অহংকারী বউ । পর্ব - ০৪
ভোর ৪.৩০ মিনিট
মুখের ওপর ঠান্ডা পানির ঝটকা লাগায় ঘুম ভাঙে নীলার। ঘুম ভাঙতেই লাফিয়ে উঠে বসে নীলা।
তারপর চোখ ডলতে ডলতে বলে
-- হাউ ডেয়ার ইউ, ইউ ষ্টুপিড, কি করলে কি এটা?
এভাবে আমার মুখে পানি ছুড়ে মারার মানে কি?
নীলার কথা শুনে গ্লাস হাতে নীলার পাশে বসে বাকা হেসে আবির বললো
-- মনে হচ্ছে কাল রাতের কথাগুলো সব ঘুমের ঘোরে ভুলে গেছো তাইনা নীলা।
ওকে গুড, তুমি চাইলে আমি আবারও মনে করিয়ে দিতে পারি।
কথাগুলো বলেই হাতে গত রাতের সেই লাঠিটা উঠিয়ে নিলো আবির।
আবিরের হাতে লাঠি দেখে রাতের কথা সব মনে পরে গেলো নীলার।
ভয়ে নীলা শুকনো ঢোক গিলে বললো
-- কি কি করবে তু তুমি, আমাকে এত রাতে ঘুম থেকে তোলার মানে কি?
-- এত রাত নয় বরং ভোর বলো।
আর আমি তোমায় তুলেছি কারন তুমি এখন ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়বে।
তাই যাও বিছানা থেকে নেমে কাপড় পাল্টে ওজু করে এসে নামাজ পরো।
আবিরের কথা শুনে নীলা ভ্রু কুচকে বললো
-- নামাজ, কিন্তু আমি তো জীবনেও কখনো নামাজ পড়িনি আর নামাজ পড়তেও জানিনা।
আমি নামাজ পড়বো না আমি ঘুমাবো।
কথাটা বলেই যেইনা শুয়ে পরতে নিলো নীলা। সাথে সাথে আবির নীলার পিছনে একটা বারি মেরে দিলো।
নীলা চিৎকার করে উঠে নাকে কাঁদতে শুরু করলো।
নীলার কান্না দেখে আবির রাগি গলায় বললো
-- আমি এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনবো।
এর মাঝে তোমাকে বিছানা ছেরে নেমে ওয়াশরুমে যেতে হবে ওজু করার জন্যে ।
তা না হলে এটার বারি একটাও নিচে পরবে না।
আবিরের কথা শুনে ঠোট উল্টে ন্যাকা কান্না শুরু করলো নীলা।
আবির সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে এক দুই তিন গুনতে শুরু করলো।
সাথে সাথে নীলা লাঠির বারি খাওয়ার ভয়ে খাট থেকে নেমে ওয়াশরুমে দৌড় দিলো।
নীলার অবস্থা দেখে মুচকি হেসে আবির মনে মনে বললো
-- তোমাকে আমি ভালো করেই ছাড়বো নীলা। কারন তোমায় আমি ভালবাসি।
তাই তোমাকে একজন ভালো স্ত্রী বানিয়ে ছাড়বো আমি।
তার জন্যে আমার যা করতে হয় তা আমি করবো।
ওয়াশরুমের বাইরে দাড়িয়ে দরজায় টোকা দিয়ে আবির বললো
-- নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে জলদি ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হও।
আবিরের কথা শুনে রাগে দাঁত কিড়মিড় করে নীলা মনে মনে বললো
-- একবার শুধু তোর হাত থেকে মুক্তি পেয়ে নেই আবির।
তারপর তুই বুঝবি এই নীলা তোকে কি করতে পারে।
নীলার গায়ে তুই যে হাত দিয়ে আঘাত করেছিস সেই হাত কুচিকুচি করে না
কাটতে পারলে আমার নামও নীলা নয়।
-- মনে মনে আমায় বকা বকি বন্ধ হয়ে থাকলে এখন জলদি বের হও নীলা।
নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে।
আবিরের কথা শুনে এতক্ষণে নীলার মনে হলো ও
ওয়াশরুমে আসার আগে কোনো ড্রেস নিয়ে আসেনি।
এদিকে গায়ে থাকা বিয়ের পোষাকটাও খুলে রেখেছে।শুধু তাওয়াল পড়ে আছে ও।
-- আবির আমি ভুল করে কোনো জামা কাপড় না নিয়েই ওয়াশরুমে চলে এসেছি।
আর এখন আমি শুধু তাওয়াল পড়ে আছি। এখন আমি বাইরে বের হবো কি করে?
নীলার কথা শুনে আবির তার ব্যাগ থেকে একটি অনেক সুন্দর সুন্নতি পোষাক
আর পাজামা ওড়না বের করে এনে ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিয়ে বললো
-- দরজাটা একটু খোলো আমি তোমার জন্যে পোষাক এনেছি সেগুলো নিয়ে পড়ে নাও।
ভয় নেই আমার এখন তোমাকে দেখার মতো মুড নেই তাই সময় নষ্ট না করে পোষাকটা নাও।
আবিরের কথা শুনে না চাওয়া সত্যেও হালকা একটু দরজা খুললো নীলা।
তারপর আবিরের হাত থেকে এক ঝটকায় কাপড়গুলো নিয়েই দরজা লাগিয়ে দিলো।
নীলার এমন করা দেখে মুচকি হাসলো আবির।
নীলা কাপড় গুলো ভালো করে দেখে নাক ছিটকে বললো
-- ছিইইই কি এগুলো? এই দু পয়সার পোষাক গুলো কে পড়বে?
আমি বাবা এসব পড়তে পারবো না। আমার জিন্স আর টপস কই?
-- আজ থেকে তুমি এগুলোই পড়বে নীলা।
একজন মুসলমান মেয়ের এটাই হলো আসল পোষাক। জিন্স টপসের কথা ভুলে যাও।
-- ইম্পসিবল, আমি এগুলো কিছুতেই পড়তে পারবো না। আমার জিন্স আর টপ্সই চাই।
-- ওকে ফাইন তোমাকে কিছুই পড়তে হবে না তুমি তাওয়াল পড়েই বাইরে এসো।
তারপর কাল রাতে যেটা হয়নি সেটা এখন করবো।
-- কাল রাতে! যেটা হয়নি মানে? কিসের কথা বলছো আবির?
-- কিসের আবার কাল রাতে তো আমাদের বাসররাত ছিলো। তো কাল রাতে যখন সেটা হয়নি।
তাই আমি ভাবছি তুমি যখন ঐ কাপড়গুলো পড়বেই না
তাহলে তো তোমায় তাওয়াল পড়েই থাকতে হবে। আর তাওয়াল পরেই বাইরে বের হতে হবে।
তাহলে আমিও তোমার সাথে নিজের বাসরটা সেরে নিবো কি বলো?
বাইরে থেকে আবিরের কথা শুনেই চোখ বড় বড় করে চিৎকার করে নীলা বলে উঠলো
-- পড়ছি পড়ছি আমি এখনি এগুলো পড়ছি।
-- এই তো গুড গার্ল। এখন তারাতারি ওগুলো পড়ে ওজু করে এসো নামাজ পড়ে নাও।
জলদিইই আবিরের কথা শুনে নীলা আর কোনো উপায় না
পেয়ে আবিরের দেওয়া পোষাকগুলো পড়ে নিলো।
তারপর ওজু করে বাইরে বেরিয়ে এলো।
নীলাকে এখন দেখতে একদম অন্য রকম লাগছে।
ঢিলেঢালা হলুদ রঙের সুন্নতি পোষাক সাথে মাথায় সুতি পাতলা ওড়না।
একদম ভদ্র ও নেক্কার মেয়ের মতো সুন্দর লাগছে দেখতে।
আবির বেশ কিছুক্ষণ নীলার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো
-- এখন যাও ঐ খানে জায়নামাজ রাখা আছে নামাজ পড়ে নাও।
আরিবের হাতে এখনো সেই লাঠিটা আছে।
যেটা দেখে নীলা আর কিছু বলার সাহস পেলো না।
তাই বাদ্ধ মেয়ের মতো জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে বসলো।
ছোট বেলায় নীলার মা বেচে থাকতে নীলাকে ওজু করা নামাজ পড়া
সব শিখিয়ে ছিলেন তাই নামাজ পড়তে খুব একটা অসুবিধা হলো না নীলার।
নামাজের মাঝে ঘুমে বার বার ঢুলে ঢুলে পরতে নিলো নীলা কিন্তু পরলো না।
এটা দেখে আবির অন্য দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। তারপর মনে মনে বললো
-- আজ তুমি ঘুমের ঘোরে আমার মাইর খাওয়ার ভয়ে অনিচ্ছায় নামাজ পড়লে।
খুব তারাতারিই তোমার জীবনে সেই দিন আসবে যেদিন তুমি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজ
পড়বে তাও আল্লাহর ভয়ে ইনশাআল্লাহ।
কথাগুলো আনমনে ভেবেই মিষ্টি করে হাসলো আবির।
নীলার নামাজ শেষ হলে নাক ফুলিয়ে জায়নামাজের ওপরেই বসে রইলো নীলা।
নীলাকে বসে থাকতে দেখে আবির বললো
-- এভাবে বসে না থেকে উঠে নিজের সব জিনিসগুলো গুছিয়ে নাও।
তারপর টেবিলে শুকনো খাবার রাখা আছে সেগুলো খেয়ে নাও।
আমাদের বের হতে হবে বাড়ি যেতে হবে তো।
-- আমি কোথাও যাবো না। আমি বাসায় যাবো আমার ড্যাডির কাছে যাবো।
তোকে আমি পুলিশে দেবো খুন করবো তোকে আমি।
-- চোপ একদম চুপ নইলে এমন মাইর দিবো না, যে নিজের নামটাও ভুলে যাবে।
প্রস্তুত হয়ে নাও সামনে তোমাকে নতুন জীবন পার করতে হবে
যে জীবন তোমার জন্যে মোটেও ভালো হবে না।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com