বাশিঁওয়ালা । পর্ব - ০২
আধময়লা লালপেড়ে মোটা ধুতি। দু' হাতে অনেক পাকা লোম। বয়স
কত হবে? সত্তর থেকে পচান্তরের মধ্যেই বলে মনে হয়। তক্তপোশের
বয়স বোধহয় তার চেয়েও বেশি। তোমার কি রুকুর কথা মনে আছে মশাই?
মৃদুল মাথা নেড়ে বলে, না।
মনে থাকার কথাও নয়। শিশুকালে তোমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছিল।
তা তখন রুকুর বয়স বছর তিনেক হবে। তোমার বোধহয় সাত আট।
বিয়ে না হয়ে ভালই হয়েছে। রুকুর তেমন লেখাপড়া হয়েছিল না।
তারপর ক্লাস সিক্স না সেভেনে যখন উঠেছে তখন ব্যামোয় ধরল। সে
অসুখ কিছুতেই সারে না। রোগা হয়ে হয়ে কাঠিসার হয়ে মরেই গেল।
বেঁচেবর্তে থাকলেও তোমার মতো বিদ্যাবানের সঙ্গে মানানসই
হত না। ওই যে তাদের বাড়ি। কোঠাবাড়িই ছিল এক কালে। এখন জঙ্গল।
গ্রামটা খুব আবছা চেনা লাগছে মৃদুলের। একটা ক্ষয়াটে ছবি। যা মনে
আছে তার সঙ্গে সবটা মিলছে না। আর অনেকটাই দীনদরি্র ময়লা আর
ধুলোটে লাগছে। রুকুকে তার মনে নেই। সে যে মারা গেছে সেটা সে
একবার শুনেছিল হয়তো। কিন্তু সেটার কোনও সংবাদমূল্য ছিল না তার কাছে।
ওদের বাড়িতে কেউ নেই বুঝি? না।
কে আর থাকবে? ওই তো মেয়েটাই যা ছিল ওদের। মেয়েটা
যাওয়ার পর কিছুদিন বেঁচে ছিল। তার পর তারা যে যার সময় হলে চলে গেল।
একটু চুপ করে থেকে হরপ্রসন্ন ফের বলল, জীবন অনিত্য মশাই। সে তো বটেই।
সে তো তুমি ভালই জানো মশাই। এতটুকু বয়সে কত দীগা পেলে।
মা নেই, বাবা নেই, বড় ভাইটা পর্যন্ত বিদেশ বিভুইয়ে
গয়ানাথ একটু সতর্ক গলায় বলল, থাক নাঃফ্ষাকা ওসব কথা!
তা বটে। ওসব ভেবে, জপ করে লাভও নেই।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com