তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ০৩
মেহেরাব মাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো । মেহেরাবের মা অবাক হয়ে
- কি হয়েছে তোর কান্না করছিস কেন?
- মা তুমি ঠিকি কথা বলছিলে। আমাদের জন্য ভালোবাসাটা মানায়। স্বপ্ন টাই মানায় কল্পনায়।
- মেয়েটা কিছু বলছে তোকে
- হ্যা। আমার সাথে ব্রেকআপ করে দিছে।
- বোকা ছেলে৷ তাই বলে কান্না করতে হবে। হয় তো তোর জন্য ওর থেকে ভালো কেউ অপেক্ষা করছে।
- আমি যে ওকেই বেশি ভালোবাসি।
- যে ভালোবাসা বুঝে না। তার জন্য ভালোবাসাটা মানায় না। দেখবি তোর লাইফে খুব সুন্দর একটা মেয়ে আসবে। নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোল তোর পিছনে অনেক মেয়ে লাইন দিবে।
- আমি তো ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
- যে তোর অবস্থান দেখে পালালো সে তোর জীবনে সারা জীবন কিভাবে থাকবে। যেটা হয় ভালোর জন্যই হয়। তাই একটু চেষ্টা কর তুই সব পারবি।
মেহেরাব মাকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে
- হ্যা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু বেহায়া মনটা যে কিছুতে শুনবে না।
- একদিন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। মন দিয়ে পড়াশোনা কর। আর প্রেম ভালোবাসার ভূত নামিয়ে ফেল ওকে।
- তোমাকে যে কথা দিয়েছি। আমি তোমার সব কথা শুনবো।
- এই তো লক্ষি ছেলে আমার। এখন ফ্রেশ হয়ে আয় খাবি।
- এখন আর ইচ্ছে হচ্ছে না।
- ব্রেকআপ হয়েছে তোদের। ভাতের সাথে তো কিছু হয়নি৷ পেতে ভাত দে সব ঠিক হয়ে যাবে। খিদেই মানুষ জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়।
মেহেরাবের মা চলে গেলো। মেহেরাব ফ্রেশ হয়ে খেতে আসলে মেহেরাবের বড় ভাইয়ের বউ মিথিলা বললো
- কি গো দেবর সাহেব ছেঁকা খাইছো বলে।
- ভাবি৷ খেতে দিবা না উঠে চলে যাবো।
পিছন থেকে মিহু হেসে দিয়ে
- ঘরে এতো সুন্দর দুটো বউ থাকতে বাহিরে নজর দেওয়া লাগে কেন?
মিহুর কথা শুনে মিথিলা হেসে উঠলো। মেহেরাব মা বলে ডাক ছাড়লো৷ মিথিলা বললো
- মা কে ডাকলে আসবে না৷ সে নাই। তা আমাদের দিকে একটু নজর দিলে তো পারো। ঘরের বউ ঘরেই থাকতো বাহিরে অপরিচিত মেয়ে দের থেকে ছেঁকা খেয়ে আর চোখের পানি ফেলে দেবদাস হতে হবে না।
মেহেরাব ভাবিদের কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। গলা দিয়ে ভাত নামছে না৷
( আচ্ছা লজ্জায় কি কেউ লাল হয় । আমি তো কখনো দেখলাম না লজ্জায় কেউ লাল হয়। আমি ও তো লাল হই না লজ্জায়। তাহলে গল্পে দেয় লাল হয়ে গেছে৷ আসলে কি লাল হয় নাকি লাল রং দেওয়া হয় )
মিহু হেসে দিয়ে
- সতীন গো জামাই টা কে খেতে দাও। আর কিছু বলো না। শেষে না খেয়ে উঠে যেয়ে মায়ের কাছে বিচার দিবে। মা আমাদের কে বকবে আমরা দুটো বউ থাকতে কেন তার ছেলে খেতে পারলো না।
মিথিলা মিহু দুজনে হাসছে। মেহেরাব খেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে
- আমি ও ভাবছিলাম। ঘরে বউ থাকতে বাহিরে আর কেন নজর দিবো। ঘরের দুজনকে নিয়েই থাকবো৷
মিহু হেসে দিয়ে বললো
- জামাইয়ের মুখে দেখি বুলি ফুটছে।
মেহেরাব ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আর দাড়ায় না। এখানে দাঁড়ালে ভাবি দুজন ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিবে। ভাবি দুজনে হাসাহাসি করতে লাগলো
রাত ১২ টা
মেহেরাব শুয়ে মেধার কথা ভাবছে। বার বার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। মেধা কল দিয়ে এই বুঝি বললো আরে আমি মজা করেছি। তোমাকে পরীক্ষা করছি৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ আমি তোমার সাথেই সারা জীবন থাকবো। চোখের কোণে পানি এসে জমলো। মেধাকে খুব মিস করছে ৷ অনেক বেশি মনে পড়ছে।
দরজায় ধাক্কানোর শব্দে মেহেরাবের ভাবনা কেটে গেলো। মেহেরাব দরজা খুলে দেখলো মিহু মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে । মিহু বললো
- কি গো জামাই? সেই কখন থেকে ডাকছি কোনো ছাড়া শব্দ নেই। ঐ মেয়েটার কথা ভাবছো বুঝি।
মেহেরাব মাথা নিচু করে নেয়। মিথিলা বললো
- আরে জামাই আমরা থাকতে এতো ভাবনা কিসের।
মেহেরাব বললো
- তোমরা ঘুমাও নি।
- কিভাবে ঘুমাবো। আমার আদরের জামাই টা কষ্ট পাচ্ছে আর আমরা শান্তিতে ঘুমাবো।
মেহেরাব হেসে দিয়ে
- তোমরা না।
মিহু মিথিলা কাব্যের হাত ধরে নিয়ে বাহিরে বসলো। মিথিলা বললো
- ভালোবাসা টা এতোটা সহজ কিছু না। কেউ অর্থের জন্য ভালোবাসে। কেউ একটু কেয়ারিং ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ভালোবাসে। আর কেউ আবেগে ভালোবাসে। আবেগ কেটে গেলে ভালোবাসাটা ও কেটে যায়। আর যার আবেগ কাটে না সে বিচ্ছেদের পর হয় নিজের ক্ষতি করবে আর না হয় সুইসাইড করবে। আর কেউ বিগ্রে যাবে।
মিহু বললো
- শোনো জামাই তোমাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। আমরা চাই না তোমার কিছু হোক। তুমি আমাদের চোখের মনি৷ তুমি ভূল পথে গেলে সেই ভূল পথ দেখিয়ে দিবো৷ একবার দেখালে পরের বার আর ভূল পথে যাবে না।
মিহু মিথিলার কথা শুনে মেহেরাবের চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না। মেহেরাব বললো
- এজন্যই তোমাদের কে এতো ভালো লাগে। ভালোবাসি। তোমরা পাশে না থাকলে হয়তো এই ডাক্কাটা আরো পরে যেয়ে খেতাম।
- গরীব বলে যে মূল্যায়ন করবে না তা কি করে হয় বলো।
মিথিলা মিহু মেহেরাবের সাথে গল্প করতে লাগলো। হাসির কথা শুনিয়ে হাসাচ্ছে মেহেরাব কে।
৩ দিন পর
মেহেরাব ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘর থেকে বের হবে তখনি মিহু মিথিলা সামনে দাঁড়িয়ে
- কই যাচ্ছো।
- কোচিং এ
- পারবা যেতে না আমরা আসবো।
- পারবো যেতে। তোমরা আমাকে যেভাবে এই তিন দিন সঙ্গ দিছো তাতে আমার অনেকটা ভালোই হয়েছে। না হলে তো ডিপ্রেশনে তলিয়ে যেতাম।
- হয়েছে আর প্রশংসা করতে হবে না। তোমাকে ঐ কোচিং এ যেতে হবে না।
মেহেরাব অবাক হয়ে
- কেন?
মিহু বললো
- ঐ কোচিং এর থেকে ভালো একটা কোচিং এ যাবে তুমি।
মিথিলা বললো
- এখানে ঠিকানা লেখা আছে। এই কোচিং এ যাবে তুৃমি।
- ঠিক আছে।
মেহেরাব কাগজ টা নিয়ে চলে গেলো। মেহেরাবের মা মিহু মিথিলাকে বললো
- কি বুঝলা?
- আর চিন্তা নেই। ও এখন ঠিক আছে। আপাদত ওকে একা থাকতে দেওয়া যাবে না। ওকে সঙ্গ দিতে হবে।
- তোমরা যেটা ভালো বুঝো কইরো। আমি রান্না টা বসায় দি।
মিহু মিথিলা রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে পড়লো মায়ের দিকে। মা কাশি দিয়ে
- আরে আমি তো মজা করে বলছি রান্না বসাই দি। তোমরা রান্না করো। আমি ঘরে বসে আছি।
মা চলে গেলো। মিহু বললো
- একটা দিন বাড়িতে ছিলাম না বলে রান্না করছে দেখে। খালি বলে রান্না করবে।
- সে তো বেশি বুঝে। তার কি এখন রান্না করার বয়স আছে। আমরা বউরা এসে গেছি তা ও রান্না ঘরে যাওয়ার জন্য নাচে।
মেহেরাব নতুন কোচিং এ এসে হাজির হলো। কোচিং এর পরিচালক সে মেহেরাবকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো৷ স্যারদের সাথে ও পরিচয় করিয়ে দিলো। কোচিং শেষে বাসায় চলে আসলো। মিহু মিথিলা জিঙ্গেস করলো
- কেমন লাগলো?
- হু ভালোই। কোচিং এর সবাই অনেক ভালো মনের মিশুক খুব৷
মিহু বললো
- তা কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হলো নাকি৷
- না।
- বন্ধুত্ব করলে করো কিন্তু ভালোবাসা বানাবে না। ঘরে কিন্তু দুটো বউ আছে ভূলে যেয়ো না।
মেহেরাব হেসে দেয়।
৭ দিন পর
মেহেরাব কোচিং শেষে বাসায় ফিরছিলো৷ হঠাৎ করে চোখ দুটো আটকে যায় রাস্তার পাশে। বুকের ভেতরটা কেপে উঠলো..
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com