তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ০২
মেধা রাতে মেহেরাবকে ফোন দিলো। মেহেরাব ফোনটা রিসিভ করে
- সেই যে বাসায় গেছো। একটা কল তো দাও নি।
- কাজে ব্যস্ত ছিলাম। শোনো তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।
- হ্যা বলো।
- কাল ১০ টায় পার্কের সামনে চলে এসো। বাই এখন।
মেধা ফোনটা কেটে দিলো। মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো। হঠাৎ ফোন টা মুখের উপর কেটে দিলো। কাজে ব্যস্ত মনে হয়।
মেধা নেহাকে ফোন দিয়ে বললো ১০ টাই পার্কের গেইটে থাকতে। ফোনটা কেটে দিলো।
পরের দিন
মেহেরাব পাঁচ মিনিট আগে এসে হাজির হলো পার্কের সামনে। মেধা ও ঠিক টাইমে চলে আসলো। সাথে নেহা ও৷ মেহেরাব দুজনকে বেশ অবাক হয়ে গেলো। মেধা মেহেরাবের সামনে দাঁড়িয়ে
- কখন এসেছো।
- একটু আগে।
- আসলে তোমাকে কথা টা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।
- কি কথা বলো?
মেধা কিছুটা সংকোচ নিয়ে
- তোমার সাথে আমার রিলেশন রাখা সম্ভব না।
নেহা মেধার মুখে এমন কথা শুনে পুরো থ হয়ে গেলো মেহেরাব মেধার মুখে এমন কথা শুনে মেহেরাবের পুরো পৃথিবী উল্টে গেলো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো। মনে হচ্ছে নিজ অবস্থানে দাঁড়িয়ে নেই। মেহেরাব ঘাবড়ে যেয়ে
- কি বলছো কি তুমি? মজা করছো তাই না।
মেধা রাগান্বিত কন্ঠে
- আমি সিরিয়াস। তোমার সাথে আমার রিলেশন করা সম্ভব না। আমার বাবা কখনো তোমাকে মেনে নিবে না৷ আমি আর চাই না তোমার সাথে আর এগোতে।
মেহেরাব নিজের কানকে বিশ্বাস করছে না। মেহেরাব অস্থির হয়ে মেধার হাত ধরে
- তুমি মজা করছো বলো।
মেধা মেহেরাবের হাতটা ছিটকে মেরে ঠাস ঠাস ঠাস করে মেহেরাবের গালে চড় বসিয়ে দেয়। চড়ের শব্দে সবাই চেয়ে পড়লো। মেহেরাব পুরো থ হয়ে গেলো। গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেধা রাগান্বিত হয়ে
- ছোট লোকের বাচ্চা তোর সাহস হয় কিভাবে আমাকে টার্চ করার। একে তো থাকিস গোল পাতার ঘরে। বৃষ্টি পড়লে পড়ে পানি। তোর জামা কাপড়ের যে অবস্থা। তোর মতো ছোট লোকের সাথে আমি রিলেশন রাখবো কি ভেবেছিস কি? তোকে ভালো ভাবে বলছি শুনলি না। ভেবেছি রাগ কন্ট্রোল করে রাখবো কিছু বলবো না। ব্রেকআপ করে চলে আসবো। কিন্তু দিলি তো মেজাজ টা বিগড়ে।
মেহেরাব থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।৷মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে মেহেরাব নেই। মেধার রাগ টা ক্রমেই বেড়ে গেলো। মেহেরাবকে বললো
- তোর মতো ছোট লোককে আমার বাড়ির কাজের লোক ও হিসেবে রাখি । আর তুই আসছোস প্রেম করতে আমার সাথে। ফইন্নি তোর লেভেলের কাউকে দেখে বিয়ে কর। আমার জুতো কেনার যোগ্যটা তোর নেই।
মেহেরাব অনুনয় করে বললো
- এটা করো না। এত দিনের সম্পর্ক নষ্ট করো না প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে।
- তুই মর। তুই আমার কি দায়িত্ব নিবি। একে তো তোর মা পড়ে ছেঁড়া শাড়ি। আমি ও পড়বো কি ভাবছিস। । তোর সাথে রিলেশন রাখবো আমি। কখনো না
মেহেরাবের চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। মেধা মেহেরাবকে আজে বাজে কথা বলে নেহার হাত টেনে নিয়ে চলে গেলো। মেহেরাব বসে পড়লো। পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলো। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মায়ের কথা মনে গেলো৷ মা ঠিকি কথা বলছিলো। কিন্তু মেহেরাব মায়ের কথায় হেসে উড়িয়ে দিছিলো সব। মেহেরাবকে চ্যালেন্জ করলো৷ মেহেরাব জোরে একটা চিৎকার মেরে
- মা তুমি ঠিকি কথা বলেছিলে। আমি ভূল ছিলাম তুমি ঠিক মা। আমি কিভাবে তোমার সামনে মুখ দেখাবো৷ তোমার সামনে যাবো কি ভাবে?
পার্কের সবাই অবাক হয়ে চেয়ে রইলো মেহেরাবের দিকে।
( একদিন বিকালে মেহেরাব মা কে মেধার কথা জানালো। মা শুনে খুব খুশি হয়েছিলো কিন্তু মুখটা কালো করে ফেললো। মেহেরাব এটা দেখে অবাক হয়ে
- কি হয়েছে মা? মুখটা কালো করলে কেন?
- আমরা তো গরীব। আর গরীব ছেলেদের এসব প্রেম ভালোবাসা মানায় না।
মেহেরাব হেসে দিয়ে
- তুমি যা ভাবছো তা না। মেধা ওমন টাইপের মেয়ে না। ও খুব ভালো।
মা হেসে দিয়ে
- আমাদের বাড়ি দেখলে তোকে ছেড়ে চলে যাবে। তোর সাথে ব্রেকআপ করে যাবে চলে।
- না মা মেধা কখনো এসব করবে না। ও অনেক সাধা সিধে। ওর মতো মেয়ে হয় না।
- এতো কনফিডেন্স ভালো না। একদিন নিয়ে আয় বাসায়। তখন দেখা যাবে।
- ঠিক আছে নিয়ে আসবো।
- মেহেরাব শোন
- হ্যা মা বলো
- বাবারে আমাদের মতো গরীবদের জন্য এসব ভালোবাসা অপরাধ। ভালোবাসা নিষিদ্ধ। অভাব যখন দেখবে ভালোবাসা হারিয়ে যাবে।
- মা তুমি জানো না । মেধা ঠিক কতটা ভালো৷
- নিয়ে আছিস বাসায়।
-ঠিক আছে মা। আমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে কিন্তু আমি জিতে যাবো৷ যা চাইবো কিন্তু দিতে হবে।
- তা কি আর বলতে। মেনে নিবো৷
দু দিন পর
মেহেরাব মেধাকে নিয়ে বাসায় আসলো। বাকীটা উপরে তো ১ম পার্টে পড়ছিলেন)
বাস্তবে
মেধা নেহাকে এক পাশে দাঁড়িয়ে
- তুই আমার সাথে মিথ্যা কেন বললি?
নেহা অবাক হয়ে
- কি মিথ্যে বলছি?
-তুই কেন আমাকে বলছিলি ঐটা মেহেরাবদের বাড়ি৷
- আমি তো জানি ঐটা মেহেরাবদের বাড়ি৷
নেহার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে
- তোরা দুজনে আমাকে ঠকিয়েছিস। মিথ্যা কথা বলে। তোদের কাউকে আমি ছাড়বো না।
নেহা গালে হাত দিয়ে
- তুই আমাকে ভূল বুঝলি।
- ভূল না ঠিকি৷ তুই বলছিলি ঐটাই মেহেরাবদের বাড়ি। ওর ভাই সরকারি চাকরি করে। আমি ভেবেছিলাম ও সরকারি চাকরি করবে কিন্তু কি দিয়ে কি হয়ে গেলো। ফকিন্নির বাচ্চা। আমার বাবাকে কতো বড় মুখ নিয়ে বলছিলাম সরকারি চাকরি করা ছেলেকে বিয়ে করবো। কিন্তু ও আমাকে এভাবে ঠকালো।
- আমি তো ওকে ঐ বাড়ির দিকে যেতে দেখিছি তাই বলেছিলাম। আমারি ভূল হয়েছে তোর মতো নিচু মনের মানুষের সাথে মেহেরাবের রিলেশন করিয়ে দিয়ে। তোর মন মানসিকতা এতোটা নিচু আমার জানা ছিলো না৷
মেধা রাগান্বিত হয়ে চলে গেলো। নেহা পুরো থ হয়ে গেলো মেধার এমন আচরণ দেখে। নেহার না দাঁড়িয়ে মেহেরাবের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে
- সরি মেহেরাব আমি কখনো জানতাম না আমার বান্ধবী টা এতো নিচু মনের মানুষ। তাহলে কখনো রিলেশন করিয়ে দিতাম না।
মেহেরাব মাথা নিচু করে
- আসলে দোষটা আমার। আমি আমার অবস্থান টা আগে জানিয়ে দিলে হয়তো আজকে এই দিন টা জীবনে আসতো না। ভূল টা আমার। ভালোবাসা টা আসলে সবার জন্য না। আমার জন্য ও না।
- তোকে কি বলে শান্তনা দিবো বুঝতে পারছি না। আমাকে মাফ করে দিস৷
নেহা চলে গেলো। মেহেরাব চোখের পানি মুছে বাসায় চলে গেলো৷ বাসায় যেয়ে মাকে জরিয়ে ধরলো....
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com