Breaking News

তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ০৫



মেহেরাব তামান্না কে বললো

- তাহলে এই টা ছিলো আপনার ভয়।
- হুম। বান্ধবী থাকলে আর তোমাকে আসতে হতো না।
কুকুর গুলো ঘেউ ঘেউ করতে আছে। মেহেরাব তামান্নার হাত ছাড়িয়ে ব্যাগ টা কাঁধ থেকে খুলে হাতে নিলো। তামান্না মেহেরাবের হাত ধরে

- তাড়ান এগুলো কে আমার ভয় লাগছে।
- আরে ভয় পাওয়ার কি আছে? এদের সাথে আপনার পুরোনো শত্রুতা আছে। আপনি ওদের কিছু করছেন।
- আরে না না। কুকুর দুটো ছিলো। ঘেউ করলে দৌড় দিতাম। বান্ধবী দাঁড়িয়ে থাকতো। আমার পিছে ছুটতো ওরে কিছু বলতো না।
- বুঝছি। এই জন্য কুকুর গুলো আপনাকে চোখে দেখতে পারে না।
মেহেরাব ব্যাগ দিয়ে কোনো রকম হাই হুশ করে তাড়িয়ে দিয়ে তামান্নাকে নিয়ে চলে গেলো। কিছুদূর যেতেই তামান্না বললো
- এখন তুমি যাও। আমি যেতে পারবো একা।
- ঠিক আছে।
তামান্না চলে গেলো। মেহেরাব আসার পথে চিন্তা করলো কুকুর গুলোর মহাজনের সাথে কথা বলবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মেহেরাব কুকুরের মহাজনকে সবটা বললো। সে উত্তরে বলছে রাস্তা দিয়ে মানুষ গেলে ঘেউ ঘেউ করে কিন্তু কামড়ায় না। মেহেরাব কথাগুলো শুনে চলে আসলো। বাসায় এসে ব্যাগ রেখে হাসি মুখে বের হবে বাইরে তখন মিহু এসে বললো
- কি ব্যাপার জামাইটা এতো খুশি কেন আজ?
মেহেরাব কোচিং এ তামান্না যা যা করছে সবটা বললো। মিথিলা ও এসে শুনলো। মিথিলা বললো
- বন্ধুত্ব করতে পারো কিন্তু প্রেমে জড়াবে না।
- ও যদি সত্যি বলে থাকে তাহলে এই টাইপের মেয়েরা কখনো প্রেম ভালোবাসা করবে না। সিউর৷
- হ্যা আমার ও তাই মনে হয়। মিশুক মানুষ গুলো এসব প্রেম ভালোবাসা থেকে দূরে থাকে।
মেহেরাব তাদের দিকে তাকিয়ে

- তাহলে তোমরা কি বলো?
- বন্ধুত্ব চোখ বুঝে করতে পারো।
- ও আমার অবস্থা জানলে তো আর বন্ধুত্ব করবে না।
- মিশুক মানুষ গুলো কখনো কারো অবস্থা দেখে না। সে যেই হোক অল্পতে মিশে যাবে।
- ঠিক আছে। তোমরা যখন বলছো।
মেহেরাব বাইরে চলে আসে।
পরেরদিন
মেহেরাব ক্লাসে ঢুকতে দেখলো তামান্না সবার সাথে দুষ্টুমি করছে। মেহেরাবকে দেখে সামনে এসে
- তোমার হাতের লেখা এতো খারাপ কেন?
- কেন?
- কি চাইনিজ ভাষা লিখছো তুমি? বুঝি না কিছু।
- না বুঝলে আমি আর কি করবো। ভালো যার হাতের লেখা তার নোট নেন।
- তারা তো আর তোমার মতো রেগুলার আসে না। এসেছো এখন আমাকে বুঝায় দাও।
ক্লাসে বসে তামান্না মেহেরাবের থেকে বুঝে নিলো কিছু টা। ভাইয়ারা এসে ক্লাস নিলো। মেহেরাব আগে আগে আজ ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো।

প্রায় সন্ধ্যা বাসায় ফেরার পথে দেখলো তামান্না রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক করছে। মেহেরাব তামান্নাকে দেখে ও না দেখার ভান করে রাস্তার ওপাশ থেকে যেতে লাগছিলো। তামান্নার চোখ আর ফাঁকি দিতে পারলো না। তামান্না মেহেরাব বলে ডাক দিয়ে মেহেরাবের দিকে চলে গেলো। মেহেরাবের সামনে দাঁড়িয়ে
- তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালো হলো।
- কেন?
- আমি না একা যেতে পারছি না। তুমি একটু এগিয়ে দিবা।
- আপনি কি বাচ্চা নাকি?
- বাচ্চা হলে কি আর তোমার সামনে আসতাম।
তামান্না মেহেরাবের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। মেহেরাব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তামান্না বললো
- তুমি এতো ভাব দেখাও কেন ? আমি একটু মিশুক মানুষ। অল্পকে খুশি আবার অল্পতে আঘাত পেয়ে বসি। আমি বিপদে পড়েছি বলে তোমাকে দিয়ে আমার স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছি। নাই তোমাকে এভাবে বিরক্ত করতাম না। কুকুর গুলোর জন্য তোমাকে জ্বালাতন করছি ফেললাম। সরি।
মেহেরাব কিছু বললো না। অবাক হয়ে তামান্নার কথা গুলো শুনলো৷ আজ আর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কুকুর গুলো আসেনি। কিছুদূর যেয়ে তামান্না বললো
- ধন্যবাদ। তুমি যাও এখন আমি চলে পারবো।

মেহেরাব মাথা নাড়িয়ে চলে আসলো। মেহেরাব হাঁটছে আর ভাবছে, মেয়েটার মাথার স্ক্রু ঢিলা আছে। এতো কেউ বক বক করে। এই মেয়ের পাল্লায় যে পড়বে সে বুঝবে।
রাত ১০ টা
বিছানার উপর বই খাতা ছড়ানো। মেহেরাব পড়তেছিলো তখন রাশেদ আর সজিব এসে
- তুই কি আমাদের ভাই?
মেহেরাব দুই ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বোকার মতো চেয়ে রইলো। রাশেদ বললো
- আমার তো ভাবতেই লজ্জা লাগছে আমাদের ভাই হয়ে ছ্যাকা খাস কি করে? কেমন মেয়ে দেখে রিলেশনে গেছিলি।
সজিব বললো
- আমাদের দেখ। যাদেরকে ভালোবেসেছি তারাই আমাদের জীবনসঙ্গী এখন।
মেহেরাব মাথা নিচু করে
- সবাই কি আর তাদের মতো নাকি। তারা ভালো বলেই তো তোমরা পেয়েছো। অন্য মেয়ে বউ হয়ে আসলে এতোদিনে পলাতো
- যোগ্যতা লাগে বস
এমন সময় মিথিলা মিহু এসে
- এই তোমাদের কি খেয়ে কাজ নেই। আমার জামাই টাকে এভাবে বিরক্ত করছো কেন? দেখছো তো পড়ছে।
রাশেদ সজীব একে অপরের দিকে তাকিয়ে পড়লো অবাক হয়ে। রাশেদ বললো
- তুমি এটা বলছো কি? আমি তাহলে কে?
মিথিলা মেহেরাবের পাশে বসে

- তুমি তো বাহিরের মানুষ। বাহিরেই থাকো। আমার জামাইটা আমার কত খেয়াল রাখে কতো টাইম দেয়।
সজীব বলে উঠলো
- আমরা এই ক দিন বাসায় নেই বলে ওকে জামাই বানায় নিয়েছো। হায় রে এই দিন টাই ছিলো দেখার বাকী।
রাশেদ মেহেরাবের পাশে বসে
- ভাই তুই এটা কি কাজ করলি?
মেহেরাব মুচকি হেসে দিয়ে
- যোগ্যতা বস। যোগ্যতা লাগে কোথায় বুঝলে তো।
সবাই হেসে উঠলো। রাশেদ মেহেরাবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে
- যেটা করবি জেনে বুঝে করবি। করার পর বুঝিস না। তাহলে দেরি করে ফেলবি। শান্তি জিনিস টা হারিয়ে যাবে।
- হুম ভাইয়া।
মেহেরাবের সাথে কিছুক্ষণ সবাই শয়তানি করে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর মা এসে
- পড়া শেষ করে খেতে আই।
- ঠিক আছে যাও তুমি আসছি।
মা চলে গেলো। মেহেরাব কিছুক্ষণ পর খেতে গেলো৷ সবাই খাওয়া দাওয়া করছে। মেহেরাব ও যেয়ে বসলো৷ সজীব মেহেরাবকে বললো
- ভালো করে পড়াশোনা শেষ কর আমরা ভালো মেয়ে খুঁজে তোকে বিয়ে দিবো।
মেহেরাব লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। মিহু বললো
- খাওয়ার সময় ও কি ছেলেটাকে শান্তি দিবে না।
মিথিলা মুচকি হেসে
- ছেলেটা লজ্জা পাচ্ছে তো

সবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে চলে গেলো। মেহেরাব খাওয়া শেষ করে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে
- ভাইয়াদের না বললে হতো না ব্যাপারটা।
- কেন? কি হয়েছে
- আমার ইজ্জত আর রাখলে না। ভাইয়ারা কি না কি মনে করছে।
- কিছু মনে করে নি। যা ঘুমিয়ে পড়।
রাত ২ টা হঠাৎ দরজায় কারো ডাক্কয় মেহেরাব লাফ মেরে উঠে
- কে?
কোনো ছাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা টা খুললো। রাশেদ দাঁড়িয়ে আছে৷ মেহেরাব অবাক হয়ে
- ভাইয়া তুমি।
- কিছু করছিস না তো
- কি করবো আমি? ঘুমাচ্ছি তো।
রাশেদ মুচকি হেসে
- না অনেকে তো ছ্যাকা খেয়ে অনেক কিছু করে বসে তাই ভাবলাম তুই কিছু করলি না কি না।
মেহেরাব মুচকি হেসে
- আমি কি আর তুমি যে বিয়ে না দেওয়ার জন্য ঘুমের ওষুধ খেয়ে পড়ে থাকবানি।
রাশেদ আমতা আমতা করতে করতে চলে গেলো। মেহেরাব হাসছে। মেহেরাব দরজা লাগিয়ে যেই শুতে যাবে আবার দরজায় ডাক্কানোর শব্দ । খুলে দেখলো সজীব। সজীব মেহেরাবকে দেখা মাত্রই জরিয়ে ধরলো । মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো........

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com