তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ০৪
মেহেরাব কোচিং শেষে বাসায় ফিরছিলো৷ হঠাৎ করে চোখ দুটো আটকে যায় রাস্তার পাশে। বুকের ভেতরটা কেপে উঠলো। একটা ছেলে মেধাকে প্রপোজ করছে ফুল দিয়ে। মেধা সেই ফুলটা নিয়ে নিলো। তারপর ছেলেটার সাথে বাইকে উঠে চলে গেলো। মেহেরাবের সহ্য হলো না। ভালোবাসার মানুষটা আজ অন্য কারো। আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে
- যেটা হয় ভালোর জন্য। অর্থ লোভী মানুষ নিয়ে সারা জীবন কাটানো সম্ভব হয় না৷ বিচ্ছেদ ঘটবেই যেকোনো টাইম৷
মেহেরাব ঘরে ঢুকতেই মিথিলা বললো
- কি গো মন খারাপ কেন তোমার?
- কিছু না।
মিহু পিছন থেকে
- কিছু তো হয়েছে। সতীন গো তুমি কি কিছু পোড়ার গন্ধ পাচ্ছো।
মিথিলা মুচকি হেসে
- হ্যা পাচ্ছি।
- জামাই টার মনের ভেতর পুড়ছে মনে হয়৷ পানি ঢালতে হবে।
- হ্যা। আমি পানি নিয়ে আসি তুমি মগ নিয়ে রেডি হও
মেহেরাব হাসার মুডে নেই তবু ও ভাবিদের কথায় হেসে দিলো। মিহু হেসে দিয়ে
- জামাই টার আগুন নিভছে মনে হয়।
মেহেরাব বললো
- তোমরা থাকলে সব কিছুই ভয়তে পলাবে।
- তাহলে বলো এখন কি হয়েছে?
- মেধাকে দেখলাম একটা ছেলের প্রপোজ একসেপ্ট করে বাইকে করে চলে গেলো৷
- তোমার ও তো ওকে দেখানো উচিৎ।
- কিভাবে দেখাবো। আমার কি আর বাইক আছে। না আছে ভালো ঘর।
- ঠিকি একদিন হয়ে যাবে৷
- বাবা আসলে বলবো ঘর ভেঙ্গে বিল্ডিং দিতে। আর আমাকে বাইক কিনে দিতে।
মিহু ভ্রু কুচকে
- তোমার মাথা কি গেছে৷ বাবার অবস্থা তো জানো।
- হ্যা জানি। তবে এবার আমি চাপ দিবো। এমন কুড়ে ঘরে থাকতে ভালো লাগে না৷
- তুমি কি জানো বিল্ডিং এর থেকে কুড়ে ঘর কতটা শান্তি ময়।
- আমি ওতো কিছু বুঝি না।
মিথিলা বললো
- তা তুৃমি আয় রোজকার করে করো। যদি বাবাকে চাপ দাও তাহলে তোমার হাড্ডি ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো।
মিহু হেসে দিয়ে
- আমি আর আমার সতীন মিলে তোমার সেবা করবো। যেই সুস্থ হবে আবার অসুস্থ করে দিবো৷
- থাক বাবা মাফ চাই। আমি বুঝে গেছি।
- বুদ্ধি মান ছেলে।
মেহেরাব ব্যাগটা রেখে মিহু মিথিলার সাথে আড্ডা দিতে লাগলো।
একদিন মোহেরাব কোচিং এ আসলো। ক্লাসে বসে ছিলো৷ মেহেরাব লক্ষ্য করলো একটা মেয়ে সবার সাথে সেধেই হেসে কথা বলছে। ফ্রী মাইন্ডের। মেহেরাবকে দেখে মেয়েটা মেহেরাবের সামনে এসে
- তুমি কি নতুন কোচিং এ।
মেহেরাব মাথা নাড়ালো। মেয়েটা বাঁকা চোখ করে
- বোবা নাকি৷
- না।
- তাহলে মাথা নাড়ালে কেন মুখ দিয়ে না বলে। লজ্জা পাচ্ছো বুঝি।
- না।
- তাহলে তোমার নাম কি?
- মেহেরাব৷
- আমি তামান্না। আমরা ফ্রেন্ড ।
- না।
তামান্না অবাক হয়ে
- না কেন?
- আমার মেয়ে বন্ধু লাগবে না।
- ভাব কতো। সেধে কথা বলছি বলে ভাবছো আমি ছ্যাচড়া। মোটে ও না। আমি ততোটা ছ্যাচড়া না।
তামান্না চলে গেলো উঠে। মেহেরাব মনে মনে বলছে অদ্ভুত মেয়েটা। সবার সাথে মিছে ভালো৷ কিন্তু আমার ফ্রেন্ড লাগবে না।
তামান্না অন্যদের সাথে শয়তানি মজা করতে লাগলো। তখনি ক্লাসে ভাইয়া আসলো। সবাই পড়া বের করলো। ভাইয়া তামান্নাকে দেখে
- কি ব্যাপার তামান্না মামা বাড়ি বেড়াতে আসলে নাকি?
- না ভাইয়া। মামা শশুর বাড়ি আসছি।
সবাই হেসে দিলো। ভাইয়া ধমক দিয়ে সবাইকে থামিয়ে দিলো। ভাইয়া বললো
- এরক করে যদি কামাই দাও তাহলে এগোবে কি করে?
- সরি ভাইয়া আর ভূল হবে না।
- ঠিক আছে। এই ক দিনের পড়া কালেক্ট করে নিবে।
- এখানে তো সবাই প্রতিদিন আসে না। কিভাবে নিবো।
- কে বলছে আসে না? মেহেরাব প্রতিদিন আসে ক্লাসে। এই মেহেরাব তুমি তামান্নাকে নোট গুলো দিবে আর করাইছি সব বুঝিয়ে দিবে।
মেহেরাব উঠে দাঁড়িয়ে
- ঠিক আছে ভাইয়া৷
মেহেরাবের দিকে সবাই তাকালো। তামান্না উঠে এসে মেহেরাবের পাশে এসে বসে
- কই দাও তো দেখি নোট গুলো।
ভাইয়া বললো
- আমি ক্লাস শেষ করিয়ে যায় তারপর তোমার পড়া কালেক্ট করবে। ক্লাসে মনোযোগ দাও।
ভাইয়ার ক্লাসে মন দিলো সবাই। মনোযোগ দিয়ে শুনছে সবাই। তামান্না আড় চোখে মেহেরাবকে দেখছে। মেহেরাব ওর দিকে তাকায় কি না। না তাকায়নি একবার ও। ভাইয়া ক্লাস শেষে চলে গেলো। আরেকজন আসলো। এভাবে আরো দুজন আসলো। ক্লাস শেষ ছুটি টাইম। মেহেরাব উঠতে যাবে তখনি তামান্না বললো
- কই যাচ্ছো তুমি৷
- ক্লাস তো শেষ। বাসায় যাবো৷
- আমাকে নোট গুলো দিবা না।
- কাল নিয়েন৷
- আমি কিন্তু ভাইয়াকে বলে দিবো৷ এখন যদি না দেন।
মেহেরাব বসে নোট বের করে দিলো। তামান্না নিজের খাতায় নোট করতে লাগলো৷ মেহেরাব তামান্নার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো৷ তামান্না তখনি বললো
- এটা কি লিখছো। বুঝছি না৷ বোঝায় দাও।
মেহেরাব বুঝিয়ে দিলো৷ মেহেরাব উঠে দাঁড়িয়ে
- আপনি নোট টা লিখে রাখেন৷ আমি কাল এসে নিবো।
- কেন তুমি চলে যাবা?
- হ্যা
তামান্না ভ্রু কুচকে
- আমাকে এখানে ক্লাসে একা রেখে চলে যাবা।
- একা কই আপনি৷ ভাইয়ারা আছে। ক্লাসে আরো মানুষ আছে তো৷
- না থাকুক। আমার ভয় করে। তুমি থাকো। একসাথে বের হবো।
- আপনি বাসায় যেয়ে লিখেন তবে। এখানে না বসে।
- ঠিকি বলছো৷ বাসায় চলে যায়।
তামান্না ব্যাগে নোট গুলো ঢুকিয়ে নিলো। তারপর বের হলো। মেহেরাব বের হয়ে হাঁটা শুরু করলো। তামান্না মেহেরাবের পিছে হাটছে৷ মেহেরাব থেমে গেলো। তামান্না ও দাড়িয়ে গেলো। তামান্না মেহেরাবের সামনে যেয়ে
- শোনো না।
মেহেরাব অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে
- কি হয়েছে?
- আজ আমার বান্ধবী আছে নি। আমি একা বাসায় যেতে পারি না। রাস্তা পার হতে সমস্যা। তুমি যদি একটু এগিয়ে দিতা।
,- কেন আমি কি আপনার বডিগার্ড নাকি?
- তা হবে কেন? তুমি তো আমার বন্ধু। বন্ধু হয়ে বন্ধু কে সাহায্য করবে না।
- আমার বন্ধু লাগবে না।
- আমাকে বাসায় পৌঁছে না দিলে আমি চিল্লাবো লোক জড়ো করবো।
- না না থাক চলেন।
মেহেরাব তামান্নাকে নিয়ে রাস্তা পার হলো৷ তামান্না বক বক করেই যাচ্ছে। মেহেরাব অসহ্য হয়ে গেলো বক বক শুনতে শুনতে।
কিছু দূর যেতেই চারটা কি পাঁচটা কুকুর ওদের ঘিরে ধরলো। তামান্না ভয়তে মেহেরাবের পিছে যেয়ে দাঁড়ালো। মেহেরাব বুঝে উঠতে পাচ্ছে না হঠাৎ কুকুরগুলো ঘিরে ধরলো কেন? কুকুর যেই ঘেউ করে উঠলো তামান্না মেহেরাবের হাত খুব শক্ত করে চেপে ধরলো। মেহেরাব তামান্নার ভয় পাওয়া দেখে অবাক হয়ে গেলো। হাতটা এতোটা শক্ত করে ধরেছে যে এমন অদ্ভুত অনুভব কখনো হয়নি মেহেরাবের.......
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com