তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ২০
রাতুল জান্নাতদের রিকশা অন্য রাস্তায় ঢুকে গেলো। মেহেরাব তামান্নাদের রিকশা আরক রাস্তায়। রিকশাটা কিছু দূর যেতেই মেহেরাব রিকশাওয়ালা মামা কে থামতে বলে। রিকশা থেমে যায়। তামান্না কিছু বুঝে উঠার আগেই মেহেরাব রিকশা থেকে নেমে দোকানের দিকে চলে গেলো। তামান্না রিকশায় বসে ভাবছে হয়তো সিগারেট কিনতে গেছে। আজকাল তো কম বেশি সবাই সিগারট খায়। তামান্না অন্যদিকে তাকায়।
তামান্নার মা তামান্নাকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন সুইচটপ। তামান্নার মার টেনশন টা বেড়ে গেলো৷ তামান্নার ভাই তবে ঠিক কথা বলছে। ওর কিছু হলো না তো। তামান্নার বাবাকে ফোন করবে নাকি আর কিছুক্ষণ দেখবে৷ তারপর না হয় ফোন করবে।
জান্নাতদের রিকশা চলতে থাকে। রাতুল জান্নাতকে বললো
- তোমার কি মনে হয়? ওরা বন্ধু।
- কোথা ও খটকা লাগছে। কিন্তু মেহেরাব তো মিথ্যা কথা বলা ছেলে না।
- আমরা ও তো ফ্রেন্ড ছিলাম। কিন্তু একে অপরকে ভালোবাসতাম ও তো জানতো না।
- তা ঠিক বলেছো। কিন্তু ও তো আমাদের ধরে ফেলছিলো।
- হ্যা। ধরা তো খেয়ে কম বকা তো খেলাম না।
- ও রিলেশনে গেলে নিশ্চয়ই জানাতো।
- বন্ধু যখন বলছে তা ও নতুন তাহলে কিভাবে মেলায় নিয়ে গেলো। আবার দুজনে এক সাথে রিকশায়
- ভাবার বিষয়।
মেহেরাব রিকশার কাছে এসে কাশি দিলো। তামান্না মেহেরাবের দিকে ফিরতেই অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাবের দু হাতে দুটো আইসক্রিম। মেহেরাব একটা আইসক্রিম তামান্নার দিকে বাড়িয়ে দিলো। তামান্না নিবে না। মেহেরাবের জোড় করাতে নিয়ে নিলো। রিকশায় উঠে পড়লো। রিকশাওয়ালা রিকশা চালাতে শুরু করলো। তামান্না বললো
- কি দরকার ছিলো এ গুলোর?
- আমার সাথে কেউ ঘুরতে আসছে তাকে তো আর খালি মুখে ঘোরানো যায় না। আমার যতটুকু সামর্থ্য ততটুকুই দিছি।
তামান্না মুচকি হেসে
- তা ও। তোমাকে বিপদে ফেলে দিলাম।
- আপনি নতুন না হলে আপনার থেকে সব টাকা হিসাব করে নিতাম।
- তাই। যখন পুরানো হবো।
- তখন না হয় আপনার থেকে খাবো।
- কথাটা মনে থাকে জানো।
- হ্যা অবশ্যই।
- তুমি আমাকে আপনি করে বলো কেন? আমরা সেইম ক্লাস তাই না।
- আমার আপনি বলতে ভালো লাগে।
তামান্না আর কিছু না বলে মুখটা ফুলিয়ে সামনের দিকে তাকালো। মেহেরাব বুঝতে পারছে রাগ করছে। কিন্তু কিছু করার নেই। তুমি তো একজনই হয়৷ সে তো আর নেই৷ চাই না তুমি শব্দ টা আর কারো জন্য আসুক৷
মিথিলা মিহু মা তিনজনে ঘরে বসে টিভি দেখছে। মা বললো
- মেহেরাব তো এখনো এলো না।
- হয়তো বন্ধুদের সাথে ঘুরছে।
- ও তো এমন করে না। কোচিং শেষ এ বাসায় এসে তারপর না হয় বলে যায়। ফোনে ও পাওয়া যাচ্ছে না। আর ও এখন তেমন আড্ডা ও দিতে যায় না।
মিহু বললো
- মা তো ঠিক কথা বলছে। তাহলে গেলো কোথায়।
মিথিলা বললো
- ফিরে আসবে। চিন্তা করতে হবে না।
- রাতুল জান্নাত তো এখনো ফিরলো না।
- দেখি ফোন দিচ্ছি।
মিহু ফোন দিতে যাবে তখনি
- আমরা এসে গেছি।
জান্নাত রাতুল ঘরে ঢুকলো।
রিকশা এসে তামান্নাদের বাসার সামনে থামলো তামান্না রিকশা থেকে নেমে চলে গেলো। কথা ও বললো না৷ রিকশা ওয়ালা যেতে চাইলো মেহেরাব থামিয়ে দেয়। তাকিয়ে আছে তামান্নার যাওয়ার দিকে। তামান্না যেয়ে কলিং বেল চিপলো। তামান্নার মা দরজাটা খুললো। তামান্না ভেতরে ঢুকে গেলো। মেহেরাব রিকশাওয়ালাকে যেতে বললো। রিকশাওয়ালা যেতে লাগলো।
তামান্না রুমের দিকে যেতে লাগলো তামান্নার মা বললো
- দাঁড়া ।
তামান্না দাঁড়িয়ে যেয়ে পিছনে ফিরে মা কে রাগতে দেখে আড় চোখে তাকিয়ে
- ও মা তুমি রেগে আছো।
- ক টা বাজে
তামান্না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। মা গম্ভীর কণ্ঠে
- কে ছিলো ছেলেটা সাথে? তোর দিন দিন অবনতি হয়ে যাচ্ছে। তোর ফোন অফ কেন?
তামান্না মাথা নিচু করে
- মেহেরাব৷ ওকে নিয়ে মেলায় গেছিলাম।
- আমাকে একটা বার বলেছিস।
- তোমার ফোনে ম্যাসেজ দিছি। তারপর ফোন অফ হয়ে গেছিলো। তুমি ম্যাসেজ দেখো নি।
তামান্নার মা ফোনের লক খুলে ম্যাসেজ চেক করলো। তামান্নার ম্যাসেজ দেখে
- ফোন তো দিতে পারতি। টেনশন হয় তো।
- সরি মা। আর এমন হবে না।
- ঠিক আছে। যা ফ্রেশ হয়ে আই খাবি। আর শোন
- কি?
- ছেলেদের সাথে কোথা ও যেতে হবে না। কোথা ও যেতে হলে আমাকে বলবি৷ আমি নিয়ে যাবো।
- ঠিক আছে।
তামান্না চলে গেলো।
রিকশা এসে বাসার সামনে থামলো। রিকশাওয়ালাকে টাকা দিয়ে ঘরে যেতে লাগবে দরজার সামনে মিথিলা হাতে খুন্তি, মিহু চামচ, মা পিছনে ফুলঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরাব এমন দৃশ্য দেখে পুরো অবাক হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবছে কি হলো আজ সবার। মেহেরাব সবার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। সবাই মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো৷ মেহেরাব বললো
- তোমরা এখানে দাঁড়ানো কেন?
মিথিলা খুন্তি টা দেখিয়ে
- কাজ আছে তাই। ঘরে এসো
মেহেরাব কি করবে বুঝতে পারছে না। কি হয়েছে বুঝছে না। হঠাৎ সবাই৷ ঘরের ভেতর থেকে জান্নাত বললো
- ভাবি ছেড়ো না ওকে৷ তাই তো বলি কোচিং এ যাওয়ার জন্য এতো লাফালাফি করে কেন?
মিহু বললো
- কোন মেয়েকে নিয়ে মেলায় গেছিলা।
মেহেরাব জান্নাতের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে
- ও ও ও এই ব্যাপার। ঐ কুত্তী টা তাহলে তোমাদের কান ভাঙ্গাইছে।
জান্নাত ন্যাক ছুড়ে
- দেখছো ভাবি আমি সত্যি কথা বলছি বলে আমাকে শাসাচ্ছে।
মিথিলা বললো
- তোমাকে শাসানোর মজা বুঝাবো।
মিহু বললো
- আমাদের নিয়ে যেতে চাও না মেলায়। অন্য মেয়েকে নিয়ে মেলায় যাও।
মা বললো
- তুই যদি সত্যি কথা বলিস তাহলে তোকে আমরা কেউ কিছু বলবো না।
- হায় রে আমি বুঝাই কি করে। কুত্তী তোকে আমি পেয়ে নি।
- মা দেখছো আমাকে কি বলছে?
- বউমা ওকে ধরো। আমার মেয়েকে শাসানো।
- হয়েছে হয়েছে। ঘরে ঢুকতে দাও। কিছু বলো না। সব সত্যি কথা বলছি।
- এসো।
মেহেরাব ঘরে ঢুকলো। চেয়ারে বসলো। পাশে মিথিলা মিহু রাগি ভাবে তাকিয়ে আছে মেহেরাবের দিকে। মা সামনে ঝাড়ু হাতে নিয়ে। জান্নাত মিটিমিটি হাসছে। রাতুল এসে
- তুই এসেছিস। কেমন ঘুরলি রিক্সায়।
মেহেরাব বললো
- রাতুল তুই ও। হায় রে আমার কপাল। তোরা দুজনে কি আমার বাঁশ দেওয়াটা বন্ধ করবি না।
মিথিলা বললো
- বাশ দেওয়াটা আমরা বন্ধ করবো। এখন সত্যি কথা বলো।
মেহেরাব মিথিলা মিহুর দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে
- তোমরা এতো রাগি ভাবে আছো কেন?
মিথিলা মিহু হেসে দিয়ে
- তোমার ঘাড় মটকাতে। ঘরে দুটো বউ থাকতে অন্য মেয়েকে নিয়ে মেলায় যাওয়া। বউ দুটোকে তো নিয়ে যেতে গেলে কষ্ট লাগে।
- আরে ও আমার বন্ধু। খুব ভালো একটা বন্ধু। ও জোর করে নিয়ে গেছে।
মিথিলা মেহেরাবের মাথায় গুতো মেরে
- তুমি কি ন্যাকা যে জোর করলো ওমনি চলে গেলা।
মিহু বললো
- আমাদের বলদ বোঝাও।
- সত্যি রে বাবা। ও জোর করছে বলে ওর সাথে গেছি। তাছাড়া ও নতুন এখানে৷ তোমাদের যার কথা বলছিলাম তামান্না৷
মা বললো
- মেয়েটা দেখতে কেমন রে।
- আমি কি জানি? তোমরা যেয়ে দেখো।
মিথিলা বললো
- একসাথে ঘুরছো অথচ কেমন দেখতে জানো না। জান্নাত বললো
- ও মিথ্যা কথা বলছে৷ ও তো মেয়েটার সাথে রিলেশন করে৷ আমাদের থেকে লুকাচ্ছে
তবে রে
জান্নাত দৌড় দিলো........
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com