Breaking News

অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেম । পর্ব - ০১


শরীফ মাত্র তার রুমে প্রবেশ করলো।সোফায় বসে পা থেকে মৌজা গুলো খুলে, বাথরুমে যাবে ফ্রেস হতে,যেত যেত নজরে পড়ল তার বিছানা জুরে মেয়েদের কাপড় এলোমেলো করা। শরীফ যেমন আশ্চার্য হয় ঠিক তেমনি রেগে যায়।তার পারমিশন ছাড়া কেউ তার রুমে প্রবেশ করতে পারে না। অবশ্য তার পরিবারের সদস্যদের কথা আলাদা।যখনি মা বলে ডাক দিবে তখন শরীফের কানে পানির শব্দ আসে, বুঝতে পারে বাথরুমে কেউ আছে।

শরীফের মাথায় ঢুকছে না কে হতে পারে।
তার বোনেরা তো শ্বশুর বাড়িতে আর বাসায় তো মা ছাড়া আর কোন মেয়ে নেই।
শরীফ কিছু না বলে সোফায় বসে অপেক্ষা করতে থাকে।
ত্রিশ মিনিট,চল্লিশ মিনিট পার হয়ে যাচ্ছে অথচ বাথরুমে যে আছে তার বের হ‌ওয়ার কোন নাম নেই।
শরীফ অধৈর্য হয়ে পরে তাই ফোন নিয়ে নিউজ ফিড স্ক্রল করে এব ভাবে আর পারছি না
একজন মানুষ এতো সময় নিয়ে বাথরুমে কি করে আল্লাহ জানেন।
এতো দূর থেকে আসছি কোথায় ফ্রেস হয়ে রেস্ট করবো তা না উটকো ঝামেলা।
শরীফ দরজা খুলার শব্দে মাথা তুলে তাকায়।
শরীফ দেখে পিচ্চি একটা মেয়ে, গায়ে টি সার্ট আর স্কার্ট প্লাজু পরা। কপালে চুল গুলো বেবি কার্ট করা।
কাদের এক সাইটে চুল আর আরেক সাইটে ওরনা রাখা।
চুল গুলো যে কোমড় ছাড়িয়ে বেশ বুঝা যাচ্ছে। সদ্য গোসল করে আসা এক স্নিগ্ধ মায়াবী
পরী যেন তার সামনে। চুল গুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি গড়িয়ে
পড়ছে,শরীফ সব কিছু ভুলে মেয়েটার দিকে এক ধ্যনে তাকিয়ে রইল।
এদিকে আমি হঠাৎ রুমে ছেলে দেখে ভাবছি নিশ্চ‌ই চুরি করতে ঘরে ঢুকেছে।তাই দিলাম এক চিৎকার।
মেয়েটির চিৎকারে শরীফের ধ্যান ভাঙ্গে।আর বলে এই মেয়ে এভাবে চিৎকার করছো কেন স্টপ।
আমি ছেলেটার ধমকে চুপ হয়ে যাই।
এই মেয়ে কে তুমি? আমার রুমে কি করছো? আমার পারমিশন ব্যাতিত আমার রুমে প্রবেশ করেছ।
শুধু তাই নয় আমার রুম এলোমেলো করেছ। আবার ঘন্টার পর ঘন্টা আমার বাথরুম ইউজ করে চলেছ।
আমার মাথায় কিছুই ডুকছে না। ভাবছি এই বাঁদর ছেলে বলে কি?
সেই কখন থেকে সব আমার আমার করেই চলেছে।
এই মেয়ে চুপ করে আছো কেন? এখন কথা বলতে পারছো না? খুব জোরে তো চিৎকার দিলে। এখন বলো কে তুমি?
আ,,,আ,,,আমি শরীফা। আপনি কে? এভাবে আমার সাথে কথা বলছেন?
আমি শরীফ মাহমুদ।
ইশ বললেই হলো,যেই আমি শরীফা বলছি অমনি আপনি শরীফ হয়ে গেলেন?
কি বললে তুমি আমি তোমার নাম শুনে আমার নাম শরীফ বলেছি?
তা নয় তো কী?
ধারাও তোমাকে দেখাচ্ছি।মা, কোথায় তুমি? এভাবে মে মে করছেন কেন?আর কে আপনার মা?
দেখতে পাবে আমি কে?
মা.…..
কিরে বাবাই এভাবে ডাকছিস কেন?মা এই মেয়ে টা কে?আর আমাদের বাসায় কি করছে?
ও শরীফা।ওর কথা তোকে বলা হয়নি, আমি তোকে পরে বলছি।
একমাস হলো শরীফা আমাদের বাসায় আছে।
কি? একমাস হয়ে গেল আর আমাকে কিছুই জানালে না?
আন্টি বললেন_শরীফা তুমি কাপড় দিতে ছাদে যাবে তো?
জ্বি আন্টি।
তাহলে যাও দিয়ে আস।
আচ্ছা আন্টি।
আমি ছাদে চলে যাই।
আর এদিকে আন্টি বলে_ বাবাই মেয়েটা খুব বিপদে পরে আমাদের বাসায় থাকছে।
আমি তোকে পরে বলছি।
কিন্তু মা?
না আর কোন কিন্তু নয় অনেক দূর থেকে জার্নি করে এসেছিস যা ফ্রেস হয়ে আয়।
আমি খাবার রেডি করছি।
শরীফ বাদ্য হয়ে চলে যায় ফ্রেস হতে।
আমি ছাদে কাপড় রোদে শুকাতে দিচ্ছি আর ভাবছি এতো দিন এই বাড়িতে আসলাম ক‌ই কখনো তো এই বাঁদর ছেলের নাম শুনিনি। আন্টি তার দুই মেয়ের কথা বলেছেন, ওনার কথা তো বলেন নি। আমার ই বা কি দোষ আমি কি জানতাম নাকি। আমি অন্য মনস্ক হয়ে এগুলো ভেবে চলেছি। তখন সাইফ পিছন থেকে এসে হাউ করে উঠে। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই।আর বলি এই বাঁদরের ভাই। তোকে আর তোর ভাই কে আমি উগান্ডা পাঠিয়ে দিব দেখিস।

ভাবি কি বললে তুমি? আমাদের উগান্ডা পাঠাবে? তোমাকে ভাইয়া গুলি করে দিবে দেইখো।
এই শোন তুই আমাকে আর ভাবি বলে ডাকবি না।তোর ঐ বাঁদর ভাইয়ের বউ হতে আমার ভয়েই গেছে।
ধারাও আমি ভাইয়াকে বলছি যে তুমি ভাইয়া কে বাঁদর বলছো। ভাইয়া তোমাকে গুলি করে দিবে দেইখো।ইশ বললেই হলো তোর ভাই রিভলবার পাবে কোথায়?
আমার ভাইয়া যে আর্মি তুমি জানো না?ভাইয়ার কাছে তো রিভলবার আছেই।
কি?ঐ বাঁদর টা আর্মি?
আল্লাহ আমাকে বাঁচাও আমি তো আর্মি,পুলিশ এগুলো খুব ভয় পাই।আর সেখানে কিনা এতো কথা শুনিয়ে দিলাম ঐ বাঁদর আর্মি কে। না না আমাকে ঐ বাঁদর আর্মি থেকে দশ হাত দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে(আমি এসব মনে মনে বলছি)
সাইফ বলে_আমি এক্ষুনি যাচ্ছি তুমি ভাইকে বাঁদর বলছো এটা আমি বলে দিব।
না,,, ভাই আমার এরকম করে না আমি না তোর কিউট ভাবি।তুই তো সব সময় বলিস তাই না?
হুম কিন্তু তুমি আমাকে ভাবী ডাকতে নিষেধ করছো তাহলে?
আচ্ছা ঠিক আছে আমার গুলুমুলু ভাই টার যেটা ইচ্ছে সেটাই ডাকবে কেমন? তবে হা তোর ঐ বাঁদর ভাই,,,,
আবার তুমি বাঁদর বলছো?
না না স্লিপ অফ টাং আরকি। মানে তোর ঐ কিউট আর কি জানি বলে যাই হোক তোর ভাইয়ের সামনে আমাকে ভাবী বলে ডাকবি না, ঠিক আছে?
কেন ভাইয়ার সামনে ডাকলে কি হবে?

আরে তোকে কিভাবে বুঝাই। আমার যে মান সম্মান আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
আচ্ছা এটা পরে দেখা যাবে, এখন নিচে চলো।আচ্ছা চল।
আমি নিচে নেমে ভাবছি আমার কাপড় গুলো তো শরীফ ভাইয়ার রুমে। আচ্ছা ওনি তো আমার ভাই হবে তাইনা? আন্টির ছেলে তো ভাই ই হয়।
ওকি মেরে দেখলাম শরীফ ভাইয়া রুমে আছে কিনা। দেখলাম নেই এই সুযোগ যাই কাপড় গুলো নিয়ে আসি। রুমে ঢুকে বুঝতে পারলাম শরীফ ভাইয়া বাথরুমে আছে। তারপর ভয়ে ভয়ে গিয়ে তারাতাড়ি করে বিছানা থেকে নিজের সব জামা কাপড় নিয়ে বিছানা টা সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়ে আসলাম।
আমার অন্যান্য রুম থেকে শরীফ ভাইয়ার রুম টা বেশি পছন্দ হয়েছিল,তাই আমি এই রুমে থাকতে চাইলে আন্টি মানে শরীফ ভাইয়ার মা না করতে পারেননি। আন্টি হয়তো ভেবেছে শরীফ ভাইয়ার আসতে তো অনেক সময় বাকি আর আসলে না হয় অন্য ব্যবস্তা করা যাবে।এই ভেবে আন্টি হয়তো আমাকে নিষেধ করেননি,কে জানতো শরীফ ভাইয়া এভাবে কল না করে চলে আসবে।
আমি আমার কাপড় চোপড় সব কিছু নিয়ে, আন্টির কাছে বলি আন্টি আমি কোন রুমে থাকবো?
শরীফা মা কিছু মনে করিস না আসলে,

আমি বলি না না আন্টি আমি কিছু মনে করিনি, আপনি প্লিজ এভাবে বলবেন না।
আচ্ছা আমার লক্ষি মা টা। তুই বরং আমাদের রুমের পাশে যে রুম টা আছে ঐ খানে থাক। আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছে আন্টি। আমি সাথে হেল্প করতে গেলে আন্টি আমাকে দিল না। ইনফেক্ট কোন কাজ করতেই দেয় না। আমি ভাবছি পৃথিবীতে আজ‌ও ভালো মানুষ আছে এদের না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।বড্ড বেশিই মায়া করে আন্টি আমাকে। সেই প্রথম দিনের সেবা করা থেকে এই পর্যন্ত আমাকে বুঝতেই দেন না যে তাদের সাথে আমার আদৌও রক্তের সম্পর্ক তো দূরের কথা কখনো পরিচয় ও ছিল না অথচ নিজের একটা মেয়ের স্থান আমাকে দিয়েছেন। আংকেল ও ঠিক তেমনি সাইফের জন্য যা কিছু আনে আমার জন্য‌ও তাই আনে।আর সাইফের কথা কি বলব ও তো যেদিন আমাকে দেখেছে সেদিন থেকেই আমাকে তার ভাবীমনি বানিয়ে ফেলছে। সত্যি তাদের কোন তুলনা হয় না।
অতঃপর সবাই খাবার টেবিলে খাবার খেতে বসি,সাইফ গিয়ে শরীফ ভাইয়াকে ডেকে আনে। আমি কোন রকমে মাথা নিচু করে খেতে থাকি আর সাইফ কে আমার পাশেই বসাই বলাতো যায় না উল্টাপাল্টা কি না কি বলে বসে।

খাবারের খাওয়ার এক পর্যায়ে সাইফ বলে উঠে ভাবী পানি দাও।আর তখন আমার কাসতে কাসতে বিষম উঠে যায়। শরীফ ভাইয়া সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো সাইফ তুই কি বললি?
আমি সাইফের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাই। সাইফ ভয়ে বলে ভাইয়া পানি দাও বলছি।
ওহ আচ্ছা।
সবাই আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। আমি কোনরকমে অল্প খেয়ে উঠে পরি। তারপর একে একে সবার খাওয়া শেষ হয়।
শরীফ সিলেট সেনানিবাসে থাকে। ঐখান থেকেই আসা আজকে,জর্নি করে খুব ক্লান্ত বলে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
আমার চোখে ঘুম নেই, বাসায় কি অবস্থা একটু খবর ও নিতে পারি না। খুব চিন্তা হয় বাসার জন্য।সবাই কেমন আছে খুব জানতে ইচ্ছে করে আমার,,,,,,

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com