অনুভূতিহীন । পর্ব - ২০
অরশ তার পি,এ আসিফকে লাবন্যের ঘটনা খুলে বলল।
আসিফঃ স্যার আমি আপনার আন্ডারে জব করি আপনার প্রতিটি কথা মানতে আমি বাধ্য। আপনাকে আমি কোন অধিকার বা রিকুয়েষ্ট করবনা। শুধুমাত্র বিজনেসের স্বার্থে বলছি এই মিটিং টা আমাদের জন্য ভেরি ইমপ্লান্ট। আমি চাইনা আমার স্যার কারো কাছে হার মেনে পালিয়ে যাক আমি চাই আমার স্যার সকল বাধা অতিক্রম করে সাফল্যের পথে এগিয়ে চলুক। তা বলছি স্যার আপনি বাংলাদেশ ব্যক করুন তবে মিটিং আগে কম্পিলিট করতে হবে। sir this meting is very important in our business sector...
অরশ কিছুক্ষন চিন্তা ভাবোনা করে আসিফকে বললঃ আসিফ আমি প্রতিশোধ নিতে চাই আমার পাওয়া প্রতিটি কষ্টের জবাব ফিরিয়ে দিতে চাই তাদের। আমি রহিমের কথা না শুনে অনেক বড় ভুল করেছিলাম সেই ভুল দ্বিতীয় বার করতে চাইনা।
আসিফঃ স্যার আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?
অরশঃ আমি তিথিকে বুঝিয়ে দিতে চাই আমার থেকে ২০ লাখ টাকা এনে এতো স্বাভাবিক ভাবে বেচে থাকা অসম্ভব। তুমি আগামীকাল সকাল ৯টায় মিটিং ফাইনাল করো।
আসিফঃ ওকে স্যার।.... I do it.
রাত ১২ টা বাজে
তিথি বিছানায় সুয়ে আছে কিছুতেই দুচোখের পাতা এক করতে পারছেনা। এতো বছর পর আবার অরশের সাথে দেখা। আমার সাজানো গোছানো অসম্পূর্ণ জীবন কি আবার তছনছ হতে চলেছে? উনি কি চাই! গতকাল আমাকে দেখে মিটিং ব্যান করল। আগামীকাল আবার মিটিং করতে চাচ্ছেন কেন? আমিতো ওনার সামনে যেতে চাইনা তা হলে উনি কেন আমার সামনে চলে আসেন।
পরদিন সকাল সাড়ে নয়টা।
মিটিং রুমে সবাই বসে আছে তিথির অপেক্ষায়।
তিথি সামান্য একজন কর্মকর্তা হলেও মির্জা গ্রুপের সুনাম ডিফেন্ড করে তিথির উপর কারন তিথি হল মির্জা গ্রুপের সব চাইতে ভালো ট্রেইনার। যার প্রেজেন্টেশন প্রতিটি মিশনের অর্ধেক কাজ কম্পিলিট করে দেই। তিথির প্রেজেন্টেশন দেখে যে কোন এমডি ডিল সাইন করতে অনেকটা উদ্ভুদ্ধ হয়ে ওঠেন।
তিথি এসে দেখতে পাই সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে।
তিথিঃ মির্জা স্যার আই এম ভেরি সরি। আমার বাসা থেকে ১০ টার আগে অফিসে আসা কষ্টকর তাই লেট হয়েছে সরি স্যার।
মিঃ মির্জাঃ সেটা না হয় আমি মেনে নিলাম কিন্তু মিঃ অরশ, মিঃ অরশকে কিভাবে মানাবো? যাও সুন্দর ভাবে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করো। তিথি আমি তোমাকে মেয়ের মত জানি তোমার প্রতি আমার পূর্ণ বিস্বাস আছে। আমি চাই এই প্রেজেন্টেশন দ্বারা তুমি মিঃ অরশের কোম্পানির সাথে আমাদের নতুন এক সম্পর্ক প্রতিস্থাপন করবে।
অরশঃ সাধারণ একজন ইম্পালার এর জন্য আর অপেক্ষা করব?
মির্জাঃ মিঃ অরশ আপনি শান্ত হন, তিথি এসেছে এক্ষুনি প্রেজেন্টেশন দেখানো হবে।
৪টা কোম্পানি একত্রিত হতে চলেছে আজ।
সকল কোম্পানির এম,ডি জি,এম উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত আছেন।
তিথি প্রেজেন্টেশন শুরু করল।
সকলেই বাহ বাহ দিলো।
সবার মাঝ থেকে অরশ ভুল দেখিয়ে বললোঃ
'''''' মিসেস তিথি আপনি পুনরায় দেখান।
অরশের মুখে আপনি ডাক শুনে তিথির গায়ে জালা উঠে যায়। তিথি আবারো প্রেজেন্টেশন করলো।
এই নিয়ে তিথি ৩বার প্রেজেন্টেশন করেছে প্রতিবার অরশ খুজে খুজে ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে।
মিঃ মির্জা ঘাবড়ে গিয়েছেন কারন তিথির এমন ভুল কোনদিন হয়নি।
তিথি রাতে ঘুমাইনি তাই এমন ভুল বার বার হচ্ছে।
এমন সময় তিথির ফোনে রিংবাজে।
তিথিঃ মির্জা স্যার আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। বলেই তিথি রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
অরশঃ মিঃ মির্জা একমন ইম্পোলয়ি আপনার বার বার ভুল করেছে তার উপর সবাইকে বসিয়ে রেখে বাইরে চলে গেল? স্যালারি দেন না নাকি?
মিঃ মির্জাঃ সরি একটু সময় দেন।
অরশঃ কত সময় চান আপনি একেতো প্রথমেই আধাঘন্টা লেট করিয়েছেন এখন আবার সামান্য কর্মকর্তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে?
তিথি এসেছে ।
তিথিঃ সরি স্যার বাইরে একটু কাজ ছিলো। আমি এখন প্রেজেন্টেশন দিচ্ছি।।
অরশঃ তার আর দরকার নেই বাকিটা আমি দেখে নিবো আপনি পেপারস গুলি দিয়ে দিয়েন।
তিথিঃ ওকে স্যার আমার রুমেই আছে আমি নিয়ে আসতিছি।
তিথি পেপার আনতে রুমে গিয়েছে ১০ মিনিট হল এখনো ফিরছেনা।
অরশঃ আসিফ যেয়ে দেখোতো কি হয়েছে আসতিছেনা কেন....
আসিফ তিথির রুম থেকে ঘুরে এসে অরশকে জানাইঃ স্যার উনি বাচ্চার সাথে খেলা করছেন।
অরশঃ কি!!!!! অফিসে এসে বাচ্চার সাথে খেলা তিথির রুম কোন দিকে??? (এক্সাইটেড হয়ে)
অরশ তিথির কেবিনের সামনে গিয়ে দেখতে পাই, একটা বাচ্চা টেবিলের উপর বসে আছে সামনে তিথি চেয়ারে বসে বাচ্চার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
অরশঃ আমাকে বসিয়ে রেখে এখানে এসে বাচ্চার সাথে খেলা হচ্ছে? (চিল্লিয়ে)
তিথিঃ প্লিজ স্যার একটু আস্তে বলুন। ছোট বাচ্চা ভয় পেয়ে যাবে।
অরশঃ তুমি এক্ষুনি পেপার দাও। (জোরে চিল্লিয়ে)
অভ্র (বাচ্চার নাম)ঃ মাম্মাম মাম্মাম মাম্মাম (তিথির কোলে গিয়ে)
তিথিঃ ভয় নেই বাবা এইতো আমি।
অরশ রুমের ভিতরে এসে অভ্রের দিকে তাকিয়ে মুহুর্তের মাঝে শান্ত হয়ে যায়। অভ্রের চোখে চোখ রাখতেই অরশের মাঝে শীতলতা বয়ে যায়।
অরশঃ কে এই বাচ্চা? (খুব শান্ত গলায়)
তিথিঃ আমার ছেলে অভ্র।
অরশঃ ওর বাবা কোথায়?
তিথিঃ sir this is my personal metter... আমি এ বিষয়ে আপনাকে কিছু বলতে বাধ্য নই।
অরশঃ আমার বাসা থেকে ২০ লাখ টাকা চুরি করে এখানে এসে বিয়ে করে ছেলে সংসার নিয়ে ভালোই আছো দেখছি।
তিথিঃ স্যার এই নেন ফাইল ভিতরে সব পাবেন। আমি পার্সোনাল কিছু বলতে বা শুনতে আগ্রহী না।
অরশঃ ওকে পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলাবোনা। তবে কাল থেকে তুমি আমার আন্ডারে কাজ করবে। আমি মিঃ মির্জাকে বলে রাখব এখানে যতদিন আছি ততদিন তোমার ডিউটি আমার সাথে। দেখি তোমার পার্সোনালিটি কোথায় যায়। (অনেকটা হুমকির সুরে কথা বলে অরশ বেরিয়ে যায়)
রাতে।
অরশঃ জানো আসিফ সবচাইতে অদ্ভুত ব্যাপার কি?
আসিফঃ না স্যার, আপনার মুখে বলেন শুনি।
অরশঃ যে ক্ষতি করে সে মুহুর্তের মাঝেই ভুলে যায় কিন্তু যার ক্ষতি হয় সে সারা জীবনেও ভুলতে পারেনা। তিথির সাথে আমার ডিভোর্স হয়নি লিগালি সে এখনো আমার স্ত্রী, আমি ইচ্ছা করলেই তার কাছে স্বামীর দাবি নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু তার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট আমার নেই। যদিও তাকে খুব ভালো মনে হতো। হয়তো ভালোও বেসেছিলাম। কিন্তু সেও লাবন্যের মত টাকা নিয়ে আমার জীবন থেকে পালিয়ে গেল। জীবনে টাকাই কি সব?
আসিফঃ স্যার প্লিজ এই কথা ভুলে যান।
অরশঃ বললাম না যার ক্ষতি হয় সে ভুলতে পারেনা। তিথির উপর প্রচন্ড রাগ ছিলো আমার। কিন্তু তিথির বাচ্চাকে দেখে মুহুর্তের মাঝে সব রাগ কোমল হয়ে গেল। বাচ্চাদের চেহারায় এতো মাধুর্য থাকে আমি আগে দেখিনি। কত নিস্পাপ বাচ্চাটির চাহুনি। দেখে মনেই হয়না তিথির মত কালনাগিনীর পেট থেকে অত মায়াবী সন্তান জন্ম নিতে পারে।
অরশের কথায় আসিফ কিছুটা চিন্তায় পড়ে যায়।
অপরদিকে তিথি তার ছেলে অভ্রকে জড়িয়ে সুয়ে আছে।
অভ্রঃ মাম্মাম মাম্মাম ওই আংকেলটা তোমাকে বকা দিলো কেন?
তিথিঃ অভ্রবাবা সবাইকে আংকেল বলতে হয়না উনি আমার স্যার। ভুল করলে স্যার বকা দেন। তুমি যখন ভুল কর তখন তোমার স্কুলের স্যার বকা দেন তেমনি আমি যখন ভুল করি তখন আমার অফিসের স্যার বকা দেন।
অভ্রঃ মাম্মাম মাম্মাম থাক তুমি কেঁদোনা, তোমার চোখের পানি অভ্রবাবা মুছে দিচ্ছে৷। আমি তোমার স্যারকে বলে দেব উনি জেন আমার মাম্মামকে আর বকা না দেন। মাম্মাম তুমি এখন ঘুমাও অভ্রবাবারো খুব ঘুম পেয়েছে (অভ্রের বয়স ৫+ বছর)
তিথি অভ্রকে জড়িয়ে হুহু করে কেদে দিলো।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com