তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ১১
অফিসার বললো - আপনাদের মেয়ের ভিডিও দেখিয়ে যে অর্থ আদায় করেছে এই নিয়ে আপনারা কেন থানায় অভিযোগ করেন নি?
তামান্নার মা বললো
- মান সম্মানের ভয় তে। যদি সবাই জানাজানি হয়ে যেতো তাহলে আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারতাম না।
- আপনারা কি জানেন ভিডি ও টা ফেইক ছিলো?
তামান্না তামান্নার মা বাবা চমকে উঠলো অফিসারের কথা শুনে। তামান্নার বাবা বললো
- ফেইক মানে?
- ভূল ভিডি ও। মাথাটা কেটে অন্যের বডি তে বসানো হয়েছে।
অফিসারের কথা শুনে থ হয়ে গেলো সবাই। তামান্নার মা বললো
- কি বলছেন কি আপনি?
- হ্যা ঠিকি বলেছি। আপনাদের মেয়ের মাথা কেটে অন্যের বডিতে বসিয়ে তারপর করা হয়েছে। আপনাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই?
তিনজনে জেনো হাফ ছেড়ে বাচলো। অফিসার বললো
- এর পর অন্যকিছু কেউ ঘটাতে চাইলে অবশ্যই থানায় এসে জানাবেন।
- ঠিক আছে।
অফিসার একটু জোরে বললো
- এই ওদের ভেতরে নিয়ে এসো।
দুজনকে ভেতরে নিয়ে আসলো। তামান্না মায়ের পিছনে যেয়ে লুকালো। অফিসার বললো
- আপনার কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এরা এখন আমাদের হেফাজতে। কিছু করতে পারবে না।
- তামান্নার বাবা বললো
- ওদের এমন শাস্তি দেন আর জীবনে এসব করবে না।
- এরাই এতোদিন মানুষের ছবির মাথা অন্য ছবির বডিতে লাগিয়ে অনেক মানুষকে ব্ল্যাক মেইল করছে। অর্থ আাদায় করে নিচ্ছে। এদের কর্মকান্ডের জন্য মানুষকে মরতে হয়েছে।
- স্যার ওরা আর জেনো বের না হতে পারে।
- বের হওয়ার কোনো রাস্তা নেই এদের৷ ।
- এদের চক্র আমার হাতে।
(কি ভাবছেন আপনারা অফিসার টাকা খেয়ে দুজনকে কিভাবে আটকালো তাহলে চলেন ঘুরে আছি।
লোকটা ঘখন ব্যাগটা খুলে টাকা নিয়ে অফিসারের দিকে এগিয়ে দেয় তখনি অফিসার চিৎকার করে বললো
- আমাকে ঘুস দেওয়া হচ্ছে। কত বড় সাহস তোর৷ তোর সাথে ভালোভাবে কথা বলছি বলে পেয়ে গেছিস আমাকে৷ এই কে আছিস ভেতরে আয়।
সাথে সাথে ভেতরে মিডিয়ার লোক ঢুকে পড়লো৷ ছবি তোলা ভিডিও করা শুরু হয়ে গেলো। লোকটা হা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো৷ অফিসার বললো
- ওকে লকাবে ভর। অফিসারকে ঘুস দেওয়ার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হলো। আর আপনারা কাল সকালে চলে আসবেন ভোরে। বাকী সব তথ্য তখন দিবো৷ এখন কিছু বলবো না।
কনস্টেবল লোকটিকে নিয়ে লকাবে ভরে দিলো৷ অফিসার বেরিয়ে গেলো। মিডিয়ার লোক কিছু বলতে যেয়ে ও বললো না। সবাই চলে গেলো।
অফিসার লকাবের ভেতর ঢুকলো। দুজনকে একসাথে করলো। দুজনের জামা কাপড় সব খুলে ফোনে ভিডিও ধারণ করে। লোকটা বললো
- অফিসার ভূল কাজ করলি তুই আমাকে ধরেছিস৷ তুই বাঁচবি না
অফিসার হেসে দিয়ে
- তোরা এতোদিন অনেক মানুষদের মিথ্যা কথা বলে অনেক অর্থ কামিয়েছিস। এখন সারা বিশ্ব দেখবে লাইভ তোদের টা৷ এটা কোনো ইডিট না। তোদের অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। সরকার থেকে পুরষ্কার ও দিবে। তোদের জালিয়াতি আমি বের করবো৷
অফিসার পেটাতে থাকে। আর সব সত্যি কথাগুলো জেনে নিলো৷ )
তামান্নারা চলে গেলো৷ বাসায় আসতে রাত ২ টা বেজে গেলো। তামান্নার বাবা তামান্নার মাকে বললো
- তুমি প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। আমি সত্যি বুঝতে পারিনি। তোমাদের শুধু ভূল বুঝেছি। আমাকে মাফ করে দাও। তামান্না মামনি।
তামান্নার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। মুখে হাসি রয়েছে কেননা এতোদিন যে জিনিস টা নিয়ে ভয় করে আসছে সেই জিনিসটাই ভূল। এতোদিন মিথ্যা বলে অপবাদ দিয়ে ভয় দেখালো৷
তামান্নার বাবা অসহায় ভাবে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। তামান্নার মা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। কান্না করে দিয়ে তামান্নার বাবার কাছে যেয়ে
- কিভাবে পারলে আমাদের এভাবে ছেড়ে চলে যেতে৷ অবিশ্বাস করে। তোমার জরুরী ছিলো মেয়েটার পাশে থাকা ওর সাহস গোছানো উচিত ছিলো। তুমি তা না করে আমাদের আরো ভেঙ্গে দিলে। কেন?
- আমার ভূল হয়ে গেছে। রাগের মাথায় অনেক কিছু বলেছি। মাথা ঠিক ছিলো না। কি করবো মাথায় কাজ করছিলো না।
তামান্নার মা বাবাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।
বাবা বললো
- কি রে মা তুই ক্ষমা করিসনি৷
তামান্না এগিয়ে যেয়ে
- না বাবা ক্ষমা চেয়ো না। আমার জন্যই তোমরা আজ এই পরিস্থিতি সম্মুখীন।
- না রে মা। আমি ভূল করেছি।
তিনজনের ভূল বোঝাবুঝি চলে গেলো।
পরের দিন
সকাল ১০ টা
মিডিয়ার লোকজন থানার সামনে এসে ভির করলো। অফিসার থানার বাইরে এসে ইশারা করতে দুজনকে নিয়ে সামনে হাজির হলো। সবাই অবাক হয়ে দাড়িয়ে পড়লো । অফিসারের সামনে মাইক্রোফোন ধরতেই বললো
- আমরা এতোদিন এদের চক্র টা কে খুজেছি। কিন্তু ধরতে পারি না। গতকাল আমরা ধরতে সক্ষম হয়৷
একজন বললো
- স্যার এদের দোষ টা কি ছিলো।
- এরা অন্যের মাথার ছবি নিয়ে অন্য বডিতে লাগিয়ে দিয়ে তার থেকে বড় অর্থ আদায় করে নিতো। অনৈতিক সকল কাজে লিপ্ত ছিলো।
- স্যার এরা তো ছাড়া পেয়ে যাবে।
- এদের যে ছাড়াতে আসবে সে এদের চক্রের লোক। কেউ পার পাবে না ৷ সব তথ্য আমাদের হাত চলে আছে৷
অফিসার দুজনকে নিয়ে চলে গেলো।
মেহেরাব কোচিং যাওয়ার পথে মেধার বয়ফ্রেন্ড পথ আটকে ধরে৷ মেহেরাব পাশ কাটিয়ে চলে যাবে তখনি মেধার বয়ফ্রেন্ড বললো
- ভাই তোমার সাথে কথা ছিলো
মেহেরাব কিছুটা অবাক হয়ে
- হঠাৎ আমার সাথে।
- মেধা আমাকে ছেড়ে দিছে। ব্রেকআপ করছে৷ আমাকে ঠকিয়েছে।
মেহেরাব কথাগুলো শুনে ঠোঁটের কোণে হাসি চলে আসলো৷ হাসতে যেয়ে ও হাসতে পারছে না৷ মেহেরাব বললো
- ভাই আমাকে বলছেন কেন? সেদিন তো আমাকে মারবেন বেঁধে রাখবেন৷ টাকা আদায় করবেন৷ অনেক কিছু বলে অপমান করছিলেন।
- সরি ভাই সেদিনের ব্যবহারের জন্য। ওকে এতোটা ভালোবাসতাম যে ও যা বলতো তাই শুনতাম৷
- তা ব্রেক আপ কেন করলো?
- জানি না হুট করে বলে আমি ছোটলোক আমার সরকারী চাকরি নেই। আমি ওকে ঠকিয়েছি। আমার নামে কেস করবে ওর আশেপাশে গেলে।
মেহেরাব এবার জোরেই হেসে দিলো। মেধার বয়ফ্রেন্ড অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাব বললো
- ঠিকি তো বলছে। দোষ গুলো তো আমাদের। আমাদের অবস্থান এ অন্য কেউ আসবে কি না এটা আমরা জানি না। না জেনেই কতকিছু করে ফেলি। আমাদের লেভেলে প্রেম ভালোবাসা করা উচিত। সবাই সবার লেভেলে পড়ে না। বুঝতে পারছেন৷
- আমি তো মেধা কে ছাড়া থাকতে পারবো না।
- যে আপনাকে ভালোবাসেনি নাটক করলো তাকে নিয়ে সারাজীবন কিভাবে থাকবেন। আবেগ ছাড়ুন বাস্তবকে মেনে নেন।
মেহেরাব আর কিছু না বলে চলে গেলো। মেধার বয়ফ্রেন্ড হতবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে। মেহেরাব হাঁটছে আর ভাবছে , আর কতো কি যে শুনতে হবে৷ মানুষ কিভাবে এসব করতে পারে কে জানে?
তামান্না দৌড়ে এসে মেহেরাবের সামনে দাঁড়িয়ে
- তোমাকে কতক্ষণ ধরে ডাকছি। কানে কি শুনো না।
- শুনতে পাইনি৷
- আজ কোচিং এ যাবো না৷
- তাহলে বাসায় চলে যান।
- না।
- তাহলে কি করবেন?
- তুমি ও যাচ্ছো না কোচিং।
মেহেরাব অবাক হয়ে
- আমি কেন যাবো না?
- তুমি আমার সাথে থাকবা। আজ অনেক কথা আছে। চলো কোনো রেস্টুরেন্টে বসি।
মেহেরাব মনে মনে বলছে ও এই ব্যাপার। আমার পকেটে নেই টাকা৷ আমাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেয়ে আমার পকেট কাটবে৷
তামান্না বললো
- কি এতো ভাবছো চলো তো?
- না মানে আমি এখন যাবো না। আমার কাজ আছে।
- আজ আর কোনো কথা না। চলো আমার সাথে।
তামান্না মেহেরাবকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে চলে গেলো.......
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com