তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ১৮
মিথিলা রাশেদকে বললো
- আজকে না গেলে হয় না।
- কেন কি হলো তোমার হঠাৎ ?
- তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না।
- কষ্ট পাবা না বলেই তো আসছিলাম।
- কেন জানি তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। থেকে যাও না। কাল চলে যেয়ো
- তারা কি শুনবে আমার কথা?
- একটা রাত তো৷
- ঠিক আছে। থাকবো।
সজীব মিহুকে নিয়ে গাড়ির কাছে গেলো৷ রাশেদ ও আসলো। রাশেদ বললো
- তোরা এটাই চলে যা আমরা অন্য আরেকটাই আসতাছি৷
মেহেরাব ভ্রু কুচকে
- আহারে ভালোবাসা। মামা চলো।
গাড়ি চলে গেলো৷ রাশেদ সজীব কিছু বলতে যাবে কিন্তু পারলো না।
( সবার মনে প্রশ্ন থাকতে পারে রাশেদ সজীব কেন এখনো বাচ্চা নিলো না। রাশেদ আর সজীবের বিয়ে হলো এই ১ বছর ৮ মাস। একটা কারণে এখনো বাচ্চা নিচ্ছে না৷)
সজীব মিহুর দিকে তাকিয়ে
- খুশি তো।
- হুম।
দুজন দু রিকশায় উঠে গেলো।
জান্নাত মেহেরাবকে বললো
- কি রে ভাইয়ারা আসলো কিভাবে?
- ফোন দিছিলাম। তারা চলে আসছে।
- যাক তাহলে তো সুন্দর একটা সময় উপভোগ করলাম।
- তোরা তো করলি আর আমি
রাতুল হেসে দিয়ে
- তুই ও একটা করে নে।
জান্নাত বললো
- তোর মেধা কে নিয়ে আসতি?
মেহেরাব রাগি ভাবে তাকিয়ে
- তোকে আমি ফেলে দিবো আর একবার যদি ঐ নাম মুখে নিস।
রাতুল জান্নাত হেসে উঠলো। মেহেরাব বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
জান্নাত বললো
- ঐ দেখ মেধা।
মেহেরাব তাকিয়ে পড়ে। রাতুল জান্নাত হাসাহাসি শুরু করে। জান্নাত বললো
- মন এখনো চাই।
রাতুল হেসে বললো
- দেখতে হবে কার বন্ধু। যাকে মন দিয়েছে তাকেই তো চাইবে।
- হ এই জন্য সোজা ছ্যাকা৷
মেহেরাব বললো
- মজা নিচ্ছিস তো নে। তোদেরই এ তো টাইম।
- ছেলে দেখি রাগ ও করে।
দুজনে হাসাহাসি করছে। মেহেরাব খুবই বিরক্ত হয়ে গেলো৷ হারামিগুলো মজা তো নিবেই। বাসায় যেয়ে নি বুঝাবো।
গাড়ি এসে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। মেহেরাব নেমে সামনের দিকে হাটা দিবে জান্নাত বললো
- মেয়ে টা কে তো ধর।
- যার মেয়ে তার কোলে দে।
- তুই না বলিস তোর মেয়ে তাহলে।
- তুই তো স্বীকার করিস না।
রাতুল বললো
- তলে তলে তাহলে এসব।
মেহেরাব তাকিয়ে
- কিসব। তোর মতো নাকি।
- আমার মতো কি?
- বলে দি জান্নাত কে?
- থাক থাক বলতে হবে না। তুই না আমার দোস্ত।
জান্নাত ভ্রু কুচকে
- বল মেহেরাব কি কথা?
-তোর এতো জেনে কাজ নেই। বাসায় ঢোক।
রাতুল মারিয়ামকে কোলে নিলো। মেহেরাব বাসায় ঢুকলো। মা সামনে দাঁড়িয়ে
- বাকীরা কই?
- আসতাছে। আমি জান্নাত আর রাতুল চলে এসেছি।
- তোর ভাবিরা কোথায়?
- ভাইয়ার সাথে আসতাছে।
মা অবাক হয়ে
- ভাইয়ার সাথে মানে। ওরা কখন এলো
- সন্ধ্যার দিকে।
- তুই ফোন দিছিলি তাই না
মেহেরাব হেসে দিয়ে
- হ্যা।
মা মেহেরাব কান ধরে
- তোর বান্দর পনা ছুটাবো।
- মা লাগছে তো।
জান্নাত পিছন থেকে
- মা আরো জোরে কান মলা দাও।
- তোকে কিছু বলছে নাকি।
- হ্যা মা। আমাকে বলে আমি কাল সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যায় জেনো।
ওর ভাগে কম পড়ে যাচ্ছে খাওয়া।
মেহেরাব অবাক হয়ে যায়। মা মেহেরাবের কান আরো শক্ত করে ধরে
- কি রে তুই বলছিস এগুলো?
- বিশ্বাস করো মা ও মিথ্যে বলছে।
- মা আমি মিথ্যা বলছি না। রাতুলকে জিঙ্গেস করতে পারো।
রাতুল পাশ দিয়ে
- হ্যা আন্টি ও এগুলো বলছে। আরো বলছে আমরা এসে নাকি খাবার নষ্ট করছি।
মেহেরাব বললো
- হারামি তোরা মিথ্যা বলার জায়গা পাস না।
- কোন টা মিথ্যা কোনটা সত্যি বোঝাবো৷
মা মেহেরাবের কান ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো। জান্নাত রাতুল হাসতে হাসতে ভেতরে ঢুকলো।
রিকশা চলছে রাতের শহরে। রাশেদের কাঁধে মাথা দিয়ে আছে মিথিলা। মিহু আছে সজীবের কাধে। মিথিলা রাশেদ কে বললো
- এরকম অনুভূতি শুধু স্বপ্নই দেখতাম। আজ যে বাস্তব হবে আমি কল্পনা করতে পারি নি।
- সরি। আমার কাজের চাপে তোমার শখ আহ্লাদ গুলো পূরণ করতে পারছি না।
- কি বলছো তুমি? যতটা দিছো কম কি? মায়ের মতো মা পেয়েছি। আর কি লাগে।
- তোমার এই ছোট ছোট আশা স্বপ্নগুলোর সাথী হতে চাই।
- হয়ে তো আছোই।
- বাস্তবায়ন তো করতে পারি না।
- কোনো এক সময় তো স্বপ্ন গুলো পূরণ করে দিবে৷
মিহু সজীবের হাতটা শক্ত করে ধরে
- সুন্দর একটা মুহুর্ত আমার বিয়ের পর। তোমাকে নিয়ে। কখনো ভাবতে পারিনি এমন একটা দিন আসবে৷
সজীব মিহুর হাতটা চেপে ধরে
- তোমার চোখে মুখে অনেক অভিযোগ জমে আছে। কিন্তু তুমি প্রকাশ করছো না।
- কোনো একদিন অভিযোগ গুলো বলবো।
- সেদিন হয়তো তোমার অভিযোগ করাগুলো বাস্তবে পরিণত করবো।
- জানি না পারবে কি না? তবে আজকের একটা অভিযোগ তুমি বাস্তবে পরিণত করলে।
- কি জানি তোমার অভিযোগের ভেতর কি অভিযোগ আছে।
রিকশা চলতে থাকে।
মেহেরাবের মা এসে মেহেরাবকে বললো
- কই রে তোর ভাই রা এখনো আসছে না কেন?
- চলে আসবে নে।
- ফোন দে।
- ফোন আর দিতে হবে না এসে গেছি আমরা।
মা পিছনে তাকাতে দেখলো চারজনে এসে হাজির। মিহু মিথিলা মায়ের কাছে যেয়ে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো। মা বললো
- কি এতে?
- দেখো।
মা প্যাকেট টা খুলে দেখে বেশ অবাক হয়ে বললো
- আমার কি আর সেই সাজার বয়স আছে।
মিহু মুচকি হেসে
- এখনো বয়সের কিছু হয় নি।
- তোরা তো আমার সামনে সেজেগুজে থাকিস ঐটাই তো ভালো লাগে।
- তোমার ভালো লাগলে আমাদের ও ভালো লাগে তোমাকে সাজাতে।
মা হেসে দিলো। সবাই ডিনার করে যে যার মতো করে ঘরে চলে গেলো।
পরেরদিন
মেহেরাব কোচিং-এ গেলো। তামান্না মেহেরাবকে দেখে
- কাল আসো নি কেন?
- বাসায় কাজ ছিলো তাই।
- ওহ। আজকে পড়া করে আসছো।
মেহেরাব মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো
- না। গতকাল পড়তে পারিনি।
- ভাইয়া হোমওয়ার্ক দিছিলো।
- আমি তো জানি না।।
- এই হলো একটা সমস্যা। তোমার কি কোচিল এ কারো নাম্বার নেই।
- না। থাকলে তো জানতেই পারতাম।
- দেখি তোমার ফোন টা।
- কেন?
- দাও বলছি।
তামান্না মেহেরাবের ফোন টা নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে নিজের আইডি সার্চ দিয়ে বের করে এড হয়ে নিলো। মেহেরাবকে ফোনটা দিয়ে
- যেদিন আমি আসবো না বা তুমি আসবে না সে দিন পড়া জেনে নেওয়া যাবে।
ক্লাসে ভাইয়া ঢুকলো। তামান্না নিজের জায়গায় বসলো। সবাই বাসার কাজ করে এনেছে কিন্তু মেহেরাব আনেনি। মেহেরাবকে দাঁড় করিয়ে বললো
- কি সমস্যা বলো?
- গতকাল বাসায় কাজ ছিলো বলো আসতে পারেনি।
আর পড়া তো জানা ছিলো না তাই করে আনতে পারিনি।
- মেয়ে মানুষ নিয়ে মেলায় ঘুরলে আর কোচিং এ আসতে মন চাইবে কেন?
মেহেরাব ভাইয়ার কথায় অবাক হয়ে গেলো। তামান্না মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে পড়লো। মেহেরাব বললো
- তাহলে ভাইয়া আমি যদি ভূল না করি ঐটা আপনি ছিলেন।
ভাইয়া থ ম খেয়ে
- বেয়াদবের মতো কি বলছো। বসো চুপচাপ। কাল থেকে যদি একদিন মিস দাও।
মেহেরাব মুচকি হেসে
- কিছু বললে বলে দিবো।
ভাইয়া চোখ রাঙ্গিয়ে
- বসো চুপচাপ।
কোচিং শেষে মেহেরাব বের হয়ে হাটতে লাগলো৷ হঠাৎ করেই তামান্না মেহেরাবের হাত এসে টেনে ধরলো.....
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com