তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ১২
মেহেরাব আর তামান্না রেস্টুরেন্টে ঢুকে বসলো। দুজনে মুখোমুখি বসলো। তামান্না ওয়েটারকে ডেকে খাবারের অর্ডার দিলো। ওয়েটার চলে যাওয়ার পর তামান্না বললো
- গতকালকে আমাদের থানায় ডেকে নিয়ে গেছিলো।
মেহেরাব অবাক হয়ে
- কেন?
- ঐ যে ছেলেটা আছে না ব্ল্যাকমেইল করতো ও আমার ছবি এডিট করে তারপর আমাদের দেখাইছিলো৷ আমরা সবাই তা বিশ্বাস করে নিছিলাম। পুলিশে সব তথ্য বের করে আমাদের বললো।
- তারপর
- পরে আমাদের কেই কিছু বললে জানো থানায় যেয়ে বলি।
- তাহলে তো ঠিকি আছে।
- তুমি যদি আমাকে নিয়ে বের না হতে। রাস্তায় ঐ ঝামেলায় পড়ার পর পুলিশ এসে যদি না ধরে নিতো তাহলে এত বড় সত্যি কথা জানতে পারতাম না। তোমার জন্য আমরা সত্যি টা জানতে পারছি।
মেহেরাব মুচকি হেসে
- তাহলে আর ভয় নেই।
- নাহ। আমি আবার ও হাসিখুশি ভাবে জীবন সাজাতে পারবো৷
তামান্নার সাথে কথা বলতে বলতে চোখটা বাহিরে চলে গেলো। মেধা গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকলো। মেহেরাব মেধাকে দেখে পাশে সরে গেলো। যাতে দেখতে না পায়। মেয়েটাকে নিয়ে বিশ্বাস নেই। যদি আবার ও অপমান করে।
কিন্তু যতই পলাতে চাই ততোই যে ধরা খাই। মেধা মেহেরাবকে দেখে ফেলে। সাথে তামান্নাকে ও। মেধা টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে
- কি রে ছোট লোক তুই রেস্টুরেন্টে? তোর পকেটে টাকা আছে তো। নতুন জিএফ বানাইছিস।
তামান্না মেধার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে পড়ে। মেধা বললো
- এই সব ছোটলোকদের কে ঢুকতে দেয় রেস্টুরেন্টে। ম্যানেজার কই
রেস্টুরেন্টের সবাই তাকিয়ে আছে। মেহেরাব মুখ লুকানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কোনো কাজ হলো না। মেধার গলা শুনে ম্যানেজার এসে
- ম্যাডাম কোনো সমস্যা।
- হ্যা। আপনারা এস নোংরা ছোট লোকদের রেস্টুরেন্টে ঢুকতে দেন কেন?
- কিছু করেছে।
- এই ছোট লোককে এক্ষণি রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে দিবেন। পারে না নিজে খেতে আবার নিয়ে আসছে রেস্টুরেন্টে। নোংরা করতে আসছে।
মেহেরাব উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। তামান্না কিছু বলতে যাবে তখনি মেহেরাব তামান্না কে বললো
- চলেন এখান থেকে। সাইকো মানুষের জন্য রেস্টুরেন্টের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
- কিন্তু
মেহেরাব আর কিছু না বলে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলো। তামান্না আর দাড়ালো না চলে গেলো। ম্যানেজার বললো
- ম্যাডাম চলে গেছে বসেন।
- এর পর থেকে মানুষ চিনে ঢুকতে দিবেন৷
- ঠিক আছে ম্যাডাম।
ম্যানেজার চলে গেলো। মেধা মনে মনে বলছে মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো। আমাকে বলে সাইকো। আমাকে সাইকো বলার সাধ পাইয়ে দিবো।
তামান্না মেহেরাবের পিছন পিছন। তামান্না বললো
- মেয়েটা কে ? তোমাকে এভাবে অপমান করলো। - পুরাতন শত্রু । তাই সুযোগ পেয়ে এতো অপমান করে দিলো।
- মেয়েটা কতটা খারাপ। ব্যবহার এতো খারাপ কারো হয়৷ ঐ সব মেয়ের থেকে দূরে থাকবা। তোমাকো ট্রিট দিবো আমি তা আর হলো না। কোথা কার কোন মেয়ে এসে মুড নষ্ট করে দিলো।।
তামান্না রাগে ফুসতে থাকে। মেহেরাব বললো
- ট্রিট লাগবে না আমার।
- দেখো একদম রাগাবে না। মাথা ফাটায় দিবো। কোথা কার কোন মেয়ে কি বলছে এখন আমাকে রাগ দেখানো হচ্ছে।
মেহেরাব তাকিয়ে পড়লো।
মেধা ওয়েটারকে ডাক দিলো কিন্তু কেউ আসছে না। মেধার সামনে দিয়ে ওয়েটার চলে যাচ্ছে৷ আসছে কিন্তু মেধার দিকে তাকাচ্ছে না। না ওর ডাক শুনছে। মেধা সহ্য করতে না পেরে ম্যানেজারের সামনে দাঁড়িয়ে
- কেমন ওয়েটার রাখছেন কথাই শুনে না। এতো ডাকছি আসছে না কেন?
- সরি ম্যাডাম সবাই কাজে ব্যস্ত। সবাইকে খাবার দিচ্ছে। আপনি বসুন একজন খালি হলেই আপনার অর্ডার নেওয়া হবে৷
- তার আর কোনো দরকার নেই। যেমন রেস্টুরেন্ট তেমন কর্মচারী গুলো।
মেধা চলে গেলো।
তামান্না মেহেরাবকে বললো
- তাকিয়ে কি দেখছো? তোমাকে আজকে খাওয়াবো বলছি যখন খাওয়াবো। চলো।
তামান্না মেহেরাবকে নিয়ে আরেকটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে। খাবার অর্ডার করে। দুজনে মিলে খাওয়া শেষ করে বের হয়। মেহেরাব তামান্নাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বাসায় চলে যায়।
তামান্না বাসায় ঢুকতেই তামান্নার মা বললো
- আজ এতো লেট করলি কেন?
- মা কোচিং শেষে মেহেরাবকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেছিলাম৷
- তা আমি ও জানি।
তামান্না অবাক হয়ে
- তুমি কি ভাবে জানলে
- রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ফোন করছিলো। কোন মেয়ে বলে মেহেরাবকে আর তোকে অপমান করছে।
- মা মেয়েটা মেহেরাবের পুরানো শত্রু। তাই এমন করছে।
- তা শত্রু হওয়ার পিছনে তো কারণ আছে। এমনি এমনি তো আর কেউ শত্রু হয় না।
- ঠিকি বলেছো। আমি তো শুনতেই ভূলেই গেছি।
- শোন মা ছেলেদের সাথে এমন মেলামেশা বাদ দে। বলা তো যায় না এই ছেলেটা তোর কোনো ক্ষতি করবে কি না।
- মা ও তো ভালো ছেলে৷ তুমি যখন বলছো তাহলে একটু বাজিয়ে দেখি।
- ঠিক আছে যেটা ভালো মনে করিস। তোর বাবার কানে গেলে খবর আছে।
- আচ্ছা মা।
- যা ফ্রেশ হয়ে আই। নাস্তা দিচ্ছি।
- এখন আর খাবো না।
- তাহলে পড়তে বোস।
তামান্না রুমে চলে গেলো।
মেহেরাবের বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১০ টা বেজে গেলো। বাসায় এসে মিহু মিথিলার সামনে দাঁড়িয়ে
- তোমাদের সমস্যা টা কি হ্যা?
মিহু মিথিলা মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে
- সমস্যা মানে।
- সমস্যা বুঝতে পারছো না।
মা পিছন থেকে
- কি হয়েছে? তুই এভাবে কথা বলছিস কেন? কি করছে ওরা?
- কি করেনি জিঙ্গেস করো? তাদের বেশি ভাব হয়ে গেছে।
মিথিলা বললো
- তোমার কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে?
- হয় নাই তবে এখন হয়ে যাবে। কি পাইছো তোমরা হ্যা?
মা বললো
- কি করছে বলবি তো? বকেই যাচ্ছিস।
মিহু বললো
- আচ্ছা কি হয়েছে বলো তো?
- তোমরা কি কিছুই বুঝতে পারছো না। শোনো বেশি ভাব নিবা না তাহলে বাসা থেকে বের করে দিবো সোজা৷
মিহু মিথিলা মাজায় শাড়ির আঁচল গুজে
- কে কাকে বাড়ি থেকে বের করে তোমাকে আজ দেখাবো ?
মেহেরাব ভ্রু কুচকে
- তোমরা কিন্তু বেশি করছো কিন্তু।
- এখনো করিনি। তবে করলে তুমি আজ বাড়ি থাকতে পারবে না। সোজাসুজি বলো কি হয়েছে? নাই।
- তোমরা ভাইয়ার ফোন কেন ধরছো না?
মিহু বললো
- এই ব্যাপার। তোমাকে নালিশ দিছে।
মিথিলা বললো
- আগে তোমার ব্যবস্থা করি তারপর তোমার ভাইয়ের
মেহেরাব দৌড় দিলো ফোনটা কানে ধরে
- ভাইয়া দেখছো তো কেমন বকা দিলাম। বলেছিলাম না বকা দিবো৷৷
ওপাশ থেকে
- তুই নিজে আগে বাচ তারপর বলিস। পালা।
মেহেরাব মায়ের পিছনে এসে পলালো৷ মিথিলার হাতে খুনতি। মিহুর হাতে চামচ। মেহেরাব বললো
- মা মা দেখছো ভাবি রা আমাকে মারতে আসছে।
মা সরে যেয়ে
- তুই আমার মেয়েকে বকবি আর ওরা চুপ করে থাকবে। বউমা তোমাদের ব্যাপার মিটাই নাও। আমার কাজ আছে।
মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো
- মা তাহলে তুমি ও।
মেহেরাব সোজা নিজের ঘরে যেয়ে দরজা আটকিয়ে দিলো৷ মিহু মিথিলা দরজার কাছে যেয়ে
- কি গো দেবর আমাদের সমস্যাটা দেখবা না। খোলো দরজা টা।
মেহেরাব বললো
- না না। আমি আর দেখবো না। তোমরা ভাইয়াকে ফোন দিয়ে দেখাও।
- কেন ফোন দিবো? আমাদের বিজি দেখাই। কত বড় সাহস।
- তোমরা রাগ করছো বলেই তো তোমাদের জন্য
- কি?
- তোমরা আমরা দরজা থেকে দূরে যাও বলছি।
- না বলো তুমি।
- আমি দরজা খুলবো। দূরে যাও। তারপর বলবো।
- খোলো তুমি।
- আমি তোমাদের হাতে মার খেতে পারবো না।
- ঠিক আছে।
মিহু মিথিলা দূরে সরে গেলো। মেহেরাব দরজাটা খুলে একটা প্যাকেট নিচে রেখে দরজা বন্ধ করে দিয়ে
- খুলে দেখতে পারো। দেখা শেষে যেয়ে আমার অসহায় ভাই দুটোকে কল করো।
পরেরদিন
কোচিং যাওয়ার পথে একটা মেয়ে মেহেরাবের পথ আটকে ধরলো.
চলবে.....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com