Breaking News

তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ১৪



ট্রেন এসে থামলো। মেহেরাব এদিক ওদিক তাকাচ্ছে দেখা যায় কি না ফ্রেন্ডকে। না দেখছে না। মানুষের ঢল নেমেছে। মেহেরাব সামনে এগিয়ে ঠ বগিতে চোখ পড়লো৷ কোলে বাচ্চা নিয়ে জান্নাত নামছে হাতে ব্যাগ। মেহেরাব এগিয়ে যেতেই জান্নাত মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে

- কুত্তা এখন আসার টাইম হলো। তুই আগে থেকে এসে দাঁড়াবি না৷ আমি ব্যাগ সামলাবো না বাচ্চা রাখবো।
মেহেরাব জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছে। জান্নাত এবার রেগে যেয়ে ধমক দিয়ে
- তোরে কি আমার দিকে চেয়ে থাকতে বলছি৷ ব্যাগ ধর।
মেহেরাব ব্যাগটা হাতে নিয়ে
- তোর এই খ্যাট খ্যাট স্বভাবটা গেলো না। কে জানে রাতুল তোকে নিয়ে কিভাবে সংসার করে?
জান্নাত মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে
- যেভাবে করার করে। বেশি করলে তো মাইর খাই। এবার তোর কথার জন্য তোর মার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
- হয়েছে বাবা এতো রাগিস কেন?
- রাগাস কেন?
- তা বাচ্চার বাবা আসে নি।
- সাথেই তো রয়েছে আর আসবে কি?
মেহেরাব এদিক ওদিক তাকিয়ে
- কই দেখছি না তো।
- তুই একটা গাধা গাধাই থাকবি।
- তুই কি বলতে চাস হ্যা।
- তুই একটা বলদ।
- তুই তো কত চালাক রে।
- তা কি আর বলতে।
- রাতুল আসেনি কেন?
- ওর আসা না আসা দিয়ে তুই কি করবি।
- তোর বাচ্চাকে রাখতে পারবি।
- কেন? তুই আছিস না।।
- তুই তাহলে স্বীকার করিস এই বাচ্চার বাবা আমি।
- হ্যা করবো তো যখন দুটো দিবো তোকে।
- থাক বাবা শখ মিটে গেছে।
*মেধা হাসিমুখে বাসায় ফিরলো। সোফায় মেধার বাবা বসা ছিলো। মেধার বাবা বললো
- কেমন লাগলো ছেলেটাকে।
- খুব ভালো বাবা।
- তাহলে তো আর কোনো অসুবিধা নেই। বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলি।
মেধা লজ্জা পেয়ে নিজের রুমে দৌড় দিলো। মেধার মা এসে
- মেধা এভাবে চলে গেলো কেন?
- ছেলেটাকে ওর পছন্দ হয়েছে। তাই বিয়ের কথা বলছিলাম।
- যাক ভালো হলো। এখন ভালোই ভালোই বিয়েটা হয়ে গেলে বাঁচে।

মেহেরাব হাতে ব্যাগ নিয়ে হাটছে। জান্নাত বাচ্চা কোলে নিয়ে হাটছে৷
হঠাৎ করে মেহেরাবকে বললো
- তোর মেধা কেমন আছে। চলছে কেমন?
মেহেরাব আর এক পা এগুলো না।
জান্নাত পিছে ফিরে মেহেরাবকে দূরে দেখে এগিয়ে এসে
- কি হলো আসিছ না কেন? থেমে গেলি যে।
- মেধার সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে।
জান্নাত অবাক হয়ে
- কি নিয়ে?
মেহেরাব জান্নাতকে সবকিছু বললো। জান্নাত হেসে দিয়ে
- দেখি তোর গালটা
জান্নাত মেহেরাবের গালের দিকে তাকায়। মেহেরাব বললো
- গালে কি দেখছিস?
- চড়ের দাগ টা আছে কি না?
- তোর জন্য রয়েছে দেখ ভালো করে।
- তুই আমার বন্ধু ছিঃ লজ্জা লাগে আমার। মেয়েদের হাতে চড় খাস।
- লজ্জা দিচ্ছিস।
- তোকে যখন চড় মারছে তোর হাত ছিলো না পাল্টা চড় মেরে দিতি।
- থাক ওসব বাদ দে।
- হুম দিবো।
মেহেরাব আর জান্নাত অটো গাড়িতে উঠলো। রাতুল জান্নাতকে কল দিয়েই যাচ্ছে। জান্নাত কল কেটে দিচ্ছে। মেহেরাব বললো
- কলটা ধরিস না কেন?
- ধরবো না। চুপচাপ থাক।
- তুই একটু ও বদলানি না। জেদিই রয়ে গেলি।
- জেদি রয়েছি বলেই তো সংসার করে খেতে পাচ্ছি। না হলে বিরক্ত কর।
মেহেরাব মুচকি হেসে

- প্রেম করার সময় মনে ছিলো না।
- এটাই তো আমার ভূল ছিলো। বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম ভালোই ছিলাম। কেন যে প্রেম করতে গেলাম?
মেহেরাব হাসছে। জান্নাত রাগে ফুসছে।
অটো এসে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। ভাবিরা বাইরে চলে আসলো৷ জান্নাতের মেয়েটাকে মিথিলা কোলে নিলো। মিহু বললো
- কি ব্যাপার জান্নাত এতো রেগে আছো কেন ?
- বাসা থেকে রাগ করে আসছি। আর এই হারামি আমাকে আরো রাগালো৷ মন টাই চাই মাথাটা ফাটায় দি।
মিথিলা হেসে দিয়ে
- ঘরে চলো। রাগ পড়ে দেখাইয়ো৷ মুখটা তো শুকাই গেছে। খাওনি কিছু।
- নাহ্। আর আমার বন্ধু এতো কিপটা কবি হলি রে।
মেহেরাব ভ্রু কুচকে
- আমি কি করলাম কিপটার?
- রাতুল সাথে থাকলে তো বলতিস কি খাবি? এটা না ওটা। আর আজ আমাকে কিছুই খেতে বললি না৷ খেয়েছি কি না জিঙ্গেস ও করলি না? তোর থেকে ভাবিরা ভালো। আমাকে কত বোঝে।
মেহেরাব হেসে দিয়ে
- তুই যাতে খেতে পারিস। রাতুল টাকাটা দিয়ে দিতো আমার আর টাকা খরচ হতো না।
- ওরে শয়তান।

মিথিলা বললো
- আহা কি শুরু করলা? ঘরে চলো। পড়ে ঝগড়া কইরো।
সবাই ঘরে চলে গেলো। মেহেরাবের মা ঘুম থেকে বাইরে এসে জান্নাতকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। জান্নাত যেয়ে মা কে জরিয়ে ধরে
- কেমন আছো মা তুমি।
মা কোনো কথা বলে না৷ জান্নাত আরেকটু জোরে জরিয়ে ধরে
- রাগ করে থাকবা৷ এতোদিন পর এলাম খুশি হও নি।
মা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে
- আমি যদি তোর মা হতাম তাহলে খোঁজ খবর নিতি আসতি। কোনোটাই করলি না।
- কি করবো বলো? ঝামেলা গুলো কাটিয়ে উঠলাম। তারপর বেবি হলো। একটু বড় হলো ঝগড়া বাঁধিয়ে চলে এলাম।
- ৩ টা বছর পর এই বাড়িতে আসলি।
- আর এমন হবে না৷ এবার থেকে যাওয়া আসা করবো।
- তোর বাসা থেকে কোনো প্রবলেম নেই তো।
- না। তোমার বান্দর ছেলে আমার পরিবারকে যে ভয় দিছে তাতেই তারা সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
- কি? আমি জানলাম না৷ ও তো আমাকে বলেনি। এতো সহজে বাড়িতে যেতে দিবো না।
- হ্যা আমি ও তাই ভেবে এসেছি।

মিহু বললো
- মা ওকে খেতে দিবো৷ না খেয়ে মুখটা শুকায় ফেলছে৷
- হ্যা তাই তো। খাবি চল।
জান্নাতকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললো। জান্নাতের মেয়ে মারিয়াম কে নিয়ে দুষ্টুমিই ব্যস্ত মিথিলা।
রাত ১২ টা
মেধার ফোনে কল আসলো। মেধা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো হবু জামাই কল করেছে। মেধা ফোনটা রিসিভ করলো। হবু জামাই বললো
- কি করো?
- এই তো শুতে যাবো। তুমি?
- দাঁড়িয়ে আছি৷
- এ মা এতো রাতে দাড়িয়ে আছো কেন?
- তা কি করবো?
- কেন শুয়ে থাকবা না হলে বসে থাকো?
- দুটোর কোনো কিছু হচ্ছে না।
- কেন?
- তোমাকে খুব খুব মিস করছি।
মেধা চুপ হয়ে গেলো। ওপাশ থেকে
- জীবনের প্রথম তোমাকে দেখে ভালোবেসে ফেলছি। তোমার সাথে কাটানো সময় গুলো বড্ড মিস করছি৷ যতক্ষণ সাথে ছিলে এই শূন্যতা কাজ করেনি। কিন্তু এখন নেই তুমি শূন্যতা ঘিরে ধরছে। - ও বাবা তাই। এক দিনে এতোকিছু
- হুম। তুমি তো আমার বউ হবে না হবার কি আছে?
- হ্যা। আমি তো তোমার মনের ভেতরেই আছি।
দুজনে কথা বলতে লাগলো।
রাত ২ টা
দরজা ধাক্কানোর শব্দে মেহেরাবের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। মেহেরাব উঠে যেয়ে দরজা টা খুলতেই অবাক হয়ে গেলো...........

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com