তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ১৬
তোদের তো দেখি সমস্যার কোনো শেষ নেই। বিয়ে করছিস কেন যখন এতো ইস্যু বের হচ্ছে। বিয়ে করার আগে মনে ছিলো না। বিয়ের আগের লাইফ এক রকম৷ বিয়ের পর অন্য রকম৷ কেন জানিস ?
বিয়ের আগে তো বাবার কাঁধের উপর বসে খাই৷ তখন চিন্তা থাকে না ইচ্ছা মতো চলফেরা করা যায়।
বিয়ের পর তা যায় না। কাজ করা লাগে। বিয়ে করে যে মানুষটাকে আনা হয় তার দায়িত্ব নিতে হয়।
ফ্যামিলির দায়িত্ব নিতে হয়। তখন সবকিছু মিলিয়ে হতাশ হতে হয়।
সময় টা একটু কম দিলে ও কিন্তু মানুষটা দু মুঠো আহারের ব্যবস্থা করে নিজে না খেয়ে ও।
রাতুল জান্নাত মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে আছে। জান্নাত বললো
- ভালোই তো ভাষণ দিলি। আমরা মেয়েরা সংসারে এসে স্বামীর জন্য চিন্তা করি না। না কখনো বলছি আমার শখ আহ্লাদ সব পূরণ করতে। না মুখ ফুটে চেয়েছি আমার এটা লাগবে ঐটা লাগবে। ও যখন যা দিয়েছে তাই নিয়েছি। কখনো কোনো অভিযোগ করেছি। জিঙ্গেস কর।
রাতুল মাথা নিচু করে নিলো।
- তাহলে সমস্যাটা কোথায় বল
- ও বাসায় আসলে বাসায় থাকে না রাস্তা বের হয়ে যায়। রাত করে ঘরে ফিরে। আমার কি মন চাই না ওর সাথে কাটাতে।
- রাতুল ও যা বলছে তাই কি সত্যি।
জান্নাত বললো
- ও আগের মতো নেই। ও সঙ্গ দোষে খারাপ হয়ে গেছে। ওকে আমি বলছি ছুটির দিনে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা ফ্যামিলি সহ বের হবো সেটুকু টাইম দিতে বলছি তারপর যেখানে ইচ্ছা যাক কিন্তু আমার কোনো মূল্যই নেই ওর কাছে। মূল্যহীন হয়ে গেছি আমি। এখন তো দলিল হয়ে গেছি তাই আর মূল্য থাকবে কি? আগে দলিল হয়নি তখন মুখ দিয়ে কি সুন্দর মধু বের হতো। ওর কাছে জিঙ্গেস কর ওর মা বাবা কখনো আমাকে নিয়ে অভিযোগ করছে কি না।
- তোদের ঝামেলা তোরা মেটা। আমি নেই।
মেহেরাব ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। ঘর থেকে বের হয়ে মুচকি হাসলো। দুজনে সেই আগের মতোই আছে। অভিযোগের বস্তা কখনো শেষ হবে না। এখন দুজনে শান্তি পেয়ে যাবে। অভিযোগ শেষে ভালোবাসা আরো গভীর হয়ে যায়। অভিযোগ জমিয়ে রাখলে তা প্রকাশ না করতে পারলে ভালোবাসার দূরত্ব টা বাড়তে থাকে।
মেহেরাব পাশের ঘরে যেয়ে মারিয়ামকে কোলে নিয়ে বের হলো।
জান্নাত রাতুলের দুজনের মুখে কোনো কথা নেই।
রাতুল জান্নাতের কাছে যেয়ে হাত দুটো ধরে
- সরি।
- লাগবে না।
- আমার সত্যি ভূল হয়ে গেছে। আর এমন টা করবো না।
- তোমার এসব ডায়লগ অন্য কোথা ও দাও। অনেক বার বলছো। পরে যা আবার তাই।
- আর হবে না এমন। সত্যি।
- তোমাকে চেনা আছে।
- সত্যি বলছি। যদি হয় তুমি যা শাস্তি দিবা তাই মেনে নিবো৷
- তুমি গিরগিটি হয়ে গেছো।
- আমার কিন্তু খিদে লাগছে৷ গতকাল থেকে না খাওয়া। এখন না খেলে কিন্তু আমি কেলিয়ে পড়বো।
জান্নাত রাতুল কে দু চারটে কিল ঘুসি মেরে
- পড়ো কেলিয়ে আমার কি?
- আমি তোমার একটা মাত্র জামাই তোমার কষ্ট হবে না।
- না।
- তাহলে পড়লাম এভাবে কেলিয়ে।
- থাক হয়েছে। আনছি খাবার। তুমি চেঞ্জ করে এসো। ঠান্ডা লেগে যাবে।
- শুকিয়ে গেছে। আর ঠান্ডা তো লেগেই গেছে।
- যা বলছি তাই করো। এতো কথা বলো কেন?
জান্নাত ঘর থেকে বের হয়ে পাশের ঘরে যেয়ে
- ভাবি সকালের নাস্তা।
- তুমি যাও আমি নিয়ে আসছি।
- ঠিক আছে।
নাহিদ মেধাকে ফোন দিলো। মেধা ফোনটা ধরতেই
- এই শোনো আমরা বিকালে রেস্টুরেন্টে দেখা করছি তবে।
- আজকেই।
- হ্যা। তাড়াতাড়ি চলে এসো।
- ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে গেলো।
মিথিলা খাবার নিয়ে ঘরে গেলো। রাতুলের দিকে তাকিয়ে
- ননদ টাকে এতো কষ্ট না দিলে ও পারো। তোমার জন্য না খেয়ে আছে।
মিথিলা কথাটা বলে বের হয়ে গেলো। রাতুল জান্নাতের দিকে তাকিয়ে
- খেয়ে নিলে তো পারো।
- তুমি না আসলে ঠিকি খেয়ে নিতাম। কিন্তু এসে গেছো।
- হুম বুঝছি। সবকিছুতে অনিয়ম। বাসায় নিয়ে নি তোমাকে। মেরে সব নিয়ম করিয়ে নিবো।
- পারলে দিয়ো গায়ে হাত। তোমার কি অবস্থা হবে জানো তো।
- দেখা যাবে। নাও খাও।
রাতুল জান্নাতকে খাইয়ে দেয়।
মেহেরাব মারিয়াম কে নিয়ে ঘুরে বাসায় ফিরলো। জান্নাতের কাছে দিয়ে
- সব রাগ অভিমান কেটে গেছে।
- তা কখনো বাদ ছিলো নাকি।
- তোরা পারিস ও বটে। ১ মাসের আগে আর যেতে দিবো না।
- হ হ থাকবানি।
- না থাকলে বেঁধে রাখবো তোদের দুজনকে।
- তুই গেছিস কখনো।
- দিছিস নাকি ঠিকানা। যে যাবো৷
- খুজছিস কখনো।
- তোদের জন্য সব কিছু সহ্য করলাম আবার না খুজে থাকবো।
- গত বছরই তোকে ফোন দিলাম।
- তখন তো বলিস নি। সবাইকে পেয়ে ভূলে গেলি। - ভূললে কি আর আসতাম।
- আসতে আসতে ১ বছর পর। না জানি আবার সামনে কত বছর পর।
- তোকে বলছে।
- বলছেই তো। আজ কাল করতে করতে ১ বছর পার করে দিলি।
- ওর জন্যই তো পারলাম না।
দুপুরে মেহেরাব কোচিং এ যাওয়ার জন্য বের হবে জান্নাত বললো
- কই যাচ্ছিস।
- কোচিং এ
- আমরা আসছি তা ও কোচিং এ যাবি।
- আমি বলেই চলে আসবো।
-আচ্ছা যা তবে।
- তুই কি আমাকে বোকা পাইছিস
জান্নাত ভ্রু কুচকে
- তুই কবে বোকা ছিলি।
- যা যাবো না। তোর এই নাক ফুলানো বন্ধ কর।
- তুই এখনো বুঝিস।
- তো।
তামান্না কোচিং এ চলে আসলো। ভাইয়ারা এসে ক্লাস নিচ্ছে। কিন্তু এখনো মেহেরাব কোচিং এ আসে নি৷ তামান্না বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু না আসছে না। হয়তো আজকে আসবে না৷
জান্নাত রাতুল মেহেরাব মিথিলা মিহু সবাই বের হলো ঘুরতে। পার্কের কাছে যেতেই নেহা আর রাজিবের সাথে দেখা হলো। মেহেরাব ওদের দুজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। রাজিব বললো
- সবাই একসাথে ভালোই হবে।
নেহা বললো
- হুম৷ মেলায় যাবো তাহলে।
জান্নাত বললো
- কোথায় হচ্ছে মেলা।
- পাশেই।
- চলো যাই দেখি।
জান্নাত তার মেয়ে মারিয়াম কে মেহেরাবের কোলে দিয়ে রাতুলকে হাসি মুখে বললো
- চলো মেলায় যায়৷
- হ্যা চলো৷ হাটতে লাগো।
জান্নাত সামনে যেতে রাতুল মেহেরাবকে বললো
- বাঁশ টা দিলি তো।
- কিসের বাঁশ।
- জানিস না মেলায় গেলে কি করে?
মেহেরাব হেসে দিয়ে
- এই জন্য মেয়েকে আমার কোলে দিলো।
মেহেরাব মিহু মিথিলার দিকে তাকালো কেমন মুখটা কালো কালো দেখাচ্ছে। মেহেরাব মুচকি হেসে
- ভাবি যাবে না।
- না তোমরা যাও৷ আমরা এখানে আসি।
- চলো তো তোমরা৷
জান্নাত পিছে ফিরে
- কি হলো ভাবি চলো?
জান্নাত মিহু মিথিলার হাত ধরে টেনে নিয়ে হাটছে।
সবাই কথা বলছে আর হাটছে। মেহেরাব মারিয়ামকে নিয়ে কিছুটা পিছনে।
রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেধা। নাহিদ কিছুক্ষণ পর বাইক চালিয়ে রেস্টুরেন্টের সামনে চলে আসলো। রাতুল বাইক রেখে মেধার সামনে দাঁড়িয়ে
- কখন এলে
- টাইম টা দেখো।
- সরি। রাস্তায় জ্যাম ছিলো।
- জ্যাম ছিলো না অন্যকিছু৷
- সত্যি জ্যাম ছিলো। সরি তো।
- দুটো দিন আসলা তা ও লেট করে। এতোদিন জেনে এসেছি মেয়েরা লেট করে এখন দেখি ছেলেরা লেট করে।
-হয়েছে বাবা রাগ করো চলো ভেতরে।
- গাড়ি আনোনি।
- নাহ্। রেস্টুরেন্টে আসছি তো তাই আর গাড়ি আনি নি। বাইক নিয়ে এসেছি।
- চলো।
মেধা নাহিদ রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলো।
মিহু মিথিলা পিছনে তাকাতে অবাক হয়ে গেলো। মুহুর্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো........
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com