Breaking News

অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেম । পর্ব - ০২



আমার চোখে ঘুম নেই, বাসায় কি অবস্থা একটু খবর ও নিতে পারি না। খুব চিন্তা হয় বাসার জন্য।সবাই কেমন আছে খুব জানতে ইচ্ছে করে আমার.....

আপুরা নিশ্চ‌ই শ্বশুর বাড়িতে ভালোই আছে। কিন্তু আম্মু আর ভাই?তারা কেমন আছে?
জানি না কি এমন গুনাহ করেছি যার শাস্তি আমার পরিবার পাচ্ছে। আল্লাহ তা'আলা আমাকে এই বিপদ থেকে হেফাজত না করলে,কারো সাধ্য নেই আমাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করার। জানা নেই কবে আমার সেই সুদিন আসবে।

আমি তো কখনো আল্লাহ তাআলা কে ডেকে নিরাশ হ‌ইনি। আমি জানি কোথাও না কোথাও কাউকে উছিলা করে আল্লাহ তা'আলা আমার সকল মুস্কিল আসান করে দিবেন ইনশা আল্লাহ। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আসর নামাজ আদায় করে সাইফ কে পড়াতে বসি। আমি এ বাসায় আসার প্রায় পনেরো দিন পর থেকে সাইফ কে পড়ানোর দায়িত্ব নেই। সাইফ দুষ্টু হলেও পড়াশোনায় বেশ ভালো। আমার ভালোই লাগে ওরে পড়াতে।
শরীফ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়। সাইফের পড়ার শব্দ শুনে সাইফের রুমে যায়।
আমি সাইফকে অংক করাচ্ছি তখন শরীফ ভাইয়া সাইফের রুমে আসে।
আর দেখে আমি সাইফকে পড়াচ্ছি। শরীফ ভাইয়া বলে এক পিচ্চি আরেক পিচ্ছি কে পড়াচ্ছে?
আমি মোটেও পিচ্চি না।
তাই? তুমি পিচ্চি না।
না আমি পিচ্ছি না, আপনি জানেন আমি কিসে পড়ি?
কিসে আর সিক্স বা সেভেন হবে।
মোটেও না আমি এইস.এস.সি এক্সাম দিয়েছি।ওরে বাবা তাহলে তো তুমি অনেক বড়।
হুম তাই তো।
পুচকি মেয়ে একটা এইস.এস.সি.এক্সাম দিয়েই নাকি ওনি খুব বড়।

আপনি আবার আমাকে পুচকি বলছেন? আপনি একটা বাঁদর।
কি!! আমি বাঁদর?
হুম আপনি একটা বাঁদর।
ওয়েট আমি বাহির থেকে আসছি।আর এসে তোমার সাথে মারামারি ঝগরা হবে।
এই বলে শরীফ ভাইয়া চলে গেলেন।
এদিকে আমি বিষ্ময়ে হা হয়ে যাই।আর বলি এই জন্যই আপু বলতো আর্মি, পুলিশ এগুলো নাকি কথায় কথায় বলে আই ক্যিল ইউ,আই সুট ইউ।আপু ঠিক ই বলে।
আমি এগুলো বলতেই সাইফ বলে উঠে কি মজা আমি তোমাদের মারামারি ঝগরা দেখবো।
তোর মাথা, তোর ভাই ঝগড়াটে হতে পারে, কিন্তু আমি তো আর ঝগড়াটে ন‌ই। তাই ঝগড়া হচ্ছে না,সো তোর এতো লাফালাফির কোন দরকার নেই পড়ায় মন দে।
সাইফ কে পড়ানো শেষে, আন্টি কি করে তা দেখতে আন্টির কাছে গেলাম।
আন্টি বলল ছেলেটা এতো দিন পর আসলো কি খাবার তৈরি করা যায় বলতো শরীফা? আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে ভাবনার ভঙ্গি করে বললাম_আন্টি পিঠা তৈরি করলে কেমন হয়? আইডিয়া টা খারাপ নয় কিন্তু জানিস শরীফা আমি না তেমন ভালো পিঠা তৈরি করতে পারি না।
তাতে কি আন্টি? আমি অন্য কিছু পারি আর না পারি পিঠা তৈরি করতে খুব ভালো পারি।
আচ্ছা তাই? জ্বি তাই।

ওলে বাবা আমার মেয়ে টা তো অনেক কাজের, এই বলে আন্টি আমার হালকা করে গাল টেনে দেয়।
আন্টি দুধ ক্ষিলি পিঠা তৈরি করি?
তোর যেটা ইচ্ছে সেটাই কর।
আচ্ছা তাহলে এটাই করি। আমি বলে দিচ্ছি কিভাবে ময়দা গুলো কাই করতে হবে,,সে অনুযায়ী তুমি ময়দা গুলো কাই করে দাও।
আচ্ছা বল।
আমি আন্টিকে বুঝিয়ে বলে দিলাম,আর আন্টি আমার কথা মত ময়দা কাই করে দিল।
অতঃপর আমিও বসে পরি, পিঠা তৈরি করতে।গুলাপ ফুল এবং আরও অন্যান্য নকশা করে পিঠা তৈরি করলাম। আম্মু আর আপুদের কাছে থেকে আমার পিঠা তৈরি করা শিখা। খুব মনে পরছে তাদের, তাই তারাতাড়ি পিঠা তৈরি শেষ করে আমি চলে গেলাম।
আমি এখন যে রুমে থাকি সেই রুমের বেলকনিতে।

এদিকে শরীফ চার মাস পর বন্ধুদের সাথে দেখা হ‌ওয়াতে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
এক বন্ধু বলে কিরে দোস্ত বিয়ে কবে করবি? মনের মতো কাউকে খুঁজে পাই তারপর করবো। মনের মতো খুঁজতে খুঁজতে তো বুরা হয়ে যাবি? এটা বলে সব বন্ধুরা হাসতে থাকে।
কেউ তো একজন আছেই,যাকে আমি চিনি না কিন্তু ফিল করি।
শরীফের বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া সবাই বিয়ে করে নিয়েছে। তাই তারা খুব করে চাইছে শরীফ যেন এবার বিয়েটা করে।আর তারা চুটিয়ে মজা করবে।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে অতিতের কথা গুলো ভাবছি।
তিন বোন,এক ভাই আর আব্বু আম্মু নিয়ে আমার পরিবার। খুব আনন্দে দিন কাটাচ্ছিলাম। দুই বোনের ই সহিহ সালামতে বিয়ে হয়েছে।আর বাকি ছিলাম আমি, আমাকে নিয়ে আব্বুর অনেক স্বপ্ন ছিল, আব্বুর মতো একজন আদর্শ ব্যাংকার বানাবেন। আমিও মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ এক কুনজর পরলো আমার পরিবারের উপর, বিশেষ করে আমার উপর।আর ভাবতে পারছি না ভয়ে আমি সিটিয়ে যাচ্ছি।
মাগরিবের আজান হ‌ওয়ায় নামাজ আদায় করে আবার বেলকনিতে গিয়ে,ফ্লুরে বসে দেয়ালে ডেস দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মাঝে মাঝে বিপদে আকাশের দিকে মাথা তোলা। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের কষ্টগুলো আল্লাহকে বলা। প্রিয় নবীর সুন্নাত।
মুসলিম- ২৫৩১।
আর আমি সুযোগ পেলে তাই করি, আমার বিশ্বাস আল্লাহ তা'আলা একদিন সব ঠিক করে দিবেন ইনশা আল্লাহ।

শরীফ ভাইয়া বাসায় আসার পর সবাই এক সাথে পিঠা খেতে বসে।
আমাকে অনেক বার আন্টি ডেকে গেছেন, কিন্তু আমি যাইনি। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে আপুদের সাথে কতো মজা করতাম, পিঠা তৈরির পর কে আগে খাবে এই নিয়ে দুষ্ট মিষ্টি ঝগরা হতো, তাদের কথা খুব মনে পড়ছে তাই আমি কিছুতেই এখন খেতে পারবো না, আন্টি কে বার বার ই এটা ওটা বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।
শরীফ পিঠা খেতে খেতে বলে মা, বাবা তোমরা এখনও তো বললে না মেয়েটির সম্পর্কে?
মিসেস সাবিনা (শরীফের মা) বলল তাহলে বলছি শোন_আমি সাইফ আর তোর বাবা মরিয়মের (শরীফের বড় বোন) শ্বশুর বাড়ি থেকে আসার পথে, আমরা সিএনজি তে বসে ছিলাম।ড্রাইভার একটু দোকানে গিয়েছিল।
তো আমি হঠাৎ দেখতে পাই হলুদ শাড়ি পরিহিতা একটা মেয়ে দৌড়ে আসছে আমাদের দিকে।
তখন সন্ধ্যা সাতটা এরকমই হবে। মেয়েটির হলুদ শাড়ি এবং সাজগোজ দেখে বুঝতে পারলাম গায়ের হলুদ থেকে পালিয়ে এসেছে।
মেয়েটি আমাদের গাড়ির কাছাকাছি আসার আগেই সেন্সলেস হয়ে পরে যায় রাস্তায়।আশে পাশে গাড়ি আর গাড়ির ড্রাইভার ছাড়া কোন মানুষ ছিল না, তাই আমি আর তোর বাবা মেয়েটির কাছে যাই আর গিয়ে দেখি মেয়েটার মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে।

তাই আমরা মেয়েটাকে আমাদের গাড়ি করে নিয়ে গিয়ে হসপিটালে ভর্তি করাই। টানা এক সপ্তাহ পর মেয়েটির জ্ঞান ফিরে।তোর বাবা হসপিটালে ওর পাশে সবসময় থাকার জন্য নার্স রাখে এবং ডাক্তার তো আছেই। আমি একদিন পর পর গিয়ে দেখে আসতাম। মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে যেন আমাদের খবর দেওয়া হয় তা ভালো করে বলে দেওয়া হয়েছিল।
আমাদের কথা মতো ওর জ্ঞান ফিরলে আমাদের কল করা হয়।আর ডক্টর বলেন ও এখন বিপদ মুক্ত তাই আমরা ওকে বাসায় নিয়ে আসি।
পরে ওর কাছ থেকে জানতে পারি,কেউ ওর বাবা কে খুন করেছে আর ওকে জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। আর তাই গায়ের হলুদের দিন রাতে, ও পালিয়ে এসেছে।
ওর কষ্ট হবে ভেবে আর কিছু জিজ্ঞাসা করিনি। শরীফ সবকিছু শুনে খুবই দুঃখ পায়। এতো টুকু একটা মেয়ের জীবনে এরকম ঝড় বয়ে গেছে, এটা মেনে নেয়া সত্যিই অনেক কষ্টের।
শরীফ বলে মা শরীফা কোথায়?ও তো চমৎকার পিঠা তৈরি করে। আমি প্রথম বার এই পিঠা খেলাম,এর জন্য ওকে ধন্যবাদ দিতে হবে।

ওর রুমের বেলকনিতে বসে আছে, আমি কতোবার পিঠা খেতে আসতে বললাম বলে আন্টি আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
তোমরা খাও আর খেয়ে বলবে কিন্তু কেমন হয়েছে। আচ্ছা আমি ওর সাথে কথা বলি, আমার তো ওর সাথে তেমন কথাই হলো না।
আচ্ছা যা, মেয়েটার নিশ্চ‌ই বাড়ির কথা মনে পড়ছে আর সেই জন্যই মনে হয় মন খারাপ।
হঠাৎ শরীফ ভাইয়া বলে উঠে এই পিচ্ছি কি করছো এখানে?আমি হঠাৎ কারো কথা শুনে চমকে যাই আর বসা থেকে উঠতে নিলে। শরীফ ভাইয়া আমাকে বাধা দিয়ে আমার থেকে কিছু টা ব্যাবধানে নিজেও বসে পরে।
আমি অবাক হয়ে যাই। শরীফ ভাইয়া বলে পিচ্চি তোমার মন খারাপ? আমি কপট রাগ দেখিয়ে বলি, আপনি আবার আমাকে পিচ্চি বলছেন?
আমার কাছে তোমাকে পিচ্চি ই মনে হয়। তুমি মাত্র এইস.এস.সি এক্সাম দিয়েছ।আর আমি এম এ পড়ছি। তাহলে তোমাকে পিচ্চি বলবো না তো কি বলবো?
আপনি না আর্মিতে জব করেন?
হুম,জবের পাশাপাশি পড়াশোনা ও করছি।
ওহহ আচ্ছা।

হুম, দেখলে তোমার ছোট্ট মাথায় এটাও ঢুকেনি যে,জবের পাশাপাশি পড়াশোনা ও করা যায়।এই জন্যই তুমি পিচ্চি।
আমি এবার লজ্জা পেলাম, ভাবলাম সত্যিই তো এটা আমি কি বোকার মতো কথা বলে ফেললাম।
আচ্ছা যাই হোক তুমি কিন্তু দারুণ পিঠা তৈরি কর। ধন্যবাদ তোমাকে, এতো কষ্ট করে আমার জন্য পিঠা তৈরি করার জন্য। আচ্ছা আমার জন্যই তো করেছ তাই না?
আমি ওনার এরকম প্রশ্ন শুনে কি বলবো খুঁজে পেলাম না, তাই চুপ করে বসে রইলাম।
শরীফ মেয়েটার দিকে আবার ও ভালো করে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর, আল্লাহ পাক যেন নিজ হাতে ওকে তৈরি করেছেন,,,,

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com