অপরিচিতা । পর্ব - ০৫
আমি চমকে গিয়ে যেই না চিৎকার দিয়ে উঠবো,
আর তখনই অপরিচিতা আমার মুখ আটকে ধরে।
তাই আসলাম আপনাকে ডাকতে।
একা একা ছাদে যাবো কি করে?
ভয় লাগবে যে।
অপরিচিতা তারপর আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলে,
ধীরেধীরে কথা বলবেন কেমন?
-এত রাতে কেউ চাঁদ দেখে নাকি হুম?মাথা খারাপ হয়েছে তোমার?
-যাবেন নাকি আমি একাই যাবো?
কোন পাগলের পাল্লায় যে পড়লাম আমি।
অপরিচিতা একাই চলে যাচ্ছিলো ছাদে,তাই আমিও পেছন পেছন গেলাম।
-দেখুন দেখুন কি সুন্দর চাঁদ,
-সুন্দর তবে তোমার থেকে কম।
অপরিচিতা লজ্জা পেলো।
-একা একা যে এই ছাদে চলে আসলে,
যদি আমি না আসতাম?
-আমি জানি আপনি আসবেন, তাই তো এসেছি।
-হয়েছে এবার চাঁদ দেখা?তাহলে এখন কি আমরা যেতে পারি?
-উফফ আপনি না,একটুও রোমান্টিক না।
চলুন।
আমি অপরিচিতাকে নিয়ে চলে আসি।
ধীরেধীরে অপরিচিতাকে আমার ভালো লাগতে শুরু করে।এক সময় ওকে আমি ভালবেসে ফেলি।
একদিন বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো,আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম।আর তখন ও আমাকে হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে যায়।
-কি হচ্ছে এসব?উফ আপনি যে কি না।
বৃষ্টি ঘরে বসে দেখার জিনিষ?বৃষ্টি হচ্ছে ছুঁয়ে দেখার জিনিষ।অনুভব করার জিনিষ।ভালবাসার জিনিষ।
-আমার যে ভালবাসার জিনিষ মাত্র একটাই।
-কি সেটা?
-তুমি।
অপরিচিতা লজ্জা ভরা নয়নে বলে,
-আচ্ছা পাগল তো আপনি।ভালবাসার কথা টাও ভালো ভাবে প্রকাশ করতে পারেন না।
আমি সাথে সাথে হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে পড়লাম।
-অপরিচিতা,আমি তোমার সাথে শুধু আজ না।এই জীবনে যত বার বৃষ্টি হবে ঠিক তত বার তোমার হাত ধরে সেই বৃষ্টিতে ভিজতে চাই।
ভিজবে আমার সাথে?ধরবে আমার হাত?
অপরিচিতা দৌড়ে রুমে চলে আসে।
আমি পিছু পিছু যেতেই মা আমার সামনে পড়ে।অপরিচিতা ভেতরে চলে যায় আর আমিও মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভেতরে চলে আসি।
কিছু দিনের মধ্যেই আশেপাশে বলাবলি শুরু হয়,
শেয়ানা মেয়ে ঘরে কিভাবে রাখছে আমার মা।
এমন যুবক ছেলে ঘরে থাকতে।
নানান কথা তখন মানুষের মুখে মুখে।
আমরা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলাম,কবে অপরিচিতা স্মৃতিশক্তি ফিরে পাবে।
ডাক্তার বললেন,
সেটা আমাদের জানা নেই।হতে পারে এক সপ্তাহ পর।কিংবা ১ বছর পর নয়তো ১০ বছর।
ডাক্তারের কথা শুনে কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমরা।একেতো ওর স্মৃতিশক্তি নেই,তার উপর মানুষের মুখ ভর্তি কটু কথা।
একদিন অপরিচিতা আমার মায়ের কাছে গিয়ে বল্লো,
খালামণি,আমি চাইনা মানুষ আমার জন্য আপনাদের সবাইকে খারাপ বলুক।তাই আমি এ বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে চাই।
আমি অপরিচিতার এ কথা শুনে নিজের মন কে কোন ভাবেই স্থীর করতে পারছিলাম না।
-অপরিচিতা,আমি তোমাকে ভালবাসি।
বিয়ে করবে তুমি আমায়?আমি সবার মুখ বন্ধ করে দিবো আজ এবং এই এমুহূর্তে।শুধু তুমি একবার বলো তুমি রাজি।
-কি বলছিস তুই এগুলো?
-হ্যাঁ মা আমি ঠিকই বলছি আমি ওকে ভালবাসি।আর যে কোন কিছুর বিনিময়ে আমি ওকে চাই।
-কিন্তু তুই তো জানিস,ও ওর স্মৃতি ফিরে পেলে তোকে ও ভুলে যাবে।
তখন কি হবে?
-আমি ওর কোন অসম্মান করবোনা।
শুধু ওর মাথা গুজার পার্মানেন্ট ঠিকানা টা করে দিবো।আর মানুষের মুখ টা বন্ধ করে দেবো।
এছাড়া তো আমাদের আর কোন পথ নেই।
-দেখ তোর যা ভালো মনে হয়।
অপরিচিতা বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।
আর কাজী ডেকে আমরা সেদিনই আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে বিয়ে করে নেই।
আর এটাই সত্যি ও আমার বিবাহিতা স্ত্রী।
-তারপর কি হলো?
-তারপর প্রতিবেশীদের মুখ বন্ধ হলো।
আমি আরো বেশি অপরিচিতার প্রতি দুর্বল হতে লাগলাম।অপরিচিতাও আমাকে ভালবাসতে শুরু করে।
দিন কাটতে থাকে ভালো ভাবেই।
কিন্তু সেদিন টাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়,যেদিন আমি ওকে শপিং করতে মার্কেটে নিয়ে যাই।
ও শাড়ী পছন্দ করছে আর আমি ওর জন্য অন্য পাশে ড্রেস চুজ করছিলাম।
আর হঠাৎ করেই দেখি ও নেই।
আমি সারা মার্কেট তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওকে পাইনা।
সারা এলাকা খুঁজি।কোথাও নেই ও।
এর মাঝে আমি পাগলের মত হয়ে যাই।
সবাই বলে,ও স্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়েছে আর তাই চলে গেছে।
এমন কোন অলিগলি বাদ রাখিনি,যেখানে আমি ওকে না খুঁজেছি।
অনেক দিন পর আমার সাথে ওই বাস ড্রাইভারটার সাথে দেখা হয়।
যখন আমি এক থানা থেকে আরেক থানা খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম ওকে।
যার বাসে করে অপরিচিতা এসেছিলো তাকে দেখতে পাই আমি।
আমি যেদিন অপরিচিতাকে উদ্ধার
করি সেদিনই আমি বাস ড্রাইভার টাকেও দেখি।আর চিনে রাখি।
কিন্তু এত দিনেও তাকে আমি আর কোথাও দেখিনি।
সেদিন হঠাৎ করেই তার সাথে আমার দেখা।
আমি তাকে তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করলাম,আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
আর আপনার বাসই তো একবার ওমুক জায়গায় এক্সিডেন্ট করেছিলো তাইনা?
সে বল্লো,হ্যাঁ।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,সেদিন আপনি কোথা থেকে এসেছিলেন?
আমাকে একটু বলুন প্লিজ।
আর তখনই তিনি আমাকে সব খুলে বললেন।
আর আমি রওনা হলাম এ শহরের উদ্দেশ্যে।এই শহরের অলিগলি খুঁজে বেড়াচ্ছি আমি ওকে।
আজ হঠাৎ ই আপনাদের রিক্সায় দেখে আমি ডাকতে থাকি অপরিচিতা অপরিচিতা বলে।
আপনারা রিক্সা থামান নি বলে আমি পিছু নেই আপনাদের।
আর এখান অব্ধি চলে আসি।
আর আসা মাত্রই এসব শুনতে পাই।
বিশ্বাস করুন মা,আমি আর অপরিচিতা এখন হাজবেন্ড -ওয়াইফ।আমরা পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ।
-শ্যাটাপ,জাস্ট শ্যাটাপ।
আর একটা কথাও না।আমি এ বিয়ে এ সম্পর্ক মানিনা মানিনা মানিনা।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
একটা অসহায় মেয়েকে এই ভাবে ঠকাতে পারলেন আপনি?
কিভাবে পারলেন?আপনি মানুষ না অন্য কিছু?আমি তো আপনাকে স্বামী বলে মানিনা।
আর না কোন দিন মানবো।
আর সেই মুহূর্তে ইহানের ফোন।
-আদ্রিজা,কোথায় তুমি?
-হসপিটালে।
-আমি অনেক ভেবে দেখলাম,আমার পক্ষে তোমাকে ছাড়া ভালো থাকা সম্ভব না।
তাই আমি চাই তুমি তোমার পেটের ওই বাচ্চাটাকে নষ্ট করে আমার কাছে চলে এসো।
আমি তোমাকে ওই বাচ্চা ছাড়া মেনে নেবো।
বাকিটা তোমার ইচ্ছে।
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।ভাবতে লাগলাম,কি করবো আমি এখন?কাকে মেনে নেবো?
কাকে জড়িয়ে নেবো নিজের জীবনের সাথে?
রীনানকে নাকি ইহানকে?
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com