তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ০৬
- তুই ঠিক আছিস তো।
মেহেরাব অবাক হয়ে
- হ্যা ভাইয়া।
মিহু পানির গ্লাস নিয়ে এসে
- পানি টুকু খেয়ে নাও। মেহেরাবের কিছু হয়নি।
মেহেরাব মিহুকে বললো
- কি হয়েছে?
- খারাপ স্বপ্ন দেখছে।
হুট করে ঘুমের ভেতর থেকে উঠে তোমার নাম বলতে বলতে তোমার ঘরের দিকে চলে এলো।
সজীব মেহেরাবকে ছেড়ে দিয়ে পানি খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে
- ভাই তুই কিছু করে বসিস না। তোর কিছু হলে আমরা কেউ সহ্য করতে পারবো না।
- আহা ভাইয়া আমি কিছু করবো না। আমার এতো সুন্দর একটা পরিবার কে কিভাবে কষ্ট দিবো৷
-তবু ও রে ভাই। একাকিত্ব কখন যে কি করায় বসে কেউ জানে না।
- আমার ভেতর তা নেই ভাইয়া। আছে শুধু ঘৃণা। ওর জন্য আমি কেন আমার ক্ষতি করবো। আমি তো বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। না হলে মেধা আমার জীবন টা তেজ পাতা বানাই দিতো। ভাবি ভাইয়াকে নিয়ে ঘরে যান।
মিহু সজীবকে নিয়ে ঘরে চলে গেলো। মেহেরাব দরজা আটকিয়ে দিলে খাটের উপর বসে ভাবছে
- ভাইয়া আমার এতো সুন্দর একটা ফ্যামিলিকে কষ্ট দিয়ে আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না। তোমরা কষ্ট পাবে বলেই আমি কিছু করছি না।
পরেরদিন সকালে
মেহেরাব একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো। দরজা খুলে বাইরে বের হতে মিথিলা বললো
- কি গো ঘুম ভাঙলো তবে?
- আমাকে ডাকোনি কেন? কত বেলা হয়ে গেছে।
- তোমাকে ডাকতে ডাকতে আমাদের গলা ব্যথা হয়ে গেছে। তোমার কোনো সাড়াশব্দ নেই।
- ভাইয়ারা কই
- তারা তাদের কাজে চলে গেছে।
- আমাকে না বলে চলে গেলো।
মিহু পাশ থেকে এসে
- তোমাকে এতো ডাকছি তুমি উঠছো না দেখে তোমার ভাই আমাদের বকা দিলো। তোমাকে ঘুমাতে দিতে বলছে।
- ওহ।
মেহেরাব কল পাড় থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করে বের হয়ে গেলো।
বিকাল বেলা
নেহা তার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে পার্কের ভেতর ঢুকতেই মেধার সাথে দেখা হয়ে গেলো। মেধা নেহাকে দেখে
- এই টা তোর কত নাম্বার?
নেহা মুখটা বাকিয়ে
- তোর যত নাম্বার চলে তত নাম্বার।
নেহা মেধাকে কথাটা বলে বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে চলে গেলো। মেধা হতবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে।
কিছুদূর যেতেই নেহার বয়ফ্রেন্ড বললো
- নেহা আমার আগে তোমার আরো বয়ফ্রেন্ড ছিলো৷
- তোমার কি মনে হয়?
- আমি তোমাকে আগে ও বলছি এখন ও বলছি তোমার যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে বলো আমাকে।
নেহা অবাক হয়ে
- তুমি ওর কথা ধরে বসলা। বাহ্ এই আমার প্রতি বিশ্বাস। তোমার সাথে আসাই ভূল হয়েছে।
নেহা রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। নেহার বয়ফ্রেন্ড নেহার পিছন যেতেই মেধা সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। নেহার বয়ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে পড়লো৷ মেধা বললো
- তোমার রুচি বলতে কি কিছু নেই?
নেহার বয়ফ্রেন্ড অবাক হয়ে
- মানে
- কেমন লেভেলের মেয়ের সাথে তুমি রিলেশন করছো। ঐ মেয়ে টাকার জন্য বিছানায় যেতে রাজি৷ আমার বয়ফ্রেন্ড কে ও এভাবে কেড়ে নিছে। কয়টা ছেলের সাথে যে বিছানায় গেছে কে জানে?
নেহার বয়ফ্রেন্ড আর দাঁড়ায় না চলে গেলো। মেধা শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাইকে ঘুরতে বেরালো।
মেহেরাব কোচিং এ আজ একটু লেট করেই আসলো। এসে দেখলো কোচিং শান্ত। কোনো কথার শব্দ নেই। আজ তামান্না ক্লাসে আসেনি। ক্লাসে আসলে ক্লাস টা মাতিয়ে নিতো। মেহেরাব ভাবলো আজ নোট টা নিবে কিন্তু সেই তামান্নার খবর নেই। ক্লাস শেষে মেহেরাব বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছিলো। পিছন থেকে একজন বললো
- কি রে ছোটলোক। হেটে যাচ্ছিস
মেহেরাব পিছন ফিরে দেখলো মেধা বাইকে নতুন বয়ফ্রেন্ডের সাথে। মেহেরাব চলে যেতে লাগবে তখন মেধা বললো
- কই যাস। দাড়া।
মেহেরাব দাঁড়িয়ে পড়লো। মেধার বয়ফ্রেন্ড বললো
- বেবি কে ছেলেটা?
- আরে তোমাকে বলছিলাম না একটা ছোটলোক আমাকে মিথ্যা বলে আমার টাকা হাতিয়ে নিছে এই হলো সেই ছোট লোক।
মেহেরাব মেধার কথা শুনে পুরো থ হয়ে গেছে। মেধার বয়ফ্রেন্ড বললো
- টাকাটা কি আদায় করে দিবো?
- আরে কি বলো তুমি। আমি তো এই ছোটলোক কে ভিক্ষা দিছি টাকাগুলো।
- তুমি কত ভালো। আচ্ছা তোমাকে আমি টাকা দিবানি। এসব ছোট লোকের সাথে বন্ধুত্ব কেন করো বুঝি না।
মেহেরাবকে অনেক কিছু বলে অপমান করে চলে গেলো। মেহেরাব অপমান সহ্য করে বাসার দিকে যেতে লাগলো। সামনে নেহার সাথে দেখা। নেহার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। মেহেরাব নেহার পথ আটকে ধরে। নেহা পাশ কেটে যেতে যাবে কিন্তু মেহেরাব যেতে দেয় না। মেহেরাব জিঙ্গেস করলো
- কি হয়েছে নেহা?
- কিছু না। আমাকে যেতে দাও।
- তোমাকে এমনটা দেখাচ্ছে কেন?
- সব আমার কপালে লেখা ছিলো তাই হয়েছে।
মেহেরাব অবাক হয়ে
- কি হয়েছে?
নেহা কিছু বলতে যাবে তখনি পিছন থেকে
- তুই যে কত বড় খারাপ তা আমার সামনে প্রমাণ হয়ে গেলো। ঐ মেয়েটা ঠিক কথায় বলছে তুই একটা বারো ভাতারি। তোর আসল রুপ আমার সামনে এসে গেছে।
মেহেরাব ছেলেটার দিকে তাকিয়ে
- নেহা ছেলেটা কে?
- আমার বয়ফ্রেন্ড ।
নেহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নেহার বয়ফ্রেন্ড মেহেরাবের সামনে এসে
- তুই তাহলে ওর নতুন শিকার। ওর সম্পর্কে জানিস তুই। ও কতটা খারাপ। আমাকে ঠকিয়েছে মিথ্যা বলে৷ আমি সবটা জেনে গেছি দেখে এখন তোর কাছে আসছে। এমন কতটা ছেলের কাছে গেছে বিছানায় গেছে কে জানে?
মেহেরাব কথাটা হজম করতে পেরে রাগে নেহার বয়ফ্রেন্ডের গালে কষে চড় বসিয়ে কলার চেপে ধরে
- তোর থেকে ওর ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট নিবো। তুই ওর কেমন বিএফ যে ওর প্রতি তোর বিশ্বাস নেই। কেমন ভালোবাসিস যে অন্যের কথা বিশ্বাস করে নিছিস। কিভাবে থাকবি সারা জীবন। অসুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে ভালোবাসা করা ঠিক না। তুই ওর আমার সম্পর্ক না জেনে ওর নামে বাজে কথা বলার সাহস কই থেকে পেলি।
মেহেরাব আরো কিছু বলতে যাবে তখনি নেহা মেহেরাবকে ছাড়িয়ে দিয়ে মেহেরাবের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে
- তোর কি করে সাহস আমার বয়ফ্রেন্ডের গায়ে হাত দেওয়ার ওকে কথা শোনানোর। ও আমাকে যা ইচ্ছা তাই বলুক। তাতে তোর কি? কেন আসছিস আমাদের মাঝে।
মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাব নেহার বয়ফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে
- শিখে রাখ। ভালোবাসা কাকে বলে। অবিশ্বাস নিয়ে সম্পর্ক বেশি দূর নেওয়া যায় না।
মেহেরাব চলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো৷ নেহা চোখের পানি মুছে যেতে যাবে তখনি রাজিব নেহার হাত ধরে
- সরি। আমার ভূল হয়ে গেছে। প্লিজ মাফ করে দাও।
নেহা হাত ছিটকে দিয়ে চলে যেতে লাগলো। মেহেরাব কিছুটা দূর যেয়ে থেমে যেয়ে ওদের দিকে তাকালো। রাজিব নেহার সামনে যেয়ে কান ধরে উঠবস করছে আর বলছে
- সরি। আমার ভূল হয়ে গেছে। আর কখনো ভূল করবো না।
- যাকে বিশ্বাস নেই তাকে আর বিশ্বাস করতে হবে না। তুমি তোমার মতো থাকো। আমি চাই না আর সম্পর্ক টা সামনে যাক।
নেহা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো। রাজিব আবার পথ আটকায়। অনেক কষ্টে নেহাকে থামায়। নেহা বললো
- তুমি ঐ মেয়ের সম্পর্কে কত টুকু জানো। ওকে চিনো না জানো না ওর কথা বিশ্বাস করে আমাকে অবিশ্বাস করলা।
- তুমি রাগ করে চলে আসতেছিলা তখনি মেয়েটা আমার পথ আটকে ধরে তোমার নামে বাজে কথা বলে। আমার মাথা ঠিক ছিলো না তাই তোমাকে এভাবে বলে দিছি। সরি।
- আজ এ বলবে সে বলবে তখন।
- বিশ্বাস করবো না। প্রতিবাদ করে আসবো। তুমি আর রাগ করে থেকো না।
- ঠিক আছে মনে থাকে জেনো।
- ছেলেটা কে ছিলো?
- ও মেহেরাব। বন্ধু ছিলো। যে মেয়েটা বলছিলো তোমাকে তার বয়ফ্রেন্ড। ও গরীব বলে ওর সাথে ব্রেকআপ করছে।
নেহাকে রাজিবকে সবকিছু বলে দিলো। রাজিব অবাক হয়ে গেলো।
মেহেরাব চলে গেলো বাসায় ।
তিন দিন ধরে তামান্না কোচিং এ আসছে না। মেহেরাব নোট ও নিতে পারছে না৷ কোচিং এর ভাইয়াকে বলে কিন্তু ভাইয়া বলে ওর ফোন অফ। কোচিং থেকে তামান্নার ঠিকানা নিলো।
পরের দিন
মেহেরাব তামান্নাদের বাসায় যেয়ে কলিং বেল বাজাতে তামান্না মা দরজা খুলে যা বললো মেহেরাব পুরো থ হয়ে গেলো..........
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com