Breaking News

অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেম । পর্ব - ০৪



বুঝতে পারলাম শরীফ ভাইয়া আর্মি অফিসার হ‌ওয়াতে তারা আর গাড়ি চেক করলেন না,,,,,,

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে উঠে ঠিক হয়ে বসলাম। তখন আন্টি বললেন মানুষ কতোটা খারাপ হলে এরকম হয়।
আংকেল বললেন_এভাবে আর কতো চুপ করে থাকবো? আমাদের এবার কিছু করা উচিৎ।
শরীফ ভাইয়া বললেন_বাবা দেখলেই তো যে পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করবে,অথচ তারাই শন্ত্রাসদের সাথে যুক্ত। তাহলে কারা করবে ন্যায় বিচার?
তাছাড়া আমি চাইলে উপরের মহলে জানাতে পরি।
কিন্তু কেইস করলে ওদের কাছে আমার ঠিকানা যাবে আর ওরা এটাও বুঝে যাবে যে
আমাদের কাছে শরীফা আছে।
দেখ আমার ছুটি বেশি দিন নেই। কিছুদিন পরেই চলে যেতে হবে।
তখন ওরা নিশ্চিত শরীফার উপর হামলা করবে। তোমরা একা কিছুই করতে পারবে না।
সে জন্যই আমি কোন স্টেপ নিচ্ছি না।

আংকেল বললেন_সত্যি এগুলো তো আমরা ভেবে দেখিনি।
তাহলে এখন কি কোন উপায় নেই?
বাবা আমাদের কাছে তো উপযুক্ত প্রমান ও নেই যে শরীফার বাবা কে ওরা খুন করেছে।
উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করলে সহজে সল্ভড করা যেত।
কিন্তু তা তো নেই। তবে বাবা মা তোমাদের খুব সাবধানে শরীফাকে নিয়ে থাকতে হবে।
হুম আমরা ওকে সাবধানে রাখবো, বাকিটা আল্লাহ তা'আলার হাতে।
আমি তাদের সব কথা শুনছি আর ভাবছি আমার সাথেই এরকম হতে হলো।
সেদিন এইস.এস.সি.এক্সাম শেষ করে বাসায় অবসর সময় পার করছিলাম তখন আমাদের গ্রামের এক চাচাতো ভাই রাশেদ আব্বুর কাছে আমার সাথে তার বিয়ের প্রস্তাব দিল।
আব্বু সাথে সাথে নাকুচ করে দেয়। কারণ রাশেদ ভাই মাত্র সেভেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন,এমনিতে তারা অঢেল সম্পদের মালিক। কিন্তু তাতে কি আব্বুর কাছে শিক্ষার মূল্য সবথেকে বেশি। আব্বুর কথা অশিক্ষিত লোক পশুর সমান।যার প্রমাণ রাশেদ ভাই দিয়েও দিল।যাই হোক তার পর আব্বুর না করাতে তারা টাকার লোভ দেখায় তাতেও যখন আব্বু কে রাজি করাতে পারলো না তখন হুমকি দিয়ে গেল আমার ক্ষতি করবে।
আব্বু-আম্মু খুব টেনশানে পরে যায় আমাকে নিয়ে সত্যিই যদি ভালো মন্দ কিছু করে ফেলে।তাই আমাকে বড় আপুর বাসায় পাঠিয়ে দিবে ঠিক করা হল। কিন্তু তা আর হলো না, ঐদিন‌ই রাশেদ ভাই এসে বলে যায় কালকেই আমি শরীফা কে বিয়ে করবো।আর বিকাল বেলা আমার বোনেরা এসে শরীফা কে গায়ের হলুদের জন্য তৈরি করবে।

আব্বু রাশেদ ভাইয়ার বাবাকে অনেক বুঝিয়ে ছিল যাতে ওনি ওনার ছেলে কে বুঝায়। কিন্তু চাচা উল্টো বলেন তার ছেলে যদি শরীফা কে বিয়ে করে সুখী হয় তাহলে সে এখানে কিছুই করবে না।
আব্বু বুঝে গেল চাচাও রাশেদ ভাই কে সাপোর্ট করে তাই তাকে বলে কোন লাভ নেই। গ্রামের প্রভাবশালী লোক হ‌ওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রামের অন্য কেউ কোন কথা বলবে না তাও জানা আছে। একদিনের মধ্যে আব্বু কি করবে বুঝতে পারছিলো না।
তাই গায়ের হলুদের দিন রাতে আব্বু আমাকে নিয়ে কুমিল্লা বড় আপুদের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। কিন্তু তাতে ও সফল হলাম না, কিভাবে যেন রাশেদ ভাই খবর পেয়ে গেল আর তার দলবল নিয়ে আমাদের পিছু ধাওয়া করলো।
আমরা ওদের থেকে অনেক টা দূরে ছিলাম আর গাড়িতে ও ওঠে যেতে পারতাম কিন্তু তার আগেই ওরা আব্বুর মাথায় লোহার মত কিছু একটা দিয়ে আঘাত করলো যার ফলে আব্বুর মাথা ফেটে রক্তে ভিজে গেছে রাস্তা।
আমি কোন দিন ও ভুলতে পারবো না আব্বুর সেই আর্তনাদ। তবুও আব্বু আমাকে বার বার বলছিল শরীফা মা আমার বেশি সময় নেই। তাই আমাকে নিয়ে ভাবিস না। তুই পালিয়ে যা মা তুই পালিয়ে যা। আমি কিছুতেই আব্বু কে ছেড়ে যেতে চাইছিলাম না।
কিন্তু তারপর দেখলাম আব্বু আর কোন কথা বলছে না। মনে হলো আব্বু আর নেই, তাই সেদিন স্বার্থপর হয়ে চলেই এলাম আব্বু কে রেখে।

তারপর কিভাবে মাথা ফেটে গেল এবং শরীফ ভাইয়ার মা বাবা আমাকে হসপিটালে নিল।এসব কিছুই আমার মনে নেই।
এখন এগুলো মনে হলে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমার।
সাইফের ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম। সাইফ বলছে ভাবীমনি আমরা চলে এসেছি। নেমে আসো, তুমি কি গাড়িতেই বসে থাকবে নাকি? আমি তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই তো কখন চলে এলাম খেয়ালই করিনি।
গাড়ি থেকে নেমে আমি চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলাম। দেখে মনে হচ্ছে এ যেন এক স্বপ্নের রাজ্যে পৌঁছে গেছি আমি। চারিদিকে প্রকৃতির সুন্দর্যো। অবশ্য প্রকৃতিকে যে ভালোবাসে সে সব জায়গায় প্রকৃতির সুন্দর্যো দেখতে পায়।
আমি দেখেই চলেছি এতো সুন্দর কি বলবো। আমার মনে হচ্ছে আমি যদি বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করতাম তাহলে ঠিক একটা কবিতা লিখে ফেলতাম।
শরীফ ভাইয়া বলে চলো সবাই আগে খাওয়া দাওয়া করে নেই তারপর ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখবো। খাওয়ার কথা বলতেই আমার অনুভব হলো খিদে পেয়েছে। এতোক্ষণ তা খেয়াল ই ছিল না। তারপর সবাই খাবার খেয়ে নিলাম।
অতঃপর সবাই ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম, আমার একটা ফোন থাকলে অনেক ভালো হতো। ফোনে এতো সুন্দর দৃশ্য গুলো ক্যামেরা বন্দি করে রাখা যেত। ফোন টা বাড়িতেই রয়ে গেছে।ঐ মূহুর্তে ফোন সাথে আনার কথা মাথায় ছিল না।

আমি সবার থেকে কিছু টা দূরে ছিলাম তাই সাইফ আমাকে ডাক দেয় ভাবীমনি বলে। আমি তাদের কাছে গেলাম, আন্টি বললো শরীফা আমাদের সাথে দারা তো সবাই মিলে ছবি তুলি। এদিকে আমি শরীফ ভাইয়ার দিকে তাকালাম শরীফ ভাইয়ার ফেইসের অবস্থা দেখার জন্য কারণ সাইফ যেভাবে ভাবীমনি বলে আমায় ডাক দিল। এবার তো ওনার শুনতে কোন ভুল হ‌ওয়ার কথা না।
কিন্তু শরীফ ভাইয়াকে স্বাভাবিক ই মনে হলো। আমার ভাবনাতেই শরীফ ভাইয়া বলে উঠেন, শরীফা ঠিক করে ধারাও। আমি ঠিক হয়ে ধারালাম ঠিকই কিন্তু শরীফ ভাইয়ার ফোনের ক্যামেরার দিকে তাকাতে পারছি না।
আন্টি বলে শরীফা ক্যামেরার দিকে তাকা। আন্টির কথায় একটু তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলাম। আবার শরীফ ভাইয়া ওনাকে সহ সেলফি নেয়ার সময়, শরীফ ভাইয়া বলে বসে লজ্জাবতী এখানে তাকান। আমি তখন একটা রাগি লুক নিয়ে তাকাই আর তখনি শরীফ ভাইয়া ছবি ক্যামেরা বন্দি করে নিলেন।
আমি এখানে আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলাম, যেখানে পানির স্রোত বয়ে চলেছে।পা ভিজিয়ে কিছু সময় দারিয়ে র‌ইলাম। সাথে সবুজ ঘাস গুলো অতিমাত্রায় সুন্দর। উঁচু উঁচু টিলার মতো জায়গা টা তার উপর ঘাস। খুবই ভালো লাগছে। তারপর চলে গেলাম ঝর্নার কাছে, অনেকেই ঝর্নার পানিতে ভিজতেছে। আমার ও খুব ইচ্ছে হলো কিন্তু ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখলাম।

সবচেয়ে অবাক হলাম আগুন পাহাড় নিয়ে। যেখানে পানি থেকে আগুন বের হচ্ছে। খুবই অবিশ্বাস্য।আসলে আল্লাহ তা'আলা চাইলে সব কিছুই সম্ভব, আল্লাহ তাআলার কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই। "সুবহান আল্লাহ্"
পাহাড়ে উঠে ইচ্ছে হলো খুব জোরে চেঁচিয়ে নিজের কষ্ট গুলো জানান দেই, কিন্তু পারলাম না। আন্টি আংকেল তারা আমার কথা ভেবে আনন্দের সময়টাতে কষ্ট পাবে ভেবে করলাম না।সব কিছু দেখা শেষে আমরা আবার বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে র‌ওনা হলাম। আসার পথে সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পার করলাম।
আমাদের চিটাগাং থেকে কুমিল্লা পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে গেল। আমি কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম। অবশ্য গাড়িতে হাল্কা নাস্তা করেছিলাম।
আমার ঘুম ভাঙ্গলো একদম সকালে। চারিদিকে আলো ছড়িয়ে পড়েছে। সূর্য কিছু সময়ের মধ্যেই উঠে যাবে। তাই তারাতাড়ি ফ্রেস হয়ে অজু করে নামাজ আদায় করে নিলাম।
শরীফ ভাইয়া প্রতিদিনের মতো আজকেও এক্সারসাইজ করতে বেরিয়ে গেছেন। ওনার কথা কিছু দিন যদি সকাল বেলা ঘুমিয়ে থাকেন তাহলে তার এটা বদ অভ্যাস হয়ে যাবে। তখন তিনি কর্ম ক্ষেত্রে ফিরে গেলে, খুব প্রবলেম হবে। সকাল ছয়টায় তাদের পি.টি করতে বেরিয়ে যেতে হয়। তাই প্রতিদিন নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে বেরিয়ে যান।
আমার একটা বিষয় খুব খারাপ লাগলো চাকরির জন্য এতো কিছু অথচ নামাজ পড়তে ওনার অনিহা। তাই ঠিক করলাম ওনি আসলেই ওনাকে নামাজের কথা বলবো।
সারে সাতটার দিকে শরীফ ভাইয়া আসে বাসায়।আর সারে আটটার দিকে সবাই একসাথে নাস্তা করতে বসলাম। আমি ভাবছি ওনি একা হলে বলবো কথাটা।

সবাই খাবার শেষ করে রুমে চলে যায়। আমিও রুমে এসে ভাবছি কিভাবে বলা যায়... রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে পানির অজুহাতে শরীফ ভাইয়ার রুমের দিকে তাকালাম, মনে হলো ওনি রুমে নেই। তাহলে কোথায়? তারপর ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখি ওনি সোফায় বসে ফোন ইউজ করছেন।
আমার উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্য একটু শব্দ করে আবার চলে আসছিলাম তখনি পিছন থেকে শরীফ ভাইয়া বলে উঠে শরীফা চলে যাচ্ছ যে? রুমে আসো। আমিও সুযোগ পেয়ে গেলাম।আর সাইফের সাথে একটু কার্টুন দেখতে লাগলাম কিন্তু মনে মনে ঠিকই ভাবছি কিভাবে বলি, হুটহাট তো বলা যায় না।
শরীফ ভাইয়া বললেন শরীফা তুমি কার্টুন দেখ?জ্বি, মাঝে মাঝে দেখি। কিছু কিছু কার্টুন খুব ভালো লাগে।
পিচ্চিদের কাছে এটাই স্বাভাবিক।
বুঝলাম ওনি আমাকে রাগানোর জন্য এগুলা বলছেন। কিন্তু আমি না রেগে বললাম আপনি নামাজ পড়েন না কেন?আসলে বাড়িতে আসলে পড়া হয়না। কিন্তু ঐখানে পড়ি। তাহলে এখন যে পড়েন না এগুলোর যবাব কি দিবেন?আসলে কি বলোতো আমার সব ড্রেস গুলো না অপরিষ্কার এগুলো ওয়াশ করে তারপর পড়বো।
এই বলে শরীফ ভাইয়া বাহিরে কোথাও চলে গেলেন।
এদিকে আমি সাইফকে নিয়ে কাজে নেমে পড়লাম। শরীফ ভাইয়ার রুমে গিয়ে ওনার আলমারি থেকে সমস্ত ড্রেস বের করে আনলাম। দেখলাম কিছু নতুনের মতো ড্রেস,ঐ গুলো সহ বের করে আনলাম ওয়াশ করার জন্য কারণ শরীফ ভাইয়া তো বলেছেন ওনার সব ড্রেস অপরিষ্কার.......

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com