তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ১৯
ক্লাস শেষে সবাই বেরিয়ে পড়লো। তামান্না বের হয়ে দেখলো গতকালকে সেই তিনটা ছেলে বসে আছে। তামান্না সামনের দিকে হাটতে লাগলে ছেলে তিনজন পিছু নেয়। শিপন বলে
- দোস্ত বল বল তুই ওকে পছন্দ করিস।
লিমন বললো
- আরে দোস্ত এতো ভয়ের কি আছে ভালোবাসিস বলে দিলে তো হয়।
রিপন বললো
- তোরা চুপ থাক তো।
তামান্না শুনে ও না শোনার ভান করে যাচ্ছে। শিপন লিমন বাজে কথা বলা শুরু করলো। তামান্নার একদিকে ভয় কাজ করছিলো আরেকদিকে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। সামনে মেহেরাবকে দেখে তামান্না দৌড়ে যেয়ে মেহেরাবের হাত টেনে ধরলো। মেহেরাব তামান্নার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে পড়লো।
রিপন বাইক টান দিয়ে সামনে চলে গেলো। শিপন বললো
- মামা কাজ টা কি হলো?
লিমন বললো
- ছেলেটা কে?
- বুঝতাছি না।
রিপন বললো
- হয় তো বয়ফ্রেন্ড৷ নাই এভাবে হাত ধরে৷
রিপন বললো
- বয়ফ্রেন্ড হোক আর যায় হোক ওকে আমার লাগবে। যে করেই হোক ওকে আমার লাইনে আনতে হবে।
- তাহলে আগে ওর বয়ফ্রেন্ড কে সরাতে হবে।
- ঐ নিজেই ওর বয়ফ্রেন্ড কে ছেড়ে আমার কাছে আসবে।
মেহেরাব তামান্নাকে বললো
- কি হলো হাঁপাচ্ছেন কেন?
- তুমি আমাকে একা রেখে চলে আসলে কেন?
- কেন? আপনি কি আমার সাথে যাবেন?
- না। তুমি আমাকে না বাসায় পৌঁছে দিবা।
- আপনার মা আসেনি
- সে কি রোজ আসবে?
- আগে বলবেন না। তাহলে দাড়াতাম। চলেন বাসায় এগিয়ে দিয়ে আসি
- আমাকে নিয়ে মেলায় চলো
মেহেরাব ভ্রু কুচকে
- মেলায় কেন নিয়ে যাবো আমি? আপনার বাসার লোকদের সাথে যাবেন।
- কেন অন্য মেয়ে নিয়ে মেলায় যেতে ভালো লাগে। বন্ধু কে নিয়ে গেলে সম্মান থাকবে না।
- বলেন কি এসব আপনি? আমার কাজ আছে।
- ঠিকি বলছি। ভাইয়া তো নিজেই দেখছে তোমাকে। কে ছিলো তোমার সাথে সত্যি করে বলো?
- ভাবি ছিলো, বন্ধু ছিলো আর ছোট্ট একটা মেয়ে।
- মিথ্যা বলছো।
- মিথ্যা বলবো কেন?
- এখন আমাকে নিয়ে মেলায় যাবা কোনো কথা না।
তামান্না মেহেরাবের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলো।
তামান্নার মায়ের ফোনে ফোন বাজছে। মা তো অবাক হয়ে গেলো৷ কারণ কল টা তামান্নার ভাই করছে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে
- তোমার মেয়ে কি লাগাইছে? রাস্তা ঘাটে ছেলে নিয়ে ফস্টি নষ্টি করছে। ওর জন্য তো আর মান সম্মান থাকবে না।
- তোর মান সম্মান কবে থাকলো। তুই কে ওর? আছে কোনো পরিচয় তোর ওর জন্য। আমার মেয়ে কি করলো না করলো তোকে মাথা ঘামাতে বলি নি। ও যা ইচ্ছা তাই করবে। মান সম্মান গেলে আমাদের যাবে। তোকে এতো ভাবতে বলিনি। তুই আমাদের মানসম্মান কম খাসনি।
কথাগুলো বলে তামান্নার মা কলটা কেটে দিলো। তামান্নার মা একা একা বলছে
- আসছে মান সম্মান। বিপদের সময় বলছিলাম বলে কিসব বলছিলো। এখন আসছে মানসম্মান নিয়ে।
মেহেরাব হাত ধরে নিয়ে যেতেই তিনজনে অবাক হয়ে যায়। শিপন বললো
- তাহলে ঐটা ওর বয়ফ্রেন্ড।
রিপন রাগি ভাবে
- যেই হোক। ওকে আমার করে নিবো।
তিনজনে চলে গেলো।
জান্নাত এসে মা কে বললো
- মেহেরাব এখনো আসছে না কেন?
- ওর তো এতক্ষণে চলে আসার কথা।
- ওকে এতো করে বললাম তাড়াতাড়ি আসতে। আমরা বের হবো তার কোনো খোঁজ নেই৷
- সামনে পরীক্ষা হয়তো এখনো ক্লাস করছে।
রাতুল এসে
- চলো আমরা বের হই। মেহেরাব ফোন তুলছে না।
- হ্যা চলো। আজ ও আসুক বাড়িতে।
জান্নাত রাতুল বের হবে তখন মা বললো
- বেশি রাত করিস না। তাড়াতাড়ি বাসায় আসিছ।
- ঠিক আছে।
মিথিলা এসে
- মা রাতে কি খাবেন?
মা একটু অবাক হয়ে
- আমাকে বলছো।
- হ্যা। তা কাকে বলবো
- তুমি কি সব ভূলে গেছো। নাকি ছেলের সাথে ঝগড়া হয়েছে বলে অভিমান করছো।
মিথিলা হেসে দিয়ে
- না মা। যা রান্না করি তাই তো খান। তাই ভাবলাম আজ আপনার থেকে শুনে রান্না করি৷
- আমার তো পছন্দের জিনিসই তো রান্না করো।
- তা ও আজকে মন চাচ্ছে আপনি যা বলবেন তাই রান্না করবো।
- আজ এতো খুশি কেন?
মিথিলা লজ্জা পেয়ে গেলো। গাল মুখ ভরা হাসি।
মা বললো
- বুঝছি। চলো আমি রান্না করবো তুমি হেল্প করবে।
- না।
- বলছো না আজ আমার কথা শুনবে। আমার এটাই ইচ্ছা।
- ঠিক আছে।
দুজনে রান্না ঘরে চলে গেলো।
তামান্না মেহেরাবকে নিয়ে মেলার ভেতর ঢুকলো।
তামান্না একটা দোকানে যেয়ে হাতে চুড়ি নিলো। চোখে মুখে হাসি। মেহেরাব তামান্নার খুশি হওয়াটাকে দেখছে।
তামান্না মেহেরাবকে চুড়িগুলো দেখিয়ে
- সুন্দর না।
- হুম সুন্দর আছে৷
তামান্না চুড়িগুলোর দাম শুনলো৷ ব্যাগ থেকে টাকা বের করতেই মুখটা মলিন হয়ে গেলো। ব্যাগে টাকা নেই। ভূলে রেখে আসছে বাসায়। মেহেরাব পাশে যেয়ে
- কি হলো?
- কিছু না। চলো সামনের দিকে যায়।
- নিবেন না।
- না কেমন জানি লাগছে চুড়িগুলো। সামনে আরো দোকান আছে ওখানে দেখি৷
মেহেরাবের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলো। মেলার ভেতর কিছুক্ষণ ঘুরলো। তামান্নার ইচ্ছা থাকলে ও কিছু কিনতে পারছে না। কি যে ভূল টা করছে টাকাগুলো ভূলে রেখে এসে৷ মেহেরাব শুনলে কি না কি মনে করবে। তামান্না দাঁড়িয়ে ভাবছিলো। তখন মেহেরাব দু প্লেট ফুসকা এনে তামান্নার সামনে ধরলো। তামান্না অবাক হয়ে চেয়ে আছে মেহেরাবের দিকে। মেহেরাব বললো
- ধরেন। আমাদের শহরে এসেছেন খালি মুখে ফিরিয়ে দিলে কেমন না।
তামান্না ফুসকার প্লেট নিলো। লজ্জা লাগছে তামান্নার। তবুও জেনো ফুসকার লোভ সামলাতে পারছে না। খাওয়া শুরু করে দিলো। এক প্লেট শেষ হতেই আরেকটা প্লেট দিলো। মেহেরাবের দিকে তাকালো। মেহেরাব বললো
- এটা আপনার ফেভারিট। এক প্লেটে হয় না জানি আমি। তাই তো দু প্লেট।
তামান্না অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাব জানলো কি করে। তামান্না বললো
- তুমি খাবে না।
- না। আপনি খান।
- তুমি নাও খাও।
- আপনার জন্য আনছি আপনি খাবেন।
তামান্না একটা ফুসকা ধরে মেহেরাবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে
- একটা হলে ও খেতে হবে।
পিছন থেকে
- বাহ্ বাহ্ কি রোমান্টিক সিন। না আসলে তো দেখতেই পারতাম। তলে তলে এসব চলছে।
মেহেরাব পিছন ফিরতেই থ ম খেয়ে গেলো। তামান্না কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে পড়লো। মেহেরাব বললো
- জান্নাত তুই?
জান্নাত এসে মেহেরাবের কান ধরে
- বান্দর আমাদের চোখকে ফাঁকি দিবি কি ভাবছিস?
- আরে দোস্ত তুই যেটা ভাবছিস তা না।
- তোরে বলছিলাম তাড়াতাড়ি বাসায় আসবি।তুই না এসে গালফ্রেন্ড নিয়ে মেলায় আসছোস। ফুসকা খেতে।
তামান্না গালফ্রেন্ড নামটা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলো। মেহেরাব বললো
- দোস্ত আর মানইজ্জত খাইছ না। কান টা ছাড়।
- আমার থেকে কেন লুকালি?
- কি লুকাইছি? বলছি তোকে
জান্নাত কানটা ছেড়ে দিলো। মেহেরাব জান্নাতকে বললো
- এ হচ্ছে তামান্না আমরা একই কোচিং এ পড়ি। আর তামান্না ও হচ্ছে আমার বন্ধু জান্নাত।
এর ভেতর রাতুল এসে
- কি রে মেহেরাব তোর সাথে মেয়েটা কে? তবে
- চুপ থাক তুই। তামান্না ও হচ্ছে রাতুল জান্নাতের জামাই।
জান্নাত পরিচয় হয়ে নিলো তামান্নার সাথে। রাতুল ও হলো। মেলার ভেতর কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর বের হলো। দুটো রিকশা নিলো। জান্নাত রাতুল একটা রিকশায় উঠলো। মেহেরাব আর তামান্না এক টাই।
রিকশাওয়ালা রিকশা চালানো শুরু করলো। আড় চোখে তামান্না মেহেরাবের দিকে দেখছে। কিছুটা দূর যেতেই রিকশাওয়ালা মামাকে থামিয়ে দিলো মেহেরাব। রিকশা থেমে গেলো। তামান্না অবাক হয়ে গেলো..........
চলবে.....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com