুর পরেও মনে থাকবে আমার (কান্না করে)
মাঃ এই পাগল ছেলে আমি কি মরে গেছি নাকি। (রহিমেত চোখের জল মুছিয়ে) এই যে আমিই তোর মা যত ইচ্ছা মা বলে ডাকিস আমায় যত ইচ্ছা এই বুকে মাথা রাখিস।
অমনি রহিম অরশের মাকে জড়িয়ে হুহু করে কান্না করে দিলো।
মা এক স্নেহের নাম।
মা কোন জাতি বা গোত্রের হয়না।
মা সব সময় মা-ই হয়।
একটি বটবৃক্ষ যেমন রোদ্রময় পথিকের প্রশান্তি এনে দেয়, তেমনি একজন মা হাজারো সন্তানের কষ্ট ভুলিয়ে দেন।
মনে রাখবেন মা কখনো কারো একার হয়না।
যিনি মা হন তিনি সবার মা।
মা শব্দের মাঝে খুজে পাবেন হৃদয় শীতল করন তৃপ্তি৷
সকল মায়ের জন্য রইলো ভালোবাসা দিবসের অগ্রিম শুভ কামনা। বেঁচে থাকুক সকল মা সকল সন্তানের হৃদয়ে।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com