ডেন্জারাস ভিলেন লাভার । পর্ব - ৩৬ এবং শেষ
আরিয়ান দ্রুত সব পেপার সাইন করে দেয়। ডাক্তার পেপার গুলো নেয়। আরিয়ান উঠে গিয়ে বিল পে করে আসে। ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে চলে যায়। অপারেশন থিয়েটারের রেড লাইট জ্বলে ওঠে, অপারেশন শুরু হয়ে যায়।
হঠাৎ আরিয়ান মনে মনে ভাবে, এসব জিনিয়ার কাজ নয়তো?
কিন্তু জিনিয়া এসব কীভাবে করবে? সে তো আমেরিকাতে আর যদি সে বাংলাদেশে এসেও
থাকে তাহলে কীভাবে এসব করবে? এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।
সিমরানের মা কান্না করছে, নিশা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
অয়ন মাহিনকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। সিমরানের বাবা মাথা নিচু করে বসে আছে।
আরিয়ান আড়চোখে আশেপাশে তাকায় কিন্তু সন্দেহ করার মতো কাউকে চোখে পড়ে না।
তখনই ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
- মি. আরিয়ান পেসেন্টের এমারজেন্সি ব্লাড লাগবে। ( আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে)
- সিমরানের ব্লাড গ্রুপ কি? ( ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে)
- AB-.. ( আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে)
- এটাতো অনেক রেয়ার ব্লাড গ্রুপ... ( ভ্রু কুঁচকে)
- ব্লাড খুবই দরকার। পেসেন্টের অনেক ব্লাড বের হয়ে গেছে তার ওপর সে প্রেগন্যান্ট। ( চিন্তিত হয়ে)
ডাক্তারের কথা শুনে আরিয়ান মনে মনে কিছু কথা ভাবে তারপর ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলে,,
- ওকে আমি ব্যবস্থা করছি। ( মাথা নেড়ে)
- যত দ্রুত সম্ভব অ্যারেঞ্জ করুন। ( আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে)
- ওকে,, ( মাথা নেড়ে)
আরিয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হাঁটা শুরু করে দেয়।
আরিয়ান করিডোরের একদম শেষ দিকে যায়।
করিডোরের শেষ দিকে মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে কারণ সেখানে আইসিইউ।
আরিয়ান আশেপাশে তাকিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে সায়নকে কল করে,
সাথে সাথে সায়ন কল রিসিভ করে। আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে চারদিকে তাকিয়ে বলে,,,
- বেইমানটা কোথায়? ( গম্ভীর কণ্ঠে)
- বস কোন বেইমান? ( অবাক হয়ে)
- You bloody fool, You don't know I'm talking about a dishonest person, I'm talking about a rude person? ( রেগেমেগে)
- Sorry boss, I remember..( ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)
- ওর থেকে দুইব্যাগ রক্ত নিয়ে সরাসরি সিটি হসপিটালে চলে আয়। ( আশেপাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়)
- ওকে বস, কিন্তু বস সময় লাগবে। ( ভয়ে ভয়ে)
- যত দ্রুত সম্ভব চলে আয়। ( গম্ভীর কণ্ঠে)
- ঠিক আছে বস। ( মাথা নেড়ে)
- টুট টুট টুট
আরিয়ান আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নার্স, ডাক্তার আর সাধারণ মানুষ চলাচল করছে।
আরিয়ান জোহানকে কল করে,জোহান দ্রুত কল রিসিভ করে। আরিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,,,
- Where is Zinnia? ( গম্ভীর কণ্ঠে)
- আপাতত আমেরিকাতে আছে বস। ( ভয়ে ভয়ে)
- অলটাইম ওর সব খবর, আপডেট আমার চাই। ( রেগে (
- ওকে বস। ( ভয়ে ঢোক গিলে)
- টুট টুট টুট
আরিয়ান কল কেটে দিয়ে আড়চোখে আশেপাশে তাকায়,
এখনও আগের মতোই সবাই চলাচল করছে। আরিয়ান মনে মনে ভাবে
তার মানে এটা কারো যড়যন্ত্র করা এক্সিডেন্ট না।
আল্লাহ প্লিজ আমার অনাগত বেবি আর আমার জানকে সুস্থ করে দাও।
ওদের ছাড়া আমি কীভাবে বাঁচবো। আমার অর্ধেক জীবন একাকী কেটেছে। কারো সাহারা পাইনি,
তুমি চাওনি তাই পাইনি। কিন্তু কখনো কি অভিযোগ করেছি তোমার কাছে?
না, কোনো অভিযোগ করিনি। কিন্তু আজকে নিরুপায় হয়ে তোমার কাছে আমার দুই জানকে চাইছি,
প্লিজ খোদা ওদেরকে ফিরিয়ে দাও আমার কাছে। ( কেঁদে কেঁদে)
আরিয়ান একহাত দেয়ালে রেখে মাথা নিচু করে কান্না করছে। হঠাৎ আরিয়ানের
কাঁধে একজন হাত রাখে। আরিয়ান চোখের পানি মুছে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মাথা সোজা করে।
আরিয়ান ধীরে ধীরে পেছনে ঘুড়ে তাকায়। তাকাতেই আরিয়ান চমকে যায়,
আরিয়ান ভাবতে পারেনি যে সে আসবে আর হঠাৎ করেই দেখা হবে।
আরিয়ান আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না,
আরিয়ান তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেয়, সে আর কেউ নয় আরিয়ানের আঙ্কেল।
যার হাতে আরিয়ান বড় হয়েছে। আরিয়ানের আঙ্কেল জড়িয়ে ধরে বলে,,,
- কান্না করো না বাবা, নিয়তির ওপর কারো হাত নেই। ( আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে)
- আমার সাথেই সবসময় কেনো এমন হয়? ( কেঁদে কেঁদে)
- আরিয়ান শান্ত হও বাবা। ( সান্ত্বনা দিয়ে)
- তুমি কি করে জানলে, আমরা বাংলাদেশে এসেছি? ( আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে)
- আমি চেয়েছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো, বিয়ের সময়ও উপস্থিত থাকতে পারেনি।
বউ মা কেও দেখা হয়নি এজন্য সবকাজ গুছিয়ে সিডনি থেকে তোমার বাসায় চলে আসি
কিন্তু এসে শুনি তুমি বাসায় নেই কোথায় আছো তাও কেউ জানে না তখন অয়নকে কল করলাম।
অয়ন বললো, তোমরা সবাই বাংলাদেশে আছো।
বাংলাদেশে এসে অয়নকে কল করে বড় সারপ্রাইজ আমি পেয়ে গেলাম।
তারপর সরাসরি হাসপাতালে চলে এলাম। ( আরিয়ানের কাঁধে হাত রেখে)
- আঙ্কেল,, ( চোখ মুছে)
- বাবা কান্না করো না, ধৈর্য ধরো। ওপরে আল্লাহ আছেন তার ওপর আস্থা রাখো। ( দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
- হুম,,,( মাথা নেড়ে)
- এসো আমার সাথে,, ( আরিয়ানের হাত ধরে)
- চলো,, ( সায় দিয়ে)
আরিয়ান তার আঙ্কেলের সাথে ওয়েটিং রুমে যায় সেখানে বাকি সবাই ছিলো।
আরিয়ান সোফায় বসে, আরিয়ানের পাশে আরিয়ানের আঙ্কেল বসে।
আরিয়ান মাথা নিচু করে দুহাত মুঠো করে কপালের সাথে ঠেকিয়ে সেইদিনের কথা স্মরণ করে,
যেদিন প্রথম সিমরানের সাথে দেখা হয়। সিমরানের সুদীর্ঘ পল্লব আবৃত লোচন,
গোলাপি একজোড়া ওষ্ঠ তার মনে ঝড় তুলে দিয়েছিলো।
সেই প্রথম আরিয়ানের মনে ভালোবাসার উদয় হয়।
আরিয়ান প্রথম দেখায় সিমরানের প্রেমে পড়ে যায়। সেই ভালোবাসার পূর্ণতা দেওয়ার জন্য
আরিয়ান বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সিমরানের অমত থাকা সত্বেও আরিয়ান জোরপূর্বক
সিমরানকে বিয়ে করে। শুরু হয় তাদের সংসার। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো
কিন্তু এই সুখের মধ্যে অসুখের আগুন জ্বালিয়ে দিলো জিহাদ আর জিনিয়া।
অনেক বাঁধা আশার পরেও আরিয়ান সিমরানের ভালোবাসার সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করাতে পারেনি।
কিন্তু সিমরানের ওপর এর তীব্র প্রভাব পড়ে যার ফলশ্রুতিতে সিমরান তার স্বাভাবিক
মানসিক ভারসাম্য কিছুটা হারিয়ে ফেলে। সিমরানের সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো বার বার
আরিয়ানের মনে পড়ছে। আরিয়ানের মনে পূর্ণ বিশ্বাস আছে, সিমরান আরিয়ানকে ছেড়ে যাবে না।
আরিয়ানের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।
আরিয়ান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বর্তমানে ফিরে আসে।
সায়ন চলে আসে, সায়নকে দেখে আরিয়ান উঠে দাঁড়ায় তারপর সায়নকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়।
ডাক্তার ব্লাড ব্যাগ নিয়ে ভেতরে চলে যায়। ডাক্তার ব্লাড টেস্ট করে দেখে সব নরমাল,
তারপর সিমরানকে ব্লাড দেওয়া শুরু হয়। সিমরানের অবস্থা কিছুটা ভালো।
ডাক্তার আরিয়ানকে ডেকে পাঠায়। আরিয়ান ডাক্তারের চেম্বারে আসে।
আরিয়ান চেয়ারে বসে। ডাক্তার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
- মি. আরিয়ান আপনার জন্য দুটো নিউজ আছে। একটি ভালো একটি খারাপ।
কোনটা আগে শুনবেন? ( আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে)
- গুড নিউজ টা আগে বলুন, ( ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে)
- আপনার ওয়াইফ সহ আপনার বেবিও ভালো এবং সুস্থ আছেন। ( হালকা হেসে)
- Thanks god.. আর ব্যাড নিউজটা! (স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে)
- আপনার স্ত্রীর ব্রেনে দুইবার তীব্র আঘাত পাওয়ায় তার নার্ভগুলো খুব নাজুক আর দূর্বল হয়ে গেছে।
সিজার করার সময় এমন পেসেন্টের প্রাণহানীর আশঙ্কা বেশি থাকে। ( মাথা নিচু করে)
- What? ( বিচলিত হয়ে)
- জি, মি. আরিয়ান। ( মাথা নেড়ে)
- এসব কি বলছেন? ( অবাক হয়ে)
- আল্লাহ ভরসা সব ঠিক হয়ে যাবে, আল্লাহর ওপর আস্থা রাখুন। ( আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে)
...............( নিচে তাকিয়ে)
- এই কথা কোনোভাবে পেসেন্ট কে জানাবেন না তাহলে সে টেনশন করবে সাথে আরও দূর্বল হয়ে যাবে। ( আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে)
- জি,, ( দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
- আপনি চাইলে মিসেস চৌধুরীর সাথে দেখা করতে পারেন। ( হালকা হেসে)
- ওকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে?( ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে)
- কিছুক্ষণ আগেই কেবিনে দেওয়া হয়েছে। ( মাথা নেড়ে)
- ব্লাড দেয়া কি শেষ? ( অস্ফুট স্বরে)
- এক ব্যাগ শেষ আর আরেকটা অর্ধেকটা শেষ হয়েছে। ( ভেবে)
- ধন্যবাদ ডাক্তার। ( ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে)
- এটা আমাদের কর্তব্য। ( হেসে)
- এখনকার মতো আসি তাহলে,, ( উঠে দাঁড়িয়ে)
- অবশ্যই,,( মাথা নেড়ে)
আরিয়ান উঠে সিমরানের কেবিনের সামনে যায়। হাজার চিন্তা মাথায় ঘুরছে।
হাজার ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে মনে।
সব চিন্তা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে চলে যায় আরিয়ান।
ধীরে ধীরে সিমরানের সামনে যায়। বেডের সামনে রাখা টুলে বসে।
সিমরানের মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হাতে বাটারফ্লাই ক্যানোলা।
চোখদুটো এখনো ভেজা। গোলাপি ঠোঁট দুটো তার রং হারিয়ে ফেলেছে।
ঠোঁট দুটো হালকা নীল রং ধারণ করেছে।
আরিয়ান সিমরানের হাত ধরে হালকা করে।
আরিয়ান সিমরানের হাতের তালুতে আলতো করে কিস করে।
আরিয়ানের চোখের কার্ণিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
আরিয়ান সিমরানের দিকে তাকিয়ে বলে...
পারিনি নির্মম হতে। তোমার ভালোবাসা আমাকে পাষাণ হতে দেয়নি।
তোমার এ অবস্থার জন্য দায়ী জিহাদ আর জিনিয়া।
জিহাদকে তো প্রায় শেষ করে ফেলেছিলাম কিন্তু ওকে মেরে ফেললে যে তোমার চোখে আমি খুনি হয়ে যেতাম
এজন্য ওকে আমি বন্দী করে রেখেছি। ( কেঁদে কেঁদে)
কথাগুলো বলতে বলতে আরিয়ান মাথা নিচু কাঁদতে থাকে।
আরিয়ান চোখ মুছে আবারও সিমরানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
- চাইলেই আমি জিনিয়া কে শেষ করে দিতে পারি কিন্তু আমি তা করিনি।
করিনি এজন্য ও মরে গেলে আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন আমাদের সন্তানকে ও দেখে যেতে পারবে না।
আমার ভালোবাসার কাঠামো কতটা মজবুত সেটা ও দেখতে পারবে না
এজন্য এখনো ওকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ( চোখ মুছে )
আরিয়ান সিমরানের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে। ভালোবাসা তো এমনই হয়।
ভালোবাসা দিয়ে অসম্ভব কে জয় করা সম্ভব। ভালোবাসা দিয়ে পাথরকে পরশ
পাথরে রুপান্তর করা যায়। সিমরানের ভালোবাসা আরিয়ানের কঠিন মনকে
ভেঙে দিয়ে তার মনে ভালোবাসা জাগ্রত করেছে।
কিছু কিছু ভালোবাসার গল্প সারা পৃথিবী জানে আর কিছু কিছু গল্প মানুষের অগোচরে থেকে যায়।
এমন হাজারো ভালোবাসার গল্প আমাদের অজানা থেকে যায়।
আরিয়ান হাল ছাড়েনি, সিমরানের প্রবল ইচ্ছে তাকে ফিরে আসতে সাহায্য করেছে।
এভাবেই ভালোবাসার জয় হয়। সিমরান কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে।
আরিয়ান সিমরানের সর্বক্ষণিক খেয়াল রাখে।
এরই মধ্যে আরিয়ান জিহাদ কে ছেড়ে দেয়। সেদিন জিহাদ কে দাফন করার সময়
হঠাৎ করেই জিহাদের কাশি উঠে যায়। গার্ডরা সাথে সাথে আরিয়ানকে কল করে ব্যাপারটি বললে,
আরিয়ান জিহাদের ট্রিটমেন্ট করাতে বলে আটকে রেখে।
গার্ডরাও তাই করে। সেদিন আরিয়ানের জীবন ভিক্ষা দেয় শুধু মাত্র সিমরানের জন্য।
পরবর্তী তবে জিহাদ সুস্থ হলে সিমরানের সাথে শেষ বারের মতো দেখা করে দেশের
বাহিরে চলে যায়। পরিবারের পছন্দ করা মেয়েকে জিহাদ বিয়ে করে।
সে আর কখনো সিমরান বা সিমরানের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি।
জিনিয়ার বাবা মারা যায়। জিনিয়া অনেকটা মেন্টালি ডিপ্রেসড হয়ে পড়ে।
এরই মধ্যে আরিয়ান জিনিয়াকে থ্রেট দেয়, জিনিয়া নিজ থেকে না সরে গেলে তাকে ধ্বংস করে দেবে।
জিনিয়া বুঝতে পারে জোর করে ভালোবাসা পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।
জিনিয়া পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। সে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয় আর নিজেকে শেষ করে ফেলে।
অয়নের বাবা নিশার বাসায় প্রস্তাব দেয়। নিশার পরিবার অয়নকে খুব পছন্দ করে বিশেষ করে
আরিয়ানের ভাই হওয়াতে তারা আরও খুশিহয়।
পারিবারিক ভাবে এবং খুব ধুমধামের সাথে অয়ন আর নিশার বিয়ে হয়।
অয়ন আর আরিয়ান এক সাথেই থাকে।
আরিয়ানের স্পেশাল গার্ড সায়ন ও তার প্রেমিকা সায়নিকে বিয়ে করে।
আরিয়ান সায়নের বিশ্বস্ততা আর আনুগত্যের জন্য সায়নকে খুব ভালোবাসতো।
সায়নের বিয়ের পুরো দায়ভার আরিয়ান নেয়।
কথায় আছে না, দুঃখের সময় অস্থায়ী আর সুখ কিছুটা হলেও স্থায়ী।
জীবনে অনেক প্রতিকূলতা এসেছে কিন্তু সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে সিমরান আর
আরিয়ানের ভালোবাসার জয় হয়েছে।
সিমরান ছাঁদে বসে কফি খেতে খেতে পুরোনো দিনের কথাগুলো স্মরণ করছিলো।
তখনই নিচে সোরগোল শুনতে পায় সিমরান। হ্যাঁ, সিমরানের দু'জন যমজ সন্তান হয়েছে।
ছেলের নাম আয়ান আর মেয়ের নাম সানায়া। দুজন সবে মাত্র পাঁচ বছরে পদার্পণ করলো।
আয়ান একদম মায়ের মতো হয়েছে আর সানায়া তার বাবার ডুপ্লিকেট।
সিমরান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে...
এই বাচ্চাদের নিয়ে আমি আর পারি না আর এদের পাপাও সবসময় এদের প্রশ্রয় দিয়ে দিয়ে
মাথায় তুলেছে। যত ঝামেলা সব আমার। ( দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
সিমরান উঠে ছাঁদ থেকে নেমে সোজা নিচে হল রুমে চলে যায়।
সানায়া আয়ানের সাথে পুতুল নিয়ে ঝগড়া করছে।
সিমরানকে দেখতেই আয়ান কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে গিয়ে সিমরানকে জড়িয়ে ধরে।
সিমরান আয়ানকে কোলে নিয়ে বলে....
- কি হয়েছে আমার বাবুণী টার? ( আয়ানের দিকে তাকিয়ে)
- মম সানায়া আমার ডল নিয়ে নিয়েছে। ( কেঁদে কেঁদে)
- না মম, আয়ান মিথ্যে বলছে। ( মাথা নেড়ে)
- মম আমি সত্যি বলছি। ( সিমরানের দিকে তাকিয়ে)
- মম ওর কথা বিশ্বাস করো না। ( আয়ানের দিকে তাকিয়ে)
- মম আমার কথা বিশ্বাস করো। ( কান্না করে)
- না মম বিশ্বাস করবে না। ( আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভেংচি মেরে)
- মম বিশ্বাস করো। ( রেগে)
দুজন সিমরানের মাথা খারাপ করে দিয়েছে। নিশা রুম থেকে বের হয়ে দুজনের কান্ড দেখে হাসছে।
সিমরান রেগেমেগে বলে,,,,
- থামো তোমরা! সবসময় একজন আরেকজনের সঙ্গে ঝগড়া করতে থাকো।
এছাড়া কি আর কোনো কাজ নেই তোমাদের?
দুজন এমন ভাব করো মনে হয় তোমরা ভাইবোন না শত্রু! উফ, আর পারিনা এদের নিয়ে। ( রেগেমেগে)
এরই মধ্যে বাহিরে গাড়ির হর্ণ বেজে ওঠে। আরিয়ান অফিস থেকে ফিরে এসেছে।
সানায়া গাড়ির হর্ণ শুনতেই দৌড়ে দরজার কাছে যায়।
গার্ড এসে গাড়ির গেইট খুলে দেয় আরিয়ান বের হয়, অয়নও আরিয়ানের সাথে বের হয়।
আরিয়ানকে দেখতেই সানায়া এক দৌড়ে আরিয়ানের কোলে ওঠে।
আরিয়ান সানায়ার গালে চুমু দিয়ে বলে,,,
- প্রতিদিন আমার মামুণীটা আমাকে রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।
আমার মামুণীটা ঠিক আমার মতো হয়েছে। ( সানায়ার দিকে তাকিয়ে)
- পাপা আয়ান আবার আমার পুতুল নিয়ে নিয়েছে। ( কাঁদো কাঁদো সুরে)
- ও তাতে কি হয়েছে আম্মু, ভাই ডল টা নিয়েছে অন্য কেউ তো নেয়নি। ( গম্ভীর কণ্ঠে)
- কিন্তু পাপা,, ( ভ্রু কুঁচকে)
- কোনো কিন্তু নয়, চলো আয়ানকে সরি বলবে। ( সানায়ার গালে হাত রেখে)
- আচ্ছা পাপা চলো, আয়ানকে আমি সরি বলে দেবো। ( হেসে)
- That's like a good girl... ( হেসে)
আরিয়ান সানায়াকে কোলে নিয়ে ভেতরে চলে আসে।
নিশা আয়ানকে কোলে নিয়ে শান্ত করে। সিমরান সোফায় বসে আছে। আরিয়ানকে দেখে সিমরান বলে,,,
- তোমার ছেলেমেয়ে আমাকে পাগল করে ছাড়বে। ( রেগেমেগে)
- তো পাগল হয়ে যাও। এসাইলামে রেখে আসি। ( মুচকি হাসি দিয়ে)
- এদের বাবা যেমন এরাও তেমন। ( ভেংচি মেরে)
- আমার বেবিরা তো আমার মতোই হবে।
তোমার মতো কেনো হবে? ( আয়ান আর সানায়াকে কোলে নিয়ে)
- থাকো তোমরা আমি আমার বাবা মায়ের কাছে গেলাম। ( রেগে)
- ভালো থেকো, আল্লাহ হাফেজ। ( হেসে)
- কেউ আমাকে ভালোবাসে না। ( কাঁদো কাঁদো সুরে)
সিমরান রেগেমেগে ওপরে চলে যায়। আরিয়ান সিমরানের রাগ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
সানায়া আর আয়ান আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
- পাপা মম তো রেগে গেলো। ( আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে)
- তোমার মমের রাগ আমি ভাঙবো কিন্তু তোমরা আপাতত
তোমাদের নিশা আন্টি আর অয়ন আঙ্কেলের কাছে থাকো কেমন। ( দুজনকে জড়িয়ে ধরে)
- ওকে পাপা। ( হেসে)
- একদম ঝগড়া করবে না তোমরা। ( দুজনের দিকে তাকিয়ে)
- আচ্ছা পাপা। ( হেসে)
- গুড গার্ল এন্ড গুড বয়। ( দুজনের কপালে চুমু দিয়ে)
আরিয়ান সানায়া আর আয়ানকে রেখে ওপরে যায়।
সিমরান রুমের লাইট অফ করে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
আরিয়ান ধীরে ধীরে রুমে ঢোকে।
সিমরানকে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিঃশব্দে গিয়ে সিমরানের পেছনে দাঁড়ায়।
সিমরান টের পায়নি যে আরিয়ান তার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
সিমরানের বেলকনির গ্রিলের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরিয়ান মুচকি হেসে সিমরানকে জড়িয়ে ধরে। সিমরান অভিমান করে বলে...
- আমাকে তো কেউই ভালোবাসে না তাহলে আমার কাছে কেউ কেনো এসেছে? ( অভিমান করে)
- কেউ যে আপনাকে খুব ভালোবাসে। ( হেসে)
- একদম মিথ্যা কথা, কেউ আমাকে ভালোবাসে না। ( রেগে)
- আপনি না থাকলে আমার কলিজা দুটোকে কোথায় পেতাম। ( সিমরানকে নিজের দিকে ফিরিয়ে)
- ঢং,, ( ভেংচি মেরে)
- ঠিক বলেছো আমার বউটার খুব ঢং। ( হেসে)
- আমি তোমাকে বলেছি। ( রেগেমেগে)
- আমিও তো তোমাকে বলেছি। ( হেসে)
- উফফ,, ( বিরক্ত হয়ে)
- ইশশ। ( হেসে)
- আই লাভ ইউ জান। ( সিমরানকে জড়িয়ে ধরে)
- আই লাভ ইউ সো মাচ। ( হেসে)
- তোমার জন্য আজকে আমি একজন সুখি মানুষ।
আমার সব কষ্ট চলে যায় তোমাদের মুখের হাসি দেখলে। আমার আরও দুটো বেবি চাই। ( জড়িয়ে ধরে)
- আমাকে মাফ করো। দুজনের দুষ্টামিই আমি সামলাতে পারিনা তারপর আরো দুজন!, ( অবাক হয়ে)
আরিয়ান আর সিমরান দুজন হেসে ওঠে।
সব বাঁধা পেরিয়ে সিমরান আর আরিয়ান একে অপরের জান।
তাদের ঘর আলোকিত করে এসে সানায়া আর আয়ান।
সব মিলিয়ে আজ তারা ভীষণ সুখে আছে। এভাবেই চলে তাদের জীবন।
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com