Breaking News

অপরিচিতা । পর্ব - ০৪



ওই সন্তানের বাবা আমি।

আমি আর আম্মু কথা গুলো শুনে আঁতকে উঠলাম।
আমি আর আম্মু যেন ২য় বারের মত বড় রকমের এক ধাক্কা খেলাম।
চলো এখান থেকে।এখানে আর এক মুহূর্তও নয়।
ছেলেটা আমাকে আর আম্মুকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো বাইরে।
-আজব তো কে আপনি?
এইভাবে আমাদের টেনে নিয়ে আসলেন কেন?
-বলছি,আগে বাসায় চলো তোমার।
-এই ছেলে,তোমাকে আমরা বাসায় কেন নিয়ে যাবো?
-মা,এখানে এসব কথা বলা টা ঠিক হবেনা তাই আমি বাসায় যেতে চাচ্ছি।
-অদ্ভুত তো,আপনি আমার মাকে মা ডাকছেন কেন?
আর কে আপনি?
আপনাকে আমরা বাসায় নিতে পারবোনা,যা বলার আপনি এখানেই বলুন।
ছেলেটা আমাকে আর আম্মুকে টেনে একটা সেইফ জায়গায় নিলো,
-এবার শুনুন তাহলে আমি কে।
আমি রীনান চৌধুরী।
অপরিচিতার হাজবেন্ড।আপনার মেয়ের বিয়ে করা বর।
-মানে?কি বলছো তুমি এগুলো?
-এই যে মিঃ মাথা ঠিক আছে তো আপনার?আর অপরিচিতা কে হ্যাঁ?আর আপনি আম্মুকে এ কথা বলছেন কেন যে আপনি আম্মুর মেয়ের জামাই?কে আপনি?
-এক মিনিট আদ্রিজা,আমাকে কিছু বলতে দে।
বাবা কে তুমি বলোতো সত্যি করে?
-আম্মু আমি যা বলছি সত্যি বলছি,
আমি ওর হাজবেন্ড আর ওর যদি সত্যি সত্যি বাচ্চা পেটে থেকে থাকে তাহলে ঈর সেই সন্তানের বাবা আমি।আর ওই সন্তান আমাদের বৈধ সন্তান।
-আমি সব কিছু শুনতে চাই বাবা,তুমি আমাকে সব কিছু খুলে বলো।
-বলছি মা,

অনেক দিন আগে একটা এক্সিডেন্টের সময়,ওকে আমি উদ্ধার করি।
তখন যে যেইভাবে পারে একেক জনকে উদ্ধার করে।
আমিও সেদিন ওকে উদ্ধার করি।
ও অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলো।মাথায় হালকা চোট লেগেছিলো।
আমি ভাবলাম ওকে বাসায় নিয়ে গিয়ে কপালে ব্যান্ডেজ করে পানি ছিটা দেই।
তাহলেই ও ঠিক হয়ে যাবে।
কারণ ঘটনা স্থল থেকে হসপিটাল ছিলো অনেকটা দূরে।আর আমার বাসা ছিলো তার কাছে।তাই আমি কোলে করে বাসায় নিয়ে যাই ওকে।
বাসায় নেয়ার পর আমি মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেই।আমার মা হাত পা ম্যাসাজ করে দেন।মুখে পানি ছেটা দেন।
এরপর কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করি জ্ঞান ফিরে কিনা দেখতে।
কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখি ওর জ্ঞান ফিরে,
আমার মা ওকে বলে,
তুমি কোন চিন্তা করোনা।তুমি ঠিক আছো।সামান্য মাথায় একটু ব্যথা পেয়েছো।ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু ওর উত্তর শুনে আমরা অবাক হয়ে যাই।ও বলে,
আমার কি হয়েছিলো?আমি কে?আপনারা কে?কিভাবে ব্যথা পেলাম?
কিছু বলতে পারেনা ও।
মানে কে ও,কোথায় বাসা।
কিছুই বলতে পারেনা।

মা বললেন,তুই একটা ডাক্তার ডেকে নিয়ে আয়।
আমি ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসলাম।
ডাক্তার ওকে দেখে বললেন,
উনি মাথায় আঘাত পাওয়াতে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
বাইরে থেকে আঘাত টা ছোট মনে হলেও,মাথার ভেতরে আঘাত টা ভালোই লেগেছে।সে কারণে তিনি তার অতীত ভুলে গেছেন।
আপাতত আপনারা কোন রকম জোর করবেন না তাকে কোন কিছু জানার জন্য।
কিছু দিন দেখেন কি হয়।
তারপর আমাকে জানাবেন।
আমরা আচ্ছা বলে ডাক্তারকে বিদায় জানালাম।
-রীনান,এখন কি হবে?
মেয়েটাকে তো আমরা চিনিনা।এখানে তো রাখতেও পারবোনা।তাছাড়া দেখেতো আমাদের এখানকার মনে হচ্ছেনা।
-তাহলে কি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখবো কেউ ওকে চেনে কিনা?
-যা বাবা তাই গিয়ে দেখ।
আমি ওকে বললাম চলো আমার সাথে।কিন্তু ও কোন মতেই আমার সাথে যাবেনা।
ওকে রাজি করাতে করাতে ব্যর্থ হয়ে আমি একাই চলে গেলাম ওখানে।
গিয়ে দেখি বাসের মানুষ জন কেউ নেই।
কয়েক জন কে জিজ্ঞেস করলাম,গাড়ীটা কোথা থেকে এসেছে?
সবাই আপনাদের থানার নাম বল্লো।
বাসায় ফিরে এসে মাকে বললাম সব।
মা বললেন,

এখন যেহেতু ও অসুস্থ,ও কিছুটা সুস্থ হোক তারপর না হয় ওর ঠিকানা খোঁজা যাবে।
এখন ওর নাম তো জানিনা আমরা,ডাকবো কি নামে?
তাই আমি ওর নাম দিলাম অপরিচিতা।
আশেপাশের মানুষ জন ওকে এসে দেখতে শুরু করলো,
ও কারো সাথেই কোন কথা বলেনা।আমার মা ওকে গোসল করায়,খাইয়ে দেয়।চুল বেধে দেয়।
ও নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে।
কিছু দিন পর ও হঠাৎ একদিন আমার কাছে এসে বল্লো,
-আমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবেন?
এভাবে সারাদিন রাত ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগেনা
আমিতো অবাক,ও আমার সাথে কথা বলছে।
মা বল্লো যা নিয়ে যা ঘুরে আয়।
আমি ওকে সাথে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম।
মা ওকে একটা শাড়ী বের করে পরিয়ে দিলেন।
অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো ওকে সেদিন।
সারাদিন ঘুরাঘুরি করি কিন্তু ও কোন কথাই বলেনা।
বাসায় ফিরে আমার মাকে আর আমাকে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-আচ্ছা,আমি আপনাদের কি হই?
আপনার ছেলে আমার কি হয়?
-তুমি আমাদের,না মানে ইয়ে..
তুমি আমার বোনের মেয়ে,আর আমি তোমার খালা।
একটা এক্সিডেন্টে তোমার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেছে।
-আর আমার বাবা মা?
-তোমার বাবা মা..

-মা চলো তো খুব খুধা লেগেছে খেতে দিবে।
অপরিচিতা ভেবে নেয় একটা এক্সিডেন্টে ওর বাবা মা হয়তো মারা গেছে।
আর এটা আমরা ওকে জানাতে চাইনা।
দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন কেটে যায়।
অপরিচিতা প্রায়ই এসে আমার রুমে বসে থাকে।
আমাকে বলে, আমাকে গান শোনাবেন?
গল্প শোনাবেন?
আমার তো অতীতের কিছু মনে নেই,কিছুই মনে করতে পারছিনা।
তাই বর্তমান টাকে নিয়েই একটু ভালো থাকতে চাই।
আমি ওকে গান শোনাই,গল্প শোনাই।
ধীরেধীরে আমাদের মাঝে খুব ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয় বন্ধুত্বসুলভ।
একদিন ঘুমিয়ে আছি,রাত প্রায় তিন টা।
অপরিচিতা আমার রুমে আসে,
আর এসেই আমার মাথার কাছে এসে বসে ল্যাম্পটা জ্বালায়,
আমি চমকে গিয়ে যেই না চিৎকার দিয়ে উঠবো,
আর তখনই অপরিচিতা আমার মুখ আটকে ধরে।

চলবে.....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com